ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

১৮৯ আরোহী নিয়ে জাভা সাগরে ইন্দোনেশীয় বিমান বিধ্বস্ত

প্রকাশিত: ০৫:৫৭, ৩০ অক্টোবর ২০১৮

১৮৯ আরোহী নিয়ে জাভা সাগরে ইন্দোনেশীয় বিমান বিধ্বস্ত

জনকণ্ঠ ডেস্ক ॥ ইন্দোনেশিয়ায় সোমবার ১৮৯ আরোহী নিয়ে লায়ন এয়ারের একটি বিমান জাভা সাগরে বিধ্বস্ত হয়েছে। বিমানটি জাকার্তা থেকে পাংকাল পিনাং যাচ্ছিল। বিধ্বস্ত বিমানটির কোন যাত্রীকে এখন পর্যন্ত জীবিত উদ্ধার করা যায়নি। তবে সাগরে ভেসে উঠছে দেহাবশেষ। পানি থেকে মৃতদেহের খ-াংশ, যাত্রীদের পরিচয়পত্র, শিশুর জুতা গাড়ি চালানোর লাইসেন্সের মতো জিনিসপত্র উদ্ধার করা হয়েছে। বোয়িং ৭৩৭ উড়োজাহাজটি যান্ত্রিক ত্রুটির কারণে বিধ্বস্ত হয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। তবে বিমানটি একেবারেই নতুন ছিল বলে জানায় কর্তৃপক্ষ। বিমানটির ক্যাপ্টেন ছিলেন ভারতীয় নাগরিক ভাবে সুনেজা। খবর বিবিসি ও সিএনএন অনলাইনের। সোমবার স্থানীয় সময় সকাল ৬টা ২০ মিনিটে বোয়িং ৭৩৭ ম্যাক্স মডেলের লায়ন এয়ারের জেটি-৬১০ ফ্লাইটটি জাকার্তা বিমানবন্দর থেকে দেশটির দ্বীপ শহর পাংকাল পিনাংয়ের উদ্দেশে যাত্রা করেছিল। এক ঘণ্টার মধ্যে পাংকাল পিনাংয়ের দেপাতি আমির বিমানবন্দরে পৌঁছানোর কথা ছিল ফ্লাইটটির। কিন্তু উড্ডয়নের ১৩ মিনিটের মাথায় সাগর পাড়ি দেয়ার সময় নিয়ন্ত্রণ কক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে। শেষ মুহূর্তে পাইলটকে জাকার্তার সুকর্ন হাত্তা বিমানবন্দরে ফিরে আসতে বলা হয়। বিমানটিকে সর্বশেষ সাগর পাড়ি দিতে দেখা যায়। বিমানটিতে তিন শিশুসহ ১৮১ যাত্রী ছিলেন। এছাড়া দু’জন পাইলট ও ছয়জন কেবিন ক্রু ছিলেন। ঘটনাস্থল থেকে বিমান যাত্রীদের বিভিন্ন জিনিসপত্র উদ্ধার করা হয়েছে। এছাড়া আশপাশের এলাকায় এসব সামগ্রী ছড়িয়ে পড়ার খবরও পাওয়া গেছে। আশঙ্কা করা হচ্ছে, সমুদ্রের ২০ থেকে ৩০ মিটার গভীরে বিমানটি বিধ্বস্ত হয়েছে। কর্মকর্তারা জানান, লায়ন এয়ার ফ্লাইটের ওই বিমানটি প্রায় নতুন ছিল। তারা এখনও বেঁচে থাকা কারও সন্ধান পাননি। পাওয়ার কোন সম্ভাবনাও দেখা যাচ্ছে না। তবে উপকূল থেকে ১৫ কিলোমিটার দূরে দেহাবশেষ উদ্ধার করেছেন তারা। এক টুইটার বার্তায় ইন্দোনেশিয়ার ন্যাশনাল সার্চ এ্যান্ড রেসকিউ এজেন্সি জানিয়েছে, যাত্রীদের বিভিন্ন ব্যবহার্য সামগ্রী সাগরে পাওয়া গেছে। এর মধ্যে পরিচয়পত্র, ড্রাইভিং লাইসেন্সও রয়েছে। সংস্থার প্রধান মুহাম্মদ সাইয়াগু বলেছেন, এই ঘটনায় কেউ জীবিত আছে কিনা আমরা নিশ্চিত নই। আশা করছি, প্রার্থনা করছি, কিন্তু নিশ্চিত না। উদ্ধার অভিযান পরিচালনাকারী কর্মকর্তা বামবাং সুরিয়ো বলেন, আমাদের মূল ধ্বংসাবশেষটি খুঁজে পাওয়া দরকার। এ পর্যন্ত যতগুলো দেহাংশ খুঁজে পাওয়া গেছে তার ভিত্তিতে আমার ধারণা কেউই বেঁচে নেই। লায়ন এয়ারের এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, বিধ্বস্ত বিমানটির পাইলট ও কো-পাইলটের ১১ হাজার ঘণ্টারও বেশি উড্ডয়ন অভিজ্ঞতা রয়েছে। এছাড়া বিমানটিতে শিক্ষানবিশ ফ্লাইট এ্যাটেনডেন্ট ছিলেন। বিধ্বস্ত হওয়ার কারণ কারিগরি ত্রুটি ॥ লায়ন এয়ারের নতুন উড়োজাহাজ বোয়িং ৭৩৭ কারিগরি ত্রুটির কারণে বিধ্বস্ত হয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। লায়ন এয়ার গ্রুপের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা এডওয়ার্ড সাইরেইট এএফপিকে বলেন, বোয়িং জেটটি মেরামতের জন্য সাময়িকভাবে নিচে নামানোর প্রয়োজন ছিল। তিনি বলেন, বালির দেনপাসারে এটি মেরামত করা হয়। এরপরই এটি জাকার্তার উদ্দেশে উড়াল দেয় সমস্যার বিষয়টি সুনির্দিষ্টভাবে চিহ্নিত না করেই। সোমবার ভোরে জাকার্তার প্রকৌশলীরা বিমানটির বিষয়ে নোট পেয়েছিলেন। উড্ডয়নের আগে তারা আরেকবার এটি মেরামত করেন। অবশ্য এটি উড়োজাহাজ উড্ডয়নের সাধারণ নিয়ম। বিমানের ক্যাপ্টেন ছিলেন ভারতীয় ॥ ইন্দোনেশিয়ায় বিধ্বস্ত বিমানের ভারতীয় ক্যাপ্টেন ভাবে সুনেজা ওই দুর্ঘটনায় প্রাণ হারিয়েছেন বলে নিশ্চিত করেছে ভারত। ইন্দোনেশিয়ায় নিযুক্ত দেশটির দূতাবাস জানায়, যে বিমানটি সাগরে বিধ্বস্ত হয়েছে, তার চালকের আসনে ছিলেন একজন ভারতীয় নাগরিক। ভাবে সুনেজা (৩১) নামে বিমানের ওই পাইলট দিল্লীর ছেলে। সাত বছর আগে তিনি ইন্দোনেশিয়ার লায়ন এয়ারে যোগ দেন, তখন থেকে থাকতেন জাকার্তাতেই। লায়ন এয়ার এক বিবৃতিতে জানায়, বিধ্বস্ত বিমানটির ক্যাপ্টেনের দায়িত্ব পালন করছিলেন সুনেজা। তার কো-পাইলট ছিলেন হারভিনো, সঙ্গে ছিলেন ছয়জন ক্রু বা বিমানকর্মী। সুনেজার ছয় হাজার ঘণ্টারও বেশি বিমান চালানোর অভিজ্ঞতা ছিল। হারভিনোও পাঁচ হাজার ঘণ্টারও বেশি বিমান চালিয়েছেন। ফলে দু’জনের ১১ হাজার ঘণ্টা বিমান চালানোর অভিজ্ঞতা ছিল। এর আগে ২০১৪ সালের ২৮ ডিসেম্বর ১৬২ আরোহী নিয়ে ইন্দোনেশিয়া থেকে সিঙ্গাপুরগামী এয়ার এশিয়ার একটি উড়োাজাহাজ জাভা সাগরে বিধ্বস্ত হয়।
×