ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

ঢাকা-টাঙ্গাইল সড়কে বাইপাস নির্মাণ

সরকারী সম্পত্তি নিজ নামে দেখিয়ে অধিগ্রহণের টাকা উত্তোলন

প্রকাশিত: ০৪:১৩, ২৭ অক্টোবর ২০১৮

 সরকারী সম্পত্তি নিজ নামে দেখিয়ে অধিগ্রহণের  টাকা উত্তোলন

নিজস্ব সংবাদদাতা, মির্জাপুর, ২৬ অক্টোবর ॥ ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কের বাইবাস নির্মাণকালে সরকারী সম্পত্তি নিজের নামে দেখিয়ে জেলা ভূমি অধিগ্রহণ শাখা হতে কৌশলে বিপুল অঙ্কের টাকা হাতিয়ে নেয়ার অভিযোগ উঠেছে এক সিএনজি পাম্প মালিকের বিরুদ্ধে। মির্জাপুর পৌরসভার বাওয়ার কুমারজানী এলাকায় অবস্থিত মা সিএনজি ফিলিং স্টেশনের মালিক মোঃ ইব্রাহিম মিয়া এই বিপুল অঙ্কের টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন বলে মির্জাপুর ভূমি অফিসে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে। এদিকে ভূমি অধিগ্রহণ শাখা থেকে হাতিয়ে নেয়া টাকার বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে টাঙ্গাইল ভূমি অধিগ্রহণ কর্মকর্তাকে লিখিতভাবে অবহিত করা হয়েছে বলে মির্জাপুর উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) মোঃ আজগর হোসেন জানিয়েছেন। জানা গেছে, ১৯৯৫-৯৬ সালে ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কের মির্জাপুর বাইপাস নির্মাণের সময় সরকার এলএ ৫৪/৯৫-৯৬ নম্বর কেসের মাধ্যমে উপজেলা সদরের বাওয়ার কুমারজানী মৌজার এসএ ৪২৪ নং দাগের ৩.১০ একর ভূমির মধ্যে ১.৫৪ একর ভূমি অধিগ্রহনণ করে। অধিগ্রহণকৃত ভূমির ক্ষতিপূরণ বাবদ মূল্যও নির্ধারণ করে সরকার। কিন্ত অধিগ্রহণকৃত দাগের ওই ভূমি অর্পিত সম্পতি হওয়ায় ক্ষতিপূরণের টাকা সরকারী তহবিলে আটকে থাকে। ২০১২ সালে সরকারী নির্বাহী আদেশে ‘খ’ শ্রেণীভুক্ত অর্পিত সম্পত্তি অবমুক্তির আইন পাস হলে ইব্রাহিম মিয়া ২০১৩-১৪ সালে ৯০৩ (ওঢ-১) নং মোকাদ্দমামূলে ওই দাগে ০.৯০ একর ভূমি নিজ নামে নামজারি ও জমাভাগ করে ২০০৮ নং হোল্ডিং এ ভূমি উন্নয়ন কর পরিশোধ করেন। ০.৯০ একর ভূমি নামজারি ও জমাভাগ করলেও একই হোল্ডিংমূলে ২০১৪ সালের ১৫ জানুয়ারি টাঙ্গাইল ভূমি অধিগ্রহণ শাখা থেকে প্রতারণার মাধ্যমে তিনি ১.৪৮ একর ভূমির ক্ষতিপূরণ বাবদ ৭ লাখ ৯৭ হাজার ৯৪০ টাকা উত্তোলন করেন। এ সময় তিনি অতিরিক্ত ০.৫৮ একর ভূমির ক্ষতিপূরণ বাবদ ৩ লাখ ১২ হাজার ৭০৬ টাকা সরকারী তহবিল থেকে হাতিয়ে নেন। এরপরও তথ্য গোপন রেখে ইব্রাহিম মিয়া একই হোল্ডিং এ ০.৯০ একর ভূমির বাবদ প্রতিবছর ভূমি উন্নয়ন কর পরিশোধ করে যাচ্ছেন। প্রতারণার মাধ্যমে অতিরিক্ত ০.৫৮ একর ভূমির ক্ষতিপূরণের টাকা হাতিয়ে নেয়া ও উত্তোলনকৃত ভূমির উন্নয়ন কর পরিশোধ করার বিষয়টি মির্জাপুর উপজেলা সহাকরী কমিশনার (ভূমি) মোঃ আজগর হোসেনের নজরে এলে তিনি ০.৯০ একর ভূমির নামজারি জমাভাগ ও হোল্ডিং বাতিল করেন। এছাড়া প্রতারণার মাধ্যমে অতিরিক্ত ০.৫৮ একর ভূমি বাবদ অধিগ্রহণের টাকা উত্তোলন করার বিষয়ে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য টাঙ্গাইল ভূমি অধিগ্রহণ কর্মকর্তা শাহরিয়ার রহমানকে লিখিতভাবে অবহিত করা হয়েছে বলে মোঃ আজগর হোসেন জানিয়েছেন। মোঃ ইব্রাহিম মিয়ার সঙ্গে মোবাইল ফোনে কথা হলে তিনি বলেন, আমার ওখানে ১৭৬ শতাংশ জমি রয়েছে। আমি ছাড়াও অসিতবরন সরকার ও চান মিয়া ক্ষতিপূরণের টাকা উঠিয়েছে। আমি আমার কাগজপত্র দেখাব বলে তিনি জানান। উপজেলা ভূমি অফিসের সার্ভেয়ার মোঃ সাখাওয়াত হোসেন বলেন, মোঃ ইব্রাহিম মিয়ার নামে ০.৯০ একর ভূমির নামজারি ও জমাভাগ থাকলেও কিভাবে ১.৪৮ একর ভূমির ক্ষতিপূরণের টাকা উত্তোলন করলেন তা আমাদের বোধগম্য নয়। মির্জাপুর উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) মোঃ আজগর হোসেন বলেন, ৪২৪ নং দাগে ০.৯০ একর ভূমি ইব্রাহিম মিয়ার নামে নামজারি ও জমাভাগ ছিল। ওই নামজারি ও জমাভাগ মূলে তিনি ক্ষতিপূরণের টাকা উত্তোলন করায় তার হোল্ডিং বাতিল করা হয়েছে। এছাড়া নামজারি ও জমাভাগ ছাড়া ০.৫৮ একর অর্পিত সম্পত্তির ক্ষতিপূরণের সরকারী টাকা প্রতারণার মাধ্যমে উত্তোলনের বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য টাঙ্গাইল ভূমি অধিগ্রহণ কর্মকর্তাকে লিখিতভাবে জানানো হয়েছে।
×