ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

জরা-বার্ধক্য আর নয়, ২০৪৫ সালের মধ্যে মানুষের ইচ্ছামৃত্যু!

প্রকাশিত: ০৬:৩৩, ২৯ অক্টোবর ২০১৮

 জরা-বার্ধক্য আর নয়, ২০৪৫ সালের মধ্যে মানুষের  ইচ্ছামৃত্যু!

জনকণ্ঠ ডেস্ক ॥ আর মাত্র ২৭ বছর পর কি মানুষও ‘ইচ্ছামৃত্যু’র বর পাবে? মানুষের মৃত্যুটা আর অনিবার্য থাকবে না? শুধু কোন দুর্ঘটনা বা প্রাকৃতিক দুর্যোগ ছাড়া আর কোনভাবেই মৃত্যু হবে না মানুষের? মানুষ কি থামিয়ে দিতে পারবে বার্ধক্যের বিজয়রথও? বয়সের হিসেবে বার্ধক্যে পৌঁছেও মানুষ দেহে-মনে থাকতে পারবে তরতাজা যুবা? অফুরন্ত হবে তার যৌবন? খবর আনন্দবাজার অনলাইনের। এমনটাই দাবি করেছেন ম্যাসাচুসেট্ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজির (এমআইটি) জেনেটিক্সের অধ্যাপক জোসে লুই কর্দেইরো ও কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের গণিতের অধ্যাপক ও জিনতত্ত্ববিদ ডেভিড উড। কোন আন্তর্জাতিক বিজ্ঞান-জার্নালে প্রকাশিত গবেষণাপত্রে নয়, কর্দেইরো ও উড এই দাবি করেছেন তাদের প্রকাশিতব্য বই ‘দ্য ডেথ অব ডেথ’-এ। বইটি ইংরেজি ছাড়াও ছাপা হচ্ছে স্প্যানিশ, পর্তুগিজ ও কোরীয় ভাষায়, শীঘ্রই। তাদের বইয়ে এই দুই জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ার দাবি করেছেন, ২০৪৫ সাল নাগাদ মানুষ (যার প্রজাতির নাম হোমোস্যাপিয়েন্স) আর কোন প্রাকৃতিক কারণে বা রোগে ভুগে মারা যাবে না। সব রকমের স্বাভাবিক মৃত্যুকে পুরোপুরি জয় করে ফেলবে মানুষ। জন্মের মতো মৃত্যুটাও আর স্বাভাবিক থাকবে না। বার্ধক্য বলতে তখন মানুষ বুঝবে রোগ। আর সেই রোগ সারিয়ে মানুষকে বার্ধক্য থেকে ফের ‘যৌবনে’ ফেরানো যাবে। স্পেনের বার্সিলোনায় ইকোয়েস্ট্রিয়ান সার্কেলে তাদের এই দাবির সপক্ষে বলতে গিয়ে কর্দেইরো ও উড জানিয়েছেন, জিনের ওপর মানুষের দাদাগিরিই এই অসম্ভবকে সম্ভব করে তুলবে। এই অবিশ্বাস্যকে করে তুলবে আক্ষরিক অর্থেই বিশ্বাসযোগ্য। যে পদ্ধতিকে বিজ্ঞানের পরিভাষায় বলে জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং। কী কী করা যাবে জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের মাধ্যমে? তালিকাটা এতই লম্বা যে, কী করা যাবে না বললে কাজটা খুব সহজে হয়ে যায়! শিশুদের মধ্যেও যেমন ‘ভাল’ আর ‘দুষ্টু’রা থাকে, জিনের মধ্যেও থাকে তেমনটাই। সেই দুষ্টু শিশুকে আমরা যেমন বকেঝকে, শাসন করে ধীরে ধীরে ভাল করে তুলি, ঠিক তেমনই ‘দুষ্টু’ জিনকেও (গুলি) আমরা ‘ভাল’, আমাদের পক্ষে ‘উপকারী’ করে তুলতে পারি জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের মাধ্যমে। জিনের প্রযুক্তির জাদুতেই মরে যাওয়া কোষ, কলাগুলোকে (কোষের দল বা সমষ্টি, যাকে বলে টিস্যু) আমাদের শরীর থেকে বের করে আনতে পারি। মৃতকে কি কেউ দেহে পুষে রাখতে চায়? শরীরের যে কোষগুলো বিগড়ে গিয়েছে, যেভাবে চলা উচিত, ঠিক সেভাবে চলছে না, বরং আমাদের বিভিন্ন শরীরবৃত্তীয় প্রক্রিয়াকে বাধা দিচ্ছে, তাদের সঙ্গে অসহযোগিতা করছে, সেই ‘মাথা বিগড়ে যাওয়া’ কোষগুলোকে আমরা জিনের প্রযুক্তি দিয়েই সারিয়ে তুলতে পারি। জিনের প্রযুক্তিটা সে ক্ষেত্রে যেন একটা ‘সংশোধনাগার’! বিগড়ে যাওয়া, বখে যাওয়া কোষগুলোকে ‘সুস্থ, সামাজিক স্রোত’-এ ফিরিয়ে এনে স্বাভাবিক করে তুলছে। স্টেম সেল দিয়ে শরীরের বিভিন্ন রোগজীর্ণ অংশ ও অঙ্গপ্রত্যঙ্গগুলোকে অনায়াসে সারিয়ে ফেলতে পারি। হৃৎপি-, কিডনি, ফুসফুস, পাকস্থলি, অগ্ন্যাশয়ের মতো দেহের গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গগুলোকে ‘খেলতে খেলতে’ বদলে দিতে পারি, নতুন নতুন তরতাজা ‘থ্রি-ডি প্রিন্টেড’ অঙ্গপ্রত্যঙ্গ দিয়ে। এই দাবি যে দুই জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারের, তাদের একজন কর্দেইরো বলে দিয়েছেন, ‘ঠিক করেই ফেলেছি, আমি মরব না।’ এও বলেছেন, ‘৩০ বছর পর তো আর মরার কথাটাই ভাবব না।’ বার্ধক্যের ‘বিজয়রথ’কে থামানো যায় নাকি! উড আর কর্দেইরো বলেছেন, এই প্রশ্নটা অনেকটা সেই কে কাকে প্রদক্ষিণ করছে, পৃথিবীকে সূর্য নাকি সূর্যকে পৃথিবী, তার মতো। একটা সময় কেউ মানতেই চাইতেন না, পৃথিবী প্রদক্ষিণ করে সূর্যকে। সকলেই ভাবতেন, উল্টোটা হয়। সূর্য প্রদক্ষিণ করে পৃথিবীকে। সেই ধারণাটা এক দিন আমূল বদলে গেল। আগেকার ধারণাটা এখন কেউ বললে তাকে উপহাসের পাত্র হতে হবে। উড ও কর্দেইরোর দাবি, মৃত্যু সম্পর্কে তারা আজ যা ভাবছেন, বলছেন, একদিন সেটাই বাস্তব হবে। আর আজ আমরা সবাই যেটাকে ‘হয় কখনও সত্যি?’ বলে ভাবছি, ২৭ বছর পর সেটাকেই আমরা সবাই ‘একমাত্র সত্যি’ বলে মেনে নেব। কীভাবে থামানো সম্ভব বার্ধক্যের ‘বিজয়রথ’? কর্দেইরোর দাবি, ‘কেন বার্ধক্য আসে, আগে সেটা বুঝতে হবে আমাদের। যৌন কোষ ও রক্তের কোষ ছাড়া শরীরের প্রতিটি কোষেই ক্রোমোজোম থাকে ২৩ জোড়া করে। শরীরের ক্রোমোজমে যে ডিএনএ বা ডিঅক্সি-রাইবো নিউক্লিক এসিড থাকে, তার একটা ‘লেজ’ (টেল) থাকে। সেই ‘লেজ’টার নাম- ‘টেলোমেয়ার’।
×