ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

আত্মবিশ্বাসী সিরিজ জয়

প্রকাশিত: ০৩:৪৩, ২৯ অক্টোবর ২০১৮

আত্মবিশ্বাসী সিরিজ জয়

এর আগেও জিম্বাবুইয়ের মতো অভিজ্ঞ ক্রিকেট দলকে হোয়াইটওয়াশ করেছে টাইগাররা। তবে এবারের হোয়াইটওয়াশে রয়েছে কিছু বাড়তি বৈশিষ্ট্য। তিন ম্যাচের সিরিজে টানা দুটি জয়ের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশ ক্রিকেট দল সিরিজ জয় করে ফেলেছিল আগেই, অপেক্ষা ছিল শুধু ধবল ধোলাইয়ের। তবে সেটি কী মাত্রায় হয় সেটাই ছিল দেখার। শেষ ম্যাচটি তাই ছিল আকর্ষণীয়। দর্শকদের উৎকণ্ঠা তৈরি হয় জিম্বাবুইয়ের বেশ ভাল অঙ্কের রান সংগ্রহে (২৮৭ রান) এবং প্রথম বলেই দেশের অন্যতম ওপেনার লিটন দাসের উইকেটটি পড়ে যাওয়ায়। তবে ব্যাটিংয়ে সৌম্য সরকারের রাজসিক প্রত্যাবর্তন এবং ইমরুল কায়েসের ধীরস্থির দেখেশুনে খেলার মানসিকতায় আস্তে আস্তে স্পষ্ট হয়ে যায় যে, দেশবাসী প্রত্যাশিত ফলটিই পেতে চলেছে। অর্থাৎ হোয়াইটওয়াশই হচ্ছে। সাকিব-তামিমের মতো মহাপ্রতাপশালী ও পরমনির্ভরযোগ্য দুই খেলোয়াড় না খেললেও যে বাংলাদেশ দল জয়ের মুখ দেখতে পারে এই আত্মবিশ্বাসটাই এবারের সিরিজের বড় অর্জন। সেইসঙ্গে অদম্য, লড়াকু ও দাপুটে খেলার বৈশিষ্ট্যম-িত ঝলকানির কথাটিও বিশেষভাবে উল্লেখ করার মতো। দারুণ এক সিরিজ জয়ের জন্য আমরা টাইগারদের জানাই আন্তরিক অভিনন্দন। জাতিকে তারা আরও একবার বাঁধভাঙ্গা আনন্দ উপহার দিয়েছে। সঙ্গত কারণেই দেশের প্রধানমন্ত্রীও তাদের জানিয়েছেন অভিনন্দন। এই তো সেদিন আমরা এক অভূতপূর্ব দুর্দান্ত টিমি স্পিরিট লক্ষ্য করেছিলাম টাইগারদের মাঝে। কী করে ভুলব যে, প্রধান প্রধান যোদ্ধাকে আহতাবস্থায় আরোগ্যশালায় রেখে চূড়ান্ত যুদ্ধক্ষেত্রে গিয়েছিল টাইগাররা। এশিয়া কাপ ক্রিকেটে খেলতে খেলতে বাংলাদেশ দলের দুই প্রধান ক্রিকেটার ইনজুরির কারণে বাদ পড়লেন। একজন পাঁজরের ব্যথা উপেক্ষা করেই দুটি দুর্দান্ত ইনিংস খেললেন, যার একটিতে শতক এলেও অন্যটি মাত্র এক রানের জন্য শতক থেকে বঞ্চিত হলো। অপরদিকে অধিনায়কের হাঁটু একের পর এক ছুরিচিকিৎসায় কিছুটা ফিটনেসের ঝুঁকিতে বরাবরই। মরুভূমির দেশ সংযুক্ত আরব আমিরাত থেকে বাধ্য হয়ে স্বদেশে ফিরে এসেছিলেন দলের প্রধান দুই ব্যাটিংস্তম্ভ তামিম-সাকিব। সাকিব আবার বিশ্বসেরা অলরাউন্ডার। দুই প্রধান যোদ্ধাকে মাঠের বাইরে রেখে প্রতিপক্ষের সঙ্গে লড়াইয়ে বাংলাদেশ দল ধাপে ধাপে শেষ পর্যন্ত উঠে আসে ফাইনালে। আর সেইসঙ্গে ক্রিকেট দুনিয়াকে বাংলাদেশ আরও একবার শুনিয়েছিল বাঘের গর্জন। জিম্বাবুইকে লজ্জায় ডোবানো সিরিজের শেষ ম্যাচ সম্পর্কে কিছু বলতে গেলে সৌম্য-ইমরুল জুটির প্রশংসা না করলে কাহিনী অসমাপ্ত থেকে যাবে। কী অসাধারণ এক জুটি! সৌম্য-ইমরুল দুজনেই পেয়েছেন সেঞ্চুরি। কতদিন পর একটা সেঞ্চুরি পেলেন সৌম্য। ২০১৫ সালের পর এই প্রথম শতরান। ভাল ব্যাটিং কাকে বলে সেটিই যেন ভুলতে বসেছিলেন তিনি। আত্মবিশ্বাস চলে গিয়েছিল তলানিতে। শুক্রবার চট্টগ্রামের উইকেটে সেই হারানো আত্মবিশ্বাসটাই ফিরে পেলেন সৌম্য। ভারতসহ এশিয়ার প্রতিটি ক্রিকেট খেলুড়ে দেশই শুধু নয়, এখন বিশ্বের বাঘা বাঘা দেশ বাংলাদেশকে সমীহের দৃষ্টিতে দেখছে। শাবাশ বাংলাদেশ দল। আমরা চাই, এই দাপুটে জয়ের অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগিয়ে বাংলাদেশ ক্রিকেট দল আরও পরিণত ও দায়িত্বশীল হয়ে উঠুক। এখন টাইগারদের কাছে আমাদের বিশেষ চাওয়া হলো টেস্ট ম্যাচে তারা শক্তিমত্তার পরিচয় দিক। হারজিত বড় কথা নয়, পাঁচদিনের ম্যাচের শেষ সেশনটি পর্যন্ত তারা লড়াই চালিয়ে যাক। সীমিত ওভারের ম্যাচে টাইগাররা বিশ্বকে কাঁপিয়ে দিয়েছে। টেস্ট ম্যাচে অন্তত প্রতিপক্ষ দলসমূহের সমীহ আদায় করে নিক তারা। আমরা বিশ্বাস করি সেটি সম্ভব তাদের পক্ষে।
×