ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

বিকল্পধারায় যোগ দিলেন শমসের মবিন-মিলন ও আজাদ

প্রকাশিত: ০১:০৩, ২৬ অক্টোবর ২০১৮

বিকল্পধারায় যোগ দিলেন শমসের মবিন-মিলন ও আজাদ

স্টাফ রিপোর্টার ॥ এবার রাজনীতিতে নতুন চমক নিয়ে হাজির হলো বিকল্পধারা। শুক্রবার দলটিতে আনুষ্ঠানিকভাবে যোগ দিয়েছেন বিএনপি ও জাতীয় পার্টির প্রভাবশালী বেশ কয়েকজন নেতা। দলীয় সূত্রগুলো বলছে, চলতি মাসের মধ্যে রাজনীতিতে আরো নতুন চমক দেখাতে পারে দলটি। শুক্রবার বিকালে বিকল্পধারার প্রেসিডেন্ট ডা. বদরুদ্দোজা চৌধুরীর হাতে ফুল দিয়ে দলে যোগ দেন বিএনপির সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান শমসের মবিন চৌধুরী, ছাত্রদলের প্রথম নির্বাচিত সভাপতি গোলাম সারোয়ার মিলন, সাবেক মন্ত্রী (এরশাদ সরকার) নাজিম উদ্দিন আল আজাদ। আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামানে রেখে বিকল্পধারার নেতৃত্বে গঠন করা হয়েছিল যুক্তফ্রন্ট। এরসঙ্গে ছিলেন নাগরিক ঐক্যের মাহামুদুর রহমান মান্না, আ স ম আবদুর রবের নেতৃত্বাধীন জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জেএসডি) সহ বিএনপি পন্থী বেশ কয়েকজন বুদ্ধিজীবী। প্রথমে কথা ছিল ড’ কামাল হোসেনের গণফোরাম যোগ দেবে যুক্তফ্রন্টে। কিন্তু তিনি এতে যোগ না দিয়ে সবাইকে নিয়ে গঠন করলেন যুক্তফ্রন্ট। এরপর কামাল হোসেন যুক্তফ্রন্টকে নিয়ে বিএনপির সঙ্গে ঐক্য গড়ার আলোচনা শুরু করেন। বিএনপির সঙ্গে জামায়াত ইস্যুতে ঐক্য নিয়ে দেখা দেয় মতবিরোধ। সবচেয়ে বেশি এই ইস্যুতে কথা বলেন কামাল হোসেন। বারবার তিনি বলেছিলেন জামায়াত না ছাড়লে বিএনপির সঙ্গে কোন ঐক্য হবে না। শেষ পর্যন্ত বিকল্পধারাকে বাদ দিয়ে অন্যদের নিয়ে বিএনপির সঙ্গে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট গঠন করেন কামাল হোসেন। জামায়াত ইস্যুতে ঐক্যে সামিল হয়নি বিকল্পধারা। এরপর কামাল হোসেন ও বি চৌধুরীর দু’জনার দুটি পথ। গত ১৩ অক্টোবর সন্ধ্যায় জাতীয় প্রেসক্লাবে বিকল্পধারাকে বাদ দিয়ে কামাল হোসেন বিএনপিকে নিয়ে ঐক্যফ্রন্টের ঘোষণা দেন। ঐক্যফ্রন্ট ঘোষণার ১৩দিনের মাথায় রাজনীতিতে নতুন করে চমক দেখালেন বি চৌধুরী। অর্থাত বিকল্পধারার প্রতীক কুলার পালে এখন হাওয়া লেগেছে। নতুন হাওয়ায় গা ভাসাতে আসার কথা বিভিন্ন দলের রাজনৈতিক নেতা ও বেশ কয়েকটি দলও। এর আগে বিকল্প ধারার অঙ্গ সংগঠন বিকল্প যুবধারার বিশেষ কাউন্সিলে যোগ দেন তারা। পরে বিকল্প ধারার যুগ্ম মহাসচিব মাহী বি চৌধুরী তাদের আমন্ত্রণ জানিয়ে মঞ্চে নিয়ে আসেন। এ সময় আরও উপস্থিত ছিলেন- সদ্য ২০ দলীয় জোট ত্যাগ করা বাংলাদেশ নাপের চেয়ারম্যান জেবেল রহমান গাণি ও মহাসচিব গোলাম মোস্তফা ভুঁইয়া, এনডিপি চেয়ারম্যান খন্দকার গোলাম মোর্ত্তুজা এবং শুক্রবার ২০ দল ছেড়ে আসা লেবার পার্টির একাংশ মহাসচিব হামদুল্লাহ মেহেদী। অনুষ্ঠানে হামদুল্লাহ মেহেদীর বিএনপি জোট ছেড়ে আসার বিষয়টি উল্লেখ করে মাহী বি চৌধুরী কাউন্সিলে বলেন, ‘স্বাধীনতাবিরোধীদের ২০ দলীয় জোট ছেড়ে এসেছেন লেবার পার্টির মহাসচিব হামদুল্লাহ মেহেদী। মাহী বলেন, আসুন বাংলাদেশকে দুঃশাসনের হাত থেকে রক্ষা করি। বি. চৌধুরীর নেতৃত্বে নানন্দিক ধারার রাজনীতি শুরু করি। শমসের মবিন চৌধুরী বিএনপির কূটনৈতিক উইংয়ের গুরুত্বপূর্ণ সদস্য ছিলেন। তার নেতৃত্বেই কূটনৈতিক ফোরাম কাজ করেছে। তিনি দলের ভাইস চেয়ারম্যান ছিলেন। ২০১৫ সালে ২৮ অক্টোবর বিএনপির সঙ্গে বিরোধীদের জের ধরে তিনি অবসরে যান। যদিও অবসরে যাওয়ার কারণ সম্পর্কে গণমাধ্যমকে তিনি সেই সময় বলেছিলেন, শুধু ভাইস চেয়ারম্যানের পদ নয়, রাজনীতি থেকেই অবসরের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তিনি। বেশ কিছু দিন ধরেই তিনি নানা ধরনের স্বাস্থ্যগত সমস্যায় ভুগছেন। সে কারণেই তার এ সিদ্ধান্ত। বিকল্প ধারার সূত্রগুলো বলছে, সংস্কারপন্থী ছিলেন বিএনপি এমন আরো কয়েকজন যোগ দিতে পারেন। বি. চৌধুরীর নেতৃত্বাধীন যুক্তফ্রন্টে যোগ দেয়ার সম্ভাবনা আছে সম্প্রতি বিএনপি-জোট ছেড়ে আসা বাংলাদেশ ন্যাপ ও এনডিপির। শুক্রবার সকাল থেকে বিকল্পধারা বাংলাদেশ-এর তিন অঙ্গসংগঠনের জাতীয় সম্মেলন শুরু হয় গুলশান-বাড্ডা লিংক রোডের একটি মিলনায়তনে। বিএনপির অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন বি চৌধুরী। ২০০১ সালের এক অক্টোবর চার দলীয় জোট ক্ষমতায় আসার পর বি চৌধুরীকে রাষ্ট্রপতি করা বিএনপির পক্ষ থেকে। কিন্তু বিধি বাম। অল্প সময়ের মধ্যে বিএনপির সঙ্গে বি চৌধুরীর বিরোধী তৈরী হয়। সংসদ বি চৌধুরীকে নিয়ে উত্তপ্ত আলোচনা। হুমকি দেয়া হয় তাকে ইমপিচ করার। পরিস্থিতি বিবেচনায় বি চৌধুরী পদত্যাগ করতে বাধ্য হয়েছিলেন। এরপর বিএনপির নেতাকর্মীদের দ্বারা বি চৌধুরী নানাভাবে হয়রানির শিকার হয়েছিলেন। এক পর্যায়ে বিএনপি ছেড়ে তিনি বিকল্পধারা গঠন করেন। বিএনপি প্রতিষ্ঠাকালে বি চৌধুরী যেমন মহাসচিব ছিলেন, তেমনি ছাত্রদলের প্রথম নির্বাচিত সভাপতি ছিলেন গোলাম সারোয়ার মিলন। পরে জাতীয় পার্টিতে যোগ দিয়ে তিনি মানিকগঞ্জের সিঙ্গাইর থেকে সংসদ সদস্য হয়েছিলেন, এরশাদ সরকারে প্রতিমন্ত্রী হন তিনি। বিজিএমইএ’র সাবেক পরিচালক, এফবিসিসিআই’র সদস্য মিলন অনেক দিন নিষ্ক্রিয় থাকার পর জরুরি অবস্থার সময় ফেরদৌস আহমেদ কোরেশীর গড়া পিডিপিতে সক্রিয় হয়েছিলেন। পরে আবার রাজনীতির অঙ্গনে নিরব ছিলেন তিনি। যশোরের নাজিম উদ্দিন আল আজাদ চারদলীয় জোট সরকারের ধর্ম প্রতিমন্ত্রী ছিলেন। বিএনপি ছাড়ার পর এতদিন নাজমুল হুদার সঙ্গে ছিলেন তিনি। সাবেক সচিব শমসের মবিন চৌধুরী চাকরি থেকে অবসর নিয়ে বিএনপিতে সক্রিয় হলেও বেশ কয়েকটি মামলার আসামি হওয়ার পর কয়েক বছর আগে দল থেকে অব্যাহতি নেন। তখন রাজনীতিই ছাড়ার কথা জানিয়েছিলেন তিনি। সিদ্ধান্ত বদলের বিষয়ে শমসের মবিন শুক্রবার বিকল্প ধারার অনুষ্ঠানে বলেন, তিন বছর আগে রাজনীতি থেকে অবসরের সিদ্ধান্ত নেয়ার সময় আমি বলেছিলাম, আবার রাজনীতিতে ফিরব, যদি কেউ মুক্তিযুদ্ধের ও বঙ্গবন্ধুর আদর্শ নিয়ে এগিয়ে আসে তবে আমি যোগ দেব। আমি বি চৌধুরীর সাহসী ও দেশপ্রেমিক নেতৃত্বে যোগ দিয়েছি সুখী, সমৃদ্ধ, শান্তিপূর্ণ ও স্বাভাবিক বাংলাদেশ গঠনে নিজেদের অবস্থান থেকে ভূমিকা রাখার জন্য। অনুষ্ঠানে বিকল্প ধারার যুগ্ম মহাসচিব মাহি বি চৌধুরী বলেন, “দুঃশাসনের হাত থেকে দেশকে রক্ষা করার জন্য যে ঐক্য গঠিত হয়েছিল, তার বিরুদ্ধে স্বাধীনতাবিরোধীরা ষড়যন্ত্র করেছে। যারা জিয়াউর রহমানের জাতীয়তাবাদী রাজনীতিতে বিশ্বাস করেন, তাদের আহ্বান জানাই বিকল্প ধারার পতাকাতলে। ২০ দল ছেড়ে আসা ন্যাপের চেয়ারম্যান জেবেল রহমান গানি, এনডিপির চেয়ারম্যান খন্দকার গোলাম মূর্তজা, ও লেবার পার্টির মহাসচিব হামদুল্লাহ আল মেহেদীও বিকল্প ধারার সঙ্গে একাত্মতা জানিয়েছেন।
×