ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৬ এপ্রিল ২০২৪, ৩ বৈশাখ ১৪৩১

মুহম্মদ শফিকুর রহমান

শেখ হাসিনা একমাত্র নেতা ॥ তাঁর সমকক্ষ কেউ নেই

প্রকাশিত: ০৪:৩০, ২৭ অক্টোবর ২০১৮

শেখ হাসিনা একমাত্র নেতা ॥ তাঁর সমকক্ষ কেউ নেই

জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান তাঁর দুনিয়া কাঁপানো ৭ মার্চের ভাষণে বলেছিলেন, -‘৭ কোটি মানুষকে দাবায়া রাখতে পারবা না।’ সেই ৭ কোটি আজ ১৭ কোটি হয়েছে। এই ১৭ কোটি মানুষের একমাত্র নেতা প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা। সমসাময়িক বাংলাদেশে এমন কি গোটা দক্ষিণ এশিয়ায়ও তাঁর সমকক্ষ কেউ নেই। সব সিকি আধুলি। পাতি নেতা। বঙ্গবন্ধুর সেই দাবায়া রাখতে পারবা না, কথাটা শেখ হাসিনা এমন মনেপ্রাণে বিশ্বাস করেন যে, বাংলাদেশকে আর কেউ দাবায়া রাখতে পারছে না। বিশ্ব ক্ষমতার মোড়ল নামে খ্যাত আমেরিকার রক্তচক্ষুকে পর্যন্ত পরোয়া করেন না, করেননি। বিশ্বব্যাংক যখন পদ্মা সেতুর অর্থায়ন বন্ধ করে দিল তখন উচ্চারণ করলেন, ‘সো হোয়াট, আমরা নিজস্ব অর্থে পদ্মা সেতু নির্মাণ করব।’ আজ সেই পদ্মা সেতু দৃশ্যমান, শতকরা ৬০ ভাগ কাজ সম্পন্ন হয়েছে এবং ইনশাআল্লাহ শেখ হাসিনা আবারও জনগণের ভোটে ক্ষমতায় ফিরবেন এবং স্বাধীনতার পঞ্চাশ বছর পূর্তিতে জাতির পিতার জন্মশতবার্ষিকী উপলক্ষে জাতিকে উপহার দেবেন। এই পদ্মা সেতু আজ বাংলাদেশে ১৭ কোটি মানুষের মধ্যকার অপ্রতিরোধ্য আত্মশক্তির জাগরণ, যা আজ বাংলাদেশকে মর্যাদার উচ্চতায় নিয়ে গেছে। এই আত্মশক্তিই মহাসমুদ্রের মহাতলদেশে এবং মহাকাশের মহাকক্ষ পথ জয় করার সাহস যুগিয়েছে। আমাদের সাহসী সংগ্রামী মেধাবী দূরদর্শী নেতা আছেন, কোন দুর্গম গিরি কান্তার মরু দুস্তর পারাবার আজ ১৭ কোটি মানুষের সামনে খড়কুটোর মতো উড়ে যাচ্ছে। আমাদের এই বিশাল জনগোষ্ঠী ক’দিন আগেও দুর্ভিক্ষ মঙ্গায় আক্রান্ত ছিল। আজ তাদের পেটে ভাত আছে, পরনে কাপড় আছে, মাথার ওপর ছাদ আছে, ঘরে বাতি আছে, সর্বোপরি আমাদের পথ দেখাবার নাবিক আছে, স্বপ্ন দেখাবার মানুষ আছে, আমাদের ভয় পাবার কিছু নেই। বাংলাদেশ এগিয়ে চলেছে, এগিয়ে যাবেই। গ্রাম শহরের দূরত্ব কমে গেছে। আগামী ৫ বছরে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে এই দূরত্ব শূন্যের কোঠায় নেমে যাবে। বাংলাদেশ যখন এগিয়ে যাচ্ছে তখন একটি শ্রেণীর ভাল লাগছে না। তারা অতীতে (২০১৩, ২০১৪, ২০১৫) পথে প্রান্তরে পেট্রোলবোমা মেরে মানুষ হত্যা করল, দেশব্যাপী সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন করার জন্য রাস্তা কাটল, গাছ কেটে সাবাড় করল, ২০০৪ সালে বঙ্গবন্ধু এভিনিউতে শেখ হাসিনার সমাবেশে গ্রেনেড হামলা চালিয়ে ২৪ জনকে হত্যা (আইভি রহমানসহ), কয়েক শত আহত করল, জঙ্গীবাদের উত্থান ঘটাবার হীন প্রচেষ্টা চালাল, তারা আবার রাজপথে নেমেছে। তারা গণতন্ত্রের কথা বলে ভাল কথা, গণতন্ত্র সবাই চায় কিন্তু মানুষের পেটে ভাত না থাকলে সে গণতন্ত্র কোন সুফল বয়ে আনে না। শেখ হাসিনা একমাত্র রাষ্ট্রনেতা যিনি মানুষের পেটে ভাত তথা উন্নত জীবনের ওপর গণতন্ত্রকে প্রতিষ্ঠিত করেছেন। এরই নাম টেকসই গণতন্ত্র। যে কারণে সম্প্রতি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের এক জরিপে দেখানো হয়েছে শেখ হাসিনার জনপ্রিয়তা শতকরা ৬৬ ভাগ। দেশের ৬৬ ভাগ মানুষ শেখ হাসিনার নেতৃত্ব সমর্থন করেন। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন যত ঘনিয়ে আসছে রাজনৈতিক অঙ্গন ততই উৎসবমুখর হয়ে উঠছে। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগকে এবার সরাতেই হবে পণ করে মাঠে নেমেছে আওয়ামী লীগের এককালের নেতা সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী বাংলাদেশের সংবিধান রচনায় অন্যতম বিশেষজ্ঞ ড. কামাল হোসেনও মাঠে নেমেছেন। তবে একা নন, সঙ্গে নিয়েছেন সাবেক ডাকসু ভিপি ছাত্রলীগ সভাপতি মুক্তিযুদ্ধকালীন সশস্ত্র গেরিলা বাহিনী বিএলএফের অন্যতম নেতা শেখ হাসিনার সাবেক সরকারের মন্ত্রী জাসদ নেতা আ স ম আবদুর রব, ডাকসুর সাবেক ভিপি আওয়ামী লীগের সাবেক নেতা মাহমুদুর রহমান মান্নাকে। দলহীন নিধিরাম সর্দার ব্যারিস্টার মইনুল হোসেন এবং গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের ডাঃ জাফরুল্লাহও ‘আমরাও আছি’ বলে সোফার এক কোণে বসে পড়েছেন। কিন্তু বিধিবাম। এখন সুখে নেই। এই পাঁচ মহারথী যে জোটটি বাঁধলেন তা নিয়েও পথ চলতে সাহস পেলেন না। মির্জা ফখরুল-ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদের হাত ধরলেন। কিন্তু মির্জা ফখরুলের অপর হাত যে জামায়াত-শিবিরের হাতে ধরা তারা তা জানেন না। এরই মধ্যে আরেকটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ কথা উঠেছে- ড. কামাল হোসেন ’৭৫ এবং ২০০৪-এর খুনীদের সঙ্গে হাত মিলিয়েছেন। কাজেই যত জোটই করুন, যত হাত ধরুন অন্তিমে বিগ জিরো ছাড়া আর কিছু ঘরে ঢুকবে না। মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীররা গণতন্ত্র গণতন্ত্র করে মুখে ফেনা তুলছেন, এবার সঙ্গে যোগ দিয়েছেন ড. কামাল হোসেন গং। তাদের ধারণা, গণতন্ত্রের কথা বললে জনগণ একচেটিয়া তাদের পেছনে কাতার বাঁধবে। অথচ এই ভদ্রলোকরা একবারও ভাবেন না মানুষের পেটে ভাত না দিয়ে আর যাই দেয়া হোক কিছুই ভাল লাগবে না। লাগে না। বিএনপির কাছে তাও ভাল লাগে। শেখ হাসিনা মানুষের পেটে ভাত, পরনে কাপড়, মাথার ওপরে ছাদ দিয়েছেন বলে মানুষ তাঁকেই চায়। বিএনপি এখানে রাজনীতির মধ্যে পলিটিক্স খেলছে। একটা নির্বাচনী বৈতরণী পার হওয়া বা আন্দোলনে সফল হতে হলে একজন নেতা লাগে যে নেতা সাহসী সংগ্রামী শিক্ষিত এবং দূরদর্শী। অথচ এই দলের এক নম্বর নেতা খালেদা জিয়া দুর্নীতির দায়ে সাজাপ্রাপ্ত হয়ে কারাগারে, দুই নম্বর নেতা যিনি খালেদারই পুত্র হাওয়া ভবনের তারেক রহমান শুধু দুর্নীতির দায় নয়, সে সঙ্গে যোগ হয়েছে ২১ আগস্ট শেখ হাসিনার সমাবেশে গ্রেনেড হামলা এবং আইভি রহমানসহ অনেককে হত্যা এবং বহুজনকে আহত করার দায়ে যাবজ্জীবন সাজা মাথায় নিয়ে লন্ডনে পলাতক জীবন কাটাচ্ছেন অর্থাৎ দুই নম্বর নেতারও আশা নেই। এখন আছেন কেবল তিন নম্বর। এই তিন নম্বর নিয়ে মুখরোচক গল্প আছে। এই তিন নম্বর দিয়ে তো আর এক নম্বরে যাওয়া যায় না। কাজেই একটা এক নম্বর খুঁজতে হবে। পেয়েও গেলেন ড. কামাল হোসেনকে। তার আবার দুই নম্বরও নেই। তাঁর সম্পর্কে বেশ কিছু মুখরোচক কথা আছে। একবার তিনি মিরপুর এলাকায় ভোটে দাঁড়িয়েছিলেন। তার প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন এসএ খালেক। মজার লোক। সারাজীবন সরকারী দল করেছেন। তাকে প্রশ্ন করা হয়েছিল ঘন ঘন দল পাল্টান কেন? উত্তরে তিনি বলেছিলেন, ‘আমি দল পাল্টাই না। সরকার পাল্টালে আমি পাল্টে যাই। সেবার যখন ড. কামাল হোসেনের সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছিলেন তখন এক সমাবেশে বক্তৃতায় বললেন,- ‘এই কামাল হোসেন ভুয়া ডাক্তার, তার কোন ফার্মেসি নেই, তাকে ভোট দেবেন না।’ জনতার হাততালি। বিএনপির সঙ্গে হাত মিলিয়েও তার স্বভাবসুলভ মানসিকতার পরিবর্তন হয়নি। বক্তৃতায় যখন তিনি বলছিলেন, ‘কেবল উন্নয়ন উন্নয়ন বলা হচ্ছে। মুষ্টিমেয় মানুষের উন্নয়ন কোন উন্নয়ন নয়। ১৬ কোটি মানুষের উন্নয়নের জন্য আমাদের রাজপথে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে।’ বক্তৃতার শেষে দিকে খালেদা জিয়ার মুক্তির কথা বলার জন্য বিএনপি নেতাদের অনুরোধের জবাবে বলেন, ‘এটা তো সাত দফার শুরুতেই আছে (প্রথম আলো, ২৫ অক্টোবর ২০১৮)। অবশ্য প্রথম দিকে এও বলেছিলেন, বঙ্গবন্ধু, মুক্তিযুদ্ধ সম্পর্কে কোন বিরূপ মন্তব্য করা যাবে না। তাহলে ভদ্রলোক কখন কি করে বসবেন আগেভাগে কেউ জানবে না। কিংবা কখন উড়াল দেবেন তারও ঠিক-ঠিকানা নেই। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ড. কামাল হোসেনের নতুন রাজনৈতিক পদক্ষেপকে স্বাগত জানিয়েছেন। সম্প্রতি সৌদি আরব সফর শেষে দেশে ফিরে সংবাদ সম্মেলনে বলেছেন, প্রতিটি নাগরিকের অধিকার আছে দল করার, জোট করার। এতে গণতন্ত্র সমৃদ্ধ হবে। দেখার বিষয় হলো কে কার সঙ্গে দল করছে, কে কার সঙ্গে জোট বাঁধছে। কিন্তু এরা মানুষকে সম্মান দিয়ে কথা বলছেন না, নারীদের প্রতি সম্মানবোধ নেই। গত বৃহস্পতিবার ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের পাশে চানখাঁর পুল এলাকায় ‘শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন এ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউট’ (আধুনিক ১২তলা) উদ্বোধনকালে বলেছেন, যারা অতীতে পেট্রোলবোমা মেরে মানুষ হত্যা করেছে, বিএনপি-জামায়াতের পেট্রোলবোমা হামলা পথচারী থেকে শুরু বাসযাত্রী শত শত মানুষ নিহত ও হাজারো আহত হয়েছে, যানবাহন আগুনে পুড়েছে তাদের ব্যাপারে আমাদের সতর্ক থাকতে হবে। রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ মোকাবেলা করতে আমরা যেমন ভয় পাই না, তেমনি পেট্রোল বা পুড়িয়ে মানুষ হত্যা কঠোরভাবে প্রতিহত করা হবে। এখন প্রশ্ন হচ্ছে ড. কামাল হোসেন গং বিএনপি-জামায়াত জোটে যুক্ত হলেন না বিএনপি জামায়াত ড. কামালের জোটে যুক্ত হলেন সেটি দেখার বিষয়। কিছুটা অপেক্ষা করতে হবে। ঢাকা : ২৫ অক্টোবর ২০১৮ লেখক : সভাপতি, জাতীয় প্রেসক্লাব ও সিনেট সদস্য, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় [email protected]
×