ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

ড. কামালের কাঁধে এখন জামায়াত-বিএনপির অপকর্মের বোঝা!

প্রকাশিত: ০৬:৩৬, ৩০ অক্টোবর ২০১৮

ড. কামালের কাঁধে এখন জামায়াত-বিএনপির অপকর্মের বোঝা!

মোয়াজ্জেমুল হক /হাসান নাসির ॥ সংসদ নির্বাচন যতই ঘনিয়ে আসছে আগ্রহী প্রার্থীদের প্রচার ততই বাড়ছে। কেউ প্রকাশ্যে, কেউ নীরবে। ভোটের হাওয়া দেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে উত্তাপ ছড়াচ্ছে। সর্বত্র আলোচনার বিষয় এখন আগামী নির্বাচন। তবে সার্বিক পরিস্থিতি এখনও গুমোট। সরকার বর্তমান ইসির অধীনেই এই নির্বাচন অনুষ্ঠানে বদ্ধপরিকর। অন্যতম বিরোধীদল বিএনপি তাদের বিভিন্ন দাবি নিয়ে এই নির্বাচনের বিরোধিতায় থেকে এখন সদ্যগঠিত জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের পতাকাতলে নিজেদের স্থান করেছে। ফলে বিষয়টি এখন আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন ১৪ দলীয় জোট বনাম জাতীয় ঐক্যফ্রন্টকে ঘিরে নতুন আলোকে আবর্তিত হয়েছে। এখন বিএনপি নেতৃত্বাধীন কোন জোটের তৎপরতার খবর নেই। বরঞ্চ বিএনপিই জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের পতাকাতলে অবস্থান নিয়ে খোদ দল ও শরিকদের বড় একটি অংশকে বিব্রতকর অবস্থায় নিয়ে গেছে। সর্বশেষ এ নির্বাচন কেন্দ্র করে দু’পক্ষের মাঝে ইতিবাচক ভূমিকায়। সোমবার সংবাদ সম্মেলন ডেকে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের জানান দিয়েছেন, ঐক্যফ্রন্টের সঙ্গে সংলাপে বসতে তারা প্রস্তুত এবং তা নির্বাচনের আগেই হতে পারে। তিনি এও বলেছেন, আওয়ামী লীগ সভানেত্রী ও প্রধানমন্ত্রীর দরজা কারও জন্য বন্ধ নয়। তার এ বক্তব্যের পর পরই জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের স্টিয়ারিং কমিটির পক্ষে বিএনপি নেতা মওদুদ আহমদ তাৎক্ষণিক সংবাদ সম্মেলন ডেকে আওয়ামী লীগের পক্ষে ওবায়দুল কাদেরের বক্তব্যকে স্বাগত এবং সাধুবাদ জানান। আজ নির্বাচন কমিশনে তাদের যাওয়ার যে সিদ্ধান্ত ছিল তা স্থগিত করা হয়েছে। আওয়ামী লীগ সভানেত্রী ও প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে বসে আলোচনা করতে তারা প্রস্তুত। উভয়পক্ষের এসব বক্তব্য তাৎক্ষণিক প্রশংসা কুড়িয়েছে। এখন অপেক্ষা বৈঠক ও এর সুফল নিয়ে। একাদশ সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে আওয়ামী লীগ প্রচার, শরিকদের মধ্যে আসন ভাগাভাগি এবং প্রার্থী মনোনয়নসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে অনেক দূর এগিয়েছে। নির্বাচনকালীন সরকারসহ বিভিন্ন বিষয়ে অনিশ্চয়তায় থাকা বিএনপি এখনও অপ্রস্তুত। তফসিল ঘোষিত হয় বিএনপি দ্রুততার সঙ্গে নিজকে কতটা গোছাতে পারবে তা নিয়ে রয়েছে সংশয়। কারণ, ড. কামালের নেতৃত্বে গঠিত ঐক্যফ্রন্টই চূড়ান্ত সমাধান নয়। বিএনপিকে সমীকরণ মেলাতে হবে ঐক্যফ্রন্টের অন্তর্ভুক্ত দলগুলোর পাশাপাশি ২০ দলীয় জোটের শরিকদের সঙ্গেও। কেননা, দলটি এখন ঐক্যফ্রন্ট এবং ২০ দলীয় জোট, দুদিকেই রয়েছে। আসন ছাড় দেয়ার পাশাপাশি নির্বাচনে বিজয়ী হলে সরকারের চেহারা কেমন হবে, তা নিয়েও বোঝাপড়ার বিষয় রয়েছে। যদিও বিষয়টি ‘দিল্লী বহুত দূরস্ত’ - সেই বহুল আলোচিত প্রবাদ বাক্যের মতো। বিএনপির মতো একটি বড় দল শেষ পর্যন্ত ছোট দল গণফোরাম সভাপতি ড. কামালের নেতৃত্বে কেন গেল এ নিয়েও রয়েছে নানামুখী বিশ্লেষণ। রাজনৈতিক বোদ্ধা মহল মনে করছে, দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন ঠেকাতে আন্দোলনের নামে জ্বালাও পোড়াও, নাশকতা এবং মানুষ হত্যা করে দেশে এবং আন্তর্জাতিক পর্যায়ে ভাবমূর্তি প্রশ্নবিদ্ধ হওয়ায় দলটি পড়েছিল ইমেজ সঙ্কটে। বিদেশী আদালতেও সন্ত্রাসী দল হিসেবে ঘোষিত হয়েছে বিএনপি। এছাড়া জঙ্গীবাদ এবং উগ্র সাম্প্রদায়িকতার অভিযোগ তো আছেই। এমন অবস্থায় দলটি ভাবমূর্তি পুনরুদ্ধারের চেষ্টা করছে। দলের চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া দুটি মামলায় দ-িত হয়ে কারাগারে। ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান প্রায় একযুগ দেশের বাইরে। তিনিও ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলাসহ একাধিক মামলায় দ-াদেশপ্রাপ্ত। এমতাবস্থায় দলটি ভোটে থাকলেও নেতৃত্বের বড়ই অভাব। বিএনপি মূলত ড. কামালের মতো এক নেতাকে সামনে রেখে তাদের ওপর যে জঙ্গীবাদ ও সন্ত্রাসবাদের সিল পড়েছে তা দূর করতে চাইছে। তাছাড়া দলটির অবস্থা এমন পর্যায়ে গিয়ে ঠেকেছে যে, সারাদেশে সভা সমাবেশ করাও কঠিন হয়ে আছে। জাতীয় ঐক্যফ্রন্টে অন্তর্ভুক্ত হওয়ায় বিএনপির সবচেয়ে স্বস্তির বিষয় হলো, দলটি সভা সমাবেশ করতে পারছে অন্যদের সঙ্গে নিয়ে। নির্বাচন সামনে রেখে বিএনপির পক্ষ থেকে সরকারের সঙ্গে আলোচনার প্রস্তাব যেখানে প্রত্যাখ্যাত হয়ে আসছিল, সেখানে ইতিবাচক সাড়া মিলেছে ড. কামালের দেয়া এক চিঠিতেই। গণফোরাম নেতা ড. কামাল এবং বিএনপির মধ্যে আদর্শিক দূরত্ব অনেক। ড. কামাল তার প্রতিটি বক্তব্যেই শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করছেন বঙ্গবন্ধুকে। অথচ, এখনও উঠে আসেনি বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়ার নাম। শুধু তা-ই নয়, খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবিটিও তাকে স্মরণ করিয়ে দিতে হচ্ছে। এ যেন ইচ্ছার বিরুদ্ধে বিএনপি নেত্রীর মুক্তির দাবি মুখে আনার মতো। সঙ্গত কারণেই আলোচনায় উঠে এসেছে এটা কি ড. কামালের কৌশল না অন্য কিছু? বিএনপির দীর্ঘদিনের দাবি উপেক্ষিত হওয়ার পর আচমকা ড. কামালের চিঠির জবাবে কেন সরকার আলোচনায় সায় দিল, তা নিয়েও প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। বিএনপি চেয়ারপার্সন আরেক মামলার রায়ে সাত বছর দ-িত হওয়ায় নতুন করে সঙ্কট তৈরি হয়েছে দলের নেতাকর্মীদের মাঝে। আগামীতে অপেক্ষা করছে অসংখ্য মামলা নিয়ে বিএনপি চেয়ারপার্সনসহ বহু নেতার ভাগ্য। সঙ্গত কারণে বিএনপি শিবিরে তাদের চেয়ারপার্সন ও ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের রাজনৈতিক ভাগ্য কী হতে যাচ্ছে সেটিও ব্যাপকভাবে আলোচিত।
×