ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

মওলানা ইউসুফের ৮ সহযোগী এবার জঙ্গী অর্থায়নে আটক

প্রকাশিত: ০৬:১২, ৩০ অক্টোবর ২০১৮

মওলানা ইউসুফের ৮ সহযোগী এবার জঙ্গী অর্থায়নে আটক

গাফফার খান চৌধুরী ॥ অবশেষে এনজিওর মাধ্যমে জঙ্গী অর্থায়নের দায়ে গ্রেফতার হলো রাজাকার বাহিনীর প্রতিষ্ঠাতা জামায়াতের সাবেক নায়েবে আমীর ও যুদ্ধাপরাধ মামলা চলাকালে মৃত মাওলানা আবুল কালাম মোহাম্মদ ইউসুফের আট সহযোগী। এরা জামায়াত-নেতাকর্মী হিসেবে এরা এনজিওতে যুক্ত ছিল। বিগত বিএনপি-জামায়াত জোট আমলে চাষী কল্যাণ সমিতি নামের এনজিওটির থেকে নিবন্ধন নেন এনজিও ব্যুরোর কাছে। এরপর এনজিওটির মাধ্যমে জঙ্গীবাদে অর্থায়ন করে আসছিল। এনজিওটির সার্বিক কর্মকাণ্ড জামায়াতকে লিখিত অবহিত করা হতো। ২০০৭ থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত এনজিওটির মাধ্যমে বিদেশে অর্থ এসেছে সাড়ে ৬২ কোটি টাকারও বেশি। এসব অর্থের অধিকাংশই জঙ্গীবাদ বিস্তারে ব্যয় করা হয়েছে। জঙ্গী অর্থায়নে সহায়তাকারী আরও নয় জামায়াত নেতাকর্মী পলাতক। তাদের গ্রেফতারে অভিযান চলছে। পুলিশের সিআইডি সূত্রে চাঞ্চল্যকর এ তথ্য জানা গেছে। সিআইডির অর্গানাইজড ক্রাইম বিভাগের বিশেষ পুলিশ সুপার মোল্লা নজরুল ইসলাম জনকণ্ঠকে বলেন, দীর্ঘদিন ধরেই চাষী কল্যাণ সমিতির মাধ্যমে বিদেশ থেকে অর্থ এনে জঙ্গী অর্থায়ন, আত্মসাত ও এনজিওটির মাধ্যমে অর্থ পাচারের বিষয়টির তদন্ত চলছিল। দীর্ঘ তদন্তে তার প্রমাণ মেলে। তারই ধারাবাহিকতায় এনজিওটির সঙ্গে জড়িতদের গ্রেফতারে অভিযান চালানো হয়। রবিবার এক অভিযানে গ্রেফতার করা হয় এনজিওটির সঙ্গে জড়িত আট জনকে। যারা জামায়াত-নেতাকর্মী। এরাই নানাভাবে এনজিওর মাধ্যমে আসা টাকা জঙ্গীবাদে অর্থায়ন করতে। এরা হচ্ছে ফজলুল হক রিকাবদার। পিতা-মৃত আব্দুল আজিজ রিকাবদার। বাড়ি নরসিংদীর শিবপুর থানাধীন খড়িয়া গ্রামে। ফজলুল হক ঢাকার কাঁঠালবাগানের ৭৭ নম্বর বাড়িতে বসবাস করে। হুমায়ুন কবীর। বাড়ি লক্ষ্মীপুর জেলার রায়গঞ্জের ডুমুরিয়ার মুন্সীবাড়িতে। আশরাফুল হক। পিতা মৃত মুন্সী জাকিরুল হক। মা মৃত মালেকা বেগম। বাড়ি ঝিনাইদহ সদরের চাকলাপাড়ায় । তিনি ঢাকার ভাটারার মসজিদ রোড়ের পূর্ব নূরের চালার ডি ব্লকের ৪ নম্বর লেনের ৪৬ নম্বর বাড়িতে। আসগর হোসাইন। পিতা ইয়াকুব আলী সরদার। বাড়ি যশোরের কেশবপুর থানাধীন মঙ্গলকোট গ্রামে। তিনি মগবাজারের পূর্বনয়াটোলার ৩০/১/৩ নম্বর বাড়িতে থাকতেন। শেখ শাহজাহান কবীর। পিতা মৃত শেখ ইসমাইল। মা মৃত মালেকা বেগম। বাড়ি ফরিদপুর কোতোয়ালি থানার পশ্চিম খাবাসপুর গ্রামে। তিনি হাতিরঝিল মীরবাগের ১/এইচ/২ কাজী মনজিলে বসবাস করতেন। মনিরুল ইসলাম। পিতা-মৃত বেলায়েত হোসেন। মা মৃত জোবেদা বেগম। বাড়ি খুলনার রূপসা থানাধীন তিলক গ্রামে। আব্দুর রউফ। পিতা মৃত আব্দুল আজিজ। বাড়ি ফরিদপুর স্টেশন রোডের আজিজ কুটিরে। অপরজন আল মামুন খন্দকার। পিতা সুলতানুল আলম খন্দকার। মা মরিয়ম বেগম। বাড়ি পটুয়াখালীর জৈনকাঠিতে। সিআইডির বিশেষ পুলিশ সুপার মোল্লা নজরুল ইসলাম আটকদের জিজ্ঞাসাবাদে এবং অনুসন্ধানে পাওয়া তথ্যের বরাত দিয়ে আরও জানান, মহান স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় রাজাকার বাহিনীর প্রতিষ্ঠাতা ও ২০১৪ সালে যুদ্ধাপরাধ মামলার বিচার চলাকালে আসামি মাওলানা ইউসুফ চাষী কল্যাণ সমিতি নামের একটি এনজিও প্রতিষ্ঠা করেন। এনজিওটি প্রতিষ্ঠা করা হয় ১৯৭৭ সালে। ১৯৯২ সালে সমাজসেবা অধিদফতর এবং ২০০৫ সালে এনজিও ব্যুরো এ্যাফেয়ার্স থেকে এনজিও নিবন্ধিত হয়। গঠনতান্ত্রিকভাবে এটি এনজিও বিষয়ক ব্যুরো থেকে অরাজনৈতিক বেসরকারী উন্নয়নমূলক প্রতিষ্ঠান (এনজিও) হিসেবে অনুমতি পায়। প্রতিষ্ঠার পর থেকেই এনজিওটির যাবতীয় কার্যক্রম জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেলকে আনুষ্ঠানিক চিঠির মাধ্যমে লিখিত অবহিত করা হতো। এই এনজিওটি ছাড়াও জামায়াতে ইসলামীর কৃষিবিদরা নব কৃষি প্রাইভেট লিমিটেড ও নবধারা কল্যাণ ফাউন্ডেশন নামের আরও দুটি সংগঠন গড়ে তুলে মৌলবাদ ও জঙ্গীবাদ প্রচার কাজে লাগায়। অনুসন্ধানে জানা গেছে, কক্সবাজার-২ (মহেশখালী-কুতুবদিয়া) আসনের জামায়াতের হামিদুর রহমান আযাদের নির্দেশে ‘চাষী কল্যাণ সমিতি’র এ্যাকাউন্ট থেকে ৪২ লাখ টাকা ‘নব কৃষি প্রাইভেট লিমিটেডে স্থানান্তর করা হয়। একইভাবে গত বছরের ৩১ আগস্ট চাষী কল্যাণ সমিতির থেকে নব কৃষি প্রাইভেট লিমিটেডের এ্যাকাউন্টে আরও ১০ লাখ টাকা স্থানান্তর করে। বাংলাদেশ চাষী কল্যাণের নামে তারা অধিকাংশ বিদেশী অনুদান সংগ্রহ করলেও তা চাষীদের কল্যাণে ব্যয় করা হতো না। নিজেরাই ইচ্ছেমত মসজিদ-মাদ্রাসা নির্মাণে কিছু অংশ ব্যয় করত। বাকি টাকা দেশে মৌলবাদ ও জঙ্গীবাদ প্রচারণার কাজে ব্যয় করত। এ সংক্রান্ত হবিগঞ্জের বানিয়াচং ও সদর থানায় এবং ঢাকার রমনা মডেল থানায় ও কাফরুল থানায় একটি করে মোট তিনটি মামলা আছে। মোল্লা নজরুল আরও জানান, মুহাম্মদ আব্দুল করিম, গোলাম রাব্বানী, শেখ মোঃ জিল্লুর রহমান আজমী, শেখ মুহাম্মদ মাসউদ, ড. মোঃ সানাউল্লাহ, সিরাজুল হক, এস এম জাকির (৩৬), নুরুল আমিন ফারুক, জামায়াতে ইসলামীর কক্সবাজার-২ আসনের সাবেক জামায়াতের এমপি হামিদুর রহমান আযাদ, মোস্তাক আহমেদ খা পলাতক আছেন। তাদের গ্রেফতারে অভিযান চলছে।
×