ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

নাশকতার অবস্থান থেকে সরে না আসায় বিএনপি ছেড়েছিলাম

প্রকাশিত: ০৫:৩৫, ২৮ অক্টোবর ২০১৮

নাশকতার অবস্থান থেকে সরে না আসায় বিএনপি ছেড়েছিলাম

স্টাফ রিপোর্টার ॥ বিএনপির নাশকতার রাজনীতি পছন্দ নয় বলেই দল থেকে বেরিয়ে গিয়েছিলেন শমসের মবিন চৌধুরী। বিএনপির সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান ও খালেদা জিয়ার পররাষ্ট্রবিষয়ক উপদেষ্টা ছিলেন তিনি। বলতে গেলে বিএনপির গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বে ছিলেন সাবেক এই কূটনীতিক। তার নেতৃত্বেই কূটনৈতিক ফোরাম কাজ করেছে। ২০১৫ সালের ২৮ অক্টোবর বিএনপির সঙ্গে বিরোধের জের ধরে তিনি অবসরে যান। হঠাৎ করে বিএনপির রাজনীতি থেকে সরে দাঁড়ানোর বিষয়ে ছিল নানা আলোচনা-সমালোচনা। প্রায় তিন বছর পর আবারও রাজনীতিতে সক্রিয় হলেন তিনি। শুক্রবার আনুষ্ঠানিকভাবে যোগ দিয়েছেন বিএনপির অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা সদস্য ও প্রথম মহাসচিব ডাঃ বি চৌধুরীর দল বিকল্প ধারায়। নতুন করে রাজনীতিতে যোগ দিয়ে বললেন পেছনে ফেলে আসা গল্পও। অর্থাৎ কেন বিএনপি ছেড়েছিলেন তিনি। ফাঁস করলেন সেই গোমড়। যদিও অবসরে যাওয়ার কারণ সম্পর্কে গণমাধ্যমকে তিনি সেই সময় বলেছিলেন, শুধু ভাইস চেয়ারম্যানের পদ নয়, রাজনীতি থেকেই অবসরের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তিনি। বেশ কিছু দিন ধরেই তিনি নানা ধরনের স্বাস্থ্যগত সমস্যায় ভুগছেন। সে কারণেই তার এ সিদ্ধান্ত। শমসের মবিন চৌধুরী বলেন, বিকল্প ধারা বাংলাদেশের সভাপতি সাবেক রাষ্ট্রপতি বদরুদ্দোজা চৌধুরীর সঙ্গে আমার ব্যক্তিগত পরিচয় ছিলো দীর্ঘদিনের। অনেক দিন ধরে আশা করেছিলাম যে বিএনপি তার আগের সেই নাশকতার অবস্থান থেকে সরে আসবে। কিন্তু অবস্থান পরিবর্তন করেনি। তাই আমার এমন সিদ্ধান্ত। বিএনপি ছাড়ার কারণ ব্যাখ্যা করতে গিয়ে একটি আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে দেয়া সাক্ষাতকারে তিনি বলেন, বিএনপির রাজনীতির সঙ্গে আমার কিছুটা মতবিরোধ ছিল। সবচেয়ে বড় কথা হলো আমি নাশকতার রাজনীতিতে বিশ্বাস করি না। আমি কখনও জ্বালাও-পোড়াও রাজনীতি পছন্দ করি না। তিনি বলেন, ভবিষ্যৎ প্রজন্ম কখনও নাশকতার রাজনীতি দেখতে চায় না। আমি ভবিষ্যত প্রজন্মকে পরিচ্ছন্ন রাজনীতি উপহার দেয়ার জন্য, নাশকতামুক্ত, পরিচ্ছন্ন রাজনীতি করার জন্যই বিকল্প ধারার রাজনীতিতে যোগ দিয়েছি। তিনি জানান, আমি বিএনপির রাজনীতি ছেড়ে বেশ কিছুদিন রাজনীতি থেকে দূরে ছিলাম। কিন্তু এখন আমি বিকল্প ধারার সঙ্গে যুক্ত হলাম, এটা সম্পূর্ণই আমার নিজের ইচ্ছায়। এখানে সরকারের তরফ থেকে কোন ধরনের চাপ নেই। বিকল্পধারার রাজনীতিতে যোগ দেয়া একান্তই আমার ব্যক্তিগত সিদ্ধান্ত। তবে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আমি অংশগ্রহণ করব কিনা এখনও সিদ্ধান্ত গ্রহণ করিনি। সময়ের পরিপ্রেক্ষিতে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করার কথা জানিয়ে তিনি বলেন, নির্বাচনে আসব কিনা এখনও জানি না। বিএনপি চেয়ারপার্সনের সাবেক রাজনৈতিক উপদেষ্টা শমসের মবিন চৌধুরী বলেন, বদরুদ্দোজা চৌধুরীর আদর্শের সঙ্গে, কথাবার্তার সঙ্গে এবং ব্যক্তিগত চিন্তার সঙ্গে আমার অনেকটাই মিল আছে। যার ফলে আমি ওনার দলের সঙ্গে রাজনীতি করার জন্য আনুষ্ঠানিকভাবে যোগ দিলাম। যুদ্ধাপরাধীদের বিচার ও ২০১৪ সালের নির্বাচনের আগে ও পরে দেশজুড়ে নাশকতা চালায় বিএনপি-জামায়াত জোট। পেট্রোলবোমা আতঙ্ক ছিল দেশজুড়ে। একের পর এক চলা নাশকতায় বহু মানুষের মৃত্যু হয়। পুড়িয়ে দেয়া হয় স্কুল কলেজসহ সরকারী স্থাপনা। জ্বালিয়ে দেয়া হয় যানবাহন। ট্রেন-বাসেও নিক্ষেপ করা হয় বোমা। তখন নাশকতার প্রতিবাদে আন্দোলন হল। এই প্রেক্ষাপটে বিএনপিকে সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়েছিল আন্তর্জাতিক সংগঠনের পক্ষ থেকেও। শুক্রবার বিকেলে বিকল্প ধারার প্রেসিডেন্ট ড. বদরুদ্দোজা চৌধুরীর হাতে ফুল দিয়ে দলে যোগ দেন বিএনপির সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান শমসের মবিন চৌধুরী, ছাত্রদলের প্রথম নির্বাচিত সভাপতি ও সাবেক প্রতিমন্ত্রী গোলাম সারোয়ার মিলন, সাবেক মন্ত্রী (এরশাদ সরকার) নাজিম উদ্দিন আল আজাদ। রাজধানীর বাড্ডায় বিকল্প যুবধারার কেন্দ্রীয় বিশেষ কাউন্সিলে এই যোগদানপর্বের আয়োজন করা হয়। ২০ দলীয় জোট থেকে সদ্য বেরিয়ে আসা তিন দলের শীর্ষ নেতারা অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন। আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে বিকল্প ধারার নেতৃত্বে গঠন করা হয়েছিল যুক্তফ্রন্ট। এর সঙ্গে ছিলেন নাগরিক ঐক্যের মাহমুদুর রহমান মান্না, আ স ম আবদুর রবের নেতৃত্বাধীন জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জেএসডি) সহ বিএনপি পন্থী বেশ কয়েকজন বুদ্ধিজীবী। প্রথমে কথা ছিল ড’ কামাল হোসেনের গণফোরাম বি চৌধুরীর নেতৃত্বাধীন মোর্চা যুক্তফ্রন্টে যোগ দেবে। সেখানে কামাল হোসেন যোগ না দিয়ে সবাইকে নিয়ে গঠন করেন জাতীয় ঐক্য প্রক্রিয়া। এরপর কামাল হোসেন ঐক্য প্রক্রিয়াকে নিয়ে বিএনপির সঙ্গে ঐক্য গড়ার আলোচনা শুরু করেন। বিএনপির সঙ্গে জামায়াত ইস্যুতে ঐক্য নিয়ে দেখা দেয় মতবিরোধ। সবচেয়ে বেশি এই ইস্যুতে কথা বলেন কামাল হোসেন। বারবার তিনি বলেছিলেন জামায়াত না ছাড়লে বিএনপির সঙ্গে কোন ঐক্য হবে না। শেষ পর্যন্ত বিকল্প ধারাকে বাদ দিয়ে অন্যদের নিয়ে বিএনপির সঙ্গে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট গঠন করেন কামাল হোসেন। জামায়াত ইস্যুতে ঐক্যে শামিল হয়নি বিকল্প ধারা। এরপর কামাল হোসেন ও বি চৌধুরীর দুজনার দুটি পথ। গত ১৩ অক্টোবর সন্ধ্যায় জাতীয় প্রেসক্লাবে বিকল্প ধারাকে বাদ দিয়ে কামাল হোসেন বিএনপিকে নিয়ে ঐক্যফ্রন্টের ঘোষণা দেন। ঐক্যফ্রন্ট ঘোষণার ১৩ দিনের মাথায় রাজনীতিতে নতুন করে চমক দেখালেন বি চৌধুরী। অর্থাৎ বিকল্প ধারার প্রতীক কুলার পালে এখন হাওয়া লেগেছে। নতুন হাওয়ায় গা ভাসাতে আসার কথা বিভিন্ন দলের রাজনৈতিক নেতা ও বেশ কয়েকটি দলও। শুক্রবারের যোগদান অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন- সদ্য ২০ দলীয় জোট ত্যাগ করা বাংলাদেশ ন্যাপের চেয়ারম্যান জেবেল রহমান গাণি ও মহাসচিব গোলাম মোস্তফা ভুঁইয়া, এনডিপি চেয়ারম্যান খন্দকার গোলাম মোর্ত্তজা এবং ২০ দল ছেড়ে আসা লেবার পার্টির একাংশের মহাসচিব হামদুল্লাহ মেহেদী। অনুষ্ঠানে হামদুল্লাহ মেহেদীর বিএনপি জোট ছেড়ে আসার বিষয়টি উল্লেখ করে মাহী বি চৌধুরী কাউন্সিলে বলেন, স্বাধীনতাবিরোধীদের ২০ দলীয় জোট ছেড়ে এসেছেন লেবার পার্টির মহাসচিব হামদুল্লাহ মেহেদী। মাহী বলেন, আসুন বাংলাদেশকে দুঃশাসনের হাত থেকে রক্ষা করি। বি চৌধুরীর নেতৃত্বে নানন্দিক ধারার রাজনীতি শুরু করি। সাবেক সচিব শমসের মবিন চৌধুরী চাকরি থেকে অবসর নিয়ে বিএনপিতে সক্রিয় থাকলেও কয়েকটি মামলার আসামি হওয়ার পর কয়েক বছর আগে দল থেকে অব্যাহতি নেন। তখন রাজনীতিই ছাড়ার কথা জানিয়েছিলেন তিনি। সিদ্ধান্ত বদলের বিষয়ে শমসের মবিন শুক্রবার বিকল্প ধারার অনুষ্ঠানে বলেন, তিন বছর আগে রাজনীতি থেকে অবসরের সিদ্ধান্ত নেয়ার সময় আমি বলেছিলাম, আবার রাজনীতিতে ফিরব, যদি কেউ মুক্তিযুদ্ধের ও বঙ্গবন্ধুর আদর্শ নিয়ে এগিয়ে আসে তবে আমি যোগ দেব। আমি বি চৌধুরীর সাহসী ও দেশপ্রেমিক নেতৃত্বে যোগ দিয়েছি সুখী, সমৃদ্ধ, শান্তিপূর্ণ ও স্বাভাবিক বাংলাদেশ গঠনে নিজেদের অবস্থান থেকে ভূমিকা রাখার জন্য।
×