ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

পৃথিবীর অন্যান্য দেশের মতো এদেশেও সুষ্ঠু নির্বাচন হবে ॥ নাসিম

প্রকাশিত: ০৫:৪৪, ২৮ অক্টোবর ২০১৮

পৃথিবীর অন্যান্য দেশের মতো এদেশেও সুষ্ঠু নির্বাচন হবে ॥ নাসিম

স্টাফ রিপোর্টার, গাজীপুর ॥ স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম বলেছেন, আমি বিএনপির উদ্দেশে বলতে চাই, আপনারা নির্বাচনে আসুন। নির্বাচনের বিকল্প কিছু নেই। সংবিধান অনুযায়ী যথাসময়েই নির্বাচন হবে, নির্বাচনের কোন বিকল্প হতে পারে না। পৃথিবীর অন্যান্য দেশে যেভাবে নির্বাচন হয় সেভাবেই আমাদের দেশেও সুষ্ঠু নির্বাচন হবে। বিএনপি যদি নির্বাচনে না আসে, তাহলে আগামীতে তাদের বাটি চালান দিয়েও খুঁজে পাওয়া যাবে না। বাংলার মাটি থেকে তারা হারিয়ে যাবে। স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম শনিবার বিকেলে গাজীপুরের কাপাসিয়ায় উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স প্রাঙ্গণে সৈয়দা জোহরা তাজউদ্দীন নার্সিং কলেজের নবনির্মিত ভবন ও এর কার্যক্রম উদ্বোধনকালে এসব কথা বলেন। মন্ত্রী যুক্তফ্রন্টের ৭ দফা দাবি ও আন্দোলন প্রসঙ্গে বলেন, তাদের দাবি অযৌক্তিক ও অকার্যকর। জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আর মাত্র ক’দিন বাকি আছে। ক’দিন পরেই নির্বাচনের ঢোল বাজতে শুরু করবে। এখন নির্বাচনের সময়, জনগণ ভোট দিয়ে তাদের সরকার প্রতিষ্ঠা করবে। জনগণ তাদের সরকার বেছে নেবে। তাই এসব দফা বাদ দিয়ে সবাই নির্বাচনে আসুন। মন্ত্রী বলেন, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান তরুণ ব্যারিস্টার ড. কামালকে ভালবাসতেন, তাকে তিনি ¯েœহ করতেন। ড. কামালকে ডেকে এনে বঙ্গবন্ধু স্বাধীন বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী বানিয়েছিলেন, বঙ্গবন্ধুর ছেড়ে দেয়া আসনে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় তাকে এমপি বানিয়েছিলেন। কিন্তু আজ কষ্ট পাই যখন দেখি সেই ড. কামাল সাহেব বঙ্গবন্ধুর খুনীদের পক্ষ অবলম্বন করে তাদের পক্ষে বক্তব্য দিচ্ছেন। দুঃখ লাগে যখন দেখি বঙ্গবন্ধুর আত্মস্বীকৃত খুনীদের আশ্রয়-প্রশ্রয়দাতা জামায়াত-বিএনপির সঙ্গে একই মঞ্চে দাঁড়িয়ে ড. কামাল বক্তব্য রাখছেন। তিনি শেষ বয়সে এসে আজ বঙ্গবন্ধুর রক্তের সঙ্গে বেইমানি করেছেন। বঙ্গবন্ধুর খুনীদের সঙ্গে হাত মিলিয়েছেন। আগামী নির্বাচনে ভোটের মাধ্যমে বাংলার মানুষ এ বেইমানির জবাব দেবে, ইনশা আল্লাহ। গাজীপুর-৪ (কাপাসিয়া) আসনের সংসদ সদস্য সিমিন হোসেন রিমির সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী তানজিম আহমেদ সোহেল তাজ, স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের চিকিৎসা শিক্ষা অনুবিভাগের অতিরিক্ত সচিব বদরুন নেছা, নার্সিং ও মিডওয়াইফারি অধিদফতরের মহাপরিচালক তন্দ্রা শিকদার, স্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদফতরের প্রধান প্রকৌশলী ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এমএ মোহী, গাজীপুরের জেলা প্রশাসক ড. দেওয়ান মুহাম্মদ হুমায়ুন কবীর ও পুলিশ সুপার শামসুন্নাহার, কাপাসিয়া উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান রেজাউর রহমান লস্কর মিঠু এবং উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডাঃ আব্দুস সালাম সরকার। স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণমন্ত্রী নাসিম বলেন, বঙ্গতাজ তাজউদ্দীন আহমদসহ জাতীয় চার নেতা বঙ্গবন্ধুর বিশ^স্ত সহচর ও বন্ধু ছিল। বঙ্গবন্ধু ও জাতীয় চার নেতাকে হত্যার পর সৈয়দা জোহরা তাজউদ্দীন আওয়ামী লীগের দুঃসময়ে হাল ধরেছিলেন। বঙ্গতাজের সহধর্মিণী সৈয়দা জোহরা তাজউদ্দীনের নামে নার্সিং কলেজের নামকরণ করতে পেরে নিজেকে ধন্য মনে করছি। অনেকে আইনের শাসনের কথা বলেন, বিচার বিভাগের স্বাধীনতার কথা বলেন। কিন্তু মোস্তাক-জিয়া ইনডেমনিটি অধ্যাদেশ জারি করে হত্যার বিচার বন্ধ করেছিল। ২১ বছর পিতা হত্যার বিচার পাইনি। মামলা করতেও সাহস পাইনি। তখন কোথায় ছিল বিচার, কোথায় ছিল আইনের শাসন ? শুনেছি কাপাসিয়ায় নতুন নতুন নেতার আবির্ভাব হয়েছে। হঠাৎ করে আসা নেতারা কি করবে? তাজউদ্দীনের সন্তান রিমি-সোহেল থাকতে কাপাসিয়ায় আর কোন নেতার প্রয়োজন নেই। তাদের পেছনে আমি আছি, শেখ হাসিনাও ওদের সঙ্গে আছে। তিনি আগামী নির্বাচনে সিমিন হোসেন রিমিকে নৌকা প্রতীকে ভোট দিয়ে কাপাসিয়ার উন্নয়নের ধারাকে অব্যাহত রাখার আহ্বান জানান। সভাপতির বক্তব্যে সিমিন হোসেন রিমি বলেন, আমরা কাপাসিয়ায় মানবিক সমাজ গড়তে চাই। যুব সমাজের জন্য কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করতে চাই। সাহস করে বলতে চাই আমি ও আমার প্রতিষ্ঠান দুর্নীতিমুক্ত। মানুষকে কষ্ট দেয়াও দুর্নীতি। মানুষের সঙ্গে অন্যায় আচরণ করাও দুর্নীতি। আমরা সকল মানুষের জন্য দুর্নীতিমুক্ত নিরাপদ বাংলাদেশ গড়তে চাই। তিনি কাপাসিয়ার উন্নয়নের ফিরিস্তি তুলে ধরে বলেন, কাপাসিয়ার ব্যাপক উন্নয়ন হয়েছে। বিদ্যুতের গ্রাহক ১৮ হাজার থেকে ৮২ হাজার হয়েছে। এক সপ্তাহের মধ্যে গ্রাহকের সংখ্যা ৯২ হাজার ছাড়িয়ে যাবে। সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী তানজিম আহমেদ সোহেল তাজ বলেন, শেখ হাসিনার উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রাখতে আগামী নির্বাচনে আমরা উৎসব করব। উদ্বোধনী মঞ্চে উপবিষ্ট সংসদ সদস্য, অতিরিক্ত সচিব, মহাপরিচালক, পুলিশ সুপার, ইউএনও সকলেই নারী। নারী-পুরুষের সমতায় এটা শেখ হাসিনার অবদান। পরে স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম নার্সিং কলেজের নবনির্মিত ভবন ও এর কার্যক্রম উদ্বোধন করেন এবং পরিদর্শন করেন। উল্লেখ্য, সৈয়দা জোহরা তাজউদ্দীন নার্সিং কলেজটি নির্মাণ করতে ব্যয় হয়েছে ২২ কোটি ৩৩ লাখ ৫২ হাজার টাকা। নিমার্ণ কাজটি গত ২০১৫ সালের ডিসেম্বরে শুরু হয়ে কলেজের ৪ তলা একাডেমিক ভবন, ২তলা হোস্টেল বিল্ডিং, ২তলা গ্যারেজ কাম ড্রাইভার কোয়ার্টার এবং একটি সাবস্টেশনের কাজ সম্পন্ন করে ২০১৭ সালের ২৬ জুলাই সংশ্লিষ্ট বিভাগের কাছে হস্তান্তর করা হয়। কলেজের সেশন থাকবে ৪টি, প্রতি সেশনে ১০০ ছাত্রছাত্রী ভর্তির সুযোগ থাকবে। এখানে বিএসসি ইন নার্সিং ডিগ্রী কোর্স চালু করা হচ্ছে বলে বিভাগীয় সূত্রে জানা যায়। উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা অফিসার ডাঃ আবদুস সালাম সরকার জানান, এটি বাংলাদেশের চতুর্থতম সরকারী নার্র্সিং ইনস্টিটিউট। বিভিন্ন সরকারী হাসপাতালে পদবি ভিত্তিক কর্মরত নার্সগণ উন্নত পেশাগত প্রশিক্ষণে অংশগ্রহণন করতে এ ইনস্টিটিউটে ভর্তি হতে পারবেন। এছাড়া মোট আসনের পাঁচভাগ নার্সিং ডিপ্লোমাধারী শিক্ষার্থীদের জন্য বরাদ্দ থাকবে। আগামী ২০১৮/১৯ শিক্ষাবর্ষ থেকে পঠন-পাঠন কার্যক্রম চলবে। নার্সিং কলেজের অধ্যক্ষ মধুসুদন চক্রবর্তী বলেন, এ ইনস্টিটিউটে প্রতি শিক্ষাবর্ষে এক শ’ ২০টি আসন সংরক্ষিত রয়েছে। একজন অধ্যক্ষসহ মোট পাঁচ শিক্ষক পাঠদান কার্যক্রমে যুক্ত রয়েছেন। ২০১৮-২০১৯ শিক্ষাবর্ষ (জানুয়ারি-২০১৯) থেকে ওই কলেজের শিক্ষা কার্যক্রম শুরু হবে।
×