ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

ঝুঁকিপূর্ণ কক্ষেই চলছে পাঠদান

বগুড়ার এক-তৃতীয়াংশ প্রাইমারী স্কুলে অবকাঠামো নেই

প্রকাশিত: ০৪:১৮, ২৮ অক্টোবর ২০১৮

বগুড়ার এক-তৃতীয়াংশ প্রাইমারী স্কুলে অবকাঠামো নেই

স্টাফ রিপোর্টার, বগুড়া অফিস ॥ বগুড়ার প্রায় এক-তৃতীয়াংশ সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের উন্নত অবকাঠামো নেই। কোথাও ভগ্নদশা টিনের ঘরে, কোথাও নদী ভাঙ্গনে বিলীন হওয়া স্কুলের কার্যক্রম চলছে খোলা আকাশের নিচে। যেগুলো কোনভাবে টিকে আছে সেগুলো জরাজীর্ণ। ঝুঁকিপূর্ণ ঘরেই ক্লাস নেয়া হচ্ছে। কয়েকটি বিদ্যালয়ে দুর্ঘটনাও ঘটেছে। জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা এটিএম আমিনুল ইসলাম জানিয়েছেন, জরাজীর্ণ কাঁচা ও ঝুঁকিপূর্ণ বিদ্যালয়ের তালিকা ওপর মহলে পাঠানো হয়েছে। স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদফতরের (এলজিইডি) নির্বাহী প্রকৌশলী গোলাম মোরশেদ জানিয়েছেন, প্রাথমিক শিক্ষা অধিদফতরের দেয়া তালিকা অনুযায়ী বেশি জরাজীর্ণ বিদ্যালয়গুলোর নির্মাণ কাজ জরুরী ভিত্তিতে চলতি বছর ডিসেম্বরেই শুরু হবে। টিনশেডের বিদ্যালয়গুলো পর্যায়ক্রমে প্রাথমিক শিক্ষা উন্নয়ন প্রকল্প-৪ (পিইডিপি) এর আওতায় চার তলা ফাউন্ডেশনে নির্মাণ করা হবে। বগুড়ায় সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সংখ্যা এক হাজার ৫শ’ ৯৯টি। এর মধ্যে নতুন সরকারীকরণ হয়েছে ২শ’ ৬৭টি। যেগুলো টিনশেডের। অনুন্নত অবকাঠামো স্কুলের সংখ্যা ৫শ’ ৭টি। এর মধ্যে ২শ’ ৪০টি বিদ্যালয়ের অবস্থা বেশি জরাজীর্ণ। ৮৫টি পরিত্যক্ত হয়েছে। যমুনা তীরবর্তী সারিয়াকান্দি ও ধুনট উপজেলার নদী তীর ও চরগ্রামের সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলো নিত্য বছর ভাঙ্গনের থাবায় থাকে। সারিয়াকান্দি উপজেলার ১শ’ ৬৮টি সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মধ্যে ৪৪টি যমুনার চরাঞ্চলে। গত ছয় বছরে ২৫টি স্কুল নদী গর্ভে চলে গেছে। এইসব বিদ্যালয়ের পাঠদান চলছে কোথাও বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধে ঝুঁপরি ঘরে। কোথাও অন্য গ্রামে ঘর তুলে ও গাছতলায়। দু’য়েকটি ভিন্ন জায়গায় স্থানান্তরিত হয়েছে। সারিয়াকান্দি উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা জানালেন, বর্তমানে ২৮টি সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ভবন নেই। চলতি অর্থবছরে ২০টি সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ভবন নির্মাণের বরাদ্দ মিলেছে। শীঘ্রই কাজ শুরু হবে। যমুনার দুর্গম চর পাঁচবাড়িয়া সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়, পাঠদানের পাশাপাশি বন্যা আশ্রয় কেন্দ্র হিসেবে নির্মিত হয়। এই বিদ্যালয় থেকে নদীর দূরত্ব পাঁচ কিলোমিটার। নদী ভাঙন স্কুলের কাছাকাছি আসছে। ধুনট উপজেলার শহরাবাড়ি, আটাচর ও রাধানগর সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় অনেক আগেই যমুনা নদীতে চলে গেছে। এই তিন বিদ্যালয় পাশের গ্রাম চুনিয়াপাড়ায় পূর্বের পরিচিতিতে স্থাপিত হয়েছে। সোনাতলা উপজেলার পাঠানপাড়া প্রাথমিক বিদ্যালয় প্রায় ৩০ বছর আগে নির্মিত। কোন সংস্কার নেই। চারটি শ্রেণী কক্ষের একটিতে দুইটি শ্রেণীর ক্লাস নেয়া হয়। পলেস্তারা খসে পড়েছে। ছাদ দিয়ে বৃষ্টির পানি চুয়ে পড়ে। কখনও মাঠে ক্লাস নিতে হয়। প্রধান শিক্ষক গৌতম চন্দ্র বললেন, নতুন ভবনের আশ^াস দেয়া হয়েছে। নির্মিত হয়নি। চাড়ালকান্দি সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়েরও একই দশা। দু’বছর আগে পরিত্যক্ত হয়েছে। গাবতলি উপজেলায় ছয়ঘরিয়া সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে গত আগস্ট মাসে পলেস্তারা খসে পড়ে ৫ শিক্ষার্থী আহত হয়। প্রধান শিক্ষক জাহিদুল ইসলাম বললেন, জরাজীর্ণ এই ভবনটি সম্পর্কে কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে। এর পাশাপশি সোনাতলা উপজেলার ১২টি সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সৌন্দর্যবর্ধনে চারদিকে দেয়ালে ঘিরে দেয়া হয়েছে।
×