ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

গলাচিপায় বদ্ধ খাল থেকে বালু উত্তোলন

প্রকাশিত: ০৪:১৬, ৩০ অক্টোবর ২০১৮

গলাচিপায় বদ্ধ খাল থেকে বালু উত্তোলন

স্টাফ রিপোর্টার, গলাচিপা ॥ নদীর পরে এবার পটুয়াখালীর গলাচিপায় বালুদস্যুদের নজর পড়েছে বদ্ধ খালের ওপর। বালুদস্যুরা অবাধে বদ্ধ খাল থেকে বালু উত্তোলন করছে। বালুদস্যুরা বালু উত্তোলনে দেশীয় পদ্ধতিতে ড্রেজার মেশিন বানিয়ে নিয়েছে। গত দুই সপ্তাহ ধরে বালুদস্যুদের একটি চক্র উপজেলার বোয়ালিয়া খালের ভেতর থেকে অবাধে ভূগর্ভস্থ বালু উত্তোলন করছে। অভিযোগ উঠেছে প্রচলিত আইন উপেক্ষা করে স্থানীয় প্রভাবশালীদের সঙ্গে আপোসরফায় বালু উত্তোলন করা হচ্ছে। অবাধ বালু উত্তোলনের কারণে বোয়ালিয়া ও পানপট্টি গ্রামের অন্তত পাঁচ কিলোমিটার এলাকায় ভূমি ধস দেখা দিতে পারে। এছাড়া খালের পাশের পাকা সড়কও ধসে পড়তে পারে, এমন আশঙ্কা এলাকাবাসীর। সরজমিনে দেখা গেছে, গলাচিপা সদর ইউনিয়নের মুরাদনগর পাল বাড়ি থেকে গলাচিপা পৌরসভার ৯নং ওয়ার্ডের কালিকাপুর এলাকার কালামের গ্যারেজ পর্যন্ত বর্তমানে ৫ কিলোমিটার সড়কের নির্মাণ কাজ চলছে। এর মধ্যে সাড়ে তিন কিলোমিটার সড়ক নির্মাণ কাজেই বালু নেয়া হচ্ছে রাস্তার পূর্ব পাশ দিয়ে বয়ে যাওয়া বোয়ালিয়া বদ্ধ খাল থেকে। এছাড়া উপজেলার পানপট্টি ইউনিয়নের মোল্লার বাজার এলাকা, চরবিশ্বাস ও চরকাজল ইউনিয়নের বিভিন্ন বদ্ধ খাল থেকেও ভূগর্ভস্থ বালু উত্তোলন করা হচ্ছে বলে অভিযোগ রয়েছে। ১৯৭০ এর ১২ নবেম্বর প্রলয়ঙ্করী ঘূর্ণিঝড় ও জলোচ্ছ্বাসের পরে গলাচিপা পৌরসভা, সদর, পানপট্টি, রতনদী-তালতলী ও ডাকুয়া ইউনিয়নকে জলোচ্ছ্বাসের কবল থেকে রক্ষা করার জন্য বেড়িবাঁধ নির্মাণ করা হয়। ওই সময় গলাচিপা উপজেলার সবচেয়ে বড় খাল বোয়ালিয়া খালের নাব্য রক্ষার জন্য খালটির দক্ষিণ প্রান্তে বোয়ালিয়া পয়েন্টে ১৫ দরজা বিশিষ্ট একটি স্লুইসগেট নির্মাণ করা হয়। খালের দুই পাড়ের বাসিন্দাদের আশঙ্কা এভাবে অপরিকল্পতিভাবে খালের মধ্য থেকে ভূগর্ভস্থ বালু উত্তোলন করলে এলাকার পরিবেশ ওপর বিরূপ প্রভাব পড়বে। এছাড়া শত শত বাড়িঘরসহ আবাদি জমি এবং পাকা সড়ক ধসের মুখে পড়তে পারে। মুরাদনগর এলাকার শিক্ষক মোঃ ইসহাক মাহমুদ অভিযোগ করেন, এভাবে অপরিকল্পিতভাবে খালের মধ্য থেকে অবাধে বালু উত্তোলন করা হলে খালের তলদেশের মাটি দেবে গিয়ে গভীরতা বাড়তে পারে। এতে খালের দুই পাড়ের বাসিন্দাদের বসতবাড়িসহ সড়ক ধসে পড়ার আশঙ্কা রয়েছে। আশঙ্কার কথা জানিয়ে এমন অভিমত দিয়েছেন এলাকার বহু মানুষ। এ বিষয়ে মুরাদনগর খালে বালু উত্তোলনকারী মিনি ড্রেজারের মালিক মোঃ মিলন বলেন, এলাকার লোকজনের সঙ্গে আলোচনা করেই বোয়ালিয়া খালে মিনি ড্রেজার মেশিন বসানো হয়েছে। খালের যেখানে চর পাওয়া যায় সেখানেই মেশিন বসানো হয়। এতে কোন ক্ষতি হয় না। খালের ভূগর্ভস্থ বালু উত্তোলন প্রসঙ্গে পটুয়াখালী পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মোঃ হাসানুজ্জামান বলেন, কোন স্থাপনা বা বসতি এলাকার ক্ষতি করে বালু উত্তোলন করা বেআইনী। বিষয়টি আমরা খতিয়ে দেখব। পরিবেশ বিষয়ক বেসরকারী সংগঠন বেলার বরিশাল বিভাগীয় সমন্বয়কারী লিঙ্কন বায়েন জানান, সরকার বালু মহল হিসেবে ঘোষণা না করলে বালু কাটা অন্যায়। এতে করে ওই খালের দুই পাড় ভেঙ্গে যেতে পারে। এ প্রসঙ্গে গলাচিপা উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) সুহৃদ সালেহীন জানান, বদ্ধ খালে বালু উত্তোলন করা যাবে না। বালু উত্তোলনের ঘটনাটি জানা ছিল না। এদের বিরুদ্ধে দ্রুত আইনী ব্যবস্থা নেয়া হবে।
×