বিডিনিউজ ॥ নির্বাচন সামনে রেখে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ এবং কামাল হোসেনের নেতৃত্বে গঠিত জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের মধ্যে সংলাপের ফলাফল ইতিবাচক হবে বলে আশাবাদী যুক্তরাষ্ট্রের বিদায়ী রাষ্ট্রদূত মার্শা বার্নিকাট।
মঙ্গলবার রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন পদ্মায় পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ এইচ মাহমুদ আলীর সঙ্গে বিদায়ী সাক্ষাতের পর সংলাপ নিয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘আমি আশাবাদী।’
ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সরকার গত কয়েক বছর ধরে বিএনপির সংলাপের আহ্বান প্রত্যাখ্যান করে এলও বিএনপিকে নিয়ে গণফোরাম সভাপতি কামাল হোসেনের নেতৃত্বে গঠিত জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের সংলাপের আহ্বানে সাড়া দিয়েছে।
ঐক্যফ্রন্টের পক্ষ থেকে সংলাপে বসার আহ্বান জানিয়ে গত রবিবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরকে চিঠি দিয়েছিলেন কামাল। সেখানে তাদের সাত দফা দাবির কথা জানানো হয়।
তাতে সাড়া দিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মঙ্গলবার সকালে কামালকে চিঠি পাঠান, যেখানে ‘সংবিধানসম্মত সব বিষয়ে’ আলোচনার জন্য ঐক্যফ্রন্টকে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় গণভবনে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে।
জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের সাত দফায় খালেদা জিয়াকে মুক্তি দিয়ে সংসদ ভেঙে দিয়ে নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবি রয়েছে, যা বর্তমান সংবিধান অনুযায়ী সম্ভব নয় বলে আওয়ামী লীগ নেতারা বলে আসছেন।
এ বিষয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে মার্শা বার্নিকাট বলেন, বাংলাদেশ কোন পথে যাবে তা এ দেশের জনগণের ওপরই নির্ভর করবে।
‘গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় নাগরিকদের অধিকার রয়েছে নিজের পছন্দ অনুযায়ী নেতৃত্ব নির্বাচনের দাবি সরকারের কাছে তোলার।’
এদিকে বাসস জানায়, বাংলাদেশে নিযুক্ত যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত মার্শা বার্নিকাট প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে তার বিদায়ী সাক্ষাতে বলেছেন, বাংলাদেশের উন্নয়নে তার দেশ সহযোগিতা অব্যাহত রাখবে। মঙ্গলবার সকালে গণভবনে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে বার্নিকাটের সাক্ষাতের পরে সাংবাদিকদের ব্রিফিংকালে প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব ইহসানুল করিম এ কথা বলেন।
‘বাংলাদেশের উন্নয়নে আমাদের সহযোগিতা অব্যাহত থাকবে,’ বার্নিকাটের এই বক্তব্য উদ্ধৃত করে প্রেস সচিব বলেন, দুই দেশের মধ্যে বিদ্যমান দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী এবং যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত-উভয়েই সন্তোষ প্রকাশ করেন। তিনি বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত বাংলাদেশের তরুণ প্রজন্মকে ‘চমকপ্রদ’ আখ্যায়িত করে ‘এই প্রজন্মই দেশের উন্নয়নকে এগিয়ে নিয়ে যাবে’ বলে দৃঢ় আশাবাদ ব্যক্ত করেন। তিনি এ সময় বাংলাদেশের উন্নয়নে প্রধানমন্ত্রীর কঠোর পরিশ্রমেরও ভূয়সী প্রশংসা করেন। শিক্ষাকে সকলের জন্য গুরুত্বপূর্ণ উল্লেখ করে রাষ্ট্রদূত বলেন, যেকোন দেশের উন্নয়নে এটি একটি বড় বিষয়। বার্নিকাট এদেশে উৎপাদিত আম এবং লিচুরও প্রশংসা করেন। প্রধানমন্ত্রী দেশের বিভিন্ন খাতে তার সরকারের সাফল্যের চিত্র তুলে ধরে বলেন, তার মূল লক্ষ্যই দেশের উন্নয়ন এবং জনগণের কল্যাণ নিশ্চিত করা। ’৭৫ এর বিয়োগান্তক অধ্যায়ের পর বাধ্য হয়ে ৬ বছর প্রবাস জীবন কাটিয়ে ১৯৮১ সালে আওয়ামী লীগের সভাপতি নির্বাচিত হওয়ার পর দেশে ফিরে আসার কথা স্মরণ করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমি দেশের প্রতিটি প্রান্ত ঘুরে বেরিয়ে মানুষের দুরাবস্থা স্বচক্ষে প্রত্যক্ষ করেছি।’ সেই অভিজ্ঞতা থেকেই দেশকে কিভাবে উন্নত করা যায় তার পরিকল্পনা তিনি করেছেন উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘সেই অবস্থা থেকে বাংলাদেশের আজকের পর্যায়ে উত্তোরণ ঘটেছে।’ দেশের কৃষি খাতের উন্নয়নে তার সরকারের পদক্ষেপসমূহ তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আগে এক মৌসুমের তরিতরকারি অন্য মৌসুমে পাওয়া যেত না।’ ‘কিন্তু আমরা এখন সারাবছরই সব ধরনের তরিতরকারি পাচ্ছি, এটা আমাদের গবেষণা এবং কৃষি গবেষকদের অবদান’, যোগ করেন তিনি। প্রধানমন্ত্রী এ সময় বার্নিকাটের সর্বাঙ্গীন সাফল্যও কামনা করেন। প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব মোঃ নজিবুর রহমান এ সময় উপস্থিত ছিলেন।