ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

একনেকে প্রকল্প পাসের রেকর্ড

প্রকাশিত: ০৪:২৬, ৩০ অক্টোবর ২০১৮

একনেকে প্রকল্প পাসের রেকর্ড

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ একাদশ জাতীয় নির্বাচনকে সামনে রেখে বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের প্রকল্প অনুমোদনে তাড়াহুড়ো দেখা যাচ্ছে গত মাস দুয়েক ধরেই। এর মধ্যে ডিসেম্বরের মধ্যেই একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন আয়োজনের কথা জানিয়েছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। এতে প্রকল্প অনুমোদন করিয়ে নিতে সেই তাড়াহুড়ো আরও বেড়ে গেছে। মন্ত্রণালয়গুলো চাইছে, নির্বাচনের আগেই তাদের প্রকল্পগুলো অনুমোদন পাক। জানা গেছে, এরই অংশ হিসেবে আগামী ৩০ অক্টোবর জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটি (একনেক) বৈঠকে উঠছে সর্বোচ্চ ২৩টি উন্নয়ন প্রকল্প। আর এসব প্রকল্প বাস্তবায়নের খরচ ধরা হয়েছে ২৩ হাজার ৬৮২ কোটি ৮২ লাখ টাকা। এর মধ্যে সরকারের নিজস্ব তহবিল থেকে খরচ হবে ১৯ হাজার ৩৫২ কোটি ৪০ লাখ টাকা, বৈদেশিক সহায়তা থেকে আসবে ৪ হাজার ২৪ কোটি ৩৮ লাখ টাকা এবং বাস্তবায়নকারী সংস্থার নিজস্ব তহবিল থেকে ব্যয় হবে ৩০৬ কোটি টাকা। পরিকল্পনা কমিশনের একাধিক কর্মকর্তা বলেন, প্রকল্প পাসের তাড়াহুড়ো রয়েছে। সবাই ভাবছেন নির্বাচনী তফসিল ঘোষণার পর আগামী দুই মাস হয়ত একনেক হবে না। তাই এর আগেই সবাই নিজ নিজ মন্ত্রণালয়ের প্রকল্প পাস করিয়ে নিতে চাচ্ছেন। তবে প্রকল্পগুলোর অনুমোদন প্রক্রিয়া চলছে নিয়ম মেনেই। এসব প্রকল্প অনুমোদন দেয়া হলেও প্রয়োজনীয় বরাদ্দ দেয়া সম্ভব নাও হতে পারে। কমিশন সূত্রে জানা গেছে, মঙ্গলবারের একেনেকে উপস্থাপন হতে যাওয়া প্রকল্পগুলো হলো বগুড়া থেকে শহীদ এম মনসুর আলী স্টেশন, সিরাজগঞ্জ পর্যন্ত নতুন ডুয়েল গেজ রেললাইন নির্মাণ প্রকল্প; ঈশ্বরদী থেকে পাবনা হয়ে ঢালারচর পর্যন্ত নতুন রেললাইন নির্মাণ (দ্বিতীয় সংশোধিত); মাদানী এভিনিউ থেকে বালু নদী পর্যন্ত মেজর রোড প্রশস্তকরণ ও বালু নদী থেকে শীতলক্ষ্যা নদী পর্যন্ত সড়ক নির্মাণ (প্রথম পর্ব); রাজউক পূর্বাচল ৩০০ ফুট মহাসড়ক থেকে মাদানী এভিনিউ, সিলেট মহাসড়ক পর্যন্ত সংযোগ সড়ক নির্মাণ; ৯টি সরকারী মাধ্যমিক বিদ্যালয় স্থাপন; বঙ্গবন্ধু জাদুঘর নির্মাণ (সংশোধিত); কর্ণফুলী সেতু নির্মাণ প্রকল্প (তৃতীয় সংশোধিত); গাজীপুর সিটি কর্পোরেশনের ১ থেকে ৫ নম্বর জোনের অভ্যন্তরীণ রাস্তা, নর্দমা ও ফুটপাত নির্মাণ; ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের বিভিন্ন অঞ্চলের ক্ষতিগ্রস্ত রাস্তা, নর্দমা ও ফুটপাত নির্মাণ ও উন্নয়নসহ সড়কের নিরাপত্তা; ডিজিএফআইয়ের টেলিযোগাযোগ ও আইসিটি অবকাঠামো, মানবসম্পদ ও কারিগরি সক্ষমতা উন্নয়ন প্রকল্প; ডাক অধিদফতরের ভৌত অবকাঠামো উন্নয়ন, সম্প্রসারণ, শহীদ মুক্তিযোদ্ধা ও অন্যান্য বীর যোদ্ধাদের সমাধিস্থল সংরক্ষণ ও উন্নয়ন। এছাড়া, বাংলাদেশের বিভিন্ন স্থানে বাংলাদেশ পুলিশের জন্য ৯টি আবাসিক টাওয়ার নির্মাণ; ন্যাশনাল একাডেমি ফর অটিজম এ্যান্ড নিউরো ডেভেলপমেন্টাল ডিজ্যাবিলিটিজ (দ্বিতীয় সংশোধিত); বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মেরিটাইম ইউনিভার্সিটির স্থায়ী ক্যাম্পাস প্রতিষ্ঠা; ২৩ জেলায় পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট স্থাপন; পতেঙ্গায় বিএনএ বঙ্গবন্ধু কমপ্লেক্স নির্মাণ; স্মলহোল্ডার এগ্রিকালচার কম্পিটিটিভনেস প্রজেক্ট; কৃষি প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউটগুলোর কার্যক্রম শক্তিশালীকরণ; ঢাকায় বিসিক কেমিক্যাল পল্লী স্থাপন; গাজী ওয়্যারস লিমিটেড শক্তিশালীকরণ এবং ৫০০-৬০০ মেগাওয়াট এলএনজি বেজড কম্বাইন্ড সাইকেল পাওয়ার প্লান্টের জন্য ফিজিবিলিটি স্টাডি সম্পাদন এবং গ্যাস সঞ্চালন লাইন নির্মাণ প্রকল্প। এর আগে, গত ১১ সেপ্টেম্বর একনেক বৈঠকে অনুমোদন দেয়া হয় ১৭ হাজার ৭৮৬ কোটি ৯৫ লাখ টাকার ১৮টি প্রকল্প। এর পরের সপ্তাহেই (১৮ সেপ্টেম্বর) দেড় লাখ ইভিএম মেশিন কেনার প্রকল্পসহ মোট ১৪টি প্রকল্পের অনুমোদন দেয় একনেক। এসব প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয় ১৭ হাজার ৭৮৬ কোটি ৯৫ লাখ টাকা। এদিকে, চলতি অক্টোবর মাসের ৯ তারিখে অনুষ্ঠিত একনেকে অনুমোদন পায় ২০টি প্রকল্প, যেগুলো বাস্তবায়নে খরচ ধরা হয় ৩২ হাজার ৫২৪ কোটি ৯০ লাখ টাকা। এর একদিন পরই, ১১ অক্টোবর অনুষ্ঠিত বিশেষ একনেকে অনুমোদন পায় আরও ১৭টি প্রকল্প, যেগুলোর বাস্তবায়ন ব্যয় ১৪ হাজার ২০০ কোটি ৫৯ লাখ টাকা। পরে ২৩ অক্টোবরের একনেক বৈঠকে রেকর্ডসংখ্যক ২১টি প্রকল্পের অনুমোদন দেয়া হয়। আগামী ৩০ অক্টোবরের একনেক বৈঠকে ২৩টি প্রকল্প অনুমোদন পেলে তা হবে কোন একটি একনেকে প্রকল্প অনুমোদনের নতুন রেকর্ড।
×