ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

চীন-জাপান সম্পর্কে নতুন মাত্রা

প্রকাশিত: ০৩:৫৬, ২৭ অক্টোবর ২০১৮

চীন-জাপান সম্পর্কে নতুন মাত্রা

চীন ও জাপান শুক্রবার ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক গড়ে তোলার অঙ্গীকার করেছে। এ লক্ষ্যে উভয় দেশ নিজস্ব মুদ্রা ব্যবস্থায় পরিশোধযোগ্য ৩০ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের এক চুক্তি স্বাক্ষর করেছে। যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য যুদ্ধের মধ্যে এই ঘোষণা এলো। খবর ইয়াহু নিউজের। জাপানী প্রধানমন্ত্রী শিনজো আবে ও চীনা প্রধানমন্ত্রী লি কেকিয়াংও একমত হয়েছেন যে, কোরিয়ান উপদ্বীপে নিরস্ত্রীকরণ অর্জনে দুই দেশ একসঙ্গে কাজ করবে। এক সংবাদ সম্মেলনে আবে বলেন, প্রতিযোগিতা থেকে আমরা সহঅবস্থানে উপনীত হয়েছি। জাপান ও চীনের দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক একটি নতুন পর্যায়ে পৌঁছেছে। প্রধানমন্ত্রী লির হাতে হাত রেখে আমি আমাদের সম্পর্ককে আরও সামনের দিকে এগিয়ে নিতে চাই। টোকিও পিয়ংইয়ংয়ের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক স্বাভাবিক করার জন্য প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। শুধুমাত্র যদি পূর্বশর্ত পূরণ করা হয় তাহলেই তা সম্ভব। এর মধ্যে নিরস্ত্রীকরণ প্রক্রিয়া ও অপহরণ করা জাপানের নাগরিকদের মুক্তি দেয়ার বিষয়টি অন্তর্ভুক্ত। এই অঞ্চলে শান্তি ও স্থিতিশীলতা অর্জনে আমাদের দুটি দেশকে বিরাট দায়িত্ব বহন করতে হবে। আবের সঙ্গে যৌথ সাংবাদিক সম্মেলনে লি কেকিয়াং বলেন, চীন-জাপান সম্পর্কের উন্নয়ন করা উচিত। যাতে আগের প্রচেষ্টাগুলো ব্যর্থ না হয়। স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরিয়ে নিতে জাপানের সঙ্গে চীনের কাজ করার ইচ্ছা রয়েছে। দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কে স্থিতিশীল, স্থায়ী ও উন্নয়ন সম্ভবপর করতে এটি প্রয়োজনীয়। পারস্পরিক উদ্বেগের বিষয়েও আবের সঙ্গে আলোচনা হয়েছে। এজন্য তারা এক ঐক্যমতে পৌঁছেছেন। দীর্ঘমেয়াদী স্বচ্ছ ও স্থিতিশীল চীন-জাপান সম্পর্কগুলো উভয় দেশের, আঞ্চলিক ও বৈশ্বিক স্বার্থে এই ঐক্যমত প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। উভয়পক্ষই সম্মত হয়েছে যে, রিজিওনাল কম্প্রিহেনসিভ ইকোনমিক পার্টনারশিপ (আরসিইপি) ও চায়না-জাপান-কোরিয়া ট্রেড জোন তৈরি করে চীন ও জাপান মুক্ত বাণিজ্যিক ব্যবস্থা বজায় রাখতে হবে। আরসিইপি হচ্ছে চীনের সঙ্গে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া ও জাপানসহ প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের বিভিন্ন দেশের সঙ্গে প্রস্তাবিত একটি মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি। সাংবাদিক সম্মেলনের আগে চীন ও জাপান বাৎসরিক পরিকল্পনা প্রণয়নে আলোচনা, সংলাপ ও সহযোগিতা বিনিময়ে এক চুক্তি স্বাক্ষর করেছে। এতে তারা এক্সচেঞ্জ-ট্রেড ফান্ড (ইটিএফ) তালিকাসহ শেয়ার বাজারে সহযোগিতা বাড়াতে সম্মত হন এবং শুল্ক ক্লিয়ারেন্স সহজতর করতেও একমত হন। উভয়পক্ষই তিন লাখ ৪০ হাজার কোটি ইয়েন (৩০ হাজার দুই শ’ ৯০ কোটি মার্কিন ডলার) বা ৩০.২৯ বিলিয়ন মার্কিন ডলার সমপরিমাণ বিশাল বাণিজ্যের চুক্তি করেছে। যার প্রভাব ২০২১ সাল পর্যন্ত থাকবে। তারা ইয়েন ক্লিয়ারিং ব্যাংক প্রতিষ্ঠার পক্ষেও একটি চুক্তি করেছে। আবের তিনদিনে সফরকালে চুক্তি স্বাক্ষরের বিষয়ে এক ঐক্যমতে পৌঁছায় বেজিং। দুই প্রতিবেশী তাদের সহযোগিতার নতুন ক্ষেত্র তৈরির ও আস্থা অর্জনের নতুন পথ উন্নয়নের চেষ্টা করে। ১৯৭২ সালে দুই দেশের কূটনৈতিক সম্পর্ক পুনরায় শুরু হওয়ার পর থেকে ভঙ্গুর হয়ে গিয়েছিল। পরে আবে চীনা প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের সঙ্গে বৈঠক করেন। ২০১১ সাল থেকে সিনো-জাপানিজ সম্মেলন হয়ে আসছে। জাপানী কোম্পানিগুলো আশা প্রকাশ করছে চীনের সঙ্গে স্বাভাবিক সম্পর্ক স্থাপন করার মাধ্যমে তারা মার্কিন ও ইউরোপীয় প্রতিদ্বন্দ্বীদের সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে পারবে। এর মধ্যে জাপানী বড় গাড়ি তৈরির কোম্পানি টয়োটাও রয়েছে। বেজিং আশা করছে টোকিও তার উচ্চাভিলাষী বেল্ট এ্যান্ড রোড কর্মসূচীতে সমর্থন করবে। প্রেসিডেন্ট শির এই উদ্যোগের ফলে অন্য দেশগুলোর সঙ্গে বাণিজ্য ও পরিবহন সংযোগের মাধ্যমে আরও ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক বাড়িয়ে তুলবে। সাম্প্রতিক মাসগুলোতে চীন ও যুক্তরাষ্ট্র একে অপরের ওপর শুল্ক আরোপের মধ্য দিয়ে বাণিজ্য যুদ্ধ শুরু করেছে। এজন্য জাপান বাণিজ্যিকভাবে ঝুঁকিতে রয়েছে। কেননা তারা চীনে উৎপাদিত সরঞ্জাম ও ইলেক্ট্রনিক পার্টস রফতানি করে থাকে। যা যুক্তরাষ্ট্র ও অন্যন্যা দেশে রফতানি করা পণ্য তৈরিতে ব্যবহৃত হয়।
×