ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

কুমিল্লায় স্কুলছাত্রীকে দিনভর ধর্ষণ ॥ বিএনপি নেতার বিরুদ্ধে মামলা

প্রকাশিত: ০৬:০৮, ২৬ অক্টোবর ২০১৮

কুমিল্লায় স্কুলছাত্রীকে  দিনভর ধর্ষণ ॥ বিএনপি নেতার বিরুদ্ধে মামলা

নিজস্ব সংবাদদাতা, কুমিল্লা, ২৫ অক্টোবর ॥ কুমিল্লায় কিশোরী এক স্কুলছাত্রীকে দিনভর ধর্ষণ ঘটনায় তোলপাড় চলছে। লাকসাম উপজেলা সদরের ভাইয়া গ্রুপের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান অটো রাইস মিলে এ ঘটনা ঘটে। চাঞ্চল্যকর এ ঘটনায় পুলিশ বাদী হয়ে বুধবার রাতে লাকসাম উপজেলা বিএনপির সহসভাপতি, সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান, পৌরমেয়র শিল্পপতি মজির আহাম্মদ ও তার সহযোগী সাথী বেগমসহ অজ্ঞাতনামাদের বিরুদ্ধে থানায় নারী ও শিশু দমন আইনে মামলা দায়ের করে। ঘটনার ভিকটিম ও তার পরিবারসহ প্রভাবশালী এ রাজনীতিবিদ-শিল্পপতি এলাকা ছেড়েছে বলে পুলিশ জানিয়েছে। মামলার বিবরণ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, জেলার সদর দক্ষিণ উপজেলার কনকশ্রী গ্রামের হতদরিদ্র পরিবারের ৫ম শ্রেণী পড়ুয়া এক স্কুলছাত্রীকে (১৪) জামা-কাপড় কিনে দেয়ার প্রলোভন দেখিয়ে বিএনপি নেতা মজিরের সহযোগী দালাল লাকসাম উপজেলার ডুরিয়া বিষ্ণুপর গ্রামের আবুল কাশেমের মেয়ে সাথী (১৯) গত ১৭ অক্টোবর সকালে ভাইয়া গ্রুপের মালিক মজির আহাম্মেদের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান লাকসামের নসরতপুরের অটো রাইস মিলের অভ্যন্তরে নিয়ে আসে। মামলায় উল্লেখ করা হয় ওই দিনের ১টা থেকে বিকেল ৩টা পর্যন্ত ভাইয়া গ্রুপের পরিচালক লাকসাম উপজেলার নসরতপুর গ্রামের মৃত জুলফু আলীর ছেলে মজির আহাম্মদ ওই অটো রাইস মিলে কিশোরী স্কুলছাত্রীকে ধর্ষণ করে। ধর্ষণে ওই স্কুলছাত্রী গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়লে তাকে প্রথমে লাকসাম উপজেলা সদরে মজির আহাম্মদের মালিকানাধীন লাকসাম জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসা করানো হয়। পরে ওই কিশোরীর অবস্থা আরও অবনতি ঘটলে পরদিন ১৮ অক্টোবর বিকেলে তাকে কুমিল্লা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানে তার ভর্তির রেজিঃ নং-২০১১৭/১৮। কুমিল্লা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে রেজিস্ট্রারে ওই স্কুলছাত্রীকে ধর্ষণ করা হয়েছে বলে উল্লেখ করা হয়। এরই মধ্যে ঘটনাটি ব্যাপকভাবে লোকমুখে ছড়িয়ে পড়লে মজির আহাম্মদ ১০ লাখ টাকায় বিষয়টি ধামাচাপা দেয়ার চেষ্টা চালায়। এক পর্যায়ে ভিকটিমকে কুমিল্লা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল থেকে গোপনে সরিয়ে ফেলা হয়। এদিকে চাঞ্চল্যকর এ খবর পেয়ে কুমিল্লার পুলিশ সুপার সৈয়দ নুরুল ইসলামের তত্ত্বাবধানে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার দক্ষিণ আবদুল্লাহ আল মামুন, লাকসাম থানার ওসি মনোজ কুমার দে, ওসি তদন্ত নজরুল ইসলামের নেতৃত্বে পুলিশের একাধিক টিম বিষয়টি নিয়ে তদন্তে মাঠে নামে। পুলিশ একাধিকবার ভিকটিমের বাড়িসহ বিভিন্ন স্থানে অনুসন্ধান চালায়। এ সময় ভিকটিমের দাদি তার নাতিনকে ধর্ষণের বিষয়টি পুলিশের কাছে স্বীকার করে। পুলিশী তৎপরতায় মজির আহাম্মদ ভিকটিম ও তার বাবাসহ পরিবারের সদস্যদের অজ্ঞাত স্থানে সরিয়ে রাখে এবং সে নিজে ও তার সহযোগী আসামি সাথী গা ঢাকা দেয়। এ ঘটনায় মজির আহাম্মদ ও তার সহযোগী সাথীসহ অজ্ঞাতনামাদের বিরুদ্ধে লাকসাম থানার এসআই কামাল হোসেন বাদী হয়ে বুধবার রাতে মামলা দায়ের করে। বৃহস্পতিবার মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা লাকসাম থানার ওসি (তদন্ত) নজরুল ইসলাম জানান, ঘটনার শিকার ওই কিশোরী ও তার পরিবারের খোঁজ-খবর নেয়াসহ মামলার আসামিদের ধরতে চেষ্টা অব্যাহত আছে।
×