ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

ডিজিটাল বিদ্যুত বিভাগ

প্রকাশিত: ০৩:২৩, ২৮ অক্টোবর ২০১৮

ডিজিটাল বিদ্যুত বিভাগ

বাংলাদেশের বিদ্যুত বিভাগের সঙ্গে বিশ্বখ্যাত সফটওয়্যার নির্মাতা প্রতিষ্ঠান মাইক্রোসফটের সংযুক্ত হওয়ার বিষয়টি নিঃসন্দেহে ইতিবাচক। সত্যি বলতে কি, আগামীতে ডিজিটাল বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে এটি হবে অত্যন্ত সহায়ক, একই সঙ্গে আধুনিক ও তথ্যসমৃদ্ধ। অফিস ম্যানেজমেন্ট এন্টারপ্রাইজ প্ল্যানিং বা ইআরপি একটি সর্বাধুনিক ধারণা। কোম্পানি পরিচালনা থেকে শুরু করে গ্রাহক সেবা; সর্বশেষ সব তথ্যই সন্নিবেশিত থাকবে ইআরপিতে। অতঃপর কোম্পানির শীর্ষ কর্মকর্তা থেকে শুরু করে বিদ্যুত বিভাগে কর্মরত যে কেউ এমনকি গ্রাহকও চাইলে যখন তখন নিজের কম্পিউটার, এমনকি মোবাইলে ক্লিক করে জানতে পারবেন যে কোন কাক্সিক্ষত তথ্য। বাংলাদেশে বিদ্যুত বিভাগই প্রথম এরকম একটি চুক্তি করল মাইক্রোসফটের সঙ্গে, যেটা ইআরপি তৈরিতে সুখ্যাত। ইতোমধ্যে যৌথভাবে তারা একটি সেমিনারও করেছে। আগামী তিন-চার মাসের মধ্যে প্রকল্পের প্রথম ধাপের কাজ শেষ হবে এবং পুরো প্রক্রিয়া ইআরপিতে সন্নিবেশ করতে প্রয়োজন হবে বছরখানেক। উল্লেখ্য, বর্তমানে বিদ্যুত বিভাগে কিছু কিছু কাজ সম্পাদিত হয়ে থাকে তথ্য প্রযুক্তির মাধ্যমে। বর্তমানে এমনকি সংযোগ আবেদনও নেয়া হচ্ছে অনলাইনে। তবে গ্রাহকের আবেদন অনলাইনে প্রাপ্তির পরের ধাপগুলো সম্পাদন করতে হয় হাতে কলমে। ফলে সাতদিনের মধ্যে বিদ্যুত সংযোগ দেয়ার কথা থাকলেও তা আদৌ হচ্ছে কিনা, তা জানতে পারেন না গ্রাহক কিংবা বিদ্যুত কর্তৃপক্ষ। এরকম আংশিক অনলাইন ব্যবস্থায় গ্রাহক সন্তুষ্টি অর্জন করা সম্ভব নয়। শতভাগ অনলাইন ব্যবস্থা বা ইআরপিতে এই সমস্যার সমাধান হতে পারে। সে অবস্থায় অনলাইনে সংযোগের আবেদন থেকে শুরু করে প্রিপেইড মিটার, বিল প্রেরণ, বিল প্রদান, অভিযোগসহ বিদ্যুত উৎপাদনের সর্বশেষ অবস্থা, লোডশেডিং, লোড ম্যানেজমেন্ট; এসবই ডিজিটাল পদ্ধতিতে সম্পাদন করা সম্ভব হবে বলে ধারণা করছেন সংশ্লিষ্টরা। ই-ফাইলিংয়ের পুরো সুফল পেতে বিদ্যুত বিভাগের সবাইকে অবশ্য পর্যায়ক্রমে প্রশিক্ষণ নিতে হবে। মাইক্রোসফটের সঙ্গে দেশীয় দুই উদ্যোক্তা প্রতিষ্ঠান টেকনো হ্যাভেন এবং টেকনোভিশন যৌথভাবে কাজ করবে ইআরপিতে। মোটকথা, কোম্পানি পরিচালনায় একটি সর্বাধুনিক তথ্যপ্রযুক্তির ভিত্তি স্থাপন হবে, যেটি বৃহৎ একটি প্রতিষ্ঠান পরিচালনায় যুগান্তকারী অবদান রাখতে সক্ষম। ২০০৮ সালে বর্তমান সরকার ক্ষমতাসীন হওয়ার পর সর্বাধিক মনোনিবেশ করে খাদ্য ও বিদ্যুত উৎপাদনে। খাদ্য উৎপাদনে স্বনির্ভর হওয়ার পাশাপাশি বিদ্যুত উৎপাদনে দেশ এখন প্রায় স্বয়ংসম্পূর্ণ। তবে প্রধানত লোড ম্যানেজমেন্টের কারণে রাজধানীসহ দেশের কোথাও কোথাও লোডশেডিং ও বিদ্যুত ঘাটতির সমস্যা রয়ে গেছে। উদাহরণত বলা যায়, প্রধানত দুর্নীতিজনিত কয়লার ঘাটতির কারণে বড়পুকুরিয়া কয়লাখনিতে বর্তমানে উৎপাদন বন্ধ রয়েছে। তবে এটি সাময়িক। দেশের বিভিন্ন স্থানে যৌথ ও নিজ উদ্যোগে একাধিক কয়লাভিত্তিক বিদ্যুত উৎপাদন কেন্দ্র নির্মিত হচ্ছে। পারমাণবিক বিদ্যুত কেন্দ্রের কাজও চলছে। বর্তমান সরকারের অন্যতম লক্ষ্য হলো, ২০৪১ সাল নাগাদ বিদ্যুত উৎপাদন ৪০ হাজার মেগাওয়াটে উন্নীত করা। ভারতের পাশাপাশি নেপাল ও ভুটান থেকে বিদ্যুত আমদানির পাশাপাশি বিদ্যুত উৎপাদনের চুক্তিও প্রক্রিয়াধীন। দেশের বিভিন্ন স্থানে শিল্পাঞ্চল ও অর্থনৈতিক অঞ্চলে সাতদিনের মধ্যে বিদ্যুত সংযোগ দেয়ার প্রতিশ্রুতি রয়েছে। এত বিশাল কর্মযজ্ঞ পরিচারণার নিমিত্ত সর্বাধুনিক তথ্যপ্রযুক্তি ও নেটওয়ার্কের বিকল্প নেই। বিদ্যুত বিভাগ ইআরপি বাস্তবায়নের মাধ্যমে সেই পথে অগ্রসর হচ্ছে বলেই প্রতীয়মান। আমরা আশা করব, সরকারের অন্যান্য মন্ত্রণালয় ও বিভাগও পর্যায়ক্রমে এই পথে অগ্রসর হবে। আর তাহলে অচিরেই গড়ে উঠবে বর্তমান প্রধানমন্ত্রীর স্বপ্নের ডিজিটাল বাংলাদেশ।
×