ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

বিপিএলে দল না পেয়ে হতাশ রাজ্জাক-নাফীস

প্রকাশিত: ০৬:৫৩, ৩০ অক্টোবর ২০১৮

বিপিএলে দল না পেয়ে হতাশ রাজ্জাক-নাফীস

মোঃ মামুন রশীদ ॥ ফ্র্যাঞ্চাইজিভিত্তিক বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লীগ (বিপিএল) টি২০ ক্রিকেটে আগের পাঁচ আসরেই খেলেছেন বাঁহাতি স্পিনার আব্দুর রাজ্জাক ও টপঅর্ডার ব্যাটসম্যান বাঁহাতি শাহরিয়ার নাফীস। এক সময় জাতীয় দলেরও অপরিহার্য সদস্য ছিলেন। আপাতত এ দু’জনই দীর্ঘদিন জাতীয় দলের বাইরে, তবে ঘরোয়া ক্রিকেটে এখন পর্যন্ত উজ্জ্বলতা ছড়িয়ে যাচ্ছেন তারা। এরপরও ষষ্ঠ বিপিএলের প্লেয়ার্স ড্রাফটে এ দুই অভিজ্ঞ ক্রিকেটারকে নিতে আগ্রহ দেখায়নি কোন দলই। রবিবার ৭ ফ্র্যাঞ্চাইজি আনুষ্ঠানিক প্লেয়ার্স ড্রাফটে দল গুছিয়েছে। সেখানে কোন দলে ঠিকানা না হওয়াতে চরম হতাশা এবং আক্ষেপ জানিয়েছেন ৩৬ বছর বয়সী রাজ্জাক ও ৩৩ বছর বয়সী নাফীস। গত আসরে চ্যাম্পিয়ন রংপুর রাইডার্সে খেলেছিলেন, এবার তারাও এ দুই অভিজ্ঞকে দলে রাখার কোন আগ্রহ দেখায়নি। নাফীস দুই বিপিএলে বরিশাল এবং একবার করে খুলনা, ঢাকা ও সর্বশেষবার রংপুরের ফ্র্যাঞ্চাইজিদের হয়ে খেলেছেন। টি২০ এই আসরে প্রথম বাংলাদেশী হিসেবে তিনি সেঞ্চুরি হাঁকিয়েছিলেন ২০১৩ সালের দ্বিতীয় আসরে। ৬৯ বলে ১০২ রানের অপরাজিত ইনিংস উপহার দিয়েছিলেন খুলনার হয়ে রাজশাহীর বিপক্ষে। সে সময় জাতীয় দলেরও সদস্য ছিলেন। কিন্তু এরপর থেকেই ভাগ্যের পরিবর্তন ঘটেছে তার। ২০১৩ সালে জাতীয় দলের জার্সিতে সর্বশেষ আন্তর্জাতিক ম্যাচ হিসেবে টেস্ট খেলেছিলেন জিম্বাবুইয়ে সফরে। তারপর থেকে আর সুযোগ পাননি। তবে ঘরোয়া ক্রিকেটে নিয়মিতই পারফর্ম করে বারবার আলোচনায় ছিলেন। কিন্তু ফেরা হয়নি। গত আসরে তিনি চ্যাম্পিয়ন রংপুর রাইডার্সের হয়ে বিপিএলে খেলেছেন। অবশ্য, সেই আসরটি খুব বাজে কেটেছে তার। টপঅর্ডার হিসেবে অবশ্য খেলার সুযোগ পাননি। যে ৮ ম্যাচ খেলেছেন, সেগুলোয় তাকে নামতে হয়েছে মিডলঅর্ডারে। ১৩.৫০ গড়ে মাত্র ১০৮ রান করতে পেরেছেন। সে কারণেই হয়তো এবার এ বাঁহাতিকে কেউ দলে টানতে আগ্রহ দেখায়নি। চলতি জাতীয় লীগে (এনসিএল) অবশ্য খুব বেশি নজর কাড়তে পারেননি। কিন্তু চতুর্থ রাউন্ডে একটি সেঞ্চুরি হাঁকিয়ে জানিয়ে দিয়েছিলেন যে এখনও তার ব্যাটে যথেষ্ট ধার আছে। গত বিপিএলে খারাপ করলেও সব আসর মিলিয়ে রান করার দিক থেকে নাফীসের অবস্থান ১৪ নম্বরে। আগের পাঁচ আসরে ৪২ ম্যাচের ৪০ ইনিংস ব্যাট করা শাহরিয়ার নাফীসের সংগ্রহ ৯৩৭ রান। শতরান একটি (১০২*), সঙ্গে ৬ হাফসেঞ্চুরি। স্ট্রাইকরেট ১০৭.২০। গড় ২৬.৭৭। তবে তিন বিদেশী ক্রিস গেইল, মারলন স্যামুয়েলস আর আহমেদ শেহজাদকে বাদ দিলে আগের পাঁচ আসরে রান তোলায় স্থানীয় ব্যাটসম্যানদের মধ্যে তার অবস্থান ১১ নম্বরে। বিপিএলে এখন পর্যন্ত মাত্র ৬ ক্রিকেটার ১০০’র বেশি বাউন্ডারি হাঁকিয়েছেন। তার মধ্যে মাহমুদুল্লাহ (১১৫), তামিম (১৪৯) ও সাকিবের (১১২) পর নাফীসে অবস্থান চারে (১১১ বাউন্ডারি)। রান তোলায় তার চেয়ে ওপরে থাকলেও বাউন্ডারি হাঁকানোয় নাফীসের পেছনে মুশফিকুর রহীম (১০৬) ও ইমরুল কায়েস (১০৯)। আর যে ম্যাচে শতক হাঁকিয়েছিলেন সেদিন প্রথম উইকেটে নিউজিল্যান্ডের লুই ভিনসেন্টের সঙ্গে ১৯৭ রানের জুটি গড়েছিলেন যা এখন পর্যন্ত বিপিএলের রেকর্ড। এতকিছুর পরও কোন দল না পাওয়াতে হতাশ নাফীস। তিনি বলেন, ‘গত বছর খুব বেশি ভাল খেলিনি। আট ম্যাচে ১০০ রান করেছি। তবে তার আগের তিন বছর টানা ভাল খেলেছি। স্থানীয় ক্রিকেটারদের মধ্যে যখন পঞ্চম ডাকেও আমার নাম আসেনি, তখনই মনে হচ্ছিল এবার বুঝি আর ডাক পাব না। এমন কোন বার হয়নি যে আমি বিক্রি হইনি বা ড্রাফটে ছিলাম না। সত্যি বলতে কি তাৎক্ষণিকভাবে খারাপ লেগেছে। প্রত্যেকটা দল একটা মোটো বা ভিশন নিয়ে দল করে। হয়ত আমি তাদের পরিকল্পনার মধ্যে পড়িনি। বিপিএলে যেমন পারফর্মেন্স দরকার, আমার তা আছে।’ গত আসরে রংপুরে তার সতীর্থ ছিলেন রাজ্জাক। ৩৬ বছর বয়সেও দুর্দান্ত খেলছিলেন তিনি। এমনকি গত ফেব্রুয়ারিতে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে টেস্ট খেলে প্রমাণ দিয়েছেন এখন পর্যন্ত সর্বোচ্চ পর্যায়ের ক্রিকেট খেলার যোগ্যতা আছে তার। এক সময় জাতীয় দলের অন্যতম নির্ভরযোগ্য স্পিনার হিসেবে খেলে প্রথম বাংলাদেশী হিসেবে ২০০ উইকেটের মাইলফলক ছুঁয়েছিলেন ওয়ানডেতে। ১৫৩ ম্যাচে ২০৭ উইকেট নিয়ে এখনও দেশের তৃতীয় সেরা তিনি ওয়ানডেতে। বাংলাদেশী বোলারদের মধ্যে ওয়ানডেতে সর্বাধিক চারবার পাঁচ উইকেট শিকারের দুর্দান্ত কৃতিত্বটাও শুধু এ বাঁহাতি স্পিনারের একার। আন্তর্জাতিক টি২০-তে সাকিব আল হাসানের পর দ্বিতীয় সর্বাধিক (৩৪ ম্যাচে ৪৪ উইকেট, সেরা বোলিং ১৬ রানে ৪ উইকেট, ওভার পিছু রান ৬.৮৮) উইকেটও রাজ্জাকের। প্রথম শ্রেণীর ক্রিকেটে রাজ্জাকই একমাত্র বাংলাদেশী বোলার হিসেবে ৫০০ উইকেটের মালিক (১০৭ ম্যাচে ৫০৯টি)। কিন্তু গত বিপিএলে মাত্র ২ ম্যাচ খেলার কারণেই এবার রাজ্জাককে নিতে উৎসাহ দেখায়নি কেউ। অথচ সবমিলিয়ে আগের পাঁচ আসরে ৩৫ ম্যাচে তার উইকেট ৩৪টি। সেরা বোলিং ৩৩ রানে ৪ উইকেট। ওভার পিছু রান ৭.০১। এবার ১৮ লাখ টাকার ‘বি’ ক্যাটাগরিতে থাকা রাজ্জাককে নেয়নি কোন দল। হতাশ এ বাঁহাতি বলেন, ‘আমি খুবই হতাশ। খুবই খারাপ লাগছে। কি জন্য এমন হলো, বুঝতে পারছি না। আমার কোয়ালিটি আর ফর্ম না থাকলে একটি কথাও বলতাম না। আমার দৃঢ় বিশ্বাস এখনও ফুরিয়ে যাইনি। আমার সব ফরমেটে খেলার ও ভাল পারফর্ম করার সামর্থ্য আছে। রংপুর আমাকে গতবার খেলায়নি ঠিকমতো। দুটি ম্যাচ খেলেছি। তিন উইকেট পেয়েছি। বোলিং খারাপ হয়নি। গতবারই সন্দেহ হয়েছিল, আমাকে না খেলানোর কারণে পরের বার দল পাওয়া সমস্যা হয়ে যাবে। সেটাই হলো।’
×