ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

বিশ্ব স্ট্রোক দিবস আজ

দেশে হাজারে গড়ে ৩ থেকে ৫ জন স্ট্রোকে আক্রান্ত হচ্ছে

প্রকাশিত: ০৬:৩৫, ২৯ অক্টোবর ২০১৮

 দেশে হাজারে গড়ে ৩ থেকে ৫ জন স্ট্রোকে আক্রান্ত হচ্ছে

স্টাফ রিপোর্টার ॥ বিশ্বে স্ট্রোকে আক্রান্তের সংখ্যা আশঙ্কাজনক হারে বাড়ছে বলে জানিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা। তারা বলেন, বিশ্বে প্রতি ছয় জনে একজন এ রোগের ঝুঁকিতে রয়েছে। এটি মস্তিষ্কের একটি রোগ। স্ট্রোকে আক্রান্তের দু’ তৃতীয়াংশই মারা যান বা চিরতরে পঙ্গু হয়ে যান। মস্তিষ্কে রক্ত চলাচল কমে গেলে ও অক্সিজেনের ঘাটতি দেখা দিলে মস্তিষ্কের কোষ নিস্তেজ হয়ে পড়ে। একে বলা হয় স্ট্রোক। বাংলাদেশেও আক্রান্তের সংখ্যা কম নয়। অধিকাংশ মানুষই আক্রান্তের আগে এই রোগের লক্ষণসমূহ ধরতে বা বুঝতে পারে না। স্ট্রোকে আক্রান্তদেও কেউ বেঁচে থেকেও দুর্বিষহ জীবনযাপন করেন। গবেষণায় দেখা গেছে, বিশ্বে প্রতি ৬ সেকেন্ডে একজন স্ট্রোকে আক্রান্ত হয়। বছরে আক্রান্ত হচ্ছে ৬ কোটি এবং মারা যাচ্ছে ২ কোটি মানুষ। স্ট্রোকের কারণে দেড় কোটি লোক পঙ্গু হচ্ছে। মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণ বা স্ট্রোকে যেমন ব্যক্তিগত, সামাজিক ও পারিবারিক সমস্যা, একই সঙ্গে অনেক মানুষ হারাচ্ছে তাদের কর্মদক্ষতা, হচ্ছে প্রচুর অর্থ ব্যয়। স্ট্রোক জাতীয় ও বিশ্বজনীন সমস্যা। প্রতি ৬ জনে ১ জনের স্ট্রোকে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি থাকে। বাংলাদেশের বিষয়ে গবেষণায় বলা হয়, স্ট্রোক আক্রান্তের হার দিন দিন বেড়েই চলছে। অনেক ক্ষেত্রে সচেতনতার অভাবেই এই রোগে আক্রান্ত মানুষের সংখ্যা বাড়ছে। আমাদেও দেশে এখন ১৫ থেকে ২০ লাখ স্ট্রোকের রোগী রয়েছে। প্রতি হাজারে গড়ে ৩ থেকে ৫ জন স্ট্রোকে আক্রান্ত হচ্ছে। সাধারণত পঞ্চাশোর্ধ ব্যক্তিদের মধ্যে স্ট্রোকে আক্রান্তের হার বেশি লক্ষ্য করা গেলেও যে কোন বয়সেই তা হতে পারে। ৫০ বছর বয়সের পর প্রতি ১০ বছওে স্ট্রোকের ঝুঁকি দ্বিগুণ হয়। আক্রান্তদের মধ্যে পুরুষের সংখ্যাই বেশি। মহিলাদের মধ্যে স্ট্রোকে আক্রান্তের হার কম। ফাস্টফুডে আসক্তদের মধ্যে স্ট্রোকে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা বেশি। শিশু ও তরুণদের অনেকে খাদ্যাভ্যাসের কারণে স্ট্রোক ঝুঁকির মুখে পড়তে পারেন। এ বিষয়ে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালযের ডিন অধ্যাপক ডাঃ এবিএম আব্দুল্লাহ জনকণ্ঠকে জানান, অনেক কারণেই স্ট্রোক হয়। যেমন- অনিয়ন্ত্রিত উচ্চ রক্তচাপ স্ট্রোকের সবচেয়ে বড় কারণ। ধূমপান, তামাক পাতা, জর্দা ও মাদক সেবন করলেও স্ট্রোকে আক্রান্ত হতে পারে। অতিরিক্ত টেনশন, হৃদরোগ, ডায়াবেটিস, রক্তে বেশি মাত্রায় চর্বি বাড়িয়ে দেয় স্ট্রোকে আক্রান্তের মাত্রা। অলস জীবনযাপন করা, স্থূলতা বা অতিরিক্ত মোটা হওয়া, অতিরিক্ত মাত্রায় কোমল পানীয় গ্রহণ থেকে বিরত থাকতে হবে। কিছু কিছু ওষুধ যা রক্ত জমাট বাঁধার ক্ষমতা কমিয়ে দেয় যেমন এ্যাসপিরিন, ক্লপিডগ্রেল প্রভৃতি ব্যবহারে মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণ হতে পারে। ঘুমের সময় নাক ডাকা, ঘুমের সময় শ্বাসকষ্টজনিত উপসর্গ। যে কোন ধরনের প্রদাহ অথবা ইনফেকশন ও জন্মগতভাবে ব্রেনে কিংবা মস্তিষ্কে সরু রক্তনালী থাকলে এবং অনেক সময় বংশানুক্রমে কিংবা পূর্বের স্ট্রোক, হার্ট এ্যাটাক ও দূরবর্তী রক্তনালী বন্ধ হওয়ার কারণেও স্ট্রোক হতে পারে। স্ট্রোকের লক্ষণসমূহের বিষয়ে ডাঃ এবিএম আব্দুল্লাহ জানান, শরীরের কোথাও বা একাংশ অবশ ভাব লাগা কিংবা দুর্বলবোধ হতে পারে। কথা বলার সমস্যা অর্থাৎ কিছুক্ষণের জন্য কথা জড়িয়ে যাওয়া, অস্পষ্ট হওয়া ও একেবারে কথা বলতে বা বুঝতে না পারা, এক চোখ বা দুই চোখেই ক্ষণস্থায়ী ঝাপসা দেখা বা একেবারেই না দেখা, মাথা ঝিমঝিম করা, মাথা ঘোরা, দৃষ্টি ঘোলা লাগা, হঠাৎ করে কিছুক্ষণের জন্য হতবিহ্বল হয়ে পড়া, বমি বমি বোধ অথবা বমি করা, পা দুইটিতে দুর্বল বোধ করা।
×