ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

শহর গ্রাম পাড়া মহল্লা ভাসছে নির্বাচনী জোয়ারে

প্রকাশিত: ০৫:৩৬, ২৮ অক্টোবর ২০১৮

শহর গ্রাম পাড়া মহল্লা ভাসছে নির্বাচনী জোয়ারে

ওয়াজেদ হীরা ॥ টাঙ্গাইল জেলার প্রত্যন্ত গ্রাম ইছাদীঘি। সন্ধ্যার পর পরই বিভিন্ন চায়ের দোকান অসংখ্য মানুষের ভিড়ে সরগরম। যারা সবাই স্থানীয়। এসসঙ্গে বসে কোন না কোন টেলিভিশনে সন্ধ্যার খবর দেখছেন। সুনসান নীরবতা। খবর শেষে নীরবতা ভেঙ্গে চায়ের কাপে চুমুক দিতে দিতে ক্ষেতমজুর ইব্রাহিম (৪৬) প্রশ্ন ছুড়ে দেনÑআচ্ছা ভাই, নির্বাচন কি সত্যি হইব নাকি? আমাদের এমপি কে হইব? আমরা কি ভোট দিমু? পাশে থাকা একজন উত্তর দেয়Ñ হইতেও পারে নাও হইতে পারে। এমপির খবর, ভোটের খবর কিছুই জানি না। আরেকজন জানতে চানÑ খালেদা জিয়া তো জেলে, ছেলেও বিদেশে আর শেখের বেটিতো দেশ ভালই চালাইতাছে নির্বাচন কেন দরকার? নিজেদের করা প্রশ্নের উত্তরও দিচ্ছেন নিজেদের মধ্যে থেকে কেউ। রাত বাড়তে থাকে কাপের পর কাপ চায়ের আড্ডা চলে। এক সময় গ্রামের সহজ-সরল-নিরীহ মানুষ কিছু অজানা প্রশ্ন নিয়েই ফেরে ঘরে। শুধু এই গ্রাম নয় দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলের নিত্য দিনের চিত্র এটি। তথ্যপ্রযুক্তির সুবিধার কারণে গ্রামে বসেই খবরাখবর রাখছেন নির্বাচনের। গ্রামের সহজ-সরল মানুষের মতো শহরের মানুষের মধ্যেও এখন আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন। এই নির্বাচন ঘিরে গ্রামের পাড়া-মহল্লায় চায়ের দোকান থেকে শুরু করে শহরের অলিগলি এমনকি টেলিভিশনের টকশোতে নানামুখি আলোচনা চলছে। আলোচনা হচ্ছে ঘরে ঘরে। নির্বাচনের আলোচনা এখন পরিবারের গ-ি পেরিয়ে সামাজিকভাবে খোলামেলাই হচ্ছে। এছাড়াও সরকারী, আধা সরকারী, স্বায়ত্তশাসিত বেসরকারী অফিসেও ঘুরেফিরে আলোচনা চলেÑ নির্বাচন কি হচ্ছে, সেটি নিয়ে। এক কথায় একাদশ জাতীয় সংসদ নিয়ে সরব আলোচনা সর্বত্রই। বার বার ঘুরেফিরে যে প্রশ্নগুলো আসছে তা হলো- কী হবে? কী হতে যাচ্ছে? নানা শ্রেণী-পেশার, নানা মতের মানুষের এসব আলোচনায় কান পাতলেই যে কথাগুলো শোনা যাচ্ছে তা হচ্ছে- নির্বাচন কবে হচ্ছে? কিভাবে হচ্ছে? আওয়ামী লীগ সরকার আবার ক্ষমতায় আসবে কিনা? বিএনপি এলে কি হবে না এলে কি হবে, উন্নয়ন যাত্রা থেমে যাবে কিনা, ঐক্যের মাধ্যমে কার কি লাভ হলো ইত্যাদি প্রশ্ন বার বার জনমনে ঘুরেফিরে আসছে। নির্বাচন কেন্দ্র করে আলোচনা যেমন বাড়ছে তেমনি ২০১৪ সালের জ¦ালাওপোড়াও-এর কারণে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠাও বাড়ছে জনমনে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, উদ্বেগ বাড়াটা স্বাভাবিক। তবে এবার সে সুযোগ নেই। একাদশ সংসদ নির্বাচনের সময় আর খুব বেশি নেই। প্রতিটি দিনই নানামুখী আলোচনা বাড়ছে। সম্প্রতি নির্বাচন কেন্দ্র করে জাতীয় ঐক্য গঠন নিয়ে আলোচনা আরও বেড়েছে। সেই সঙ্গে ২১ আগস্ট ভয়াবহ গ্রেনেড হামলার কারণে তারেক রহমানসহ বিএনপির বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাদের সাজার বিষয়টি নিয়েও চতুর্মুখী আলোচনা হচ্ছে। ভোটের আগে বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়া মুক্তি পাচ্ছেন কিনা সেটিও জানার আগ্রহ মানুষের মধ্যে। হাজারো প্রশ্ন থাকলেও জনগণের কাছে উত্তর নেই একটিরও। তবে আপামর জনগণ চায় সহিংসতা নয়, একটি সুষ্ঠু নির্বাচন। কেউ কেউ জোর দিচ্ছেন আলোচনার মাধ্যমে সমঝোতায় পৌঁছানোর বিষয়টির ওপর। নবেম্বরের শুরুতে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা এবং ডিসেম্বরে নির্বাচন হওয়ার কথা রয়েছে। বর্তমান সরকারের অধীনেই অনুষ্ঠিত হবে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন। পবিত্র ঈদ-উল-আজহার পরপরই আন্দোলনের মাধ্যমে ভোটের মাঠ গরম হয়ে ওঠার কথা ছিল। কিন্তু বিএনপি সাংগঠনিকভাবে সেটি করতে পারেনি। রাজনীতি সংশ্লিষ্টরা বলছেন, গত কয়েক বছরে আওয়ামী লীগ সরকারের উন্নয়নের কারণেও জনগণ বিএনপির অযৌক্তিক আন্দোলনে সমর্থন দিচ্ছে না। এরই মধ্যে দলের চেয়ারপার্সন থেকে শুরু করে বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাদের সাজার বিষয়টি নিয়ে জনগণের সহানুভূতি পাচ্ছে না দলটি। কেউ বলছেন ভোট হবে অংশগ্রহণমূলক এবং নির্বিঘœ। সহিংস পরিস্থিতির আশঙ্কাও উড়িয়ে দিচ্ছেন না বিশ্লেষকরা। নির্বাচনকালীন সরকারের রূপরেখা নিয়েও নানা ধরনের আলোচনা হচ্ছে। এ সরকারে কে থাকবেন, কে বাদ পড়বেন। তবে সম্প্রতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা অনেকটা ইঙ্গিত দিয়েছেন বর্তমান মন্ত্রিসভা ছোট হচ্ছে না। জনগণের মধ্যে রয়েছে নানা আশঙ্কাও। নির্বাচন ও উৎকণ্ঠা নিয়ে বাংলাদেশ বার কাউন্সিলের ভাইস চেয়ারম্যান এ্যাডভোকেট ইউসুফ হোসেন হুমায়ুন জনকণ্ঠকে বলেন, সংবিধান যারা মানেন, সম্মান করেন তাদের নির্বাচনের বাইরে যাওয়ার সুযোগ নেই। সংবিধান আছে বলেই জোট হচ্ছে, জনগণের সামনে আসতে পারছে। জনগণের উৎকণ্ঠা নিয়ে সুপ্রীমকোর্ট আইনজীবী সমিতির সাবেক এই সভাপতি বলেন, দেখুন, ২০১৪ সালের নির্বাচনে বিএনপি-জামায়াত জোট মানুষ পুড়িয়ে, ঘরবাড়ি জ¦ালিয়ে যে ভীতিকর পরিবেশ তৈরি করেছিল নির্বাচন এলে সে কথা সাধারণ মানুষের মনে হয়ে উৎকণ্ঠা কাজ করা স্বাভাবিক। তবে সে সময়ের পরিবেশ এখন নেই। দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন হলেও মানুষ নির্বিঘেœ ভোট দিতে পারবেন। ভোটের বেশ ভাল পরিবেশ বজায় আছে বলেও জানান তিনি। এদিকে, ভোটের লড়াইয়ে সরকারকে চাপে ফেলতে বিরোধী দলগুলো নিয়ে বৃহত্তর ঐক্য গঠন করা হয়েছে। জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট নামে এ কিউ এম বদরুদ্দোজা চৌধুরীকে বাদ দিয়ে বিএনপিকে সঙ্গে নিয়ে কামাল হোসেনের নেতৃত্বে নতুন জোট গঠিত হয়। নতুন জোট ঘোষণাকালে জাতীয় ঐক্য প্রক্রিয়ার উদ্যোক্তা কামাল হোসেনের সঙ্গে ছিলেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, জেএসডির সভাপতি আ স ম আবদুর রব ও নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না। জোট গঠনের পরপরই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে নবগঠিত জাতীয় ঐক্য প্রক্রিয়া নেতা মাহমুদুর রহমান মান্না এবং মাহী বি. চৌধুরীর একটি ফোনালাপ প্রকাশ হয়েছে। এতে মাহী বি. চৌধুরী নবগঠিত ঐক্যফ্রন্টকে দেশবিরোধী চক্রান্ত বলে অভিহিত করেন। এদিকে, ওয়ান-ইলেভেনের কুশীলবদের সঙ্গে বিএনপির সম্পর্ক গড়ার অভিযোগ তুলে ২০ দলীয় জোট ছাড়ার ঘোষণা দিয়েছে বাংলাদেশ ন্যাপ ও ন্যাশনাল ডেমোক্র্যাটিক পার্টি (এনডিপি)। ২০ দলীয় জোটে ভাঙ্গন নিয়ে নতুন জোটে কিছুটা অসস্তি রয়েছে। ছয় বছরের জোটসঙ্গী দুটি দলের আকস্মিক সম্পর্কোচ্ছেদের ঘোষণায় বিস্মিত বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ও ২০ দলের সমন্বয়ক নজরুল ইসলাম খান প্রতিক্রিয়ায় বলেন, এর পেছনে অন্য কোন কারণ আছে বলে তারা মনে করেন। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে ঢাকা বিশ^বিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মোঃ আখতারুজ্জামান জনকণ্ঠকে বলেন, বাংলাদেশের যে সাংগঠনিক শক্তি, যে অবস্থান তাতে অবশ্যই একটি সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব। দেশ অনেক এগিয়ে গেছে। সরকারের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান এখন শক্তিশালী। তাই সংবিধানের আলোকে একটি সুষ্ঠু নির্বাচন অবশ্যই সম্ভব। একই সঙ্গে নির্বাচন হলে মানুষের ভীতি নিয়ে তিনি বলেন, মানুষের মধ্যে ভয় অনেকটা কমে এসেছে। কেননা, আমাদের আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীও এখন অনেক দক্ষ। তারা ৫ বছর আগে জ¦ালাও-পোড়াওয়ের মতো ধ্বংসাত্মক কর্মসূচীগুলো বেশ ভালভাবেই সামলিয়ে আস্থা অর্জন করেছে। এবার সে ধরনের সুযোগ নেই বলেও জানান এই শিক্ষাবিদ। অবশ্য কিছুটা দ্বিমত পোষণ করে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা এম হাফিজ উদ্দিন খান জনকণ্ঠকে বলেন, আগামী নির্বাচন নিয়ে সর্বত্র আলোচনা থাকলেও আমার মনে এটি একপেশেই হবে। নির্বাচন অংশগ্রহণমূলক ও নিরপেক্ষ নিয়ে নানা হিসেব হচ্ছে। একটি দেশে গণতন্ত্র নিয়ে কথা উঠলে প্রথমেই আসবে সুষ্ঠু নির্বাচনের বিষয়টি। এরপর অন্যান্য বিষয় আসে বলেও জানান তিনি। ঐক্য গঠন নিয়ে তিনি বলেন যে, ঐক্য গঠন হয়েছে তারা সমাবেশ করছে, এটি ভাল। বিপরীতে কেউ না কেউ থাকেনই। তবে ঐক্য গঠন হলেও তাদেরকে নানাভাবে বাধা দেয়া হচ্ছে বলেও জানান তত্ত্বাবধায় সরকারের সাবেক এই উপদেষ্টা। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আরেক উপদেষ্টা রাশেদা কে চৌধুরীর সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি নির্বাচন নিয়ে কোন কথাই বলেননি। তবে নির্বাচন নিয়ে সাবেক উপাচার্য আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক জনকণ্ঠকে বলেন, একটি নির্বাচন কমিশনের অধীনে এই নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। সরকার সেখানে রুটিন দায়িত্ব পালন করে শুধু। বর্তমান নির্বাচন কমিশনকে আইনে যে ক্ষমতা দেয়া হয়েছে তাতে অবশ্যই একটি সুষ্ঠু এবং গ্রহণযোগ্য নির্বাচন সম্ভব। যারা বলে সম্ভব নয় তারা নির্বাচন নিয়ে অপপ্রচার চালায়। এই শিক্ষাবিদ আরও বলেন, ২০১৪’র বাংলাদেশ এখনকার বাংলাদেশ এক নয়। অনেক পাল্টে গেছে। সেই সময় জ¦ালাও-পোড়াও করে বিএনপি-জামায়াত জোট জনগণের মনে যে ঘৃণা সৃষ্টি করেছে, যে ভুল করেছে, ভবিষ্যতে তারা এ ধরনের কর্মসূচী থেকে বিরতই থাকবেন বলে মনে করি। মানুষের মধ্যে সেই জ¦ালাও-পোড়াওয়ের কারণে কিছুটা আতঙ্ক অবশ্য রয়ে গেছে। তবে আমাদের আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী শক্ত হাতে এসব মোকাবেলা করবে বলেও জানান ঢাকা বিশ^বিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য। জানা গেছে, আগামী নির্বাচন সামনে রেখে ব্যাপক পরিকল্পনা নিয়ে মাঠে নেমেছে ক্ষমতাসীনরা। সে লড়াইয়ে পিছিয়ে নেই এরশাদের জাতীয় পার্টিও। তারাও নির্বাচনের নানা প্রস্তুতি নিচ্ছে। এদিকে, আওয়ামী লীগ যোগ্য ও মাঠ পর্যায়ে গ্রহণযোগ্য ব্যক্তিকে মনোনয়ন দেবে। ইতোমধ্যেই বলা হয়েছে উপজেলার চেয়ারম্যান, ভাইস-চেয়ারম্যানরা সংসদ সদস্য হতে মনোনয়নপত্র কিনতে পারবে না। দীর্ঘ সময় আওয়ামী লীগ সরকার নেতৃত্ব দেয়ার কারণে অভিজ্ঞ নেতৃত্বের পাশাপাশি তরুণ, জনপ্রিয় নেতৃত্বও রয়েছে। দলটির একাধিক নেতা জানিয়েছেন নির্বাচনের মাধ্যমে দেশের জনগণ আবারও আওয়ামী লীগ সরকার তথা শেখ হাসিনাকেই বিজয়ী করবে। দলের অনেক নেতাই মনে করছেন মানুষ নিজের ভালটা বুঝতে শিখেছে। এছাড়াও গত ১০ বছরে দেশের যে উন্নয়ন হয়েছে এটি জনগণের উন্নয়ন। আর সে কারণেই আওয়ামী লীগ আবার ক্ষমতায় আসবে বলে মনে করেন দলটির নেতৃবৃন্দ। এদিকে, নির্বাচনী এলাকাগুলোতে ঈদের পর থেকেই সম্ভাব্য প্রার্থীরা মানুষের সমর্থন পেতে দ্বারে দ্বারে ছুটছেন। বাজার-ঘাটে আড্ডা, গল্প, চা চক্র করছেন। আওয়ামী লীগের একাধিক নেতার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, রাজনৈতিক মাঠে ড. কামালের নেতত্বে বিএনপিসহ আরও কয়েকটি দল মিলে গঠিত জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের কর্মসূচীর ওপর নজর রাখছে আওয়ামী লীগ। সরকারবিরোধী জোটকে চাপে রেখে একাদশ সংসদ নির্বাচন পর্যন্ত রাজনীতির মাঠ নিজেদের দখলে রাখতে চায় ক্ষমতাসীন দলটি। দলটির নেতারা বলছেন, জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের নামে বিএনপি নেতৃত্বাধীন জোট এলেও নির্বাচনে অংশ নিতে চায় না। তারা নির্বাচন বানচাল করতে চায়। এ জন্য বিভিন্ন ধরনের ষড়যন্ত্র চলছে। আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির একাধিক নেতা নাম প্রকাশ না করে বলেন, শুরুতে জাতীয় ঐক্য প্রক্রিয়ার নেতাদের স্বাগত জানানো হলেও এখন তাদের রাজনৈতিক গতিবিধির ওপর নজর রাখা হচ্ছে। এরই মধ্যে ঐক্যফ্রন্ট সিলেটে সমাবেশ করেছে। দলের নেতারা বলছেন, সমাবেশও সিলেটের জনগণের মধ্যে কোন প্রভাব ফেলেনি। এই সমাবেশে যারা যোগ দিয়েছেন তাদের অধিকাংশই বিএনপি-জামায়াতের কর্মী বলেও জানান। আওয়ামী লীগ নেতারা আরও জানিয়েছেন, আন্দোলনে ব্যর্থ বিএনপি নাশকতা ও সহিংসতার ছক আঁকছে। ষড়যন্ত্র করে নির্বাচন প্রতিহত করাই এই জোটের লক্ষ্য। তবে এরকম কিছু করলে উচিত জবাব দেয়া হবে বলেও জানান। একই সঙ্গে আওয়ামী লীগ, একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের প্রচারের মাধ্যমে রাজনৈতিক মাঠ দখলে রাখার সব প্রস্তুতি নিয়েছে বলে জানা গেছে। এরই মধ্যে সরকারের উন্নয়ন কর্মকা-ের প্রচার শুরু করেছে দলটি। আওয়ামী লীগের সভাপতিম-লীর সদস্য আব্দুর রাজ্জাককে প্রধান করে একটি ইশতেহার উপকমিটি গঠন করা হয়েছে। গত ১০ অক্টোবর এই উপকমিটির বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে। ইশতেহার উপকমিটিতে থাকা এক সদস্য জানান, আওয়ামী লীগের ঘোষণাপত্র, ২০০৮ ও ২০১৪ সালের নির্বাচনী ইশতেহার এবং সদ্য ঘোষিত সরকারের ডেল্টা প্ল্যান পর্যালোচনা করে তৈরি করা হচ্ছে একাদশ জাতীয় নির্বাচনের ইশতেহার। ইশতোহারে কর্মসংস্থান, প্রযুক্তির ব্যবহার বাড়ানো, সমুদ্র সম্পদের সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনা ও ব্যবহার, বিনিয়োগ, সুশাসন, জঙ্গী ও মাদকমুক্ত সমাজ গড়ার বিষয়গুলো প্রাধান্য পাবে আগামী সংসদ নির্বাচনের ইশতেহারে। দলের একাধিক সূত্র জানিয়েছে, একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে ক্ষমতাসীন দলটি প্রার্থী মনোনয়ন অনেকটাই চূড়ান্ত করে ফেলেছে। চূড়ান্ত হওয়া প্রার্থীর সংখ্যা দুই শতাধিক। যেগুলো বাকি আছে তা পর্যালোচনার মধ্যে রয়েছে। তবে কোন্ কোন্ আসন চূড়ান্ত তা নিশ্চিত করতে পারেনি সূত্রটি। জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট ও নির্বাচন নিয়ে এক অনুষ্ঠানে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেন, জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট যে সাত দফা তার এক দফাও মানা হবে না, এগুলো অযৌক্তিক দাবি। নতুন জোট জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট সিলেটে জনসভা থেকে সংসদ ভেঙ্গে, খালেদা জিয়াকে মুক্তি দিয়ে নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে একাদশ সংসদ নির্বাচনের যে দাবি জানিয়েছে তা নিয়ে ওবায়দুল কাদের বলেন, নিরপেক্ষ সরকারের দরকার কী? নিরপেক্ষ নির্বাচন কমিশন তো আছে। নির্বাচন যখন হবে তখন নির্বাচন হবে নিরপেক্ষ নির্বাচন কমিশনের আন্ডারে। এই নির্বাচন কমিশন পুরোপুরি নিরপেক্ষ। বিএনপি নিষ্ক্রিয় ‘সংস্কারপন্থী’দের সক্রিয় করার যে উদ্যোগ নিয়েছে, তাতে তাদের দেউলিয়াত্মের প্রকাশ ঘটেছে বলে মনে করেন ওবায়দুল কাদের। ঐক্যফ্রন্ট নিয়ে বলেন, এত বড় ঐক্যফ্রন্ট! কয়টা লোক হলো? বড় বড় বাঘা বাঘা নেতারা সেখানে গেলেন বোমা ফাটাতে, জনগণের সাড়া কি মিলেছে? কোনদিন মিলবে না। বাংলাদেশের ইতিহাস বলে, আন্দোলনে যারা বিজয়ী হতে পারে না, নির্বাচনেও তারা বিজয়ী হতে পারে না। তবে জাতীয়তাবাদী যুবদলের ৪০তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে শেরে বাংলা নগরে জিয়াউর রহমানের সমাধিতে শ্রদ্ধা জানিয়ে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর সংস্কারপন্থীদের দলে ফেরানোর বিষয়ে বলেন, যারা দলের বাইরেও নিষ্ক্রিয় ছিলেন, তাদের ভূমিকা পালন করার জন্যই সক্রিয় করা হচ্ছে, দলের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী। বিএনপি মহাসচিব আরও বলেন, আওয়ামী লীগ একতরফাভাবে নির্বাচন করতে চায়। অন্যান্য দল যাতে নির্বাচনে না আসে, সেই ব্যবস্থা করছে তারা। ৫ জানুয়ারির মতো আরেকটা নির্বাচন করে তারা ক্ষমতায় যেতে চায়। আরও বিস্তারিত জানতে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুলের মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে জনকণ্ঠের সাংবাদিক পরিচয় পেয়ে ‘মিটিংয়ে আছি’ বলে ফোন কেটে দেন। দেশের মানুষ চায় ভাল পরিবেশে নির্বাচন। আর নির্বাচন কমিশনও সেভাবেই প্রস্তুতি নিচ্ছে। সংবিধানের আলোকে সুষ্ঠু নির্বাচনে উৎসবমুখর পরিবেশে ভোট দিতে চায় জনগণ। আর সরকার সেই ভোটের পরিবেশ তৈরি করেছে। এখন তফসিল ঘোষণা করে নির্বাচনের বাকি দায়িত্বটা সারবে নির্বাচন কমিশন।
×