ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

মোস্তাফা জব্বার

ডিজিটাল জীবনধারা ও জন্মের ঠিকানায় রাষ্ট্র

প্রকাশিত: ০৩:২৬, ২৮ অক্টোবর ২০১৮

ডিজিটাল জীবনধারা ও জন্মের ঠিকানায় রাষ্ট্র

এর আগে আমরা ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ে তোলার জন্য তিনটি প্রধান কৌশল নিয়ে আলোচনা করেছি। যদি বলা হয় যে, এই তিনটি কৌশল দিয়েই ডিজিটাল বাংলাদেশের প্রাথমিক কাজ অনেকটা সামনে যাবে তবে ভুল হবে না। কিন্তু ডিজিটাল বাংলাদেশের একটি অসাধারণ অর্জনের জায়গা আছে। আজকের বাংলাদেশের অসাধারণ অগ্রগতি হওয়ার পরও আমাদের একটি বিষয় নিশ্চয়ই বিবেচনায় আনা দরকার যে, এই রাষ্ট্রটির জন্মের অঙ্গীকার নিয়েই দেশটাকে গড়ে তুলতে হবে। অনেকেই ভুলে গেছেন, আমাদের সংবিধানের মূল বিষয় হচ্ছে এই দেশটি জাতীয়তাবাদ, গণতন্ত্র, সমাজতন্ত্র ও ধর্মনিরপেক্ষতার নীতিতে জন্ম নিয়েছে। এই রাষ্ট্রটি পাকিস্তানের সঙ্গে রাগ করে জন্ম নেয়নি এবং এটি আরও একটি ইসলামিক রিপাবলিক নয়, এটি রাষ্ট্রে, সমাজে, ব্যক্তিতে ও জীবনধারায় প্রতিষ্ঠিত করতে হবে। সেজন্যই আমি খুব স্পষ্ট করেই এটি বলতে চাই, কেবল সরকার, শিক্ষা ও ব্যবসা-বাণিজ্যের ডিজিটাল রূপান্তর এই দেশটিকে বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলায় রূপান্তর করবে না। এজন্য একটি সাংস্কৃতিক বিপ্লব সংঘটনের প্রয়োজন হবে। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান দ্বিতীয় বিপ্লবের ডাক দিয়ে যেমন করে রাষ্ট্রকে তার জন্মের ঠিকানায় স্থাপন করতে চেয়েছিলেন এবং একটি সমাজতান্ত্রিক, ধর্মনিরপেক্ষ ও বৈষম্যহীন রাষ্ট্রব্যবস্থা প্রচলন করতে চেয়েছিলেন তেমনি করে আমাদের ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার সময় মনে রাখতে হবে যে, সংবিধানের মূলনীতি এবং বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন পূরণ করতে হলে ডিজিটাল রূপান্তরেও তাঁর আদর্শ বাস্তবায়ন করতে হবে। আমাদের সম্ভবত এটি খুব বেশি করে মনে রাখতে হবে যে, ডিজিটাল প্রযুক্তি বাংলাদেশের ভাষাভিত্তিক চরিত্রটাকে ক্ষতিগ্রস্ত করছে। ডিজিটাল রূপান্তরের নামে বাংলা ভাষাকে নির্বাসন দেয়া হচ্ছে। অনেক ক্ষেত্রে রোমান হরফকে বাংলা লেখার জন্য ব্যবহার করা হচ্ছে। অন্যদিকে ডিজিটাল রূপান্তরের ফলে ডিজিটাল বৈষম্য বেড়ে যাবার সম্ভাবনাকে কোনভাবেই অস্বীকার করা যাবে না। এই বৈষম্য পুরুষে-নারীতে, নগরে-গ্রামে, ধনী-গরিবে, শিশু-যুবকে বা আরও নানাভাবে দেখা দিতে পারে। এমনকি এরই মাঝে ডিজিটাল বৈষম্য তৈরি হওয়ার পরিপ্রেক্ষিতে সেটি প্রতিরোধ করার প্রচেষ্টার পাশাপাশি ডিজিটাল বৈষম্য যাতে না হয় সেটাও নিশ্চিত করতে হবে। আমরা সামগ্রিক বিবেচনায় এই চতুর্থ কৌশলটির জন্য সংক্ষেপে কয়েকটি কর্মপরিকল্পনার বিষয় উল্লেখ করতে পারি। কৌশল ৪ : সংযুক্তি, ডিজিটাল জীবনধারা ও জন্মের ঠিকানায় রাষ্ট্রকাঠামো গড়ে তোলা ২০২১ সাল পর্যন্ত সময়কালে বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় লক্ষ্য হবে ডিজিটাল জীবনধারা গড়ে তোলা। দেশের সকল নাগরিককে ডিজিটাল যন্ত্র-প্রযুক্তি দিয়ে এমনভাবে শক্তিশালী করতে হবে এবং তার চারপাশে এমন একটি পরিবেশ গড়ে তুলতে হবে যাতে তার জীবনধারাটি ডিজিটাল হয়ে যায়। আমি এই কৌশলের জন্যও ছয়টি কর্মপরিকল্পনার কথা উল্লেখ করছি। ক. দেশের প্রতিটি ঘরকে-প্রতিটি মানুষকে সর্বোচ্চ গতির ডিজিটাল সংযুক্তি প্রদান করতে হবে। একই সঙ্গে ব্যবসা-বাণিজ্য, সরকারী অফিস, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসহ সবাইকে সংযুক্তির আওতায় আনতে হবে। বস্তুত দেশের ইন্টারনেট ব্যবহারে সক্ষম প্রতিটি নাগরিকের জন্য কমপক্ষে ১ জিবিপিএস ব্যান্ডউইথ সুলভ হতে হবে। দেশের প্রতি ইঞ্চি মাটিতে এই গতি নিরবচ্ছিন্নভাবে যাতে পাওয়া যায় তার ব্যবস্থা করতে হবে। একই সঙ্গে দেশের সকল সিটি কর্পোরেশন, পৌরসভা, জেলা-উপজেলা পরিষদ, ইউনিয়ন পরিষদ, সরকারী অফিস-আদালত, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, হাট-বাজারসহ শহরের প্রধান প্রধান পাবলিক প্লেসে ওয়াইফাই ব্যবস্থা চালু করতে হবে। অন্যদিকে রেডিও-টিভিসহ বিনোদন ও সাংস্কৃতিক কর্মকা- সকল ব্যবস্থা ইন্টারনেটে-মোবাইলে প্রাপ্য হতে হবে। প্রচলিত পদ্ধতির ব্যবসা-বাণিজ্য, অফিস-আদালত, শিক্ষাব্যবস্থার পাশাপাশি অনলাইন ব্যবস্থা গড়ে তুলতে হবে। বলা যেতে পারে এটি হবে ইন্টারনেট সভ্যতা। দ্রুত গতির ৫জি মোবাইল প্রযুক্তিসহ সকল ধরনের দ্রুতগতির ব্রডব্যান্ড সংযোগ দেশের প্রতিটি মানুষের জন্য সহজলভ্য করতে হবে। খ. ব্যবসা-বাণিজ্য, শিল্প-কলকারখানা, কৃষি, স্বাস্থ্যসেবা, আইন-আদালত, সালিশ, সরকারী সেবা, হাট-বাজার, জলমহাল, ভূমি ব্যবস্থাপনাসহ জীবনের সামগ্রিক কর্মকা- ডিজিটাল করতে হবে। জনগণ যেন এসব সেবা তার হাতের নাগালে ডিজিটাল পদ্ধতিতে পায় তার ব্যবস্থা করতে হবে। মেধাশিল্প ও সেবাখাতকে প্রাধান্য দিয়ে শিল্পনীতি তৈরি করতে হবে। দেশের সকল প্রান্তে জ্ঞানভিত্তিক শিল্প, ব্যবসা-বাণিজ্যকে এভাবে বিকশিত করতে হবে যাতে জনগণ জ্ঞানভিত্তিক অর্থনীতিতে সরাসরি অংশ নিতে পারে। মেধাস্বত্ব সংরক্ষণকে একটি সেবাকেন্দ্রে একীভূত করতে হবে। গ. দেশের সকল আইনকে জ্ঞানভিত্তিক সমাজের উপযোগী করতে হবে। মেধা সংরক্ষণ ও এর পরিচর্যার পাশাপাশি সৃজনশীলতাকে গুরুত্ব দিতে হবে। ঘ. ডিজিটাল বৈষম্যসহ সমাজে বিরাজমান সকল বৈষম্য দূর করতে হবে এবং রাষ্ট্রকে অন্ন, বস্ত্র, শিক্ষা, চিকিৎসা ও বাসস্থানসহ জীবনের ন্যূনতম চাহিদা পূরণের সকল ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। ঙ. ডিজিটাল বিশ্বের ডিজিটাল জীবনধারার সবচেড়ে বড় চ্যালেঞ্জ হচ্ছে ডিজিটাল নিরাপত্তা। আমরা ডিজিটাল যুগে আর্থিক লেনদেন করি ফাইন্যান্সিয়াল সেবায়। ব্যাংকিং করি ইন্টারনেটে। বন্ধুত্ব করি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে। বিনোদন থেকে ব্যক্তিগত যোগাযোগ করি ইন্টারনেটে। গণমাধ্যম বলতে এখন সবচেয়ে বড় প্রক্রিয়াটি ইন্টারনেটকে বোঝায়। একদিকে অশ্লীলতা, নোংরামি, গুজব, অপপ্রচার, মানহানি, অন্যদিকে ডিজিটাল জীবনধারা। দিনে দিনে যখন ডিজিটাল জীবনধারা সম্প্রসারতি হচ্ছে তখন ডিজিটাল অপরাধের মাত্রাও তার চাইতে বেশি হারে বাড়ছে। আমরা সম্প্রতি ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন তৈরি করেছি। আইনের আওতায় বিধিমালা ও ডিজিটাল নিরাপত্তা এজেন্সি গড়ে তোলা হচ্ছে। এই আইনের সঙ্গে ব্যক্তিগত তথ্যসহ ডাটা প্রটেকশনের বিষয়টি নিশ্চিত করতে হবে। ডিজিটাল অপরাধ মনিটরিং, তদন্ত ও বিচারের জন্যও প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে হবে। চ. বাংলাদেশের রাষ্ট্রকাঠামোকে তার জন্মের অঙ্গীকারে স্থাপন করার জন্য যুদ্ধাপরাধীদের বিচার করার পাশাপাশি দেশকে জঙ্গীবাদ, ধর্মান্ধতা, সন্ত্রাস ইত্যাদির হাত থেকে রক্ষা করতে হবে এবং একাত্তরের ঘোষণা অনুযায়ী দেশের নীতি ও আদর্শকে গড়ে তুলতে হবে। দেশটা ডিজিটাল হলো কিনা তার প্যারামিটার কিন্তু ডিজিটাল জীবনধারা দিয়েই দেখতে হবে। ফলে এই কৌশলটির দিকে তাকিয়েই আমরা অনুভব করব কতটা পথ হেঁটেছি আমরা। সার্বিক বিবেচনায় ডিজিটাল বাংলাদেশ বা জ্ঞানভিত্তিক সমাজ কেবল প্রযুক্তির প্রয়োগ নয়, এটি বস্তুত একটি রাজনৈতিক-সামাজিক আন্দোলন। এর চূড়ান্ত লক্ষ্য একটি জ্ঞানভিত্তিক সমাজ। ধর্মভিত্তিক জঙ্গী রাষ্ট্র গড়ে জ্ঞানভিত্তিক সমাজ গড়া যায় না। বরং ডিজিটাল বাংলাদেশ আন্দোলনটি আমাদের মুক্তিযুদ্ধের প্রবহমান ধারারই অংশ। এই ধারার দুই প্রান্তে যে দুই ধারার মানুষ অবস্থান করছে তার একটি সমীকরণ করা প্রয়োজন। খুব স্পষ্ট করে এটি বলা দরকার যে, এই রেখার একদিকে রয়েছে একাত্তরের পরাজিত শক্তি এবং অন্যদিকে রয়েছে একাত্তরের বিজয়ীরা। দুর্ভাগ্যজনকভাবে লড়াইয়ের এই মাত্রাটি জনগণের মাঝে তেমনভাবে স্পষ্ট করা সম্ভব হয়নি। নিবন্ধটি শেষ করার আগে একটি প্রত্যয়ের বিষয় আমি এখানে উল্লেখ করতে চাই। আমরা যে অবস্থাতেই থাকি না কেন সারা দেশে দ্রুত গতির ফাইবার অপটিক্স এবং মোবাইল ব্রডব্যান্ড পৌঁছাতে হবে। ২১ সালের মাঝেই এটি শতভাগ সম্পন্ন করতে হবে। অন্যদিকে ২১ সালে বাংলাদেশে ৫জি প্রচলন করতে হবে। আমাদের পরের পরিকল্পনাটি হবে ৫জি নির্ভর। বস্তুত ২১ সালের পরের ডিজিটাল বাংলাদেশের মূল ভিত্তি হবে ৫জি। জাতীয় ডিজিটাল রূপান্তরের নীতিমালাÑ২০০৮ সালে ডিজিটাল বাংলাদেশ ঘোষণার পরই ২০০৯ সালে প্রথম জাতীয় তথ্যপ্রযুক্তি নীতিমালা অনুমোদিত হয়। এরপর ১৫ সালে সেটি সংশোধিত হয়। এবার ১৮ সালে সেটির খসড়া তৈরি হয়েছে। আমি খুশি হতাম যদি নীতিমালাটিকে জাতীয় ডিজিটাল রূপান্তরের নীতিমালা বলে চিহ্নিত করা হতো। কিন্তু এই ধারণাটিকে সবার কাছে গ্রহণযোগ্য করা দুরূহ বিধায় আমি আপাতত সেই নামটিই রেখেছি। সেই খসড়ায় মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয় একটি ভূমিকা লিখেছেন। সেখানে তিনি লিখেছেন- তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি নীতিমালা-২০১৮-এর মূল উপাদানসমূহ নিম্নরূপ- ১. প্রত্যেক ব্যক্তির উন্নয়ন নিশ্চিত করা- সরকারের উন্নয়ন দর্শন হলো সকল ক্ষেত্রে অন্তর্ভুক্তিমূলক উন্নয়ন; যা এ তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি নীতিমালার চালিকাশক্তি। লিঙ্গ, বয়স, অক্ষমতা, জাতিগত বা ভৌগোলিক অবস্থানের কারণে যারা দরিদ্র ও সুবিধাবঞ্চিত তাদের জীবনমান উন্নয়ন নিশ্চিত করা হবে। এভাবেই এ তথ্যপ্রযুক্তি নীতিমালা টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা ২০৩০ এবং পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনাসমূহের সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ হবে। ২. প্রান্তিক ও পুনরাবৃত্তিমূলক উন্নয়ন- যথোপযুক্ত সুযোগ তৈরির মাধ্যমে কেন্দ্রের পরিবর্তে প্রান্তিক পর্যায় থেকে সকল কার্যক্রমের পাইলট/প্রোটোটাইপগুলোকে উৎসাহিত করা হবে এবং সফলতার বিচারে তা ক্রমান্বয়ে কেন্দ্র পর্যন্ত প্রসারিত হবে। এভাবে সরকারের মধ্যে পাইলটিং, সক্রিয় প্রকল্প ব্যবস্থাপনা ও স্টার্টআপ কোম্পানিগুলোকে সহায়তা প্রদানে উৎসাহিত করা হবে। ৩. উদ্ভাবন ও সৃজনশীলতাকে গুরুত্ব প্রদান- বাংলাদেশকে প্রযুক্তির শুধু ব্যবহারকারী হলে চলবে না; বরং নিত্যনতুন প্রযুক্তির উদ্ভাবন ও সৃষ্টিশীল দেশে পরিণত হতে হবে। এ তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি নীতিমালা সিভিল সার্ভিস, প্রাইভেট সেক্টর, সিভিল সোসাইটি, একাডেমিয়া, গবেষণা প্রতিষ্ঠান এবং শিক্ষার্থীসহ সমাজের সকল স্তরে পরীক্ষা-নিরীক্ষা ও উদ্ভাবনী দৃষ্টিভঙ্গি উন্নত করবে। সরকার এবং সমাজের মধ্যে উদ্ভাবন যেন একটি সংস্কৃতি হিসেবে বিকশিত হয় তা নিশ্চিত করার জন্য বিভিন্ন অর্থায়ন ও প্রণোদনার সুযোগ, প্রতিযোগিতা, উদ্ভাবক খোঁজা, ইনকিউবেশন প্লাটফর্ম, পরামর্শদান ও অংশীদারিত্বকে উৎসাহিত করা হবে। ৪. পাবলিক-প্রাইভেট-একাডেমিয়া অংশীদারিত্বকে উৎসাহিতকরণ- বেশিরভাগ উদ্ভাবনের সৃষ্টি এবং প্রতিপালন হবে বেসরকারী খাতে। চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের উত্থান এবং স্থানীয় ও বৈশ্বিক বাজারের চাহিদার সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে সময়ের সঙ্গে তাল মিলিয়ে শিক্ষাব্যবস্থাও যুগোপযোগী করা প্রয়োজন। এজন্য সরকারকে উদ্ভাবনের সকল বাধা অপসারণ, প্রসার ও ইনকিউবেশন নিশ্চিত করতে হবে। এ লক্ষ্যে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি নীতিমালা পাবলিক-প্রাইভেট-একাডেমিয়ার মধ্যে অভূতপূর্ব সেতুবন্ধন তৈরিতে ভূমিকা রাখবে। ৫. মানুষের কল্যাণে উদীয়মান প্রযুক্তির ব্যবহার- ৫-জির পাশাপাশি সংযুক্তির নতুন নতুন প্রযুক্তি, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা, ব্লক চেইন, ডাটা, রোবোটিক্স, আইওটি, জৈবপ্রযুক্তি, ন্যানো প্রযুক্তি, কোয়ান্টাম কম্পিউটিং বা এ ধরনের যুগান্তকারী ডিজিটাল প্রযুক্তি শিক্ষা, বাণিজ্য, সরকার ব্যবস্থাসহ সকল খাতেই প্রথাগত কাঠামোতে ডিসরাপশন নিয়ে এসেছে। প্রযুক্তির এ অগ্রযাত্রায় শারীরিক, ডিজিটাল এবং জৈবিক রূপান্তরও ত্বরান্বিত হবে। এমতাবস্থায়, এ তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি নীতিমালা মানুষের কল্যাণে উদীয়মান প্রযুক্তির সর্বোচ্চ ব্যবহার নিশ্চিত করবে এবং ভবিষ্যত প্রযুক্তির উপযোগী দক্ষ জনবল তৈরিতে ভূমিকা রাখবে। ৬. ব্যাপক জনসম্পদের সর্বোচ্চ ব্যবহার- বাংলাদেশ ২০২১ থেকে ২০৪১ সালের মধ্যে তরুণ কর্মক্ষম যে বিপুল জনগোষ্ঠীর সুবিধা পাবে তার সর্বোচ্চ ব্যবহারের কোন বিকল্প নেই। যদিও ৪র্থ শিল্প বিপ্লব বিদ্যমান শ্রম ও মেধাভিত্তিক পেশাসহ সবরকম চাকরিতেই নেতিবাচব প্রভাব ফেলবে, তারপরও কলকারখানার স্বয়ংক্রিয় ও আধুনিকীকরণের কারণে একই সঙ্গে প্রচুর চাকরির সুযোগ সৃষ্টি হবে। এজন্য সরকারী, বেসরকারী খাত ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোকে সমন্বিতভাবে স্থানীয় এবং বিশ্ব বাজারের সম্ভাব্য দক্ষতা ও চাহিদার ওপর ভিত্তি করে যথাযথ পরিকল্পনা গ্রহণ, বিদ্যমান শ্রমশক্তিকে প্রয়োজনীয় নতুন দক্ষতায় প্রশিক্ষণ এবং আনুষ্ঠানিক ও অনানুষ্ঠানিক শিক্ষার ব্যাপক সংস্কার করতে হবে। তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি নীতিমালা এ রূপান্তরের অনুঘটক হিসেবে ভূমিকা রাখবে। আগামী ২৩ বছর আইসিটির দ্রুত বিকাশ বাংলাদেশের জন্য বহু সুযোগ সৃষ্টি করবে। একই সঙ্গে এ বিকাশ আইসিটির সঙ্গে যুক্ত কিছু জটিল সমস্যার উদ্ভব ঘটাবে, যা চাকরিতে নেতিবাচব প্রভাব ফেলা থেকে শুরু করে তুলনামূলক গোপনীয় ব্যক্তিগত তথ্য চুরি পর্যন্ত বিস্তৃত হতে পারে। ২০৪১ সালের প্রয়োজনের সঙ্গে আমরা যদি নিজেদের সমন্বয় ঘটাতে ব্যর্থ হই তাহলে ২০৪১ সাল আমাদের বদলে দেবে। আজ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে প্রবেশকারী শিশুরা ২০৪১ সালে শ্রমবাজারে প্রবেশ করবে। আজকের বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রী যারা কর্মজীবনে প্রবেশ করছে ২০৪১ সালে তারা দেশের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে নেতৃস্থানীয় পর্যায়ে থাকবেন। আজ যারা সিভিল সার্ভিসে প্রবেশ করবেন তারা ২০৪১ সালে নীতিনির্ধারক হবেন। লেখক : তথ্যপ্রযুক্তিবিদ, কলামিস্ট, দেশের প্রথম ডিজিটাল নিউজ সার্ভিস আবাসের চেয়ারম্যান- সাংবাদিক, বিজয় কীবোর্ড ও সফটওয়্যারের জনক
×