ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

টোলমুক্ত বুড়িগঙ্গা সেতুর দাবিতে পুলিশ-শ্রমিক সংঘর্ষ, নিহত ১

প্রকাশিত: ০৫:২৭, ২৭ অক্টোবর ২০১৮

  টোলমুক্ত বুড়িগঙ্গা সেতুর দাবিতে পুলিশ-শ্রমিক সংঘর্ষ, নিহত ১

নিজস্ব সংবাদদাতা, কেরানীগঞ্জ, ২৬ অক্টোবর ॥ প্রথম বুড়িগঙ্গা সেতু টোলমুক্ত করার দাবিতে কেরানীগঞ্জে পুলিশের সঙ্গে সিএনজি চালিত অটোরিক্সা ও ট্রাক চালকদের সংঘর্ষে ১ জন নিহত হয়েছে। এ ঘটনায় ১০ জন গুলিবিদ্ধ এবং পুলিশসহ অর্ধশতাধিক আহত হয়েছে। আহতদের ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ ও স্যার সলিমুল্লাহ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। নিহতের নাম মোঃ সোহেল (২৯)। তিনি স্থানীয় একটি মোটর গ্যারেজে কাজ করতেন। জানা গেছে, শুক্রবার সকাল সাড়ে ৯টায় বুড়িগঙ্গা ১ম সেতু টোলমুক্ত করার দাবিতে চালকরা বিক্ষোভ মিছিল বের করলে পুলিশ তাদের বাধা দেয়। এতে পুলিশের সঙ্গে মিছিলকারীদের সংঘর্ষ বাধে। মিছিলকারীরা পুলিশের উপর ইট-পাটকেল ছুড়লে পুলিশ একপর্যায়ে রবার বুলেট ও শটগানের ফাঁকা গুলিবর্ষণ করে। এতে হতাহতের ঘটনা ঘটে। খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে উপজেলা চেয়ারম্যান শাহীন আহমেদ এসে সেতু টোলমুক্ত করার ঘোষণা দিলে আন্দোলনকারীরা চলে যায় এবং ২ ঘণ্টা পর সেতুতে যানবাহন চলাচল স্বাভাবিক হয়। পুলিশ জানায়, টোল প্লাজা নিয়ে নতুন করে সরকার টেন্ডার আহ্বান করে এবং এখন যারা ইজারাদার তারা টেন্ডার নিয়ে টোল আদায় করছেন। ইজারাদার জনকণ্ঠকে বলেন, আমি বৈধভাবে ব্যবসা করতে বসেছি। আমরা টেন্ডার অনুযায়ী, সরকারী রেটে যেটা পেয়েছি সেটাই নিচ্ছি। বিডিনিউজ জানায়, সংঘর্ষস্থল থেকে সকাল সাড়ে ১০টার দিকে গুলিবিদ্ধ একজনকে কাছের ইকুরিয়া জেনারেল হাসপাতালে নেয়া হলে কর্তব্যরত চিকিৎসকরা তাকে মৃত ঘোষণা করেন। নিহতের নাম সোহেল (২৮)। মহেন্দ্র গাড়ির চালক সোহেল পুলিশের গুলিতে নিহত হন বলে পরিবহন শ্রমিকরা জানান। হাসপাতালটির ব্যবস্থাপক কারিমুল হাসান বলেন, ‘গুলিবিদ্ধ একজনের লাশ আমাদের এখানে এসেছিল। তার বুকের নিচে ও পেটের উপরে গুলির জখম ছিল। পুলিশ এসে লাশটি নিয়ে গেছে।’ বিষয়টি নিয়ে যোগাযোগ করলে ঢাকা জেলা পুলিশ সুপার শাহ মিজান শাফিউর রহমান বলেন, ‘আমি একজন নিহত হওয়ার খবর শুনেছি। খোঁজ নিচ্ছি, ঘটনাটি পুরোপুরি জানলে নিশ্চিত করতে পারব।’ সংঘর্ষের সময় সেতুর ওপর দিয়ে গাড়ি চলাচল বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। দুপুর ১২টার পর পরিস্থিতি শান্ত হলে গাড়ি চলাচল শুরু হয়। শ্রমিকরা বলছেন, এই সেতুতে আগে ট্রাকের টোল ছিল ৩০ টাকা। গত ২২ অক্টোবর সেই টোল বাড়িয়ে করা হয় ২৪০ টাকা। হঠাৎ করে এত বেশি টোল বাড়ানোয় তারা বিপাকে পড়েছেন। এই টোল কমিয়ে আনার দাবিতে গত কয়েকদিন ধরে বিক্ষোভ করছিলেন পরিবহন শ্রমিকরা; শুক্রবার তা সহিংস রূপ নিল। বুড়িগঙ্গা নদীর উপর এই সেতুর টোল বাড়ানোর প্রতিবাদে ২০১৫ সালে অটোরিক্সা চালকদের বিক্ষোভে তিন দিন চলাচল বন্ধ ছিল। পরে নৌ পরিবহনমন্ত্রী ও পরিবহন শ্রমিক নেতা শাজাহান খানের হস্তক্ষেপে বিক্ষোভকারীরা শান্ত হয়। ‘সোহেল পুলিশের গুলিতে মারা যায়নি’ ॥ অবশ্য বাংলা ট্রিবিউন জানায়, পুলিশের গুলিতে শ্রমিক সোহেল হাওলাদারের মৃত্যু হয়নি বলে দাবি করেছেন বাংলাদেশ আন্তঃজেলা ট্রাকচালক ইউনিয়নের সভাপতি তাজুল ইসলাম। তিনি বলেন, ‘পুলিশের গুলিতে নয়, টোল প্লাজার ইজারাদার খোরশেদ আলমের লোকজনের গুলিতে সোহেল মারা গেছেন।’ এ বিষয়ে ঢাকা জেলার এসপি শাহ মিজান শফিউর রহমান বলেন, ‘সোহেল কার গুলিতে নিহত হয়েছে সেটি এখনই বলা মুশকিল। বিষয়টি তদন্তসাপেক্ষে বলা যাবে। শ্রমিকদের মধ্য থেকে অনেকেই কয়েক জনের নাম বলেছে। আমরা সেটিও তদন্ত করে দেখছি।’ সোহেলের স্ত্রী লাকী আক্তার বলেন, ‘বৃহস্পতিবার থেকে আমার স্বামী আন্দোলনে যুক্ত ছিলেন। তাকে ট্রাক শ্রমিকরা আন্দোলনে যেতে বলেছিল। তাই সে আজ ভোরেই সেখানে যায়। সকাল দশটায় খবর পাই সোহেল গুলিবিদ্ধ হয়েছে।’ সোহেলের বাড়ি বরিশালের মেহেন্দিগঞ্জে। পরিবার নিয়ে ভাড়া থাকতেন হাসনাবাদে। রাব্বী হাসান তামীম নামে তার আড়াই বছরের একটি ছেলে রয়েছে।
×