ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

সাত গোলের রোমাঞ্চকর ম্যাচে বসুন্ধরা কিংসের জয়

প্রকাশিত: ০৬:৫৫, ৩০ অক্টোবর ২০১৮

সাত গোলের রোমাঞ্চকর ম্যাচে বসুন্ধরা কিংসের জয়

স্পোর্টস রিপোর্টার ॥ নবাগত দল তারা। ক্লাবটির নামের শেষে আছে কিংস। কিংস মানে রাজারা। সোমবার বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়ামের মাঠে নিজেদের অভিষেক ম্যাচ খেলতে নেমেই রাজাদের মতোই জয় কুড়িয়ে নিল তারা। ‘ওয়ালটন ফেডারেশন কাপ’-এর ‘ডেথ গ্রুপ’-এ দারুণ রোমাঞ্চকর জয় পেয়ে শুভসূচনা করেছে বসুন্ধরা কিংস। ৫-২ গোলে তারা হারিয়েছে ঐতিহ্যবাহী এবং এই আসরের সর্বাধিক ১০ বারের শিরোপাধারী মোহামেডান স্পোর্টিং ক্লাবকে (ঢাকা আবাহনীও ১০ বারের চ্যাম্পিয়ন)। ঢাকার ফুটবলে এর আগে বিশ্বকাপ খেলা ফুটবলার খেলেছেন চার জন। এরা হলেনÑ মোহামেডানে ইরানের নাসির হেজাজি, নাইজিরিয়ার এমেকা ইউজিগো, ঢাকা আবাহনীর হয়ে ইরাকের সামির শাকির এবং করিম মোহাম্মদ। প্রায় দুই যুগ পর বাংলাদেশের ফুটবলে আগমন ঘটেছে বিশ্বকাপ খেলা আরেক ফুটবলারের। তিনি বসুন্ধরা কিংসের ৩৩ বছর বয়সী এক ফরোয়ার্ড। দলের জয়ে সবচেয়ে বেশি অবদান রেখেছেন সেই ফরোয়ার্ড, তার নাম ড্যানিয়েল কলিনড্রেস। তিনিই ছিলেন ম্যাচের মূল আকর্ষণ। ২০১৮ রাশিয়া বিশ্বকাপ খেলেছেন যিনি, তাকে নিয়ে তো কৌতূহল থাকবেই ফুটবলপ্রেমীদের। আর তাদের সেই কৌতূহলের জবাব দিয়েছেন কোস্টারিকার ফরোয়ার্ড কলিনড্রেস ম্যাচে অসাধারণ খেলে। নিজে গোল করেছেন, গোল বাঁচিয়েছেন, গোলে সহায়তা করেছেন, অসাধারণ ড্রিবলিং, নিঁখুত ফ্রি কিক, রক্ষণভাগ, মধ্যমাঠ, আক্রমণভাগÑ সর্বত্রই সফল পদচারণা ... কি করেননি তিনি! মোহামেডানের দুভার্গ্যÑ ম্যাচে তারা দু’বার লিড নিয়েও হেরে গেছে। তাদের হারের পেছনে দায়ী তাদের দশ জনের দলে পরিণত হওয়া। এই মৌসুমের সবচেয়ে দামী দল বসুন্ধরা কিংস সোমবার প্রথম ম্যাচ খেলেই নিজেদের সক্ষমতার জানান দিয়েছে। শুধু কলিনড্রেস নয়, বসুন্ধরার বিদেশীদের সবাই দারুণ খেলেছেন। সবার চেয়ে এগিয়ে ছিলেন কলিনড্রেস। দলের পাঁচ গোলের তিনটির সঙ্গেই ছিল তার সম্পৃক্ততা! পেনাল্টিতে এক গোল করা ছাড়াও মার্কোস ভিনিয়াসকে দিয়ে দুই গোল করিয়েছেন। সতীর্থদের সঙ্গে তার বোঝাপড়াটা ছিল চোখে পড়ার মতো। ম্যাচ শেষে তিনি বলেন, ‘আমি চেষ্টা করেছি ভাল খেলতে। সবাই টিম হিসেবে খেলেছে। প্রতি পজিশনের সব খেলোয়াড়ই অসাধারণ’। ইনজুরি সময়ে মার্কোসকে না দিতে চাইলে নিজেই গোল করতে পারতেন, সেটা করেননি। এ প্রসঙ্গে তার ব্যাখ্যা, ‘আসলে আমার কাছে সবার আগে দল। গোল করাটাই সব নয়। চাইলে গোল করতে পারতাম, তবে মার্কোস গোল করার মতো ভাল জায়গায় ছিল।’বাদ্য বাজিয়ে স্টেডিয়ামে আসে কিংসের হাজার খানের সমর্থক। ক্লাবের লোগো সংবলিত ব্যানারও হাতে ছিল সবার। পুরো ম্যাচে দলকে উৎসাহ জাগিয়েছেন সমর্থকরা। নতুন আর্বিভাবে সেরা দল গড়া বসুন্ধরাকে শুরুতেই চমক দেখায় মাঝারি মানের দল গড়া মোহামেডান স্পোর্টিং ক্লাব। সমানে সমানে লড়াই করতে থাকে সাদা-কালো জার্সিধারীরা। ১৮ মিনিটে লিডও নেয় ক্রিস্টোফার ইভান্সের দল। অফসাইডের ফাঁদ ভেঙ্গে বক্সের মধ্যে ঢুকে এনকোচা কিংসলে একজনকে কাটিয়ে যে মাইনাস করেন তা বসুন্ধরার এক খেলোয়াড়ের পায়ে লেগে চলে যায় ল্যান্ডিং ডার্বোয়ের কাছে। ফাঁকা পোস্টে ঠা-া মাথায় প্লেসিং শটে বল জালে জড়ান গাম্বিয়ান এ মিডফিল্ডার। ৯ মিনিট পরই গোল পরিশোধ করে বসুন্ধরা। মোহাম্মদ ইব্রাহিমকে বক্সেও মধ্যে ফেলে দেন মিন্টু শেখ। রেফারি পেনাল্টির বাঁশি বাজান। স্পট কিক থেকে গোল করে দলকে সমতায় ফেরান কলিনড্রেস। বিরতির পর বড় ধাক্কা খায় মোহামেডান। দুর্দান্ত খেলতে থাকা গোলরক্ষক আহসান হাবিব বিপু প্রতিপক্ষের এক খেলোয়াড়ের সঙ্গে ধাক্কা লেগে পড়ে যান। আঘাত গুরুতর হওয়ায় এ্যাম্বুলেন্সে করে তাকে কাকরাইলের ইসলামী ব্যাংক হাসপাতালে নেয়া হয়। পরে জানা যায় তার হাত ভেঙ্গে গেছে। তার মানে ফেডারেশন কাপে বিপুকে না পাওয়ার সম্ভাবনাই বেশি মোহামেডানের। গোলরক্ষক আহত হয়ে ফিরে গেলেও মোহামেডানের খেলায় ধার কমেনি। বরং ৬৬ মিনিটে এগিয়ে যায় তারা। পেনাল্টি থেকে গোল করেন ল্যান্ডিং। চার মিনিট পর জর্জ গোটার ব্লাসের গোলে সমতায় ফেরে বসুন্ধরা। ৭২ মিনিটে অহেতুক প্রতিপক্ষের এক খেলোয়াড়কে ফাউল করে দ্বিতীয় হলুদ কার্ড দেখে মাঠ ত্যাগ করেন মোহামেডনের তকলিস আহমেদ। ১০ জনের দলে পরিণত হওয়ার পর ছন্দ হারিয়ে ফেলে মোহামেডান। সেই সুযোগে একে একে তিনবার বল জালে জড়ায় বসুন্ধরা। কিংসকে এগিয়ে নেয়ার গোলটি করেন বদলি হিসেবে নামা মতিন মিয়া। ৭৮ মিনিটে ইব্রাহিমের আড়াআড়ি পাস থেকে বল পেয়ে বক্সের মধ্যে ঢুকে পড়া মতিনের ডান পায়ের জোরালো শট চলে যায় মোহামেডানের জালে। সমতা ফেরাতে পারেনি, উল্টো ম্যাচের ইনজুরি সময়ে দু’গোল হজম করে তারা। ৯২ মিনিটে অফসাইডের ফাঁদ ভেঙ্গে বল পান কলিনড্রেস। তার সামনে শুধুই মোহামেডান গোলরক্ষক। চাইলে নিজেই গোল করতে পারতেন। কিন্তু নিজে না করে মার্কোসকে মাইনাস করেন। ঠা-া মাথায় গোল করেন তিনি। এক মিনিটের ব্যবধানে আবারও কলিনড্রেস-মার্কোসের রসায়নে পঞ্চম গোলের আনন্দে মেতে ওঠে বসুন্ধরা। এবারও মার্কোসকে দিয়ে গোল করান কলিনড্রেস।
×