ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

ব্যাটিং কোচ নেইল ম্যাকেঞ্জি মনে করেন কঠোর পরিশ্রমই সৌম্যর এই সাফল্য, যা দলের জন্য অনুপ্রেরণা

সৌম্যর স্বরূপে ফেরা

প্রকাশিত: ০৫:৫৫, ২৮ অক্টোবর ২০১৮

সৌম্যর স্বরূপে ফেরা

মোঃ মামুন রশীদ ॥ ক্যারিয়ারের দশম ম্যাচেই দুর্দান্ত সেঞ্চুরি হাঁকিয়েছিলেন। তিন বছর আগে হুট করে বিশ্বকাপের আগে জাতীয় দলে সুযোগ করে নেয়া সৌম্য সরকার এরপর টানা দুই বছর নিয়মিতই খেলেছেন দলে। তামিম ইকবালের যোগ্য সঙ্গী হিসেবেই ভাবা হয়েছিল তাকে। কিন্তু ধারাবাহিকতার অভাবে এরপর অনেক সমালোচিত হয়েছেন এবং তারপরও দলে নিয়মিত থাকার বিষয়টি নিয়ে হয়েছে বিতর্ক। শেষ পর্যন্ত বাদ পড়েন। এ বছর প্রথম ওয়ানডে খেলেন এশিয়া কাপে বদলি হিসেবে মাঝপথে সুযোগ পেয়ে। সেখানে তেমন সুবিধা করতে না পারায় এবার সফরকারী জিম্বাবুইয়ের বিপক্ষে তিন ম্যাচের সিরিজে বাদ পড়েন ২৫ বছর বয়সী এ বাঁহাতি। তবে সিরিজের তৃতীয় ও শেষ ম্যাচে আচমকা প্রত্যাবর্তন করেই চমকে দিয়েছেন সবাইকে। স্বভাবজাত ভঙ্গিতে আক্রমণাত্মক মেজাজে ক্যারিয়ারের দ্বিতীয় সেঞ্চুরি হাঁকিয়ে হয়েছেন ম্যাচসেরা। এরপর বাংলাদেশের ব্যাটিং কোচ দক্ষিণ আফ্রিকার নেইল ম্যাকেঞ্জির প্রশংসা কুড়িয়েছেন। ২০১৫ বিশ্বকাপের আগে জিম্বাবুইয়ের বিপক্ষে ঘরোয়া সিরিজের শেষ ম্যাচে অভিষেক হয় সৌম্যের। কোচ চান্দিকা হাতুরাসিংহের পছন্দে দলে আসা এ বাঁহাতি ওই একটি ম্যাচ খেলেই সুযোগ করে নেন ওয়ানডে বিশ্বকাপের দলে। তবে নিউজিল্যান্ড-অস্ট্রেলিয়ায় অনুষ্ঠিত বিশ্বকাপে ৬ ম্যাচ খেলে ৫১ ও ৪০ রানের দুটি ইনিংস ছাড়া আহামরি কিছু করতে পারেননি। তবে ক্রিকেটবোদ্ধাদের প্রশংসা আদায় করে নেন ব্যাট হাতে তার মনোভাব, ইতিবাচক অঙ্গভঙ্গি, দারুণ ব্যাটিং কৌশল এবং আক্রমণাত্মক চেহারা দেখিয়ে। তাই বাংলাদেশ দলও আস্থা রেখেছিল তার ওপর। সেই আস্থার প্রতিদান দেন ২০১৫ সালে ক্যারিয়ারের দশম ম্যাচ খেলতে নেমে। মিরপুরে পাকিস্তানের বিপক্ষে ১১০ বলে ১৩ চার, ৬ ছক্কায় অপরাজিত ১২৭ রান করে নিজের আসল চেহারা দেখিয়েছিলেন সৌম্য। হাতুরাসিংহের প্রিয়ভাজন হিসেবে ততদিনে বিতর্কের জন্ম দিলেও এই ইনিংসটির সুবাদে সবকিছুরই সমাপ্তি ঘটে। তবে সেই সৌম্যকে পরবর্তীতে খুব কম ম্যাচেই দেখা গেছে। বছরটি দুর্দান্ত কাটলেও তার ছন্দপতন ২০১৬ থেকে। মাত্র ৪ ওয়ানডে খেলার সুযোগ পেয়ে তিনি করেছিলেন ০, ২০, ১১ ও ১ রান। পরের বছরটি আরও বাজে কেটেছে তার। ১৩ ওয়ানডের মধ্যে ১২ ইনিংসে ব্যাট করার সুযোগ পেয়েছিলেন। মাত্র দুটি হাফসেঞ্চুরি হাঁকিয়ে ২২.০৯ গড়ে করেন ২৪৩ রান। ততদিনে ‘সৌম্য হঠাও’ দাবিতে দেশের ক্রিকেটভক্তরা সোচ্চার। গত বছর অক্টোবরে দক্ষিণ আফ্রিকা সফরটি একেবারেই ব্যর্থতার মধ্যে ডুবে ছিলেন, ফলে বাদ পড়েন সৌম্য। ঠিক এক বছর পর ভাগ্যক্রমে আবার ওয়ানডে দলে ফেরেন এবার এশিয়া কাপের মাঝপথে। কিন্তু ফিরতি ম্যাচটিতে পাকিস্তানের বিপক্ষে শূন্য রানেই সাজঘরে ফেরেন। আর কোন বিকল্প না থাকায় এক ম্যাচ বিরতি দিয়ে ফাইনালে ভারতের বিপক্ষে নেমেছিলেন। লোয়ার অর্ডারে নেমে ৩৩ রানের একটি কার্যকরী ইনিংস উপহার দেন। তবে এরপরও তাকে এবার জিম্বাবুইয়ের বিপক্ষে দলে রাখা হয়নি। কিন্তু চলমান জাতীয় ক্রিকেট লীগে (এনসিএল) অসাধারণ নৈপুণ্য দেখিয়ে নির্বাচকদের ভাবনায় ফেলে দেন। সফরকারীদের বিপক্ষে বিকেএসপিতে প্রস্তুতিমূলক ওয়ানডে খেলতে নেমে ১০২ রানের অপরাজিত ইনিংস উপহার দেন। তার মাত্র দু’দিন আগেই এনসিএলে অর্থশতক হাঁকিয়েছেন খুলনায়। ম্যাচটি শেষে আবার খুলনায় গিয়ে হাফসেঞ্চুরি হাঁকান। ততক্ষণে জিম্বাবুইয়ের বিপক্ষে ২-০ ব্যবধানে সিরিজ জয় নিশ্চিত করে ফেলেছে বাংলাদেশ দল। এ কারণে শেষ ম্যাচে সৌম্যকে সুযোগ করে দেয়া হয়। আর সেই সুযোগটা দারুণভাবে কাজে লাগিয়েছেন ওয়ানডাউনে নেমে। খুলনা থেকে আগেরদিন চট্টগ্রাম এসেই আন্তর্জাতিক ওয়ানডেতে ফিরেই হাঁকান সেঞ্চুরি। আর এই ম্যাচে ৩ বছর আগের পুরনো চেহারার সৌম্যকে দেখেছেন সবাই। মাত্র ৮১ বলে সেঞ্চুরি হাঁকানোর পর ৯২ বলে ৯ চার, ৬ ছক্কায় ১১৭ রান করে বাংলাদেশের জয় পাওয়াটাকে করেছেন সহজ। সৌম্যের এমন প্রত্যাবর্তন সবার কাছেই আকাক্সিক্ষত ছিল। কিন্তু বারবার ব্যর্থ হচ্ছিলেন তিনি। অবশেষে ফিরলেন স্ব-মহিমায়। বিভিন্ন ফরমেটে সর্বশেষ ৫ ইনিংসে তার রান এখন ৭১, ৭৬, ১০২*, ৬৬ ও ১১৭! দুই সেঞ্চুরি ও ৩ হাফসেঞ্চুরিসহ ১০৮.০০ গড়ে ৪৩২! অথচ এই ইনিংসগুলো তাকে খেলতে হয়েছে খুলনা থেকে সাভার, সাভার থেকে খুলনা এবং খুলনা থেকে চট্টগ্রাম যাতায়াত করে। প্রতিটির মাঝে সর্বোচ্চ দু’দিন করে বিরতি পেয়েছেন। অবশ্য এমন পরিস্থিতি মেনে নিয়েছেন সৌম্য। জানিয়েছেন তার ব্যাগ সবসময় গোছানোই থাকে। কারণ চট্টগ্রামে এই ইনিংস খেলার পরই তিনি বরিশাল রওনা হয়েছেন সোমবার শুরু হতে যাওয়া এনসিএলের পঞ্চম রাউন্ডে খেলতে। সৌম্যকে এমন রূপে দেখার পর খুশি ব্যাটিং কোচ ম্যাকেঞ্জিও। তিনি বলেন, ‘চট্টগ্রামে সৌম্য যে মনোভাব, কৌশলে খেলেছে তেমনভাবে যদি ধারাবাহিকতা রাখতে পারে তাহলে সেটা দলের বাকিদের আরও আত্মবিশ্বাসী করবে। তার মতো করে ভাবলে বাকিরাও খুব উচ্চমর্গীয় ব্যাটিং উপহার দিতে সক্ষম হবে। খুবই ভাল লাগছে কঠোর শ্রম দিয়ে সে এই পুরস্কারটা অর্জন করেছে। সৌম্য ছেলেটির ক্যারিয়ার বেশ ঘটনাবহুল। সে বেশ দীর্ঘকায় হওয়ার কারণে বলকে দারুণ মারতে পারে এবং প্রতিপক্ষের ওপর চাপ সৃষ্টি করতে পারে। আমার মনে হয় সৌম্য যেভাবে ব্যাট করেছে সেভাবেই করা উচিত। অন্য কারও মতো ব্যাটিং না করে নিজের স্টাইলের ওপর আস্থা রাখা প্রয়োজন।’
×