ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

চট্টগ্রামে ঐক্যফ্রন্টের সমাবেশে ড. কামাল

আপনারা কী শাস্তি পাবেন কল্পনাও করতে পারবেন না

প্রকাশিত: ০৫:৩৩, ২৮ অক্টোবর ২০১৮

আপনারা কী শাস্তি পাবেন কল্পনাও করতে পারবেন না

স্টাফ রিপোর্টার, চট্টগ্রাম অফিস ॥ জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের শীর্ষ নেতা ও গণফোরাম সভাপতি ড. কামাল হোসেন বলেছেন, এ সরকার একের পর এক অসাংবিধানিক কাজ করে চলেছে। যারা শপথ নিয়ে শপথভঙ্গ করেছে তাদের বিচার করা হবে সংবিধান অনুযায়ী। সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্যই সাত দফা দাবি দেয়া হয়েছে। জনগণ চায় সুষ্ঠু একটি নির্বাচন হোক। জনগণের সিদ্ধান্ত অমান্য করলে, উপেক্ষা করলে কী শাস্তি আপনারা পাবেন তা কল্পনাও করতে পারবেন না। জনগণ এখন ঐক্যবদ্ধ, বিজয় ছিনিয়ে আনতে হবে। শনিবার চট্টগ্রামে মহানগর বিএনপির কার্যালয় সংলগ্ন নুর আহমদ সড়কে কয়েক হাজার বিএনপি নেতাকর্মী ও ঐক্যফ্রন্ট সমর্থকদের উপস্থিতিতে অনুষ্ঠিত সমাবেশে এসব কথা বলেন ড. কামাল হোসেন। তিনি বলেন, ২০১৪ সালের নির্বাচনের পর এ সরকার বলেছিল সঙ্কট সমাধানে সাময়িকভাবে একটা নির্বাচন করা হলো। কিন্তু সেই সংসদ পাঁচ বছর রেখে দেয়া হলো। এর জন্য সরকারের কাছ থেকে জবাবদিহিতা আদায় করা হবে। সময় থাকতে সাত দফা দাবি মেনে নেয়ার দাবি জানিয়ে তিনি বলেন, জনগণ যখনই ঐক্যবদ্ধ হয়েছে তখনই অসম্ভবকে সম্ভব করে তুলেছে। চট্টগ্রামের লালদীঘি মাঠে সমাবেশের অনুমতি না দেয়ার তীব্র সমালোচনা করে ড. কামাল হোসেন বলেন, জনসভা করা আমাদের মৌলিক অধিকার। মাঠে সমাবেশ করতে না দেয়ায় সীমিত জায়গায় চার ঘণ্টা ধরে হাজার হাজার মানুষকে কষ্ট দেয়া হচ্ছে। এটাকেও সংবিধানের লঙ্ঘন হিসেবে উল্লেখ করে তিনি বলেন, সরকার মনে করছে তারা দেশের মালিক। কিন্তু না, বাংলাদেশ কারও পৈত্রিক সম্পত্তি নয়। সংবিধানে লেখা আছে জনগণ দেশের মালিক। আর সরকার জনগণের সেবক। দেশের মালিককে কেউ ঠেকাতে পারবে না। সুষ্ঠু ও অবাধ নির্বাচনের পক্ষে গণরায় হয়ে গেছে। চট্টগ্রামের পরে আমরা রাজশাহীতে যাব। এরপর ঢাকায় গিয়ে সম্পন্ন করব। চট্টগ্রাম মহানগর বিএনপি সভাপতি ডাঃ শাহাদাত হোসেনের সভাপতিত্বে সমাবেশে প্রধান বক্তা ছিলেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। বক্তৃতা করেন জেএসডি সভাপতি আ স ম আবদুর রব, বিএনপি স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ, গণফোরামের সাধারণ সম্পাদক মোস্তফা মহসিন মন্টু, গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের ডাঃ জাফরুল্লাহ চৌধুরী, নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না, বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. মঈন খান, ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল্লাহ আল নোমান, ডাকসুর সাবেক ভিপি সুলতান মোহাম্মদ মনসুর, গণফোরামের কার্যকরী সভাপতি এ্যাডভোকেট সুব্রত চৌধুরী, কল্যাণ পার্টির চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল (অব) সৈয়দ ইব্রাহিম বীর প্রতীক, জেএসডি সাধারণ সম্পাদক আবদুল মালেক রতন, এলডিপির মহাসচিব রিদওয়ান আহমেদ, বিএনপি নেতা মোঃ শাহজাহান, মীর মোহাম্মদ নাসির উদ্দিন, আমান উল্লাহ আমান, শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানি, চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা বিএনপি সভাপতি জাফরুল ইসলাম চৌধুরী এবং ঐক্যফ্রন্টে অন্তর্ভুক্ত বিভিন্ন দলের নেতৃবৃন্দ। বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, আওয়ামী লীগ সরকার জনগণকে ভয় পেয়েছে। তাদের এমনই ভয় যে, জনসভা করতে দেয় না। কিন্তু জনগণকে আটকে রেখে কোন সরকার টিকে থাকতে পারেনি। গায়ের জোরে, বন্দুক দিয়ে কেউ টিকেনি। এ সরকারও পারবে না। বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ করে স্বাধীন হওয়া একটি দেশ। সরকার জানে, জনগণ যদি অবাধ সুষ্ঠু পরিবেশে ভোট দিতে পারে তাহলে তারা জিতবেন না। তিনি সমবেত নেতাকর্মী ও সমর্থকদের উদ্দেশে বলেন, সাত দফা দাবি আদায় করেই আমরা ঘরে ফিরব। বক্তব্যে তিনি বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়া, স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরীসহ গ্রেফতার হওয়া সকল নেতার মুক্তি দাবি করেন। সমাবেশে জেএসডি সভাপতি আ স ম আবদুর রব বলেন, সরকারের পায়ের তলায় মাটি নেই। এই সরকার পালাবার পথ খুঁজে পাবে না। বিনা বিচারে তাদের যেতে দেব না। আমাদের এ লড়াই গণতন্ত্র এবং সুষ্ঠু নির্বাচনের লড়াই। আমাদের সঙ্গে আলোচনা ছাড়া যদি তফসিল ঘোষণা করা হয় তাহলে ধরে নেব, সরকার নিজেই নির্বাচন বানচাল করতে চায়। তিনি পুলিশ প্রশাসনসহ সরকারের সকল বিভাগের কর্মকর্তা কর্মচারীদের প্রতি নিরপেক্ষ ভূমিকা পালনের আহ্বান জানান। বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, সাত দফা দাবির ভিত্তিতে এদেশের জনগণ ঐক্যবদ্ধ হয়েছে। আমাদের দাবি বেশি কিছু নয়। সংসদ ভেঙ্গে দিতে হবে। পৃথিবীর কোন দেশেই একটি সংসদ বহাল রেখে আরেকটি সংসদ নির্বাচন হয় না। শেখ হাসিনার অধীনে জাতীয় সংসদ নির্বাচন হবে না। তিনি নির্বাচন অংশগ্রহণমূলক করতে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড সৃষ্টির দাবি জানান। ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ বলেন, আওয়ামী লীগ একটি অসহিষ্ণু রাজনৈতিক দল। এই সরকার দেশে গণতন্ত্র, বিচার বিভাগের স্বাধীনতা, গণমাধ্যমের স্বাধীনতা সবই ধ্বংস করেছে। জনগণের এ ঐক্য সরকারের পতন ডেকে আনবে। গত দেড় মাসে ৫ হাজার মামলা দায়ের হয়েছে উল্লেখ করে তিনি জানান, এতে ৫ লক্ষাধিক বিএনপি নেতাকর্মী ও সমর্থককে আসামি করা হয়েছে। নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, আমরা একদিনের গণতন্ত্রের জন্য এ ফ্রন্ট গঠন করিনি। বছরে ৩৬৫ দিন যেন গণতন্ত্র থাকে তার গ্যারান্টির জন্য সাত দফা ও এগারো দফা ঘোষণা করেছি। ঐক্য সম্পর্কে সরকার এবং আওয়ামী লীগ বিভ্রান্তি ছড়াবার চেষ্টা করছে। আমরা অনেকগুলো দল একত্র হয়েছি। আমাদের লক্ষ্য আদর্শে ভিন্নতা থাকতে পারে, কিন্তু এখানে আমাদের লক্ষ্য একটাই। আমরা এ সরকারের পতন চাই। ওদের দিন আর বেশি নেই। ক্ষমতা না ছাড়লে কিভাবে ছাড়াতে হয় তা জানা আছে বলে তিনি হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেন। ১০ দিন অপেক্ষা করুন ॥ সমাবেশে বক্তব্য রাখতে গিয়ে গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের কর্ণধার ডাঃ জাফরুল্লাহ বলেন, আপনারা ১০টা দিন অপেক্ষা করুন, আর মাত্র ১০ দিন। দেখেন কী হয়। অনেকেই এসে এ ঐক্যফ্রন্টে যোগ দেবেন। আমাদের বিজয় নিশ্চিত। বিজয়ের পর আমরা দেশে আইনের শাসন কায়েম করব। আমাদের সঙ্গে ড. কামাল হোসেন এবং ব্যারিস্টার মওদুদের মতো আইনজ্ঞরা রয়েছেন। তিনি বলেন, তিন মাসের মধ্যে দেশে সকল ওষুধের দাম অর্ধেকে আনা হবে, সকল ল্যাব টেস্টের দাম অর্ধেক করা হবে। চট্টগ্রামে হাইকোর্টের একটি স্থায়ী বেঞ্চ প্রতিষ্ঠা করা হবে। খালেদার মুক্তির দাবি জানানো হল শেষ মুহূর্তে ॥ সমাবেশে প্রধান অতিথি ড. কামাল হোসেন বিএনপি চেয়ারপার্সনের মুক্তির দাবি না জানিয়েই বক্তব্য শেষ করতে যাচ্ছিলেন। ঠিক সেই মুহূর্তে বিএনপির কতিপয় নেতা কানে কানে কিছু বলার পর ড. কামাল হোসেন বললেন, ‘খালেদা জিয়ার মুক্তি অবশ্যই হোক।’ বিষয়টি সাত দফার মধ্যে অন্তর্ভুক্ত রয়েছে বলে তিনি বক্তব্য শেষ করেন। তবে সমাবেশে যোগদানকারীরা খালেদার মুক্তির দাবি সম্বলিত প্ল্যাকার্ড ও ব্যানার নিয়ে উপস্থিত হলেও বিষয়টি নেতাদের বিশেষ করে মূল নেতা কামাল হোসেনের বক্তব্যে জোরালোভাবে না আসায় হতাশার ভাব পরিলক্ষিত হয়েছে। এর আগে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের সমাবেশকে কেন্দ্র করে নগরীর বিভিন্ন স্থান থেকে বিএনপির নেতাকর্মীরা জড়ো হতে থাকেন। সমাবেশ উপলক্ষে পুলিশী ব্যবস্থা ছিল কঠোর নজরদারিতে। বিএনপির কার্যালয় এবং সংলগ্ন সড়কের একপাশজুড়ে সমাবেশটি অনুষ্ঠিত হয়।
×