ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

শাহাব উদ্দিন মাহমুদ

প্রবৃদ্ধির ধারায় রেলপথ

প্রকাশিত: ০৪:৩৩, ২৭ অক্টোবর ২০১৮

 প্রবৃদ্ধির ধারায় রেলপথ

বাংলাদেশ ঐতিহাসিক এক যুগসন্ধিক্ষণে দাঁড়িয়ে আছে। দেশের এক-তৃতীয়াংশ কর্মক্ষম তরুণ জনগোষ্ঠী স্বপ্ন দেখে উন্নত বাংলাদেশের। তারা হয়ত কল্পনাও করতে পারে না, ৪৭ বছর আগের বাংলাদেশ কেমন ছিল! ওই সময় দুবেলা দুমুঠো খাবার যোগাতে হিমশিম খেতে হতো বেশিরভাগ মানুষের। শিক্ষা, স্বাস্থ্য, বাসস্থানসহ জীবনের মৌলিক অধিকারগুলো ছিল অপূর্ণ। বুকে আশা, মুখে হাসি নিয়ে বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে এগিয়ে যাচ্ছিল সদ্য স্বাধীন বাংলাদেশ। দেশী-বিদেশী ষড়যন্ত্রের বলি হলেন বঙ্গবন্ধু। নানা প্রতিকূলতাকে পদদলিত করে দীর্ঘ সংগ্রামের পথধরে অনেক কাঠখড় পুড়িয়ে ১৯৯৬-এর ১ম মেয়াদে ২০০৯ সালে ২য় মেয়াদে রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্ব পান বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা। ‘দিনবদলের সনদ’ নামের ঘোষণাপত্র প্রচার করে এক অভিনব উন্নত বাংলাদেশ গড়ার স্বপ্ন দেখিয়েছিলেন জাতিকে। ১০ বছর ধরে তিনি দেশের নেতৃত্ব দিচ্ছেন। এরই মধ্যে বাংলাদেশের অবকাঠামো, অর্থনীতি ও সমাজের বৈপ্লবিক রূপান্তর ঘটেছে। বর্তমান সরকারের মেয়াদকালে বাংলাদেশ রেলওয়েকে উন্নত দেশগুলোর আদলে একটি নিরাপদ, নির্ভরযোগ্য ও সুলভ সরকারী গণপরিবহন ব্যবস্থা হিসেবে গড়ে তুলতে মেগাপ্রকল্প বাস্তবায়ন করছে। ১৯৭১ সালের রক্তস্নাত স্বাধীনতার পর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নির্দেশে বাংলাদেশ রেলওয়ে তার নেটওয়ার্ক পুনর্বিন্যাস করে সকল জেলা সদরকে রেলওয়ে নেটওয়ার্কের আওতায় আনার উদ্যোগ গ্রহণ করেন। এরই ধারাবাহিকতায় প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনার বিশেষ উদ্যোগে বাংলাদেশ রেলওয়ে বেশকিছু উন্নয়ন পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করেছে। বাংলাদেশ রেলওয়েকে ডিজিটালাইজড করার অংশ হিসেবে সম্প্রতি ট্রেন চলাচল সংক্রান্ত তথ্যাদি মোবাইল ফোনের মাধ্যমে IVR (Interactive Voice Response) পদ্ধতিতে গ্রাহকগণকে সরবরাহ করা হচ্ছে। রেলওয়ের সার্বিক প্রশাসনিক ও আর্থিক ব্যবস্থা যথা Pay roll, Asset Management, Financial Accounting, Inventory Control ইত্যাদি স্বয়ংক্রিয় ও কম্পিউটারাইজড করার উদ্যোগ বাস্তবায়ন করা হয়েছে। অনলাইন ও মোবাইলে টিকেট সার্ভিস চালু করা হয়েছে। ট্রেন ট্র্যাকিং ও মনিটরিং সিস্টেম এবং হেল্পলাইনও উন্নত করা হয়েছে। বাংলাদেশ রেলওয়ের অভীষ্ট লক্ষ্য হচ্ছে দেশের সকল অংশে রেলওয়ে নেটওয়ার্ক বিস্তৃত করে নিরাপদ, দ্রুত ও সুলভ গণপরিবহন ব্যবস্থা গড়ে তোলা এবং এ উদ্দেশ্যেই শেখ হাসিনার সরকার কাজ করে যাচ্ছে। ১০ বছরে বাংলাদেশ রেলওয়ের সাফল্য ঈর্ষণীয়। সম্প্রতি অনুষ্ঠিত উন্নয়ন মেলায় রেলওয়ের স্টলে বর্তমান সরকারের অনুমোদিত ৩০ বছর মেয়াদী (২০১৬-৪৫) মাস্টার প্ল্যান ও ৩৫টি প্রকল্পসহ গত ১০ বছরে নতুন রেললাইন নির্মাণ, পুনর্নির্মাণসহ বিভিন্ন উন্নয়ন চিত্র তুলে ধরা হয়েছে। গত ১০ বছরে নতুন রেললাইন নির্মাণ হয়েছে ৩৩০ দশমিক ১৫ কিলোমিটার। আর মিটারগেজ রেললাইন ডুয়েল গেজে রূপান্তর করা হয়েছে ২৪৮ দশমিক ৫০ কিলোমিটার। অপরদিকে রেললাইন পুনর্নির্মাণ করা হয়েছে এক হাজার ১৩৫ দশমিক ২৩ কিলোমিটার। রেললাইনের পাশাপাশি গত ১০ বছরে উন্নয়ন হয়েছে স্টেশন বিল্ডিং, রেল সেতু নির্মাণ, সিগন্যালিং ব্যবস্থাসহ প্রায় সব ক্ষেত্রেই। বর্তমান সরকারের মেয়াদে নতুন স্টেশন বিল্ডিং নির্মাণ হয়েছে ৯১টি। স্টেশন বিল্ডিং পুনর্নির্মাণ হয়েছে ১৭৭টি। আর নতুন রেল সেতু নির্মিত হয়েছে ২৯৫টি এবং পুনর্নির্মাণ করা হয়েছে ৬৪৪টি, লোকোমোটিভ সংগ্রহ করা হয়েছে ৪৬টি। যাত্রীবাহী ক্যারেজ সংগ্রহ করা হয়েছে ২৭০টি এবং যাত্রীবাহী ক্যারেজ পুনর্বিন্যাস করা হয়েছে ৪৩০টি। মালবাহী ওয়াগন ৫১৬টি এবং ৩০টি ব্রেক ভ্যান সংগ্রহ করা হয়েছে। আর মালবাহী ওয়াগন পুনর্বিন্যাস করা হয়েছে ২৭৭টি। সিগন্যালিং ব্যবস্থা উন্নয়ন ও আধুনিকায়ন করার জন্য ৯০টি স্টেশন নির্মাণ করা হয়েছে। একই সঙ্গে ৯টি সিগন্যালিং ব্যবস্থা পুনর্বিন্যাস করা হয়েছে। পাশাপাশি ১৭৭টি নতুন ট্রেন চালু করা হয়েছে এবং চলমান ট্রেন সার্ভিস বাড়ানো হয়েছে ৩৬টি। এছাড়া হুইল লেদ মেশিন স্থাপন করা হয়েছে। পদ্মা সেতু রেল সংযোগ সড়ক ছাড়াও নতুন নতুন রুটে ট্রেন সার্ভিস চালু, ভাড়া বৃদ্ধি, আধুনিক প্রযুক্তির সমন্বয়ে তৈরি কোচ সংযোজন, নতুন আন্তঃনগর তিনটি ট্রেন সার্ভিস চালু, নতুন ইঞ্জিন আনা, গন্তব্যে পৌঁছার সময় আগের কমিয়ে আনা, স্টেশন থেকে সময়মতো ট্রেন ছাড়া ও গন্তব্যে পৌঁছানো, রেলপথের উন্নয়নে সরকারের গৃহীত বিভিন্ন উন্নয়নমূলক প্রকল্প বাস্তবায়ন, যাত্রীসেবার মান বাড়ানো, টিকেটের মূল্যবৃদ্ধিসহ নানা কারণে দীর্ঘ সময়ের বন্ধ্যাত্ব কাটিয়ে যাত্রীসেবা ও পণ্য পরিবহনে ক্রমবর্ধমান হারে আয় বাড়ছে রেলওয়ের। এক্ষেত্রে নানা অনিয়ম দুর্নীতির অপবাদ ঘুচিয়ে রেলকে গরিব ও শ্রমজীবী মানুষের জন্য সহজলভ্য বাহন হিসেবে গড়ে তোলার ক্ষেত্রে রেলপথ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত মন্ত্রী মুজিবুল হকের সততা ও দক্ষতায় রেল এখন উন্নয়নের ধারায় এগিয়ে চলেছে। বাস্তবতা হচ্ছে আজ আর মানুষ জিজ্ঞেস করে না, নয়টার ট্রেন কয়টায় আসে। কারণ, বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় এসেই রেলপথকে গুরুত্ব দিয়েছে। আর তাঁর নির্দেশ ক্রমেই রেল যোগাযোগ আজ এতোটা আধুনিক হয়ে, এতোটা উন্নতি করেছে। শেখ হাসিনার নির্দেশক্রমেই রেলপথ মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী মজিবুল হক দেশের একপ্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে ছুটছেন। এই ক্ষেত্রে জনগণের কল্যাণে যেখানে যা প্রয়োজন মন্ত্রী তাঁর আন্তরিকতা দেখাতে সচেষ্ট। সম্প্রতি রেল মন্ত্রী মুজিবুল হকের একটি উক্তি আমাকে আকৃষ্ট করেছে, তিনি বলেছেন, ‘আমি মানুষের কল্যাণে নিবেদিত একজন প্রকৃত মানুষ খুঁজে পেয়েছি বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনাকে। তিনি আমার রাজনৈতিক আদর্শ। তাঁর নির্দেশক্রমেই আমার পথচলা। আজ রেল যোগাযোগের যত উন্নত হয়েছে, তার সবই শেখ হাসিনার পরিকল্পনায় হয়েছে। আমি শেখ হাসিনার নিদের্শ পালন করেছি মাত্র।’ যতদূর জানি, সততা আর জনবান্ধন নীতির কারণে মুজিবুল হক তার নির্বাচনী এলাকায় বেশ জনপ্রিয়। তাঁর নির্বাচনী এলাকাকে তিনি উন্নয়নের রোল মডেল হিসেবে গড়ে তুলেছেন। তারই হাত ধরে আজ বাংলাদেশ রেলওয়েও এগিয়ে যাচ্ছে। ২০১৬-১৭ অর্থবছরে রেলের আয়ে বড় ধরনের উন্নতি হয়। সে বছর রেলওয়ে ১ হাজার ৩০৪ কোটি টাকা আয় করে, যা আগের অর্থবছরের চেয়ে প্রায় ৪০০ কোটি টাকা বেশি। সর্বশেষ অর্থবছরেও রেলওয়ে আয় বৃদ্ধির ধারা অব্যাহত রেখেছে। ২০১৭-১৮ অর্থবছরে রেলওয়ে আয় করেছে ১ হাজার ৪৮৬ কোটি ১৫ লাখ ৯২ হাজার টাকা, যা আগের বছরের চেয়ে ১৮২ কোটি ৩৯ লাখ ৫০ হাজার টাকা বেশি। অর্থাৎ টানা দুই বছরে প্রায় ৬০০ কোটি টাকা আয় করেছে রেলওয়ে। কয়েক বছর ধরে রেলওয়ের সেবার মান বাড়াতে কাজ করছে সরকার। সরকার রেলের মাধ্যমে দেশের সার্বিক যোগাযোগ ব্যবস্থা সাজাতে চায়। এজন্য বেশকিছু প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে। প্রকল্পগুলোর সুফল হিসেবেই রেলের আয় বাড়তে শুরু করেছে। আগামী কয়েক বছরের মধ্যে রেলের আয়-ব্যয়ের ব্যবধান কমে রেলওয়ে আগের মতোই লাভজনক প্রতিষ্ঠানে পরিণত হবে। ইতোমধ্যে ইন্দোনেশিয়া থেকে ১০০টি মিটার গেজ কোচ এবং ভারত থেকে ১২০টি ব্রড গেজ কোচ আমদানির মাধ্যমে দীর্ঘদিন পর রেলের বিভিন্ন আন্তঃনগর ট্রেনে নতুন করে কোচ সংযোজন শুরু হয়। কোচ সংকটে ধুঁকতে থাকা রেলওয়ে নতুন কোচের মাধ্যমে স্ট্যান্ডার্ড কম্পোজিশন অনুযায়ী কোচ দেয়া হয়। এরপর পূর্বাঞ্চল রেলওয়েতে মোহনগঞ্জ এক্সপ্রেস ও সোনার বাংলা এক্সপ্রেস ট্রেন চালুর পাশাপাশি পশ্চিমাঞ্চল রেলওয়েতে সিরাজগঞ্জ এক্সপ্রেস চালু করা হয়। জনপ্রিয় আন্তঃনগর ট্রেনের ঘাটতি কম্পোজিশনে নতুন কোচ সংযোজন করে পুরনো কোচগুলো অন্যান্য ট্রেনে দেয়া হয়। এছাড়া আন্তঃনগর ট্রেনের বেশকিছু কোচ ওয়ার্কশপে মেরামত ও টাইপ পরিবর্তন করে দ্বিতীয় শ্রেণীর ট্রেনে সংযোজন করা হয়। এতে করে মাত্র তিনটি নতুন ট্রেন বাড়লেও কোচের সংখ্যা বেড়ে যাওয়ায় যাত্রী খাতে আয়ে বড় ধরনের প্রভাব পড়েছে। স্বপ্নের মেট্রোরেল রাজধানীর যানজট নিরসন এবং স্বস্তিদায়ক যোগাযোগব্যবস্থা নিশ্চিত করতে ঢাকা মেট্রোরেল লাইন-৬ প্রকল্প বাস্তবায়নের কাজ দ্রুত এগিয়ে চলছে। বর্তমানে রাজধানীতে যানজট এতটাই ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে যে, ৩০ মিনিটের যাত্রাপথ তিন-চার ঘণ্টায়ও অতিক্রম করা যায় না। কখনও কখনও পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ আকার ধারণ করে। যানজটের কারণে রাজধানীবাসীর যে বিপুল কর্মঘণ্টা ও অর্থ অপচয় হয়। ঢাকা মহানগরীর জনগণের দীর্ঘদিনের দুর্ভোগের অবসান কল্পে সরকার মেট্রোরেল প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে। ঢাকার কৌশলগত পরিবহন পরিকল্পনায় (এসটিপি) ২০২৪ সালের মধ্যে তিনটি রুটে মেট্রো রেল চালুর সুপারিশ করা হয়েছে। এগুলো হলোÑ উত্তরা-মহাখালী-তেজগাঁও-মগবাজার-খিলগাঁও হয়ে কমলাপুর পর্যন্ত, গুলশান-মিরপুর-মোহাম্মদপুর-ধানম-ি-তেজগাঁও-রামপুরা-বাড্ডা-বারিধারা হয়ে গুলশান পর্যন্ত এবং উত্তরা তৃতীয় পর্ব থেকে পল্লবী হয়ে রোকেয়া সরণি-খামারবাড়ী-ফার্মগেট-হোটেল সোনারগাঁও-শাহবাগ-টিএসসি হয়ে বাংলাদেশ ব্যাংক পর্যন্ত। এর মধ্যে শেষের রুটটিতে মেট্রো রেল স্থাপনের কাজ দ্রুত গতিতে এগিয়ে চলেছে। ২০১৯ সাল নাগাদ এ রুটেই চলাচল করবে স্বপ্নের সেই ট্রেন। বর্তমানে অবিরাম চলছে পাইলিং, ডিপো ও স্টেশন নির্মাণকাজ। ইতোমধ্যে মেট্রোরেলের স্প্যান ও দৃশ্যমান। রাজধানীর উত্তরার দিয়াবাড়ী এবং আগারগাঁও এলাকার দুটি পিলারকে যুক্ত করে এই স্প্যানগুলো বসানো হয়েছে। আগামী বছর ডিসেম্বরের আগেই মেট্রোরেলের উত্তরা-আগারগাঁও অংশ ট্রেন চলাচলের জন্য প্রস্তুত হবে বলে আশা করছেন প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা। প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে উত্তরা থেকে স্বল্পসময়ে মতিঝিলে পৌঁছা যাবে। উত্তরা হয়ে মেট্রোরেল লাইন-৬ এর রুট হবে মতিঝিল পর্যন্ত। ২০ কিলোমিটার দীর্ঘ এ লাইনে স্টেশন থাকবে ১৬টি। প্রতি চার মিনিট পরপর এক হাজার ৮০০ যাত্রী নিয়ে চলবে মেট্রোরেল। প্রতি ঘণ্টায় যাত্রী পরিবহন করবে প্রায় ৬০ হাজার। ২০ কিলোমিটার পথ পাড়ি দিতে সময় লাগবে ৪০ মিনিটের মতো। মেট্রোরেল নির্মাণ প্রকল্পে আগারগাঁও থেকে কারওয়ান বাজার হয়ে মতিঝিল পর্যন্ত প্রায় আট কিলোমিটার ভায়াডাক্ট এবং সাতটি স্টেশন নির্মাণের কাজ শুরু হয়েছে। এছাড়াও সরকার নতুন করে এমআরটি লাইন-১ এর কাজ হাতে নিয়েছে। ২৭ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যরে এমআরটি লাইন-১ এয়ারপোর্ট-খিলক্ষেত-বারিধারা-বাড্ডা-রামপুরা-মৌচাক হয়ে কমলাপুরে মিলিত হবে। নির্মিত হলে এটিই হবে ব্যতিক্রমধর্মী মেট্রোরেল লাইন। এমআরটি-৬ মাটির ওপরে নির্মিত হলেও এমআরটি লাইন-১ মাটির ওপর এবং মাটির নিচ দিয়ে নির্মিত হবে। কখনও মাটির ওপরে আবার কখনও মাটির নিচ দিয়ে দ্রুতগতিতে গন্তব্যে ছুটে চলবে এ রেল। এই রুটে টিকেট কাটা থেকে শুরু করে সবকিছুই হবে আন্ডারগ্রাউন্ডে। তবে কুড়িল থেকে পূর্বাচল পর্যন্ত মাটির ওপর দিয়ে মেট্রোরেল নির্মিত হবে। এজন্য মেট্রোরেল-১ নির্মাণে টেকনিক্যাল এ্যাসিস্ট্যান্স প্রকল্প হাতে নিয়েছে সরকার। প্রকল্পের জন্য ইতোমধ্যেই বাংলাদেশ সরকার এবং জাইকার মধ্যে ঋণচুক্তি সম্পন্ন হয়েছে। প্রকল্পের পূর্ণ নক্সা এবং টেন্ডার এ্যাসিস্ট্যান্সের জন্য একটি পরামর্শক ফার্মকে নিয়োগ করা হবে। টিএ প্রকল্পের সফলতার উপর ভিত্তি করে ২০২১ সালে শুরু হবে মূল প্রকল্প। ইতোমধ্যেই প্রকল্পটি অনুমোদনের জন্য পরিকল্পনা কমিশনে পাঠিয়েছে ডিএমটিসিএল। মেট্রোরেল চালু হলে অন্যান্য গণপরিবহনে যাত্রীর চাপ কিছুটা কমবে। এসব প্রকল্প বাস্তবায়নের মাধ্যমে রাজধানীর গণপরিবহনে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনার পাশাপাশি মেট্রোরেল যুগে প্রবেশের সুযোগ পাবে বাংলাদেশ। চট্টগ্রাম-কক্সবাজার রেলপথ পর্যটন শহর কক্সবাজারকে রেলওয়ে নেটওয়ার্কের আওতায় আনা, পর্যটক ও স্থানীয় জনগণের জন্য নিরাপদ, সাশ্রয়ী ও পরিবেশবান্ধব যোগাযোগ ব্যবস্থা, সহজে ও কম খরচে মাছ, লবণ, কাগজের কাঁচামাল এবং বনজ ও কৃষি দ্রব্যাদি পরিবহন করতে বাস্তবে রূপ নিতে যাচ্ছে বহু আকাক্সিক্ষত স্বপ্নের চট্টগ্রাম-কক্সবাজার রেলপথ। ইতোমধ্যে প্রকল্পের জন্য ১ হাজার ৩৭৮ একর জমি অধিগ্রহণ করা হয়েছে। বসানো হয়েছে সীমানা পিলার। প্রকল্পের রামু থেকে মিয়ানমারের গুনদুম সীমান্ত পর্যন্ত রেলপথ নির্মাণ স্থগিত রাখা হয়েছে। আপাতত চট্টগ্রামের দোহাজারী থেকে কক্সবাজার পর্যন্ত রেলপথ ও অবকাঠামো নির্মিত হবে। ১৬ সেপ্টেম্বর ২০১৮ রেল ভবনে দোহাজারী থেকে কক্সবাজার পর্যন্ত প্রায় ১০০ কিলোমিটার রেলপথ নির্মাণ প্রকল্পের চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছে। নবেম্বর থেকে পুরোদমে কাজ শুরু হবে। রেলপথটি ট্রান্স এশিয়ান রেলওয়েতে যুক্ত হবে। বর্তমান সরকারের ১০টি মেগা প্রকল্পের মধ্যে এটি অন্যতম। ফলে পুরো প্রকল্প বাস্তবায়িত হলে রেলপথটি মালয়েশিয়া, সিঙ্গাপুর, লাওস, কম্বোডিয়া, থাইল্যান্ড ও মিয়ানমার রেলওয়ের সঙ্গে সংযুক্ত হবে। পরে যশোর, চুয়াডাঙ্গার দর্শনা হয়ে ভারত যাবে। আর তাতে বাংলাদেশের সঙ্গে তৈরি হবে ২৭টি দেশের রেল যোগাযোগ নেটওয়ার্ক। যা দেশের অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখবে। প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করছে চীন ও বাংলাদেশের ৪টি প্রতিষ্ঠান। চট্টগ্রাম থেকে কক্সবাজার পর্যন্ত রেলপথ নির্মাণে সর্বমোট ব্যয় হবে ৬ হাজার ১৯০ কোটি ৪ লাখ ৩৬ হাজার টাকা। পাহাড় ঘেঁষে এত দীর্ঘ রেলপথ দেশে এর আগে হয়নি। অত্যাধুনিক ডুয়েল গেজ প্রযুক্তিতে এ রেললাইন নির্মাণ করা হবে। প্রকল্পের আওতায় কক্সবাজারে তৈরি করা হবে নান্দনিক একটি রেলওয়ে টার্মিনাল। টার্মিনালটি ঘিরে গড়ে উঠবে পর্যটকদের জন্য আকর্ষণীয় হোটেল, বাণিজ্যিক ভবন, বিপণিবিতান, বহুতলবিশিষ্ট আবাসিক ভবনসহ নানা উন্নয়ন প্রকল্প। পৃথিবীর অন্যান্য দেশের তুলনায় বাংলাদেশে তুলনামূলকভাবে ২৮৭৭.১০ কিলোমিটারের ছোট একটি রেলওয়ে নেটওয়ার্ক, যার মধ্যে ৬৫৯.৩৩ কিলোমিটার ব্রড গেজ, ১৮০৮.০৫ কিলোমিটার মিটার গেজ ও ৪০৯.৭২ কিলোমিটার ডুয়েল গেজ রেললাইন বিদ্যমান। আকারে ছোট হলেও বাংলাদেশ রেলওয়ে জন্মলগ্ন থেকেই জাতীয় পরিবহন ব্যবস্থায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে আসছে। সোনার বাংলা গড়ার স্বপ্ন পূরণের সারথী শেখ হাসিনা চট্টগ্রাম-কক্সবাজার রেলপথ, মেট্রোরেল প্রকল্পসহ অনেকগুলো মেগাপ্রকল্প বাস্তবায়নের সৎ সাহস দেখিয়েছেন বলেই দেশে উন্নয়নের মহাযজ্ঞ চলছে। পৃথিবীর সবচেয়ে ঘন বসতিপূর্ণ বৃহৎ নগরী ঢাকাসহ দেশের বড় বড় শহরগুলোর পরিবহন ও অন্যান্য নাগরিক সুবিধার দিকে গুরুত্ব দিয়েছে। এবং ভবিষ্যত প্রজন্মের জন্য বাসযোগ্য বাংলাদেশ গড়তে নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছেন। লেখক : শিক্ষাবিদ ও গবেষক [email protected]
×