ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

শিলংয়ের আদালতে খালাস পেলেন বিএনপি নেতা সালাহউদ্দিন

প্রকাশিত: ০৪:৪০, ২৭ অক্টোবর ২০১৮

 শিলংয়ের আদালতে খালাস পেলেন বিএনপি নেতা সালাহউদ্দিন

বিডিনিউজ ॥ ভারতে অনুপ্রবেশের মামলায় বিএনপি নেতা সালাহউদ্দিন আহমদকে খালাস দিয়েছে শিলংয়ের আদালত। তিন বছর ধরে মেঘালয়ের রাজধানী শিলংয়ে কার্যত বন্দী জীবন কাটাচ্ছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন। চতুর্থবার পেছানোর পর তার বিরুদ্ধে মামলাটির রায় হল। বৈধ কাগজপত্র ছাড়া ভারতে ঢোকার অভিযোগে ফরেনার্স এ্যাক্টের ১৪ ধারায় তিন বছর ধরে এ মামলা চলে। অবশ্য বিএনপির এই নেতার দাবি, তাকে বাংলাদেশ থেকে অপহরণ করা হয়েছিল। আর কোন পথে কীভাবে তিনি শিলংয়ে পৌঁছে ছিলেন, সে তথ্যও ভারতীয় পুলিশ উদঘাটন করতে পারেনি। সরকারী কর্মকর্তা হিসেবে ১৯৯১-৯৬ মেয়াদে প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার এপিএস ছিলেন সালাহউদ্দিন। পরে তিনি চাকরি ছেড়ে কক্সবাজারের সংসদ সদস্য হন এবং ২০০১-০৬ মেয়াদে বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের টেলিযোগাযোগ প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব পান। তার স্ত্রী হাসিনা আহমেদও সংসদ সদস্য ছিলেন। নির্বাচনের বর্ষপূর্তি ঘিরে ২০১৫ সালের শুরু থেকে বিএনপি-জামায়াত জোটের টানা অবরোধ-হরতালের মধ্যে সালাহউদ্দিনের অন্তর্ধান নাটকীয়তার জন্ম দেয়। সে সময় তিনি ছিলেন দলের পাঁচ যুগ্ম মহাসচিবের একজন। রাজনৈতিক অস্থিরতার মধ্যে অজ্ঞাত স্থান থেকে এক মাসের বেশি সময় ধরে বিএনপির নামে বিবৃতি পাঠিয়ে কর্মসূচী দিচ্ছিলেন সালাহউদ্দিন। এরই মধ্যে ১০ মার্চ রাতে উত্তরার একটি বাসা থেকে গোয়েন্দা পুলিশ পরিচয়ে তাকে ধরে নিয়ে যাওয়া হয় বলে অভিযোগ করেন তার স্ত্রী। স্বামীর খোঁজ চেয়ে পরদিন গুলশান থানা ও উত্তরা থানায় জিডি করতে চাইলেও পুলিশ তা নেয়নি বলে সে সময় অভিযোগ করেন হাসিনা আহমেদ। সরকারের ‘নির্দেশে’ আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরাই সালাহউদ্দিনকে ‘নিয়ে গেছে’ বলে সে সময় বিএনপির পক্ষ থেকে অভিযোগ করা হয়। তবে সরকারের পক্ষ থেকে সে অভিযোগ তখন নাকচ করা হয়। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, সালাহউদ্দিনকে গ্রেফতার করা হয়নি। তবে তাকে আটক করতে খুঁজছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। সালাহ উদ্দিনের অন্তর্ধানে তার দলের ‘হাত রয়েছে’ বলেও সে সময় ইঙ্গিত দেন প্রধানমন্ত্রী। স্বামীর খোঁজ চেয়ে উচ্চ আদালতে যান সাবেক সাংসদ হাসিনা আহমেদ। পুলিশের পক্ষ থেকে আদালতকে বলা হয়, তারাও এই বিএনপি নেতার কোন খোঁজ জানে না। ঢাকা থেকে ‘উধাও’ হওয়ার দুই মাস পর ২০১৫ সালের ১১ মে ভারতের মেঘালয় রাজ্যের রাজধানী শিলংয়ে হদিস মেলে সালাহ উদ্দিনের। ভ্রমণের কাগজপত্র দেখাতে না পারায় পুলিশ তাকে গ্রেফতার করে থানায় নিয়ে যায়। কিছুদিন কারাগার ও হাসপাতালে কাটানোর পর স্বাস্থ্যের অবস্থা বিবেচনায় জামিন পান সালাহউদ্দিন। কিন্তু ভারত ছাড়ার অনুমতি না থাকায় স্ত্রী ও কয়েকজন স্বজনের সঙ্গে শিলং শহর থেকে আট কিলোমিটার দূরে একটি বাড়ি ভাড়া করে থাকতে শুরু করেন। ২০১৬ সালে অসুস্থতার কারণে দিল্লি গিয়ে চিকিৎসা করিয়ে আসেন এই বিএনপি নেতা। পরিবার তাকে চিকিৎসার জন্য সিঙ্গাপুরে নিতে চাইলেও তাতে শিলংয়ের আদালতের সায় মেলেনি। ফরেনার্স এ্যাক্টের এ মামলার তদন্ত শেষে মেঘালয় পুলিশ ২০১৫ সালের ৩ জুন সালাহউদ্দিনের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দেয়। সেখানে বলা হয়, ভারতে এই বিএনপি নেতার আকস্মিক উপস্থিতি ‘উদ্দেশ্যপ্রণোদিত’। বাংলাদেশে বেশ কয়েকটি অভিযোগের বিচার এড়াতে তিনি ভারতে এসেছেন। ওই অভিযোগপত্রের ভিত্তিতে ২০১৫ সালের ২২ জুলাই শিলংয়ের আদালত সালাহউদ্দিনের বিচার শুরু করে।
×