ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

চার দফা দাবিতে রাষ্ট্রপতির কাছে বাম জোটের স্মারকলিপি

প্রকাশিত: ০১:৩৩, ৩০ অক্টোবর ২০১৮

চার দফা দাবিতে রাষ্ট্রপতির কাছে বাম জোটের স্মারকলিপি

স্টাফ রিপোর্টার ॥ একাদশ সংসদ নির্বাচন ঘিরে চার দফা দাবি আদায়ে বাম জোটভুক্ত দলগুলোর নেতাকর্মীরা বঙ্গভবন অভিমুখে মিছিল নিয়ে গেলে পুলিশের বাধায় তা পণ্ড হয়েছে। পরে জোটের পক্ষ থেকে একটি প্রতিনিধিদল গিয়ে রাষ্ট্রপতির কাছে স্বারকলিপি দিয়ে আসেন। মঙ্গলবার বাম জোটের নেতাকর্মীরা জাতীয় প্রেস ক্লাব থেকে মিছিল নিয়ে বঙ্গভবনের উদ্দেশে রওয়ানা দেন। মিছিলটি দৈনিক বাংলা মোড়ে গেলে পুলিশের বাধা ও ব্যারিকেডের মুখে পড়ে। পরে দৈনিক বাংলা মোড়ে বাম গণতান্ত্রিক জোটের সমন্বয়ক সাইফুল হক সংক্ষিপ্ত বক্তব্য দেন। বাম জোটের নেতা সাইফুল হক বলেন, নির্বাচন কমিশন সরকারের অনুগত, সরকারের তাবেদারি ভূমিকা পালন করতে গিয়ে সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানটির মর্যাদা ভুলুণ্ঠিত করছে। সে জন্য আমরা বলেছি, অবশ্যই নির্বাচন কমিশনকে পুনর্গঠন করতে হবে। তিনি বলেন, আমাদের মিছিল এখানে বাধাগ্রস্ত হয়েছে। আমরা এর নিন্দা জানাই। সেই সঙ্গে বুধবার সকাল সাড়ে ১০টায় মুক্তিভবনে আমাদের নিজস্ব কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে আগামী ১ নভেম্বর থেকে চলমান কার্যক্রম ঘোষণা করব। পরে সেখানে সংক্ষিপ্ত বক্তব্যে শেষে তিনি নেতাকর্মীদের মিছিল নিয়ে দলীয় কার্যালয়ে ফিরে যাওয়ার অনুরোধ করেন। এ সময় বাম গণতান্ত্রিক জোটের প্রধান সমন্বয়কসহ ৫/৬ জনের একটি প্রতিনিধি দল বঙ্গভবনে স্মারকলিপি দিতে যান। বাম জোটের দাবিগুলো হলো- নির্বাচন তফসিল ঘোষণার পূর্বে বর্তমান সরকারকে পদত্যাগ করে, সব দল ও সমাজের অপরাপর মানুষের মতামতের ভিত্তিতে নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ তদারকি সরকার গঠন, নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পূর্বে বর্তমান জাতীয় সংসদ ভেঙে দেয়া, জনগণের আস্থাহীন সরকারের অনুগত বর্তমান নির্বাচন কমিশন পুনর্গঠন, সংখ্যানুপাতিক প্রতিনিধিত্ব ব্যবস্থা প্রবর্তনসহ টাকার খেলা, পেশিশক্তি, সাম্প্রদায়িকতা, প্রশাসনিক কারসাজি নির্ভর বিদ্যমান গোটা নির্বাচনী ব্যবস্থার আমূল সংস্কার। বিক্ষোভ মিছিল বাধা দেয়ার বিষয়ে মতিঝিল জোনের সহকারী উপ-পুলিশ কমিশনার (এডিসি) এস এম শিবলি নোমান বলেন, ‘বঙ্গভবনে এত নেতাকর্মী নিয়ে প্রবেশের অনুমতি নেই। কারণ সেটি বিশেষ এলাকা। তাই নিরাপত্তার স্বার্থে তাদের বাধা দিয়ে বিষয়টি বুঝিয়ে বলা হয়েছে। তারাও সেটি বুঝতে পেরে মিছিল সরিয়ে নিয়েছে। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার আগেই জাতীয় সংসদ ভেঙে দেয়া, বর্তমান সরকার পদত্যাগ করে নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ তদারকি সরকার গঠন, জনগণের আস্থাহীন বর্তমান নির্বাচন কমিশন পুনর্গঠন, সংখ্যানুপাতিক প্রতিনিধিত্ব ব্যবস্থা প্রবর্তনসহ নির্বাচন ব্যবস্থার আমূল সংস্কারের মাধ্যমে নির্বাচনের গণতান্ত্রিক পরিবেশ সৃষ্টির জন্য রাজনৈতিক দলসমূহের মধ্যে সংলাপের উদ্যোগ নিতে রাষ্ট্রপতি বরাবর স্মারকলিপি দিয়েছে বাম গণতান্ত্রিক জোট। রাষ্ট্রপতিকে জাতির অভিভাবক উল্লেখ করে নির্বাচনকেন্দ্রিক চলমান সঙ্কটের প্রতি দিক নির্দেশ করে বাম জোটের নেতৃবৃন্দ বলেন, ‘আপনি আপনার দেশপ্রেম ও নৈতিক ক্ষমতা বলে এই গভীর সঙ্কট উত্তরণে অবিলম্বে কার্যকরী উদ্যোগ গ্রহণ করবেন। দেশের এই ক্রান্তিকালে আপনার যুক্তিযুক্ত বলিষ্ঠ ভূমিকার গুরুত্ব অপরিসীম ও সুদূরপ্রসারী তাৎপর্য বয়ে আনতে পারে।’ জোটের সমন্বয়ক বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হকের সভাপতিত্বে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে অনুষ্ঠিত সমাবেশে বক্তব্য রাখেন সিপিবি’র সভাপতি মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম, বাসদের কেন্দ্রীয় নেতা বজলুর রশীদ ফিরোজ, গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক জোনায়েদ সাকি, বাসদ (মার্কসবাদী)’র কেন্দ্রীয় নেতা মানস নন্দী, ইউনাইটেড কমিউনিস্ট লীগের সম্পাদকম-লীর সদস্য অধ্যাপক আব্দুস সাত্তার, গণতান্ত্রিক বিপ্লবী পার্টির সাধারণ সম্পাদক মোশরেফা মিশু, বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক আন্দোলনের আহ্বায়ক হামিদুল হক। সমাবেশে সিপিবি সভাপতি মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম বলেন, চলমান সঙ্কট থেকে উত্তরণের জন্য সরকারকে নমনীয় হতে হবে। সরকারকে অবাধ, নিরপেক্ষ, গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের গণদাবি মেনে নিতে হবে। গণদাবি অগ্রাহ্য করা হলে উদ্ভূত পরিস্থিতির দায় সরকারকেই নিতে হবে। তিনি সরকারি দলের নেতৃবৃন্দের উদ্দেশ্যে বলেন সংবিধানেই বলা আছে কিভাবে সংবিধান সংশোধন করতে হয়। তিনি বলেন, জাতীয় সংসদ এখনো কার্যকর রয়েছে। তিনি সংসদের অধিবেশন আহ্বান করে অষ্টাদশ সংশোধনীর মাধ্যমে নির্বাচনকালীন সরকার গঠন ও তার কার্যক্রম সংবিধানে অন্তর্ভুক্তির আহ্বান জানান।
×