ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

ঢাকা আবাহনী ও সাইফ স্পোর্টিংয়ের শুভসূচনা

প্রকাশিত: ০৬:৫০, ২৯ অক্টোবর ২০১৮

 ঢাকা আবাহনী ও সাইফ স্পোর্টিংয়ের শুভসূচনা

স্পোর্টস রিপোর্টার ॥ ৩০তম ফেডারেশন কাপ ফুটবলে শুভসূচনা করেছে আসরের বর্তমান চ্যাম্পিয়ন ঢাকা আবাহনী। রবিবার বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়ামে ‘সি’ গ্রুপের প্রথম ম্যাচে মুক্তিযোদ্ধা সংসদ ক্রীড়াচক্রকে ১-০ গোলে হারিয়েছে আকাশী-নীল জার্সিধারীরা। আবাহনীর হয়ে জয়সূচক গোলটি করেন করেন তারকা মিডফিল্ডার মামুনুল ইসলাম মামুন। এই জয়ে কোয়ার্টার ফাইনালে এক পা দিয়ে রাখলো বর্তমান চ্যাম্পিয়নরা। ম্যাচের শুরু থেকে প্রত্যাশিতভাবে বলের দখল নিয়ে খেলতে থাকে আবাহনী। তবে প্রথম আধাঘণ্টায় তেমন বলার মতো আক্রমণ শানাতে পারেনি অভিজাত পাড়ার ক্লাবটি। ৩৫ মিনিটে প্রথমবার ভাল সুযোগ সৃষ্টি করলেও গোল পায় আবাহনী। ডানপ্রান্ত দিয়ে ডি বক্সের মধ্যে হাইতিয়ান ফরোয়ার্ড বেলফোর্ট মুক্তিযোদ্ধার কয়েকজন ডিফেন্ডারকে কাটিয়ে বামে ফাঁকায় দাঁড়ানো সানডে চিজুবাকে বল দেন। সানডের নেয়া বাম পায়ের শট সরাসরি মুক্তিযোদ্ধার গোলরক্ষক আরিফুজ্জামান হিমেলের হাতে আশ্রয় নেয়। তিন মিনিট পর ডানপ্রান্ত দিয়ে বেলফোর্ট মুক্তিযোদ্ধার দুইজন ডিফেন্ডারকে কাটিয়ে গোলমুখে ক্রস করেন। তা থেকে আবাহনীর কোরিয়ান মিডফিল্ডার মিনহিওক কো কিছুটা বামে বল দেন ওয়ালি ফয়সালকে। কিন্তু এই লেফটব্যাকের নেয়া শট মুক্তির রক্ষণভাগের খেলোয়াড়ের গায়ে লেগে ফেরত আসে। ৪২ মিনিটে আক্রমণে আসে মুক্তিযোদ্ধা সংসদ। লাল জার্সিধারীদের জাপানী মিডফিল্ডার ইউসুকের পাস থেকে বল পেয়ে স্ট্রাইকার বাল্লু ফেমাসার নেয়া শট আবাহনীর গোলরক্ষক শহীদুল আলম ফিস্ট করে কর্নারের বিনিময়ে রক্ষা করেন। প্রথমার্ধের খেলা শেষ হয় গোলশূন্যভাবে। বিরতির পর ৪৬ মিনিটে ডানপ্রান্ত দিয়ে ডি বক্সের সামান্য বাইরে থেকে ঢাকা আবাহনীর কোরিয়ান মিডফিল্ডার মিনহিওক কো’র নেয়া ডান পায়ের শট দ্বিতীয়বার ঘেঁষে বাইরে যায়। দুই মিনিট পর ডি বক্সের সামান্য বাইরে থেকে মিডফিল্ডার মোহাম্মদ সোহেলের নেয়া ডান পায়ের শট ক্রসবারে লেগে ফেরত আসলে গোলবঞ্চিত হয় মুক্তিযোদ্ধা। ম্যাচের ৬৪ মিনিটে জয়সূচক গোল আদায় করে নেয় ঢাকা আবাহনী। এ সময় ডি বক্সের ভেতরে বল পান আবাহনীর হাইতিয়ান ফরোয়ার্ড বেলফোর্ট। মুক্তিযোদ্ধার দুইজন ডিফেন্ডারকে কাটিয়ে ছোট্ট ক্রসে বল দেন সানডে চিজুবাকে। তা থেকে সানডে চিজুবা হেডের সাহায্যে বল দেন অনেকটা ফাঁকায় দাঁড়ানো মামুনুল ইসলামকে। জাতীয় দলের সাবেক এই অধিনায়কের নেয়া বাম পায়ের চমৎকার ভলি সাইড পোস্টে লেগে মুক্তিযোদ্ধার জাল খুঁজে নেয় (১-০)। পিছিয়ে পড়ার চার মিনিট পরই সমতা ফেরানোর সহজ সুযোগ হাতছাড়া করে মুক্তিযোদ্ধা। গোল করতে ব্যর্থ হন দলটির মিডফিল্ডার সুজন বিশ্বাস। ডি বক্সের ভেতরে মুক্তিযোদ্ধার বাল্লু ফেমাসাস অনেকটা ফাঁকায় দাঁড়ানো সুজন বিশ্বাসকে বল দেন। কিন্তু তার নেয়া ডান পায়ের শট সাইডবার ঘেঁষে বাইরে যায়। ৭১ মিনিটে আবাহনীর একটি নিশ্চিত গোল নস্যাৎ করে দেন মুক্তিযোদ্ধার গোলরক্ষক হিমেল। ডি বক্সের বাইরে থেকে ঢাকা আবাহনীর হাইতিয়ান বেলফোর্টের কাছ থেকে বল পেয়ে নাইজিরিয়ান স্ট্রাইকার সানডে চিজুবা গোলমুখে শট নেন। তার নেয়া শট রুখে দেন মুক্তি কিপার। ৮৭ মিনিটে গোলের আরও একটি সুযোগ হাতছাড়া হয় আকাশী-নীল জার্সিধারীদের। এ সময় ডি বক্সের মধ্যে বেলফোর্টের নেয়া হেড মুক্তিযোদ্ধার রক্ষণভাগের খেলোয়াড় ঠিকমতো ক্লিয়ার করতে ব্যর্থ হলে কাছে দাঁড়ানো আবাহনীর বদলি খেলোয়াড় জীবন বল পেয়ে যান। কিন্তু তার নেয়া শট লক্ষ্যভ্রষ্ট হয়। ম্যাচের অতিরিক্ত সময়ের প্রথম মিনিটে গোল পরিশোধের সুযোগ সৃষ্টি করেও তা কাজে লাগাতে পারেননি মুক্তিযোদ্ধার বাল্লু ফেমাসাস। ডানপ্রান্ত দিয়ে বল নিয়ে ক্ষিপ্রগতিতে ডি বক্সের ভেতরে ঢুকে পড়েন ফেমাসাস। এ সময় তার নেয়া শট আবাহনীর গোলরক্ষক শহীদুল আলম প্রতিহত করেন। ফিরতি বলে ফেমাসাসের নেয়া শট ক্রসবারের ওপর দিয়ে বাইরে যায়। ৯৩ মিনিটে ডি বক্সের ভেতরে বল পেয়েও গোল করতে ব্যর্থ হন আবাহনীর বদলি খেলোয়াড় মোহাম্মদ নাবিব নেওয়াজ জীবন। তার নেয়া ডান পায়ের শট ক্রসবারের ওপর দিয়ে বাইরে যায়। শেষ পর্যন্ত এক গোলের স্বস্তির জয় নিয়েই মাঠ ছাড়ে চ্যাম্পিয়ন ঢাকা আবাহনী। সাইফ স্পোর্টিং ৩-১ বিজেএমসি সহজ জয় দিয়ে ফেডারেশন কাপ ফুটবলে যাত্রা শুরু করেছে সাইফ স্পোর্টিং ক্লাব। রবিবার বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়ামে ‘বি’ গ্রুপের ম্যাচে টিম বিজেএমসিকে ৩-১ গোলে হারিয়েছে সাইফ। বিজয়ী দল দু’টি গোল পেয়েছে পেনাল্টি থেকে। ম্যাচের প্রথমার্ধে সমতা ছিল ১-১ গোলে। ম্যাচের পঞ্চম মিনিটেই পেনাল্টি থেকে গোল করে এগিয়ে যায় সাইফ স্পোর্টিং। সাইফের বিপদ সীমানায় বিজেএমসির ডিফেন্ডার বাইবেক সাইফ স্পোর্টিংয়ের কোরিয়ান ফরোয়ার্ড সিওনজিল পার্ককে ফাউল করলে রেফারি জিএমসি নয়ন পেনাল্টির বাঁশি বাজান। পেনাল্টি থেকে ডান পায়ের শটে সিওনজিল পার্ক গোল করে সাইফকে এগিয়ে নেন। ১৩ মিনিটে আবদুল্লাহ আল মামুনের গোলে সমতা আনে টিম বিজেএমসি। বামপ্রান্ত থেকে বিজেএমসি’র উজবেকিস্তানের মিডফিল্ডার ওটাবেকের নেয়া ফ্রিকিকে হেডের সাহায্যে সাইফ স্পোর্টিং ক্লাবের জালে বল পাঠান ফরোয়ার্ড আল মামুন (১-১)। প্রথমার্ধে আরও কয়েকটি সহজ সুযোগ পেলেও কাজ লাগাতে পারেনি সাইফ। বিরতির পর ৪৯ মিনিটে তিনবারের প্রচেষ্টায়ও গোল করতে পারেনি বিজেএমসি। ডানপ্রান্ত থেকে বল পেয়ে বিজেএমসির ফরোয়ার্ড মোবারক হোসেন কিছুটা এগিয়ে গিয়ে গোলমুখে শট নেন। তার নেয়া শট সাইফ স্পোর্টিংয়ের গোলরক্ষক জিয়া ঠিকমতো ধরতে না পারায় কিছুটা সামনে বল পেয়ে যান বিজেএমসির অধিনায়ক স্যামসন ইলিয়াসু। তার নেয়া শট গোলরক্ষক জিয়া রুখে দেন। ফিরতি বলে আরেক ফরোয়ার্ড আল মামুনের নেয়া শট সাইডবার ঘেঁষে বাইরে গেলে এগিয়ে যেতে পারেনি বিজেএমসি। ৬৬ মিনিটে বদলি ফরোয়ার্ড জাফর ইকবালের গোলে আবারও এগিয়ে যায় সাইফ স্পোর্টিং। বামপ্রান্ত থেকে সাইফের ইয়াসিন আরাফাত থ্রু পাসে ডি বক্সের ভেতরে বল দেন জাফর ইকবালকে। বল ধরেই বাম পায়ের শটে বিজেএমসির গোলরক্ষক আবুল কাশেম মিলনকে পরাস্ত করেন (২-১)। ৮৪ মিনিটে সাইফ স্পোর্টিং আরও একটি সুযোগ নষ্ট করে। এ সময় বদলি খেলোয়াড় আল আমিনের ক্রসে সাইফের রাশিয়ান ডেনিস বরশাকভের নেয়া হেড ক্রসবারের ওপর দিয়ে যায়। ৮৮ মিনিটে হ্যান্ডবলের কারণে পেনাল্টি পায় সাইফ। দলটির অধিনায়ক জামাল ভুঁইয়ার ফ্রিকিকে বিপদ সীমানায় বিজেএমসির অধিনায়ক স্যামসন ইলিয়াসুর হাতে বল লাগলে রেফারি জিএমসি নয়ন পেনাল্টির বাঁশি বাজান। পেনাল্টি দেয়া স্যামসন ইলিয়াসু রেফারির দিকে তেড়ে যান। এ সময় কিছুক্ষণ খেলা বন্ধ থাকে। পেনাল্টি থেকে সাইফ স্পোর্টিংয়ের রাশিয়ান ফরোয়ার্ড ডেনিস বলশাকভ গোল করলে ৩-১ ব্যবধানে এগিয়ে যায় তারা। শেষ পর্যন্ত দারুণ জয় নিয়েই মাঠ ছাড়ে সাইফ। সেই সঙ্গে শেষ আটে খেলাও প্রায় নিশ্চিত করে ফেলে তারা।
×