ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

প্রধানমন্ত্রী কলাপাড়া ও তালতলী যাচ্ছেন আজ

প্রকাশিত: ০৫:২৭, ২৭ অক্টোবর ২০১৮

 প্রধানমন্ত্রী কলাপাড়া ও তালতলী যাচ্ছেন আজ

মেজবাহউদ্দিন মাননু, কলাপাড়া/ মোঃ হোসাইন আলী কাজী আমতলী ॥ পায়রা তাপ বিদ্যুতকেন্দ্র পায়রা বন্দরসহ কলাপাড়ার উপকূলজুড়ে বিরাজ করছে উৎসবমুখর পরিবেশ। জাতির পিতার সুযোগ্য উত্তরসূরি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আগমন ঘিরে সকল শ্রেণীপেশার মানুষ উচ্ছ্বসিত। স্বপ্নের ঠিকানার আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করতে আজ শনিবার বেলা এগারোটায় আসছেন প্রধানমন্ত্রী। বিস্ময়কর উন্নয়নের বাংলাদেশ গড়ার কারিগর শেখ হাসিনা আসছেন, ভাষণ দেবেন একটি সুধী সমাবেশে। ইতোমধ্যে স্বপ্নের ঠিকানার খবর কলাপাড়ার আন্ধারমানিক তীরের মানুষের মুখে মুখে আলোচিত হচ্ছে। স্বপ্নের ঠিকানা এখন দৃশ্যমান, বাস্তবতা। পায়রা বিদ্যুতকেন্দ্র নির্মাণে ১০০২ একর জমি অধিগ্রহণে ক্ষতিগ্রস্তদের পুনর্বাসনে নির্মিত আধুনিক সুবিধা সংবলিত পল্লী ‘স্বপ্নের ঠিকানার’ চাবি শেখ হাসিনা নিজ হাতে ক্ষতিগ্রস্তদের হাতে অর্পণ করবেন। এর মধ্য দিয়ে এসব পরিবার খুঁজে পাচ্ছে তার বাসযোগ্য আবাসস্থল। ১৬ একর জমিতে সব ধরনের সুবিধা সংবলিত পল্লীটি করা হয়েছে। নর্থওয়েস্ট পাওয়ার জেনারেশন কোম্পানি ও বাংলাদেশ চায়না পাওয়ার কোম্পানি লিমিটেড এই পল্লী নির্মাণ করে। এখন জমি হারানো কৃষক, জেলে, হাইলা-কামলা সব শ্রেণী পেশার মানুষ জীবনে স্বাচ্ছন্দ্য ফেরার খুশিতে বিভোর। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা স্বপ্নের ঠিকানা ছাড়াও পায়রা বন্দর এলাকার প্রায় ৬ কিলোমিটার দীর্ঘ পায়রা বন্দর শেখ হাসিনা ফোর লেন সড়ক, পায়রা সমুদ্র বন্দর মসজিদ, পায়রা বন্দরের মাল্টি পারপাস ভবন, অফিসার্স গেস্ট হাউস, পায়রা বন্দরের স্টাফ ডরমেটরি ভবন, কুয়াকাটা খানাবাদ ডিগ্রী কলেজ, মুক্তিযোদ্ধা মেমোরিয়াল ডিগ্রী কলেজ ও আলহাজ জালাল উদ্দিন ডিগ্রী কলেজের তিনটি চারতলা নব-নির্মিত একাডেমিক ভবনের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করবেন। উদ্বোধন করবেন পায়রা বন্দর প্রকল্প এলাকার সার্ভিস জেটির। ২১ কোটি ৩৮ লাখ টাকা ব্যয়ে এ সার্ভিস জেটি স্থাপন করা হয়েছে। ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করবেন, সমুদ্র বন্দরের মূল চ্যানেল রাবনাবাদ পাড়ের চারিপাড়ায় প্রায় চার হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে ৬৫০ মিটার দীর্ঘ টার্মিনাল নির্মাণ কাজের। এখানে মাদার ভেসেল সরাসরি পণ্য খালাসের সুযোগ পাবে। ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করবেন উপজেলা পর্যায়ে প্রযুক্তি হস্তান্তরের জন্য কৃষক প্রশিক্ষণ কেন্দ্র (তৃতীয় পর্যায়) শীর্ষক প্রকল্পের কলাপাড়া উপজেলার কৃষক প্রশিক্ষণ কেন্দ্র নির্মাণ কাজের। এছাড়াও প্রধানমন্ত্রী পায়রা সমুদ্র বন্দরের ভূমি অধিগ্রহণের ফলে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের লালুয়া, চান্দুপাড়া (উত্তর), চান্দুপাড়া (দক্ষিণ), লেমুপাড়া, ধুলাসার ও লোন্দা মৌজায় জমি অধিগ্রহণে ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য ছয়টি পুনর্বাসন প্রকল্পের নির্মাণ কাজের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করবেন। উদ্বোধন ও উন্নয়ন কাজের ভিত্তিস্থাপন ঘিরে আজ আন্ধারমানিক, রাবনাবাদ পাড়ের মানুষের মনে বাঁধভাঙ্গা উচ্ছ্বাস। প্রতি সন্ধ্যায় কলাপাড়া শহরে চলছে আনন্দ মিছিল। মানুষ মুখিয়ে আছেন প্রধানমন্ত্রী না চাইতে আরও কী উন্নয়ন কর্মের ঘোষণা দেন- অপেক্ষার কাউন্ট-ডাউন শুরু করেছে তারা। প্রধানমন্ত্রীর সফরকে ঘিরে নিরাপত্তার চাদরে মুড়ে দেয়া হয়েছে এই জনপদ। প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা আজ বরগুনার উপকূলীয় উপজেলা তালতলীতে আসছেন। তাকে বরণ করতে প্রস্তুত তালতলীর লাখো মানুষ। উপজেলা আওয়ামী লীগের উদ্যোগে আয়োজিত তালতলী সরকারী মডেল মাধ্যমিক বিদ্যালয় মাঠের জনসভায় প্রধান অতিথির ভাষণ দেবেন তিনি। তার আগমন উপলক্ষে সাজ সাজ রব বিরাজ করছে উপজেলাব্যাপী। রঙিন সাজে সেজেছে তালতলীর অলিগলি। বর্ণিল সাজে সেজেছে প্রধানমন্ত্রীর সভামঞ্চ। আলোর ঝলকানিতে উৎসবের ফানুসে ভাসছে গোটা দক্ষিণাঞ্চল। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর কন্যা জননেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে এক নজর দেখার জন্য অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছে উপজেলার লাখ মানুষ। উপজেলার সর্বত্র উৎসবমুখর পরিবেশ বিরাজ করছে। প্রধানমন্ত্রীকে বরণ করতে সব প্রস্তুতি সম্পন্ন। বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্পের ব্যানার ও ফেস্টুনে ছেয়ে গেছে সভাস্থল থেকে শুরু করে জনসভা মাঠ প্রাঙ্গণ তথা উপজেলা শহর। নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে। নিরাপত্তার চাদরে ঢেকে ফেলা হয়েছে সভাস্থলসহ আশপাশের এলাকা। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গত ৪ অক্টোবর দেশব্যাপী উন্নয়ন মেলা উপলক্ষে আয়োজিত টেলিকনফারেন্সে আমতলী উপজেলা পরিষদ প্রাঙ্গণের সুধীসমাবেশে পায়রা বন্দর পরিদর্শনে আসবেন বলে ঘোষণা দেন। একাদশ সংসদ নির্বাচনের আগে মুহূর্তে প্রধানমন্ত্রীর তালতলীতে আগমন ঘিরে বরগুনার সর্বত্র বইছে উৎসবের আমেজ। দলীয় নেতাকর্মীদের মধ্যে বিপুল উৎসাহ উদ্দীপনা। ২০০১ সালের সংসদ নির্বাচনে জননেত্রী শেখ হাসিনা তৎকালীন বরগুনা-৩ (আমতলী-তালতলী) আসন থেকে জয়লাভ করেন। টানা দ্বিতীয়বার ক্ষমতায় আসার পর প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শেখ হাসিনার এটা দ্বিতীয়বার তালতলী সফর। এর আগে ২০১৩ সালের ১৯ নবেম্বর তিনি সর্বশেষ তালতলী সফর করেন এবং এই মাঠেই লাখো মানুষের মাঝে ভাষণ দেন। প্রধানমন্ত্রীর সহকারী একান্ত সচিব-১ কাজী নিশাত রসুল স্বাক্ষরিত সফরসূচীতে উল্লেখ রয়েছে শনিবার সকাল দশটায় হেলিকপ্টারযোগে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পটুয়াখালীর পায়রা তাপবিদ্যুত কেন্দ্রে অবতরণ করবেন। ওখানে ১৬ উন্নয়ন প্রকল্পের উদ্বোধন শেষে দুপুর আড়াইটায় বরগুনার তালতলীর জনসভা মঞ্চে আসবেন। বিকেল পৌনে তিনটায় বরগুনার বিভিন্ন উপজেলার ২১ উন্নয়ন প্রকল্পের উদ্বোধন করবেন। উন্নয়ন প্রকল্পের উদ্বোধন শেষে বিকেল তিনটায় উপজেলা আওয়ামী লীগ আয়োজিত তালতলী সরকারী মডেল মাধ্যমিক বিদ্যালয় মাঠে বিশাল জনসভায় ভাষণ দেবেন। বরগুনার উন্নয়ন প্রকল্পগুলো হলো সদর হাসাপাতাল ৫০ থকে ২৫০ শয্যায় উন্নীতকরণ, জেলা গ্রন্থাগার, পুলিশ লাইনের মহিলা ব্যারাক, দৃষ্টি প্রতিবন্ধী শিশুদের হোস্টেল নির্মাণ, ঘূর্ণিঝড় আশ্রয় কেন্দ্র সদর ইউনিয়ন ভূমি অফিস, ডৌয়াতলা ইউনিয়ন ভূমি অফিস, বুড়িরচর ইউনিয়ন ভূমি অফিস, হোসনাবাদ ইউনিয়ন ভূমি অফিস, সিডর ও আইলায় ক্ষতিগ্রস্ত বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ পুনর্বাসন, বরগুনা-বাকেরগঞ্জ- কাঁঠালতলী-পাদ্রীশিবপুর-সুবিদখালী সড়ক, হাজার বিঘা-কামরাবাদ পুরাকাটা ফেরিঘাট সড়কের চেনেজ ও আরসিসি গার্ডার ব্রিজ নির্মাণ, সদরের গৌড়িচন্না ইউনিয়ন পরিষদ কমপ্লেক্স ভবন , বামনা উপজেলা ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স স্টেশন, বেতাগী উপজেলা ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স স্টেশন, বেতাগী উপজেলার বদনাখালী খালের ওপর গার্ডার ব্রিজ নির্মাণ, তালতলী উপজেলা পরিষদ কমপ্লেক্স ভবন, বামনা উপজেলা পরিষদ ভবন, আমতলী থানা ভবন, আমতলী ইউনুস আলী খান কলেজের চতুর্থ তলা একাডেমি ভবন কাম সাইক্লোন সেল্টার, এম বালিয়াতলী ডিএন কলেজের চতুর্থ তলা একাডেমিক ভবন কাম সাইক্লোন সেল্টার, সৈয়দ ফজলুল হক ডিগ্রী কলেজের চতুর্থ তলা একাডেমিক ভবন কাম সাইক্লোন সেল্টার, তালতলী প্রাণিসম্পদ উন্নয়ন কেন্দ্র, তালতলী ও বামনা উপজেলায় একটি বাড়ি একটি খামার ও পল্লী সঞ্চয় ব্যাংক ভবন। প্রধানমন্ত্রীর এ সফরে আমতলী-তালতলী উন্নয়নে নতুন দিগন্তের সুচনা হবে। প্রধানমন্ত্রীর আগমনে আমতলী-তালতলীসহ বিভিন্ন উপজেলায় প্রতিদিনই আনন্দ মিছিল চলছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তালতলীতে আগমন কেন্দ্র করে বরগুনা জেলা, আমতলী ও তালতলী উপজেলা আওয়ামী লীগ নেতারা আমতলীতে জেলা, উপকূলীয় পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপন, বকুলনেছা মহিলা ডিগ্রী কলেজ জাতীয়করণ, তালতলীতে পৌরসভায় উন্নীতকরণ ও তালতলী ম্যাজিস্ট্রেট আদালত স্থাপন, রাখাইনদের কালচারাল একাডেমি স্থাপন, তালতলীতে মৎস্য প্রজনন ও আহরণ কেন্দ্র স্থাপন, সোনাকাটা ইকোপার্ক ও নলবুনিয়া শুভ সন্ধ্যা সমুদ্র সৈকত পর্যটন কেন্দ্র উন্নয়ন ও যোগাযোগ ব্যবস্থা উন্নীতকরণ, তালতলীতে সোনালী ব্যাংক স্থাপনসহ অর্ধশতাধিক দাবি প্রধানমন্ত্রীর কাছে উত্থাপন করবেন বলে। উপজেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি রেজবি-উল কবির জোমাদ্দার বলেন, প্রধানমন্ত্রীর তালতলীবাসী ধন্য। এই মঞ্চে প্রধানমন্ত্রী দু’বার জনসভা করেছেন। এর চেয়ে তালতলীবাসীর আর কিছুই চাওয়ার নেই। তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী তালতলীতে উপজেলা করেছেন, তিনিই উপজেলার সব উন্নয়ন ঘটাবেন। জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মোঃ গোলাম সরোয়ার টুকু বলেন, প্রধানমন্ত্রীর জনসভা জনসমুদ্রে পরিণত করতে সব প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে। তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী মানবতার মা শেখ হাসিনা তালতলী আগমনে দক্ষিণাঞ্চলে উন্নয়নের দ্বার উন্মুক্ত হবে। বরগুনাবাসীর দাবিগুলো প্রধানমন্ত্রী বাস্তবায়ন করবেন বলে আমরা দৃঢ় বিশ্বাস করি। জেলা পুলিশ সুপার মারুফ হোসেন বলেন, প্রধানমন্ত্রীর সফরকালে তালতলী জুড়ে কঠোর নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে । তিনি বলেন পুরো জেলায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সতর্ক অবস্থানে থাকবে। বরগুনা-১ আসনের সংসদ সদস্য ধীরেন্দ্র দেবনাথ শম্ভু বলেন, প্রধানমন্ত্রীর আগমনে গোটা দক্ষিণাঞ্চল হবে উন্নয়নের রোল মডেল। আর এ জেলা হবে সেই উন্নয়ন মডেলের প্রবেশ দ্বার। আশা করি প্রধানমন্ত্রী বরগুনার উন্নয়নে সর্বাত্মক ভূমিকা রাখবেন।
×