ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

মাদকের ব্যবসা এখন ‘কাটঅফ’ পদ্ধতিতে চলছে ॥ র‌্যাব ডিজি

প্রকাশিত: ০৫:৩৮, ২৮ অক্টোবর ২০১৮

মাদকের ব্যবসা এখন ‘কাটঅফ’ পদ্ধতিতে চলছে ॥ র‌্যাব ডিজি

স্টাফ রিপোর্টার ॥ চলমান মাদকবিরোধী অভিযান সফল নাকি ব্যর্থ- বিতর্কের মাঝে মুখ খুললেন র‌্যাব মহাপরিচালক বেনজীর আহমেদ। তিনি সুস্পষ্ট করেই বলেন, এ অভিযান ব্যর্থ বলা যাবেনা। কেননা, মাদকের দু’একজন গডফাদার নিয়ে মাতামাতি চললেও মাদকবিরোধী অভিযানে পরিচালনা করতে গিয়ে এর বাইরেও মাদকের ভিন্ন জগত আবিষ্কৃত হয়েছে। মাদকের মূল ব্যবসায় অন্য লোকের সন্ধান পাওয়া গেছে। এখন কাটঅফ পদ্ধতিতে মাদকের ব্যবসা চলছে। বাংলাদেশ চলচ্চিত্র উন্নয়ন কর্পোরেশন (এফডিসি) মিলনায়তনে শনিবার ‘মাদক নিয়ন্ত্রণে রাজনৈতিক সদিচ্ছা’ শীর্ষক আয়োজিত বিতর্ক প্রতিযোগিতায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ মন্তব্য করেন। বিজিএমইএ ইউনিভার্সিটি অব ফ্যাশন এ্যান্ড টেকনোলজি ও আহসান উল্লাহ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের অংগ্রহণে এই ছায়া সংসদের আয়োজন করে ডিবেট ফর ডেমোক্রেসি। ছায়া সংসদে বিজিএমইএ ইউনিভার্সিটি অব ফ্যাশন এ্যান্ড টেকনোলজি সরকারী দল ও আহসান উল্লাহ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় বেসরকারী দল হিসেবে অংশ নেয়। দুই দলের যুক্তি উত্থাপন শেষে বিচারকরা সরকারী দল অর্থাৎ বিজিএমইএ ইউনিভার্সিটি অব ফ্যাশন এ্যান্ড টেকনোলজিকে বিজয়ী ঘোষণা করে। র‌্যাব ডিজি বেনজীর আহমেদ বলেন, মাদকবিরোধী অভিযানে নেমে আমাদের সামনে অনেক চ্যালেঞ্জ ছিল। দু’একজন গডফাদার নিয়ে মিডিয়াতে মাতামাতি চলে। কিন্তু মাদকের একটা ভিন্নজগত আবিষ্কার করলাম। মূল বিজনেসে দেখি অন্য লোক। অনেক ‘আননোন’ লোকজন এ ব্যবসা করছে। অভিনব সব কায়দায় তারা ইয়াবাপাচার করছে। এ অভিযান শুরুর পর মাদক সংশ্লিষ্টতার অভিযোগে র‌্যাব ১৭ হাজার জনের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, প্রথমে আমরা খুচরা বিক্রেতাদের কাছে গেছি, তারপর ডিলারদের কাছে। এরপর ক্যারিয়ারের কাছে গেছি, এরপর যারা ইনভেস্ট করছে, যারা আমদানি করছে এখন তাদের দিকে যাচ্ছি। তারা ‘কাটঅফ’ পদ্ধতিতে ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছে, তারপরও আমরা ওই জায়গায় পৌঁছেছি। বিভিন্ন সময় মিডিয়ায় গডফাদার হিসেবে ২/১ জনকে ইন্ডিকেট করে আসছে। তার পকেটে কী ইয়াবা আছে, তার বাড়িতে কী ইয়াবা আছে, সে কী ইয়াবার চালান নিয়ে আসে ? তার আশপাশের লোকজন হয়ত এর সঙ্গে জড়িত। এর মধ্যে ওই আশপাশের ২-১ জন কিন্তু নেই। মাদকবিরোধী অভিযান পরিচালনা করতে গিয়ে তদবিরের জন্য গত ৫ মাসে কোন ফোন পাইনি। যেখানে জনগণের সহযোগিতা চেয়েছি সেখানেই পেয়েছি। রাজনৈতিক সদিচ্ছা ছাড়া মাদক নির্মূল সম্ভব নয়। রাজনৈতিক সদিচ্ছার পাশাপাশি জনগণের সদিচ্ছা থাকলে এ যুদ্ধে আমরা অবশ্যই জয়ী হব। কক্সবাজারের ২৩ লাখ মানুষ কী ইয়াবার ব্যবসা করে, নাকি এক লাখ? মাত্র গুটিকয়েক লোক মাদক কারবারে সম্পৃক্ত। তাদের সামাজিকভাবে মোকাবেলা করতে হবে। কক্সবাজারের ৪-৫শ’ বা হাজারখানেক লোক যদি বাংলাদেশের সঙ্গে না থাকে তাহলে কী খুব সমস্যা হবে? ভারত থেকে ফেনসিডিল আসত, সে দেশে ফেনসিডিলের কারখানা। কিন্তু সেখানকার যুব সমাজ তো ফেনসিডিল খায় না। শুধুমাত্র মিয়ানমার থেকে এখন ইয়াবা আসছে। মিয়ানমার রোহিঙ্গাদের তাড়িয়ে দিয়েছে কিন্তু যেসব রোহিঙ্গা এ দেশে ইয়াবা পাচার করে তাদের তাড়ায়নি। মিয়ানমারের লোক তো ইয়াবা খায় না, আমরা কেন খাই ? আমরা কেন ১ লাখ কোটি টাকা ধ্বংস করে দিচ্ছি ? তরুণ সমাজের কাছে আমার প্রশ্ন, আমরা কেন ওদের ভিকটিম হব ? যারা ব্রিটিশ আমলে জন্মগ্রহণ করেছে তাদের মনে ব্রিটিশ, যারা পাকিস্তান আমলে জন্ম নিয়েছে, তাদের কারও মনেও পাকিস্তান প্রীতি থাকতে পারে। কিন্তু তোমাদের জন্ম বাংলাদেশে, তোমার দেশ তো একটাই। অপরাধীরা শক্তিশালী নয়। শক্তিশালী মেজরিটি, যারা সাইলেন্ট থাকে। মাদকের ১ লাখ কোটি টাকার ইকোনমিতে শিক্ষক, পুলিশ থেকে শুরু করে এমন কোন পেশা নেই, যে পেশার লোক জড়িত নেই। কিন্তু এ সমাজ থেকেই তো বিভিন্ন পেশায় রিক্রুট করা হয়, তাদের তো ফ্যাক্টরিতে তৈরি করা হয় না। তারা কেন মাদক ব্যবসার সঙ্গে জড়িয়ে গেল ? সেজন্য প্রথমে আমাদের নিজেদের মধ্যে শুদ্ধি অভিযান চালাতে হবে। সামনে নির্বাচনের কারণে একটু অন্যদিকে নজর দিতে হবে জানিয়ে তিনি বলেন, নির্বাচনের পর মাদকবিরোধী এ অভিযান আরও গতিশীল করা হবে। মাদক প্রতিরোধে প্রতি জেলায় বিশেষ আদালত স্থাপনের প্রস্তাব করে তিনি বলেন, এখন যেসব মামলা হচ্ছে দেখা যাবে এই গতিতে চললে বিচার শেষ হতে ’২৮ সাল পর্যন্ত লাগবে। অনেক বিচারক অবসরে রয়েছেন। অবসরপ্রাপ্ত বিচারক, অবসরপ্রাপ্ত পুলিশÑ ম্যাজিস্ট্রেটের সমন্বয়ে একটি আদালত তৈরি করা হোক। বিচারে আসামি খালাস পাক কিন্তু বিচারটা হোক। ছায়া সংসদে সরকারী দল মাদক নিয়ন্ত্রণে রাজনৈতিক সদিচ্ছাই যথেষ্ট বলে মত দেন এবং এ সংক্রান্ত একটি বিল সংসদে উত্থাপন করেন। তবে বিরোধীদল এর বিরোধিতা করে শুধুমাত্র রাজনৈতিক সদিচ্ছাতেই মাদক নিয়ন্ত্রণ সম্ভব নয় বলে বিভিন্ন যুক্তি তুলে ধরেন।
×