ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

সৌদি আরবের বিরুদ্ধে ইইউর অস্ত্র নিষেধাজ্ঞা

প্রকাশিত: ০৩:৫৮, ২৭ অক্টোবর ২০১৮

 সৌদি আরবের বিরুদ্ধে  ইইউর অস্ত্র নিষেধাজ্ঞা

সাংবাদিক জামাল খাশোগি হত্যাকান্ডের প্রতিক্রিয়ায় সৌদি আরবের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞার প্রস্তাব পাস করেছে ইউরোপীয় ইউনিয়ন-ইইউ। বৃহস্পতিবার ইউরোপীয় পার্লামেন্টে অস্ত্র নিষেধাজ্ঞাসহ হত্যাকান্ডের সন্দেহভাজনদের বিরুদ্ধে আলাদা আলাদা নিষেধাজ্ঞার প্রস্তাব পাস হয়। উল্লেখ্য, ইউরোপীয় পার্লামেন্টের পাস হওয়া প্রস্তাবের আইনগত ভিত্তি নেই। ইইউ’র সদস্য রাষ্ট্রের পাস হওয়া প্রস্তাব মানার ক্ষেত্রে কোন আইনগত বাধ্যবাধকতা থাকে না। খবর ওয়েবসাইটের। তুর্কী বাগদত্তার সঙ্গে বিয়ের প্রয়োজনীয় কাগজপত্র আনতে গত ২ অক্টোবর ইস্তানবুলের সৌদি কনস্যুলেটে প্রবেশ করার পর নিখোঁজ হন ওয়াশিংটন পোস্ট পত্রিকার কলাম লেখক ও স্বেচ্ছা নির্বাসিত সৌদি সাংবাদিক জামাল খাশোগি। শুরুতে অস্বীকার করলেও ১৯ অক্টোবর সৌদি জানায়, তুরস্কের ইস্তানবুল কনস্যুলেটে গোয়েন্দা কর্মকর্তাদের সঙ্গে ধস্তাধস্তির এক পর্যায়ে খাশোগির মৃত্যু হয়। এর দুদিন পরই খাশোগিকে হত্যা করা হয়েছে বলেও স্বীকার করেন সৌদি পররাষ্ট্রমন্ত্রী। তবে তাদের দাবি ছিল জিজ্ঞাসাবাদের সময় উত্তেজিত খাশোগির মুখ চেপে ধরে চিৎকার থামাতে গেলে শ্বাসরোধে তার মৃত্যু হয়েছে। তবে বৃহস্পতিবার এই হত্যাকান্ড পূর্বপরিকল্পিত বলে স্বীকারোক্তি দিয়েছে তারা। খাশোগির হত্যাকান্ড নিয়ে ইউরোপীয় পার্লামেন্টে প্রস্তাব পাসের পর দেয়া বিবৃতিতে বলা হয়েছ, সৌদি আরব থেকে দেয়া ব্যাখ্যা এখন পর্যন্ত বিশ্বাসযোগ্যতা অর্জনে ব্যর্থ হয়েছে। খাশোগির হত্যাকান্ড মূলত সৌদি আরবে মানবাধিকারকর্মী, নারী অধিকারকর্মী, আইনজীবী, সাংবাদিক, লেখক ও ব্লগারদের ওপর ধারাবাহিক নিপীড়নের অংশ। এ ঘটনায় সৌদিবিরোধী পদক্ষেপের অংশ হিসেবে অস্ত্র নিষেধাজ্ঞা আরোপের সঙ্গে সঙ্গে হত্যাকান্ডের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সুনির্দিষ্ট সন্দেহভাজনদের ওপর ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা ও সম্পদ বাজেয়াফতকরণের মতো পৃথক পৃথক নিষেধাজ্ঞা জারি করতে ইউরোপীয় রাষ্ট্রগুলোর প্রতি আহ্বান জানানো হয়। ডাচ এমপি মারিয়েতজ শ্যাকে বলেন, সৌদি কর্মকর্তাদের ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা তারা প্যারিসে কেনাকাটা করতে পারবেন না, ইউরোপের ভাল বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করতে পাঠাতে পারবে না। কয়েকদিন আগেই প্রথম ইউরোপীয় দেশ হিসেবে সৌদি আরবে অস্ত্র বিক্রি বন্ধ করার ঘোষণা দিয়েছিল জার্মানি। রবিবার চ্যান্সেলর এ্যাঙ্গেলা মের্কেল বলেছিলেন, খাশোগির হত্যাকান্ডের ঘটনার পর বর্তমান পরিস্থিতিতে অস্ত্র বিক্রি সম্ভব নয়। যুক্তরাষ্ট্রের পর ব্রিটেন ও ফ্রান্সের কাছ থেকেই সবচেয়ে বেশি অস্ত্র কেনে সৌদি আরব। দুই দেশই খাশোগি হত্যাকান্ড নিয়ে সৌদি আরবের সমালোচনা করেছে। তবে এখনও জার্মানির মতো অস্ত্র বিক্রি বন্ধের ঘোষণা দেয়নি তারা। যুক্তরাজ্যের আন্তর্জাতিক বাণিজ্য বিষয়ক দফতরের মতে, সৌদি আরবের কাছ গত বছর ১৪০ কোটি ডলারের অস্ত্র বিক্রি করেছে তারা। বাস্তাবে এর পরিমাণ আর বেশি হতে পারে। আর ফ্রান্স বিক্রি করছে ১৪৭০ কোটি ডলারের অস্ত্র। ইইউর এই প্রস্তাব পাসের পর ফরাসী প্রেসিডেন্ট মানুয়েল ম্যাক্রোঁ ও ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী তেরেসা দুজনই সৌদি বাদশাহর সঙ্গে টেলিফোনে কথা বলেছেন। ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ভবন থেকে পাঠানো বিবৃতিতে বলা হয়, ম্যাক্রোঁ সৌদি বাদশাহ খাশোগি হত্যার স্পষ্ট ব্যাখ্যা দেয়ার জন্য চাপ দিয়েছেন। ফ্রান্স বাকস্বাধীনতা ও সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতার বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে দেখে। এর আগে ব্রিটিশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী জেরেমি হান্টও বলেছিলেন, আমরা যেমন ঘটনা শুনছি তা যদি সত্য হয়ে থাকে তবে সেটা আমাদের মূল্যবোধ বিরোধী। আমরা যথাযথ ব্যবস্থা নেব। তবে ফ্রান্স কিংবা যুক্তরাজ্য অস্ত্র বিক্রি বন্ধের ব্যাপারে স্পষ্ট কিছু বলেনি।
×