ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

শিল্পের উৎসব

প্রকাশিত: ০৩:৫৫, ২৭ অক্টোবর ২০১৮

 শিল্পের উৎসব

শিল্পের শাখা-প্রশাখা অনেক। সম্ভবত এসবের ভেতরে চিত্রকলা তথা শিল্পকর্মের অনুরাগীর সংখ্যা তুলনামূলকভাবে কম। সে জন্য শিল্পকলা প্রদর্শনীতে উপচে পড়া দর্শকের দেখা মেলে না। যেমন মেলে সাহিত্যকে ঘিরে উৎসবে বা বইমেলায়, কিংবা চলচ্চিত্রের কোন আসরে অথবা সঙ্গীত উৎসবে। তবে শিল্পকর্ম নিয়ে দেশে উৎসব আয়োজনে কোন কার্পণ্য লক্ষ্য করা যায় না। কিছুকাল আগে সমাপ্ত হলো এশীয় দ্বিবার্ষিক চারুকলা প্রদর্শনী। সদ্যসমাপ্ত হলো আরেকটি আন্তর্জাতিক শিল্পকর্ম উৎসব ‘টিউন অব আর্ট’। ১৬টি দেশের ২০৪ জন শিল্পীর অংশগ্রহণে অনুষ্ঠিত হলো তৃতীয়বারের মতো এ শিল্প উৎসব। বলাবাহুল্য, প্রতিটি উৎসবে আমাদের সংস্কৃতি প্রাণ পায়। জীবন আরও অর্থপূর্ণ হয়ে ওঠে। সঙ্গীত, কবিতা, ছবি অঙ্কন, ভাস্কর্য, সাহিত্য, দার্শনিক চিন্তা প্রভৃতি এক একটা জাতির সংস্কৃতির প্রকাশ-মাধ্যম এবং দর্পণ। এসব সৃজনধর্মী কাজেই অর্জিত হয় মন ও হৃদয়ের সুখানুভূতি-আনন্দ ও উৎফুল্লতা। মানুষ উৎসবে তখনই যুক্ত হয়, যখন তার কাছে জীবন স্বস্তিকর এবং উপভোগের। উৎসবের সময় ও পরিবেশ সৃষ্টিও তাই অনেক গুরুত্বপূর্ণ। জীবন থেকে উৎসব উপড়ে নিলে সপ্রাণ দেহ আর শবের মধ্যে বিশেষ ব্যবধান অবশিষ্ট থাকে না। জীবনকে বর্ণিল করার জন্য যেমন রচিত হয়েছে নানাবিধ উৎসব, তেমনি জীবনের বাঁকে বাঁকে সঙ্কট উজিয়ে সংগ্রাম করেই অর্জন করে নিতে হয়েছে বিবিধ উৎসব। উৎসবের উপলক্ষ সৃজন করতে পারাটাও তাই এক অর্থে অগ্রসরতা, জীবনমুখিতা এবং উজ্জ্বল আনন্দের প্রসারিত প্রাঙ্গণ উদ্ভাবন। স্মরণযোগ্য, এক যোগে ৬৪ জেলায় চলচ্চিত্র উৎসব হয়েছিল গত বছর অক্টোবরে। স্বাভাবিক সুস্থ চিত্তবিনোদনের অভাবে একজন মানুষ মনোবৈকল্যের শিকার হতে পারে বলে সতর্ক করে দেয়া হয় আধুনিক মনোবিজ্ঞানে। আমাদের দেশের গড়পড়তা মানুষ যাত্রাপালা, নাটক এবং সিনেমাকেই পছন্দের বিনোদন মাধ্যম হিসেবে গ্রহণ করে নিয়েছে আবহমানকাল থেকে। বিশেষ করে নগরবাসী শ্রমজীবী এবং মধ্যবিত্ত চাকরিজীবী শ্রেণীর কাছে সিনেমা হল বা প্রেক্ষাগৃহে গিয়ে চলচ্চিত্র দর্শন দারুণ এক চিত্তবিনোদন। এর মধ্য দিয়ে ঘরের বাইরে যাওয়া, সামাজিক মেলামেশা এবং একই সঙ্গে আনন্দ লাভের চমৎকার সুযোগ ঘটে। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে সমাজ বদলেছে, মানুষের বিনোদন লাভের ধরনে পরিবর্তন এসেছে। সবচেয়ে বড় কথা প্রযুক্তির ক্ষেত্রে এসেছে ব্যাপক পরিবর্তন। সাহিত্য-সংস্কৃতি সমাজবদ্ধ মানুষের সৃষ্টিশীল নান্দনিক চেতনার আরেক নাম। মানুষ যেমন সাহিত্য-সংস্কৃতির উপাদান সৃজন করে, তেমনি সেটি তার জীবনযাপনের অংশ, জীবন উপভোগের সূত্র করে তোলে। সাহিত্য রচিত হয় ব্যক্তির হাতে, কিন্তু সেটি হয়ে ওঠে সমষ্টির সম্পদ। সেই সম্পদ সমষ্টিকে আপ্লুত করে, তাকে শক্তি জোগায়, অনির্বচনীয় আনন্দ প্রদান করে। সাহিত্যের আলোয় যে আলোকিত হয় তার পক্ষে অন্ধকার রচনা করা, কিংবা অন্ধকারের যাত্রী হওয়া অসম্ভব। সঙ্গীত কিংবা নাটক, চিত্রকলা কিংবা চলচ্চিত্র- শিল্পের প্রতিটি শাখা সম্পর্কে আমরা একই কথা উচ্চারণ করতে পারি। একটি সমাজের এসব সাংস্কৃতিক শক্তি সমাজকে সুশীলতা ও সৌরভ দান করে। অসুস্থ মনের পরম শুশ্র‍ুষা হতে পারে সংস্কৃতির সৌন্দর্য ও সুঘ্রাণ। বিচ্ছিন্ন, বিহ্বল, বিপথগামী তারুণ্যকে জীবনের ইতিবাচক দিকটির প্রতি প্রবলভাবে আকৃষ্ট করার জন্য শিল্প-সংস্কৃতির অন্তর্নিহিত শক্তিকে কাজে লাগানোর তাই বিকল্প নেই। সদ্যসমাপ্ত ‘টিউন অব আর্ট’ বা ‘শিল্পের সুর’ শীর্ষক শিল্পকর্ম প্রদর্শনীর সূত্র ধরে আমরা বলতে চাই, এ ধরনের শিল্প উৎসব দেশে যত বেশি অনুষ্ঠিত হবে ততই মানুষের সুকুমারবৃত্তি প্রেরণা পাবে, আর দূরে সরে যাবে কূপম-ূকতার অন্ধকার। সুস্থ সমাজ নির্মাণে এর ভূমিকা তাই অসামান্য।
×