ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

নতুন প্রজন্মের নোভা ॥ প্রকৌশলী হিসেবে নিজেকে তৈরি করছে

প্রকাশিত: ০৭:৩৭, ২৬ অক্টোবর ২০১৮

নতুন প্রজন্মের নোভা ॥ প্রকৌশলী হিসেবে নিজেকে তৈরি করছে

তাসনিম তারেক নোভা চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রকৌশল অনুষদের ত্রিপলির শিক্ষার্থী। শান্ত, স্নিগ্ধ, নমনীয় নোভা প্রকৌশলী হতে নিজের শিক্ষাজীবনকে এগিয়ে নিচ্ছে এমন ভাবনাটা সত্যিই বিস্ময়ের। আধুনিক প্রজন্মের নারীরা যে জোর কদমে এগিয়ে যাচ্ছে তা যেমন সময়ের চাহিদা মেটানো একইভাবে নিজের ইচ্ছে-অনিচ্ছে, আশা, আকাক্সক্ষারও এক অদম্য বোধ। পারিবারিক সীমাবদ্ধতাকে পেছনে ফেলে তথ্যপ্রযুক্তির বিকাশমান ধারায় নিজের অংশীদারিত্বকে সুদৃঢ় ব্যক্তিক অনুভবে লালন করা নোভা আজ কোন দিক থেকেই পিছিয়ে নেই। এই সুদর্শন, তন্বি মেয়েটির সঙ্গে আলাপচারিতায় -নাজনীন বেগম সমৃদ্ধির অগ্রগামিতায় মেয়েদের এগিয়ে চলা সামগ্রিক উন্নয়নের এক আবশ্যিক পর্যায়। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সমতাভিক্তি সমাজ ব্যবস্থা বিনির্মাণে যে আধুনিক প্রকল্প এবং সময়োপযোগী অবদান সময়ের প্রজন্মে চাহিদা পূরণ করে যাচ্ছে তার সঙ্গে তাল মেলাচ্ছে উদীয়মান তরুণ-তরুণীরাও। শিক্ষা ক্ষেত্রে মেয়েদের দুরন্ত অভিগামিতায় রক্ষণশীল সমাজকে পেছনে ফেলে সামনের দিকে অবারিত হওয়া বাংলাদেশের এক অনন্য প্রাপ্তি। শিক্ষা কার্যক্রমের প্রতিটি পর্যায়ে মেয়েদের জোরালো সম্পৃক্ততা আজ এই খাতটিকে বিশ্বসভায়ও নিয়ে গেছে। জরিপ করা বিভিন্ন বিশ্ব প্রতিবেদনে নারীদের এই অবাধ যোগসাজশ বাংলাদেশে সমাজ ব্যবস্থায় সমতাভিক্তিক শিক্ষা কার্যক্রমের যে অপার সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে যুগের প্রয়োজনে তা নিরন্তর গতি পাবে সে কথা বলার অপেক্ষা রাখে না। নোভার মতো নতুন প্রজন্মের জোর কদমে এগিয়ে যাওয়ার শুভযাত্রায় এ এক অনির্বাণ দীপ্তি। তাসমিন তারেক নোভা চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ত্রিপলির এক মেধাবী ছাত্রী। বাবা তারেক সোলায়মান এবং মা হাসিনা খানম। পিতামহ ছালেহ আহমদ ছিলেন একজন অভিজ্ঞ রাজনীতিবিদই নন মুক্তিযুদ্ধের এক অন্যতম সংগঠকও। সরাসরি মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেয়া এই বীর সেনানি ছালেহ আহমদের চার সন্তানের মধ্যে তারেক সোলায়মান সেলিম প্রথম। বাবার আদর্শকে লালন করা সেলিমও মুক্তিযুদ্ধের সপক্ষের একজন কৃতী রাজনীতিজ্ঞ। সুতরাং এমন শুদ্ধ, নির্মল পারিবারিক আবহে বড় হওয়া নোভা অতি শৈশব কাল থেকে দেখেছে সৎ, আদর্শনিষ্ঠ, মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় নিবেদিত পিতার বলিষ্ঠ আত্মমর্যাদা। ১৯৯৪ সাল থেকে পর পর চার বার সিটি কর্পোরেশনের কউন্সিলর নির্বাচিত হওয়া পিতার অতি সাধারণ যাপিতজীবন আজও নোভার কাছে এক অকৃত্রিম সম্পদ। মা হাসিনা খানম স্নাতক উত্তীর্ণ এক অসাধারণ গৃহিণী। স্বামীর আদর্শের প্রতি দায়বদ্ধতায় সুস্থ-স্বাভাবিক পথে সন্তানদের তৈরি করা ছাড়া আর কোন দিকে ফিরেও তাকাননি। বড় ছেলেও বুয়েটের শিক্ষার্থী। আর মেয়ে নোভা তো বড়ই হয়েছে একজন যথার্থ মানুষ হিসেবে যা সমতাভিত্তিক সমাজ ব্যবস্থায় সবচেয়ে বেশি জরুরী। নোভার প্রাইমারী শিক্ষাজীবন কেটেছে চট্টগ্রামের বিখ্যাত প্রতিষ্ঠান ‘ফুলকি’ থেকেই। এই ফুলকি শিশুদের জীবন চলায় যে নিরন্তর দীপ্তি ছড়ায় তার দ্যুতি এখন অবধি নোভার পথযাত্রায় আলো বিকিরণ করে যাচ্ছে। ২০১৫ সালে বাংলাদেশ মহিলা সমিতির শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বাওয়া স্কুল থেকে মাধ্যমিক এবং চট্টগ্রাম সরকারী সিটি কলেজের ছাত্রী হিসেবে ২০১৭ সালে উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়। এরপর মোকাবেলা করতে হয় ভর্তি নয় ভর্তি যুদ্ধের। সে দুর্নিবার সংগ্রামী পথযাত্রায় পার হওয়াই শুধু নয় একেবারে মেধা তালিকায় নিজের অবস্থান মজবুত করাও এক অসামান্য কৃতিত্বের ব্যাপার। বাংলাদেশের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষায় অংশ নিয়ে শেষ অবধি ভর্তি হয় চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রকৌশলী অনুষদের সবচেয়ে দামী বিষয় ত্রিপলিতে। মেধাবী নোভার চিকিৎসক হওয়ার চাইতে প্রকৌশলী হতে বেশি আগ্রহ ছিল। প্রসঙ্গক্রমে এসেই যায় মেয়েদের পছন্দের শিক্ষা কার্যক্রম এখনও ডাক্তার হওয়ার দিকেই বেশি অঅগ্রহ। নোভারও এ বিষয়ে দ্বিমত ছিল না। কারণ ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে এখনও মেয়ের সংখ্যা হাতেগোনার মতো। তারপরে বিষয় যেমন জরুরী একইভাবে সময়ের চাহিদায় মেয়ে হিসেবে পিছিয়ে পড়ে থাকা সবচেয়ে বেশি বিবেচনায় আনা সঙ্গত। সেই সচেতন মননে সুনির্দিষ্ট লক্ষ্য বাছাই করতে নোভাকে বেগ পেতে হয়নি। শিক্ষা কার্যক্রম নিয়ে নিজেকে সীমাবদ্ধ আলয়ে আটকেও রাখেনি। গান, কবিতায় নিমগ্ন হয়ে একটি সুস্থ সাংস্কৃতিক জগতও গড়ে তুলেছে। ভেতরের বোধ আর ভালবাসা থেকেই তার এই অনবদ্য আঙিনাতে সমর্পণ হওয়া। এ ছাড়াও তথ্যপ্রযুক্তির নিরন্তর গতিধারায় শুধু নিজের অংশীদারিত্ব প্রমাণ করলে চলবে না সঙ্গে সুবিধাবিঞ্চত গ্রামীণ মেয়েদের এর আওতাভুক্ত করতে না পারলে মেয়েরা যথার্থভাবে এগিয়ে যেতে ব্যর্থ হবে। সেই চেতনাও অন্তর্নিহিত তাড়নায় ঋদ্ধ হয়। সমাজ-সংস্কারের প্রতি দায়বদ্ধতায় শুধুমাত্র নিজস্ব জগত তৈরি করা ছাড়াও বাংলাদেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলের পিছিয়ে পড়া মেয়েদেরও নতুন সম্ভাবনার দ্বার উন্মোচনে সহযোগিতা দিয়ে যেতে হবে। সেই লক্ষ্যে অনলাইনভিত্তিক কার্যক্রমে গ্রামীণ নারীদের তথ্যপ্রযুক্তির বলয়ে নিয়ে আসা একেবারে যুগের দাবি। সময়ের প্রজন্মের এমন সম্ভাবনাময় তরুণী যদি নিজের সঙ্গে অন্যদেরও তৈরি হতে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেয় তা হলে বাংলাদেশের ক্রমবর্ধমান উন্নয়নে দুর্বার গতি মঞ্চাচল এখন শুধুমাত্র সময়ের ব্যাপার।
×