ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

বিদ্রোহী প্রার্থী হলে আওয়ামী লীগ থেকে আজীবন বহিষ্কার ॥ প্রধানমন্ত্রী

প্রকাশিত: ০৮:৪২, ২৭ অক্টোবর ২০১৮

 বিদ্রোহী প্রার্থী হলে আওয়ামী লীগ থেকে আজীবন বহিষ্কার ॥ প্রধানমন্ত্রী

বিশেষ প্রতিনিধি ॥ প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা আগামী নির্বাচনকে সামনে রেখে দলের সর্বস্তরের নেতাকর্মীদের ঐক্যবদ্ধ হওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন। একই সঙ্গে তিনি কঠোর হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে বলেন, দলের সিদ্ধান্তের বাইরে গিয়ে প্রার্থী হলে তাকে সঙ্গে সঙ্গে দল থেকে আজীবনের জন্য বহিষ্কার করা হবে। মনে রাখবেন আওয়ামী লীগের প্রার্থীর অভাব নেই। শুক্রবার রাতে গণভবনে আওয়ামী লীগের যৌথসভায় প্রধানমন্ত্রী এসব কথা বলেন। সূত্র জানায়, বৈঠকে শেখ হাসিনা বলেন, সবাইকে দলের সিদ্ধান্ত মেনে চলতে হবে। দলের নির্দেশ অমান্যকারীদের বিরুদ্ধে শুধু বহিষ্কার নয়, সাংগঠনিক আরও অনেক কিছু ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। বৃহত্তর স্বার্থে নির্বাচনে সকলকে ঐক্যবদ্ধ থাকার নির্দেশনা দিয়ে তিনি বলেন, দল যাকে মনোনয়ন দেবে তার পক্ষে সবার কাজ করতে হবে। এক্ষেত্রে কোন ধরনের ছাড় দেয়া হবে না। জানা গেছে, বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী বলেন, হেফাজতে ইসলামের বিরুদ্ধে কথা বলা যাবে না। কেউ তাকে তেঁতুল হুজুর বলবেন না। আমরা সবাই ধর্মপ্রাণ মানুষ। তারা ধর্মের কাজই করে। এছাড়া হেফাজত জামায়াতবিরোধী। তাদের ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত লাগে এমন কথাও বলা যাবে না। হেফাজতে ইসলামীর একটি বড় ভোট ব্যাংককে আগামী নির্বাচনে আওয়ামী লীগের পক্ষে কাজে লাগানোর ওপর গুরুত্বারোপ করা হয়। বৈঠকে নির্বাচন পরিচালনায় সাব কমিটি গঠন করা হয়েছে। দলের সিনিয়র নেতাদের নিয়ে কোর-কমিটি হয়েছে। বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী দলের নেতাদের উদ্দেশে বলেছেন, এখন পর্যন্ত কাউকেই কোন আসনেই দলীয় মনোনয়ন দেয়ার বিষয়ে কোন রকম সংকেত কিংবা সবুজ সংকেত দেয়া হয়নি। কাউকে প্রার্থী হিসেবে কাজও করতে বলা হয়নি। ফলে এ নিয়ে বিভ্রান্তি সৃষ্টির কোন সুযোগ নেই। কাজেই যারা দলীয় মনোনয়ন পেয়ে গেছেন কিংবা প্রার্থী করার বিষয়ে সবুজ সংকেত পেয়েছেন বলে দাবি করে মাঠে নেমেছেন- সেটি ঠিক নয়। এমন প্রচারণা চালিয়ে কেউ দল ও নেতাকর্মীদের মধ্যে বিভ্রান্তি সৃষ্টি করবেন না। সবাইকে ঐক্যবদ্ধভাবে নৌকার পক্ষে কাজ করতে হবে। এ সময় বাংলাদেশ ইসলামী ঐক্যজোটের চেয়ারম্যান মিছবাহুর রহমান চৌধুরী ও তরিকত ফেডারেশনের সাবেক মহাসচিব এম এ আউয়াল এমপির নেতৃত্বাধীন ১৫ দলীয় জোট ‘ইসলামিক ডেমোক্রেটিক এলায়েন্স’, সৈয়দ বাহাদুর শাহ মুজাদ্দেদীর নেতৃত্বাধীন ইসলামিক ফ্রন্ট এবং মোস্তফা আমীর ফয়সলের নেতৃত্বাধীন জাকের পার্টিকে নির্বাচনী জোট তথা মহাজোটে যুক্ত করার নীতিগত সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। শীঘ্রই আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের বৈঠক আহবান করা হবে। সেখানে এ বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হবে। সূত্র জানায়, বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়েছে, নির্বাচন সামনে রেখে প্রতিটি নির্বাচনী এলাকা থেকে তিনজন করে পোলিং এজেন্টকে দলের পক্ষ থেকে প্রশিক্ষণ দেয়া হবে, যাদের দুই জন পুরুষ ও একজন মহিলা হবেন। রাজধানী ঢাকা অথবা বিভাগীয় পর্যায়ে প্রশিক্ষণ নিয়ে তারা নিজ নিজ আসনের অন্যান্য এজেন্টদের প্রশিক্ষণ দেবেন। জানা গেছে, বৈঠকে আওয়ামী লীগ প্রেসিডিয়াম সদস্য, কেন্দ্রীয় ১৪ দলের মুখপাত্র এবং স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম বলেন, আগামী নির্বাচন কঠিন হবে। তবে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পরিস্থিতি নেত্রী শেখ হাসিনার পক্ষে আছে। দক্ষ ও দূরদর্শী নেতৃত্বের করণে বিশ্ব নেতৃত্ব আবারও শেখ হাসিনাকে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দেখতে চেয়েছেন। স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, বিএনপি-জামায়াত চিহ্নিত শত্রæ। ভদ্রতার আবরণ লাগিয়ে কামাল হোসেন গংরা জাতির এই শত্রæদের সঙ্গে জোট বেঁধে মাঠে নেমেছেন। তাদের কোন ছাড়া দেয়া যাবে না। সভায় দলের সার্বিক নির্বাচনী প্রস্তুতি বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়েছে। আগামী মাসের প্রথম সপ্তাহে নির্বাচন কমিশনের তফসিল ঘোষণার সম্ভাব্যতা নিয়ে আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে এই প্রস্তুতি কতটুকু এগুলো সে নিয়েও বিশ্লেষণ করেছেন নেতারা। এ সময় দলীয় প্রার্থী মনোনয়ন প্রক্রিয়া বিষয়ে আলোচনার পর তফসিল ঘোষণার পরপরই তথা দ্রুততম সময়ের মধ্যেই দলীয় মনোনয়নপ্রাত্যাশীদের মধ্যে মনোনয়ন ফরম বিতরণের বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। এক্ষেত্রে মনোনয়ন ফরম বাবদ প্রার্থীদের কাছ থেকে আগের মতোই ২৫ হাজার টাকা করে নেয়ার সিদ্ধান্ত হয়। নির্বাচনী প্রস্তুতির আলোচনায় প্রধানমন্ত্রী সবাইকে ঐক্যবদ্ধভাবে নির্বাচনী প্রচার-প্রচারণায় ঝাঁপিয়ে পড়ার নির্দেশ দেন। তিনি বলেন, আগামী নির্বাচনেও আওয়ামী লীগই আবারও ক্ষমতায় আসবে- এমন আত্মবিশ্বাস আমাদের রয়েছে। তবে দলকে বিজয়ী করতে মানুষের ঘরে ঘরে যেতে হবে। তাদের কাছে সরকারের উন্নয়ন ও বিএনপি-জামায়াতের নেতিবাচক রাজনীতি তুলে ধরতে হবে। একই সঙ্গে আমরা যে ক্ষমতায় আসার বিষয়ে আত্মবিশ্বাসী রয়েছি- এই মেসেজটাও তাদের মধ্যে তুলে ধরতে হবে। নবগঠিত জাতীয় ঐক্য ফ্রন্ট বিষয়ে নেতাদের সতর্ক করে দিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, ঐক্য ফ্রন্টের কাজ হচ্ছে নির্বাচনকে প্রশ্নবিদ্ধ করা। নির্বাচনে অংশগ্রহণ নয়, নির্বাচনকে প্রশ্নবিদ্ধ করাই তাদের মূল উদ্দেশ্য। এ নিয়ে সজাগ থাকতে হবে।
×