ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

২য় দিনেও পোড়া মবিল আলকাতরা লাগানো হয়

পরিবহন শ্রমিকরা বেপরোয়া, ফের কর্মবিরতির হুমকি

প্রকাশিত: ০৫:৫৮, ৩০ অক্টোবর ২০১৮

পরিবহন শ্রমিকরা বেপরোয়া, ফের কর্মবিরতির হুমকি

স্টাফ রিপোর্টার ॥ সারাদেশে দিনভর চরম জনদুর্ভোগ সৃষ্টির মধ্য দিয়ে দ্বিতীয় দিনের মতো পরিবহন শ্রমিকরা কর্মবিরতি পালন করল। সদ্য পাস হওয়া সড়ক পরিবহন আইনের কিছু ধারা সংস্কার ও আট দফা দাবি আদায়ে রবিবার সকাল থেকে টানা ৪৮ ঘণ্টার কর্মবিরতির ডাক দেয় বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশন। কর্মসূচীর দ্বিতীয় দিনেও ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে অটোরিক্সা, এ্যাম্বুলেন্স চালকদের মুখে ও গায়ে পোড়া মবিলসহ আলকাতরা লাগিয়ে দেয় আন্দোলনরত শ্রমিকরা। চালায় তা-ব। শ্রমিক নেতারা জানিয়েছেন, আজ মঙ্গলবার সকাল ৬টায় শেষ হচ্ছে ৪৮ ঘণ্টার কর্মসূচী। দাবি আদায়ে আগামীকাল থেকে সরকারকে ২১ দিনের আল্টিমেটাম দেয়া হয়েছে। এর মধ্যে দাবি পূরণ না হলে ৯৬ ঘণ্টার কর্মবিরতির হুমকি দেয়া হয়েছে। আগামী তিন নবেম্বর দাবি দাওয়া ও কর্মসূচী উল্লেখ করে সড়ক পরিবহন মন্ত্রণালয়ে চিঠি দেয়া হবে বলেও জানিয়েছেন শ্রমিক নেতারা। পরিবহন ধর্মঘটের নামে নৈরাজ্য করায় সংসদে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর বিবৃতি দেয়ার দাবি জানিয়েছেন সংসদ সদস্যরা। তাছাড়া ধর্মঘটকে অবৈধ ও শ্রম আইন বিরোধী আখ্যা দিয়ে জড়িতদের বিরুদ্ধে আইনী ব্যবস্থা নেয়ার দাবি জানিয়েছে সড়ক পরিবহন শ্রমিক লীগ। পাশাপাশি যাত্রী কল্যাণ সমিতির পক্ষ থেকে জনস্বার্থ বিবেচনায় কর্মসূচী প্রত্যাহারের আহ্বান জানানো হয়েছে। মহাখালী আন্তঃজেলা বাস মালিক সমিতির সভাপতি আবুল কালাম আজাদ জানান, পরিবহন শ্রমিকদের কেউ কাজে যোগ দেয়নি। তারা আন্তঃজেলা রুটের কোন বাস ছাড়তে দিচ্ছে না। ফলে মহাখালী বাস টার্মিনাল থেকে সব ধরনের বাস চলাচল বন্ধ রয়েছে। তিনি জানান, ঢাকা মহানগরীতে কোন জেলার বাস প্রবেশ করছে না। সকাল থেকে রাত অবধি ঢাকা মহানগরীর চিত্র ছিল একইরকম। বলতে গেলে পরিবহন শূন্য। তবে রিক্সার রাজত্ব ছিল। কিছু মোটরসাইকেলও চলাচল করেছে। পরিবহন শ্রমিকদের বাধার কারণে প্রাইভেটকার ও অটোরিক্সার সংখ্যা কম ছিল। ফলে অফিসমুখী যাত্রীদের চরম দুর্ভোগ পোহাতে হয়েছে। কেউ পায়ে হেঁটে আবার কেউবা ভ্যানে বাড়তি ভাড়া দিয়ে গন্তব্যে পৌঁছেছেন। এ্যাপভিত্তিক পরিবহন সেবাও ছিল সীমিত। ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষার পরও এ্যাপে মোটরসাইকেল পাননি অনেকেই। আবার ছুটি নিয়ে যারা ঢাকার বাইরে গিয়েছিলেন তাদের বেশিরভাগই আটকা পড়েছেন। সোমবার কমলাপুর রেল স্টেশনে গিয়ে দেখা গেছে, প্রতিটি ট্রেন বিপুলসংখ্যক যাত্রী নিয়ে ঢাকা আসছে। ট্রেনের ছাদসহ ভেতরে ছিল উপচেপড়া মানুষের ভিড়। সদরঘাট লঞ্চ টার্মিনালে গিয়েও একই চিত্র লক্ষ্য করা গেছে। তবে নেহাত জরুরী প্রয়োজন ছাড়া কেউ ঢাকা আসছেন না। দ্বিতীয় দিনে সকাল থেকে পরিবহন শ্রমিকরা রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় অবস্থান নেয়। প্রথম দিনের মতোই তারা বিভিন্ন পয়েন্টে সহিংস হয়ে ওঠে। পোস্তগোলা, কেরানীগঞ্জ, যাত্রাবাড়ী, ডেমরাসহ বিভিন্ন এলাকায় শ্রমিকরা এ্যাম্বুলেন্সসহ বিভিন্ন পরিবহন থামিয়ে চালকদের মুখে কালি লাগিয়ে দেয়। বিভিন্ন পরিবহন ভাঙচুরের অভিযোগও মিলেছে শ্রমিকদের বিরুদ্ধে। রাত সাড়ে সাতটায় সড়ক পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশনের সভাপতি সদিকুর রহমান হিরু জনকণ্ঠ’কে বলেন, ৪৮ ঘণ্টার কর্মসূচী চলাকালে সরকারের পক্ষ থেকে আমাদের সঙ্গে এখন পর্যন্ত কেউ যোগাযোগ করেনি। ফলে মাঠ পর্যায় থেকে কর্মসূচী লাগাতার করার চাপ আছে। কিন্তু জনস্বার্থ বিবেচনায় নিয়ে মঙ্গলবার সকাল ৬টায় কর্মসূচী শেষ হচ্ছে। এর মধ্য দিয়ে আমাদের চলমান কর্মসূচী স্থগিত ঘোষণা করব। তিনি বলেন, আমাদের দাবি দাওয়া বাস্তবায়নের স্বার্থে বেশকিছু সিদ্ধান্ত নিয়েছি। এগুলো মধ্যে রয়েছে, এক সপ্তাহের মধ্যে দাবি বাস্তবায়নে সরকারকে আবারো চিঠি দেয়া হবে। এ ছাড়া সরকারের ওপর আলোচনার চাপ সৃষ্টি করতে মানববন্ধন, টার্মিনালে টার্মিনালে শ্রমিক সমাবেশ, জনসংযোগসহ সংবাদ সম্মেলন করা হবে। ২১/২৫ দিন সময় দিয়ে সরকারকে চিঠি দেয়ার পরও দাবি মানা না হলে ৯৬ ঘণ্টার কর্মবিরতি ঘোষণা করা হবে। তিনি বলেন, আমাদের সকল সিদ্ধান্ত কমিটির সবাইকে অবহিত করে চূড়ান্ত করা হবে। তাছাড়া একটু সময় দিয়ে কর্মসূচী করতে চাই। যেন সাধারণ মানুষকে বিপাকে না পড়তে হয়। সন্ধ্যায় সড়ক পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক ওসমান আলী বলেন, মঙ্গলবার সকাল ৬টায় আমাদের ৪৮ ঘণ্টার কর্মসূচী শেষ হবে। তারপর দাবি আদায়ে আমরা সরকারকে ২১ দিন সময় দেব। এরমধ্যে দাবি পূরণ না হলে ফের ৯৬ ঘণ্টার কর্মবিরতির ডাক দেয়া হবে। তিনি বলেন, দুই দিনের কর্মসূচী চলাকালে সরকারের পক্ষ থেকে আমাদের সঙ্গে কেউ যোগাযোগ করেনি। যোগাযোগ করা হলে আমরা জনস্বার্থ বিবেচনায় যে কোন রকম সিদ্ধান্ত নিতে পারতাম। তিনি বলেন, নতুন করে কর্মসূচী দেয়ার বিষয়ে নিজেদের মধ্যে আলোচনা চলছে। সকলের সঙ্গে আলোচনা করে কর্মসূচী চূড়ান্ত করার কথা জানান তিনি। বলেন, আমরা জনদুর্ভোগ সৃষ্টি করতে চাই না। কিন্তু সরকার এ পথে নিতে আমাদের বাধ্য করেছে। দাবি আদায়ে আমরা ঢাকাসহ বিভাগীয় শহরে শ্রমিক সমাবেশ, লিফলেট বিতরণ করব। আইনী ব্যবস্থা নেয়ার দাবি ॥ বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশনের ডাকা ৪৮ ঘণ্টার ধর্মঘটকে অবৈধ ও শ্রম আইনবিরোধী বলে আখ্যায়িত করেছে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন শ্রমিক লীগ। একইসঙ্গে এই ধর্মঘটের সঙ্গে জড়িতদের বিরুদ্ধে আইনী ব্যবস্থা নেয়ার আহ্বানও জানিয়েছে সংগঠনটি। সোমবার গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে সংগঠনের সভাপতি মোঃ রফিকুল ইসলাম ও সাধারণ সম্পাদক মোঃ ইনসুর আলী এ দাবি জানান। বিবৃতিতে বলা হয়, খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে দায়ের করা জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলার রায়কে সামনে রেখে মানুষকে জিম্মি করে অবৈধ ধর্মঘট ডেকেছে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশন। অথচ এই পরিবহন আইন বাংলাদশে সড়ক পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশনের নেতারা উপস্থিত থেকে খসড়া চূড়ান্ত করে পার্লামেন্টে অনুমোদনের জন্য পাঠায়। এতে আরও বলা হয়, বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশনের এই দ্বিমুখী আচরণে দেশে আজ অচলাবস্থা সৃষ্টি হয়েছে। ফেডারেশনের নেতাদের নির্দেশে দুষ্কৃতকারীর দেশের ভবিষ্যত প্রজন্ম তথা স্কুল কলেজের শিক্ষার্থী, ব্যক্তিগত গাড়িচালক, এ্যাম্বুলেন্সের ড্রাইভারসহ সাধারণ চালকদের মুখে কালি লাগিয়ে দিচ্ছে। এতে আর বলা হয়, বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশনের নেতাদের ব্যক্তিগত স্বার্থ হাসিল করতে শেখ হাসিনার সরকারকে বিপদে ফেলার জন্য এই বেআইনী ধর্মঘট ডেকেছে। তারা পরিবহন শ্রমিকদের ভিন্ন পথে পরিচালনা করে দেশবাসীর সামনে প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে উপস্থাপন করেছে। চলমান ধর্মঘটে গাড়ি ভাঙচুর, মানুষের মুখে কালি-পোড়া মোবিল লাগানো ও শিশু হত্যায় জড়িতদের অবিলম্বে গ্রেফতার করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানানো হয় বিবৃতিতে। যাত্রাবাড়ীতে শ্রমিকদের অবস্থান ॥ ৪৮ ঘণ্টা ধর্মঘটের দ্বিতীয় দিন সকালে রাজধানীর যাত্রাবাড়ী এলাকায় শ্রমিকরা সড়কে অবস্থান নেয়। যাত্রাবাড়ীর মাছ বাজার এলাকায় উত্তেজিত শ্রমিকরা রাস্তা অবরোধের চেষ্ট করে। ধর্মঘটে শুধু বাস বা গণপরিবহন বন্ধের কথা থাকলেও শ্রমিকরা সিএনজি, অটোরিক্সা পর্যন্ত আটকে দেয়। এসময় যাত্রীদের নামিয়ে দিয়ে গাড়ির চাকার হাওয়া ছাড়তে দেখা যায়। পরে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে পুলিশ হস্তক্ষেপ করলে শ্রমিকরা শান্ত হয়। যাত্রাবাড়ী থানার ওসি (অপারেশন) আয়ান মাহমুদ দ্বীপ ঘটনাস্থলে বলেন যাত্রাবাড়ী এলাকায় বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির চেষ্টা করা হলে কঠোর হস্তে দমন করা হবে, ছোট যে কোন ধরনের যানবাহন চলবে। এসব যানবাহন চলাচলে বাধা দেয়া যাবে না। এ সময় যাত্রাবাড়ী থানার ওসি কাজী ওয়াজেদ আলী বিক্ষোভরত শ্রমিকদের বুঝিয়ে পরিস্থিতি শান্ত করার চেষ্টা করেন। তিনি বলেন, এখানে কেউ যদি কালি মাখিয়ে দেয়, কেউ যদি গাড়ি ভাঙচুরের চেষ্টা চালায় অথবা এ্যাম্বুলেন্স অবরোধ করে তাহলে কঠোর শাস্তির মুখোমুখি হতে হবে। শান্তিপূর্ণ ভাবে আন্দোলন না করলে এর দায়ভার তাদের নিতে হবে। প্রত্যাহারের আহ্বান যাত্রী কল্যাণ সমিতির ॥ দেশবাসীকে চরম দুর্ভোগ থেকে মুক্তি দিতে পরিবহন ধর্মঘট প্রত্যাহারের দাবি জানিয়েছে বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতি। গণমাধ্যামে পাঠানো এক বিবৃতিতে সংগঠনের মহাসচিব মোঃ মোজাম্মেল হক চৌধুরী এই দাবি জানাই। তিনি বলেন, দেশের বেশক’টি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষা, নিয়োগ পরীক্ষা, রোগীসহ এ্যাম্বুলেন্স আটকে দেয়া, অতি জরুরী প্রয়োজনে রাস্তায় বের হলে ব্যক্তিগত গাড়ির যাত্রী ও চালকের মুখে কালি লেপন, গ্রামগঞ্জে গণপরিবহনের পাশাপাশি মোটরসাইকেল, রিক্সা চলাচলে বাধাদানের কারণে সমগ্র দেশবাসী কথিত পরিবহন শ্রমিক নামধারী দুর্বৃত্তদের হাতে জিম্মি হয়ে পড়েছে। বিবৃতিতে বলা হয়, কর্মসূচীর কারণে ছাত্র-ছাত্রী, অসুস্থ রোগীকেও রিক্সা থেকে নামিয়ে দিচ্ছে, নাজেহাল করা হচ্ছে। এহেন পরিস্থিতিতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর নীরব দর্শকের ভূমিকায় দেশবাসী হতাশ হয়েছে। রাস্তায় যাত্রী, পথচারী, ছাত্র-ছাত্রী, অসুস্থ রোগীর পথে পথে চরম দুর্ভোগের পাশপাশি পরিবহন শ্রমিকদের হাতে লাঞ্ছিত হওয়ার ঘটনায় সরকারের ভাবমূর্তি প্রশ্নের সম্মুখীন। নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার আগে দেশবাসীকে জিম্মি করে সরকারকে বেকায়দায় ফেলে দাবি আদায়ের হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার না করে সরকারের সঙ্গে আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে এই সমস্যা সমাধানের আহ্বান জানান তিনি। বিবৃতিতে তিনি আরও বলেন, ধর্মঘট আহ্বানকারী সংগঠন বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশন- সড়ক পরিবহন আইন -২০১৮ প্রণয়ন কমিটির সদস্য ছিল। এছাড়াও বাস মালিক সমিতি, শ্রমিক ফেডারেশনের প্রতিনিধি সরকারের রয়েছে। সরকারের কাছাকাছি অবস্থান করে জনগণকে জিম্মি করে ক্ষমতা ও শক্তি প্রয়োগ না করে সরকারের সঙ্গে আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে সমস্যা সমাধানের দাবি জানান তিনি। রূপগঞ্জে লেগুনা যাত্রীদের ওপর হামলায় আটজন আহত ॥ নিজস্ব সংবাদদাতা, রূপগঞ্জ থেকে জানান, ধর্মঘটকে কেন্দ্র করে নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জে পৃথক স্থানে লেগুনা ও অটোরিক্সা যাত্রীদের ওপর পরিবহন শ্রমিকরা হামলা চালিয়েছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। এ সময় আট যাত্রী আহত হয়েছেন। সোমবার সকালে উপজেলার ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের বরপা ও বিশ^রোড এলাকায় ঘটে এ ঘটনা। প্রত্যক্ষদর্শী ও আহতরা জানান, সারা দেশে পরিবহন শ্রমিক ধর্মঘটকে কেন্দ্র করে রূপগঞ্জ উপজেলার ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের বরপা ও বিশ^রোড এলাকায় অবস্থান নেয় পরিবহন শ্রমিকরা। সকাল থেকেই লেগুনা, ব্যাটারিত চালিত অটোরিক্সা, সিএনজি চালিত অটোরিক্সাসহ ছোট-বড় যানবাহন চলাচলে বাধা দিতে থাকে। বরপা এলাকায় পরিবহন শ্রমিক বাবুল ও আজাহারসহ তাদের লোকজন একটি লেগুনা আটক করে যাত্রীদের নামিয়ে দেয়ার চেষ্টা চালায়। এ সময় আনোয়ার নামে এক যাত্রী প্রতিবাদ করেন। এক পর্যায়ে পরিবহন শ্রমিকরা যাত্রীদের ওপর হামলা চালিয়ে আনোয়ারসহ বিল্লাল, আমান উল্লাহ ও সিদ্দিক নামে চার যাত্রীকে কিলঘুষি মেরে নিলাফুলা জখম করে। অপর দিকে, বিশ^রোড এলাকায় পরিবহন শ্রমিক রাসেলসহ তাদের লোকজন ব্যাটারিচালিত অটোরিক্সা থেকে যাত্রীদের নামিয়ে অপমান করে। এতে প্রতিবাদ করায় রেহেনা আক্তার, সালাম মিয়া, আকবর আলী ও শাকিলকে চর-থাপ্পড় মারা হয়। এ বিষয়ে অভিযুক্তদের সঙ্গে কথা বলতে গেলে তারা মারধরের অভিযোগটি মিথ্যা বলে দাবি করেন। মুন্সীগঞ্জে ভোগান্তি ॥ স্টাফ রিপোর্টার, মুন্সীগঞ্জ থেকে জানান, ধর্মঘটের দ্বিতীয় দিনেও যাত্রীসাধারণের ভোগান্তি ছিল চরমে। মুন্সীগঞ্জের ঢাকা-মাওয়া ও ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে দূরপাল্লার বাস ও পণ্যবাহী যান চলাচল বন্ধ রয়েছে। তাবে লঞ্চ, ফেরি, স্পীডবোট, সিএনজিসহ ছোট যান চলাচল স্বাভাবিক রয়েছে। রবিবারের মতো সোমবারও মহাসড়কদুটির বিভিন্ন পয়েন্টে পরিবহন শ্রমিকরা অবস্থান নেয়। ব্যক্তিগত গাড়ি, লেগুনা, সিএনজি, অটোরিক্সা ও রিক্সা চলাচল করছে মহাসড়ক ও অন্যান্য রাস্তায়। সোমবার ঢাকা-মাওয়া মহাসড়কে গণপরিবহন না থাকাতে যাত্রীদের দুর্ভোগ পোহাতে দেখা যায়। মহাসড়ক ছিল ফাঁকা। মহাসড়কের বিভিন্ন পয়েন্টে যাত্রীদের যানবাহনের অপেক্ষায় দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা গেছে। সড়কে গণপরিবহন চলাচল না করায় স্কুল কলেজের শিক্ষার্থীদের পড়তে হয় চরম বেকায়দায়। মহাসড়কে নিষিদ্ধ অটো রিক্সা, সিএনজি ও লেগুনাগুলোই ছিল যাত্রীদের একমাত্র ভরসা। শিমুলিয়া ঘাটে ঢাকা-মাওয়ার লোকাল বাসগুলো পাকিং ইয়ার্ডে থাকলেও ঢাকার উদ্দেশে ছেড়ে যায়নি কোন বাস। যাত্রীরা বাস না পেয়ে ভাড়ায় চালিত মাইক্রোবাস, প্রাইভেট কার, লেগুনা, মোটরসাইকেলসহ বিভিন্ন প্রকার যানবাহনে করে বিকল্পভাবে গন্তব্যের উদ্দেশে রওনা দেন। ফেরিগুলোকে গাড়ির অপেক্ষায় দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা গেছে। প্রাইভেট কারে যাত্রী প্রতি ৫শ’ আর মোটরসাইকেলে ৩ শ’ টাকা করে যাত্রীরা ঢাকায় গেছেন। মহাসড়কে চলেনি কোন দূরপাল্লার বাস। মাঝে মধ্যে ২/১টি লোকাল বাস চলাচল করতে দেখা গেছে। শিমুলিয়া-কাঁঠালবাড়ি নৌরুটে লঞ্চ, সিবোট ও ফেরি চলেছে নিয়মিতভাবে। তবে এদিন গত দিনের থেকে লোকসংখ্যা ছিল কম। ঢাকা-মাওয়া মহাসড়কের মুন্সীগঞ্জের অপর উপজেলা সিরাজদিখানে গণপরিবহন না থাকাতে যাত্রীদের দুর্ভোগে পড়তে হয়। ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে মুন্সীগঞ্জের গজারিয়ায় অংশেও দূরপাল্লার কোন গাড়ি চলতে দেখা যায়নি। রাজশাহীতে ট্রেনে বাড়তি চাপ ॥ স্টাফ রিপোর্টার, রাজশাহী থেকে জানান, সোমবারেও রাজশাহী থেকে ছেড়ে যায়নি কোন দূরপাল্লা ও আন্তঃজেলা রুটের বাস। ফলে এদিনেও রাস্তায় বেরিয়ে চরম দুর্ভোগে পড়েছেন যাত্রীরা। সড়ক পথে বিভাগীয় শহর রাজশাহীর সঙ্গে সারাদেশের যোগাযোগ ব্যবস্থা বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ায় বাড়তি চাপ পড়েছে ট্রেনে। রেলওয়ে স্টেশনে এখন মানুষের উপচে পড়া ভিড়। সোমবার সকাল থেকে রাজশাহীর পরিবহন শ্রমিকদের বাসস্ট্যান্ডে অবস্থান করতে দেখা গেছে। নগরীর আমচত্বর ও কাশিয়াডাঙ্গা এলাকাতেও অবস্থান নিয়েছে পরিবহন শ্রমিকরা। দুপুর পর্যন্ত রাজশাহীর কোথাও কোনো অপ্রীতিকর ঘটনার খবর পাওয়া যায়নি। এদিকে রাজশাহীর গোদাগাড়ীর প্রেমতলীতে শুরু হয়েছে শ্রী ঠাকুর নরোত্তম ধামের তীরভাব তিথি। সেখানেও মানুষ আসতে পারছেন না পরিবহন না থাকার কারণে। এ তিথিতে আসা কুড়িগ্রামের রমেশচন্দ্র বর্মণ বলেন, ‘আগের দিন বাসে এসেছি নাটোর পর্যন্ত। পরে ট্রেনে আসলাম রাজশাহীতে। রাজশাহীতে এসে শুনছি বাস বন্ধ। কিভাবে যাব প্রেমতলী মেলায় বুঝতে পারছি না। অটোরিক্সায় ৪০০ থেকে সাড়ে ৪০০ টাকা ভাড়া চাচ্ছে। রাজশাহী রেলওয়ে স্টেশনের সুপারিনটেনডেন্ট গোলাম মোস্তফা জানান, এমনিতেই ট্রেনে ভিড় বেশি। এর ওপর পরিবহন ধর্মঘটের করণে রবিবার থেকে বাড়তি চাপ পড়েছে। মাদারীপুর গাড়িতে আগুন ধরানোর চেষ্টা ॥ নিজস্ব সংবাদদাতা, মাদারীপুর থেকে জানান, ধর্মঘটের দ্বিতীয় দিন জেলার সর্বত্র তেমন কোন অপ্রীতিকর ঘটনা না ঘটলেও রবিবার প্রথম দিনে সরকারী একটি জরুরী কাজে বাধা প্রদান করে শ্রমিকরা। ধর্মঘটের সময় গাড়ি থামিয়ে মারধরের অভিযোগ পাওয়া গেছে। রবিবার সকালে পুরাতন বাসস্ট্যান্ড এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। এ সময় নির্বাচন অফিসের লোকজন স্মার্ট কার্ড (জাতীয় পরিচয়পত্র) বিতরণ করতে যাওয়ার সময় তাদের তিনটি গাড়ি সড়কে ঘণ্টাখানেক আটকে দুইজনকে মারধর করে শ্রমিকরা। শ্রমিকদের মারধরে আহত চালক আলাউদ্দিন ও নির্বাচন অফিসের ডাটা এন্ট্রি অপারেটর সজীব দাসকে মাদারীপুর সদর হাসপাতালে চিকিৎসা দেয়া হয়। মাদারীপুর সদর থানার ওসি (তদন্ত) মোঃ সিরাজুল হক জানান, ‘গাড়ি রোধ করে সরকারী কাজে বাধা দেয়ার অভিযোগে সদর উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা বিকাশ চন্দ্র দে থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি করেছেন। মাদারীপুর পুলিশ সুপার সুব্রত কুমার হালদার বলেন,‘এ ব্যাপারে জেলা ও উপজেলা নির্বাচন অফিস থেকে জানানো হলে দ্রুত পুলিশ ব্যবস্থা গ্রহণ করে এবং সরঞ্জামাদিসহ নির্বাচন অফিসের ভাড়া করা গাড়ি গন্তব্যস্থলে পৌঁছে দেয়। চট্টগ্রাম বন্দরে পণ্য ডেলিভারিতে অচলাবস্থা ॥ চট্টগ্রাম অফিস জানান, চট্টগ্রামে দ্বিতীয় দিনের পরিবহন ধর্মঘটে সাধারণ মানুষের দুর্ভোগ ছিল চরমে। সোমবার সকাল থেকেই আগের দিনের চিত্র। অফিসগামী যাত্রী এবং শিক্ষার্থীদের পড়তে হয় অবর্ণনীয় ভোগান্তির মধ্যে। মহাসড়ক এবং নগরীর অভ্যন্তর সর্বত্রই যানবাহন সঙ্কট। মাঝেমধ্যে দুয়েকটি গাড়ি দেখা গেলেও তাতে ওঠার অবস্থা ছিল না। এদিন সকালে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক বহনকারী একটি বাসের চালকের ওপর হামলার ঘটনা ঘটেছে। এদিকে, টানা দুদিনের পরিবহন ধর্মঘটে চট্টগ্রাম বন্দর থেকে পণ্য খালাসে অচলাবস্থা দেখা দেয়। এতে করে উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছে ব্যবসায়ী সমাজ। সোমবার সকালে ধর্মঘটী শ্রমিকরা জড়ো হয় নগরীর বিভিন্ন প্রবেশমুখে। বাস টার্মিনালগুলোতেও তাদের সক্রিয় উপস্থিতি ছিল। টার্মিনাল থেকে কোন ধরনের যানবাহন বের করার চেষ্টা যেমন বাধাপ্রাপ্ত হয়েছে, তেমনিভাবে শহরেও ঢুকতে দেয়া হয়নি দূরপাল্লার গাড়ি। সিটি গেট, একে খান মোড়, অক্সিজেন, বহদ্দারহাট, নতুন ব্রিজ, কাপ্তাই রাস্তার মাথাসহ গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টে অবস্থান নিয়ে শ্রমিকরা যানবাহনের গতিরোধ করে। ফলে যাত্রীদের অনেক কষ্টের মুখোমুখি হতে হয়। মহাসড়কে মাঝেমধ্যে দুয়েকটি সিএনজি অটোরিক্সা এবং মাইক্রোবাস চলতে দেখা গেলেও যাত্রীদের ভাড়া গুনতে হয় দুই থেকে তিনগুণ। শহরেও একই অবস্থা। সবচেয়ে বেশি দুর্ভোগ পোহাতে হয় চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থী এবং অভিভাবকদের। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের বহনকারী একটি বাসের চালককে মারধর করে পরিবহন শ্রমিকরা। সকাল ৮টার দিকে বহদ্দারহাট টার্মিনালে এ ঘটনা ঘটে। হামলার শিকার বাসচালক মোঃ দুলালকে চবি চিকিৎসা কেন্দ্রে চিকিৎসা দেয়া হয়। শাটল ট্রেনে তিল ধারণের জায়গা ছিল না। গণপরিবহন বন্ধ থাকায় যানবাহন ভাড়া করে গন্তব্যে যেতে হয়। বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশন পূর্বাঞ্চলীয় সভাপতি মৃণাল চৌধুরী জানান, বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থীদের দিকটি বিবেচনা করে হাটহাজারী রুটে ধর্মঘটের ওপর শিথিলতা রাখা হয়েছে। এছাড়া ওষুধপত্র, খাদ্য দ্রব্য ও জরুরী সেবার যানবাহনগুলোকে এর আওতামুক্ত রাখা হয়েছে। এদিকে, চট্টগ্রাম বন্দর থেকে পণ্য ডেলিভারি এবং বন্দরে কন্টেনার পরিবহনের ক্ষেত্রে দেখা দেয় অচলাবস্থা। বন্দর থেকে প্রতিদিন গড়ে প্রায় আড়াই হাজার কন্টেনার ডেলিভারি হয়ে থাকে। কিন্তু রবি ও সোমবার সড়কপথে কোন কন্টেনার ডেলিভারি হয়নি। তৈরি পোশাক রফতানিকারকদের সংগঠন বিজিএমইএ’র প্রথমসহ সভাপতি মঈনউদ্দিন আহমেদ মিন্টু জনকণ্ঠকে জানান, পরিবহন শ্রমিকদের ধর্মঘটে তারা উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছেন। তৈরি পোশাকের লিড টাইম ধরে রাখা কঠিন হয়ে পড়েছে। দেশের অর্থনীতিকে জিম্মি করে এই ধরনের কর্মসূচী আত্মঘাতী বলে তিনি মন্তব্য করেন। নারায়ণগঞ্জে ৬ গুণ ভাড়া স্টাফ রিপোর্টার, নারায়ণগঞ্জ থেকে জানান, ধর্মঘটের দ্বিতীয় দিনে নারায়ণগঞ্জে গণপরিবহন বন্ধ থাকায় চরম ভোগান্তিতে পড়েছে সাধারণ যাত্রীরা। ঢাকা-চট্টগ্রাম ও ঢাকা-সিলেট মহাসড়ক, ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ লিঙ্করোড ও ঢাকা-ফতুল্লা-নারায়ণগঞ্জ রুটসহ বিভিন্ন রুটে পরিবহন বন্ধ থাকায় অফিসগামীদের পাশাপাশি ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালসহ বিভিন্ন হাসপাতালের থাকা রোগীদের স্বজন ও বিভিন্ন কলেজে ভর্তি পরীক্ষার্থীদেরও চরম ভোগান্তি হয়। যাত্রীবাহী বাস ও মিনিবাস না থাকায় যাত্রীরা সিএনজি, ব্যাটারিচালিত রিক্সা, অটোরিক্সা ও মোটরসাইকেলে করে ৫ গুণ থেকে ৬ গুণ ভাড়া দিয়ে তাদের নির্ধারিত গন্তেব্যে পৌঁছতে হয়েছে। এতে যাত্রীরা চরম ক্ষোভ প্রকাশ করেন। নারায়ণগঞ্জ জেলা ট্রাফিক বিভাগের ইন্সপেক্টর (টিআই, প্রশাসন) মোল্যা তাসলিম হোসেন জানান, পরিবহন ধর্মঘটের দ্বিতীয় দিনে কোন প্রীতিকর ঘটনার খবর পাওয়া যায়নি। তবে গণপরিবহন না থাকায় যাত্রীদের চরম ভোগান্তিতে পড়তে হয়েছে। শ্রমিকদের আইনের আওতায় আনার দাবিতে মানববন্ধন ॥ পরিবহন ধর্মঘটের প্রথম দিনে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের নারায়ণগঞ্জ সরকারী মহিলা কলেজের শিক্ষার্থীদের বহন করা গাড়ি ভাংচুর ও শিক্ষার্থীদের গায়ে কালি ছুড়ে মারার প্রতিবাদে সোমবার সকালে শিক্ষার্থীরা মানববন্ধন করেছে। নগরীর চাষাঢ়া শহীদ মিনারের সামনে এ মানববন্ধন কর্মসূচী পালন করেন। ধর্মঘটে কুয়াকাটায় আটকা ৩০০ পর্যটক ॥ নিজস্ব সংবাদদাতা, কলাপাড়া থেকে জানান, দ্বিতীয় দিনেও উপকূলীয় জনপদ কলাপাড়ায় মানুষের দুর্ভোগ পোহাতে হয়েছে। কুয়াকাটায় আটকা পড়া বহু পর্যটক চরম বিপাকে পড়েছেন। অন্তত ৩০০ পর্যটক এখানে আটকা পড়েছে। কেউ কেউ থ্রি-হুইলসহ বিভিন্ন যানে মাত্রারিক্ত ভাড়ায় জেলা শহর পটুয়াখালীতে গিয়ে লঞ্চে গন্তব্যে ফিরেছেন। এছাড়া নতুন কোন পর্যটক আসতে পারেনি কুয়াকাটায়। ফলে খাবার, আবাসিক হোটেলসহ দোকানপাটে বিক্রি নেই বললেই চলে। কুয়াকাটা হোটেল মোটেল ওনার্স এ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মোতালেব শরীফ জানান, তার মালিকানাধীন কুয়াকাটা গেস্ট হাউসে ২২ পর্যটক আটকা পড়েছেন। ঢাকা, বরিশাল, খুলনা, যশোর, কুষ্টিয়া, বেনাপোলসহ বিভিন্ন রুটের যাত্রীরা পড়েছেন ভোগান্তির কবলে। মংলা বন্দরে পার্শ্ববর্তী দেশগুলোতে পণ্য পরিবহন বন্ধ ॥ মংলা থেকে নিজস্ব সংবাদদাতা জানান, পরিবহন ধর্মঘটের কারণে মংলা বন্দরের জেটির অভ্যন্তরে কন্টেনার ও কার ইয়ার্ড এবং ইপিজেডের আমদানি-রফতানিযোগ্য পণ্য বোঝাই-খালাস ও পরিবহন কাজ বন্ধ রয়েছে। এছাড়া বন্দরের শিল্প এলাকার সকল কলকারখানার উৎপাদিত মালামাল পরিবহন, সরবরাহ ও বিপণন বন্ধ থাকায় আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়েছেন সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা। সোমবারও মংলা থেকে দূরপাল্লার কোন যানবাহন ছেড়ে যায়নি, বন্ধ রয়েছে মংলা-খুলনাসহ অন্যান্য সকল রুটে বাস চলাচলও। দক্ষিণ চট্টগ্রামের পিএবি সড়কে শ্রমিক নৈরাজ্য ॥ নিজস্ব সংবাদদাতা, বাঁশখালী থেকে জানান, ধর্মঘটের দ্বিতীয় দিনে চট্টগ্রামের কর্ণফুলী, আনোয়ারা ও বাঁশখালী উপজেলার ওপর দিয়ে আঞ্চলিক মহাসড়ক পিএবি সড়কে শ্রমিকদের নৈরাজ্য ছিল চোখে পড়ার মতো। দূরপাল্লার বাস চলাচলে শ্রমিকদের অবরোধের কথা থাকলেও চলতে দেয়নি রিক্সা, অটোরিক্সাসহ ব্যক্তিগত যানবাহন। যার ফলে এই রোডে চলাচলকারী যাত্রী ও সাধারণ মানুষের মধ্যে নেমে এসেছে চরম ভোগান্তি। তাছাড়া শ্রমিকদের কবল থেকে রক্ষাও পায়নি মরদেহবাহী এ্যাম্বুলেন্সও। কিছু সংখ্যক ব্যক্তিগত যানবাহন ও অটোরিক্সা চলাচল করতে চাইলে শ্রমিকদের বাধার মুখে পড়ে লাঞ্ছিত হতে হয়েছে অনেকে। সব মিলিয়ে দিনভর বৃষ্টি উপেক্ষা করে শ্রমিকদের দখলে ছিল পিএবি সড়ক। পিএবি সড়কে শ্রমিকদের বেপরোয়া তা-ব অব্যাহত থাকলেও সাধারণ যাত্রী ও মানুষদের যানমাল নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা পুলিশ সদস্যদের উপস্থিতি ছিল না। অনেক যাত্রী সাধারণকে ক্ষোভ প্রকাশ করে বলতে দেখা গেছে শ্রমিকদের এই আন্দোলন নাকি সরকারী আন্দোলন হওয়ায় পুলিশ সদস্যরা মাঠে নামেননি। সুনামগঞ্জে মানববন্ধন ॥ নিজস্ব সংবাদদাতা, সুনামগঞ্জ থেকে জানান, দেশব্যাপী পরিবহন শ্রমিকদের সন্ত্রাস নৈরাজ্য ও যাত্রী হয়রানির প্রতিবাদে মানববন্ধন কর্মসূচী পালন করেছে সুনামগঞ্জ যাত্রী সংহতি। সোমবার সুনামগঞ্জ শহরের ট্রাফিক পয়েন্টে অনুষ্ঠিত মানববন্ধনে বিভিন্ন শ্রেণীপেশার লোকজন অংশ নেন। তারা শ্রমিক নামক সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে দেশবাসীকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে তাদের রূখে দেয়ার আহ্বান জানিয়ে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর আইনগত ব্যবস্থা নেয়ার জন্য সরকারের প্রতি দাবি জানান।
×