ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

৩০ অক্টোবর পর্যন্ত ট্রাফিক সপ্তাহ

পুলিশের মন্দ আচরণের অভিযোগ কমে এসেছে ॥ আছাদুজ্জামান

প্রকাশিত: ০৬:০৬, ২৬ অক্টোবর ২০১৮

পুলিশের মন্দ আচরণের অভিযোগ কমে এসেছে ॥ আছাদুজ্জামান

স্টাফ রিপোর্টার ॥ ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি) কমিশনার মোঃ আছাদুজ্জামান মিয়া বলেছেন, সাধারণ মানুষের সঙ্গে পুলিশ সদস্যদের খারাপ আচরণের অভিযোগ কমে এসেছে। তিনি বলেছেন, পুলিশ সদস্যদের আচরণ কেমন হবে, সে বিষয়ে আমরা সচেতন। আগে যেভাবে ব্যাপক হারে খারাপ আচরণের অভিযোগ আসত। আমি দায়িত্ব নিয়ে বলছি, এখন শতকরা ৫ ভাগও খারাপ আচরণের অভিযোগ আসে না। বৃহস্পতিবার ডিএমপির মিডিয়া সেন্টারে ‘ট্রাফিক শৃঙ্খলা সপ্তাহ’ নিয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে ডিএমপি কমিশনার এসব কথা বলেন। ডিএমপি কমিশনার বলেন, সড়কের শৃঙ্খলা ফেরাতে বুধবার (২৪ অক্টোবর) থেকে শুরু হওয়া এই ট্রাফিক সপ্তাহ চলবে আগামী ৩০ অক্টোবর পর্যন্ত। নিরাপদ সড়কের দাবিতে ছাত্র আন্দোলনের পর শুরু হওয়া ট্রাফিক সপ্তাহ মাসব্যাপী ট্রাফিক কর্মসূচী পালনে বেশ কিছু উন্নতি সাধিত হলেও তা কাক্সিক্ষত পর্যায়ের নয় বলেও উল্লেখ করেন তিনি। ডিএমপি কমিশনার বলেন, রাজধানীবাসীকে আইন মানতে বাধ্য করতে নানাবিধ উদ্যোগ বাস্তবায়নে পুলিশের সঙ্গে এই ট্রাফিক সপ্তাহে রোভার্স স্কাউট, গার্লস গাইড ও বিএনসিসির সদস্যসহ বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের ২১৬ শিক্ষার্থী অংশ নিচ্ছেন। তিনি বলেন, যত্রতত্র গাড়ি পার্কিং, স্টপেজ ছাড়া যত্রতত্র বাস থামানো, ফুটপাথে মোটরসাইকেল উঠানো, লাইসেন্স ও নিবন্ধন ব্যতীত গাড়ি চালানো, বেপরোয়া গতিতে গাড়ি চালানো, মোটরবাইক চালক ও আরোহী উভয়ের হেলমেট পরা, উল্টোপথে গাড়ি চালানো, গাড়ি চালানোর সময় মোবাইলে কথা বলাসহ এ ধরনের অপরাধ করে পার পাবে না চালক ও মালিকরা। তিনি বলেন, সড়কের শৃঙ্খলা ফেরাতে মোটরসাইকেল চালকদের ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ। মোটরসাইকেল চালক ও আরোহী উভয়কেই হেলমেট পরে সুশৃঙ্খলভাবে বাইক চালানোর অনুরোধ করছি। দুইজনের বেশি যাত্রী উঠতে দেয়া হবে না। থাকতে হবে হেলমেট। আর ‘নো হেলমেট নো ফুয়েল’ নির্দেশনা সফল হয়েছে। আছাদুজ্জামান মিয়া বলেন, ঢাকায় ১৩০টি বাস স্টপেজের স্থান নির্ধারণ করা হয়েছে। এসব স্টপেজ ছাড়া কোথাও বাস থামানো যাবে না। এগুলোতে বোর্ড লাগানো হচ্ছে। এসব স্থানের বাইরে কেউ বাস থামাতে পারবে না। পাশাপাশি বাস স্টপেজ ছাড়া কোথাও বাসের দরজা খুলবে না। বন্ধ থাকবে। যাত্রীদের উদ্দেশে ডিএমপি কশিনার বলেন, যাত্রীরাও বাস স্টপেজ ছাড়া অন্য কোথাও নামতে পারবেন না। বাসযাত্রীরা সড়কে যত্রযত্র দাঁড়িয়ে বাসের জন্য অপেক্ষা করতে পারবেন না। যত্রতত্র ও ফোনে কথা বলা অবস্থায় রাস্তা পারাপার হওয়া যাবে না। জেব্রা ক্রসিং কিংবা ফুটওভার ব্রিজ ব্যবহার করতে হবে। বাসস্টপেজে দাঁড়াতে হবে। প্রতিটি বাসের সামনে চালকের ছবি ও ফোন নম্বর থাকতে হবে। বাসচালক সিটবেল্ট বেঁধে গাড়ি চালাবেন। চুক্তিভিত্তিক নয়। বাসের ড্রাইভার হবে বেতনভুক্ত। ডিএমপি কমিশনার বলেন, গত ৫ থেকে ১৫ আগস্ট পর্যন্ত পালিত হয় ট্রাফিক সপ্তাহ। ট্রাফিক সপ্তাহের ১০ দিনে সারাদেশে আইন অমান্যকারীদের বিরুদ্ধে মামলা হয় ১ লাখ ৮০ হাজার ২৪৯ টি। জরিমানা আদায় করা হয় ৭ কোটি ৮ লাখ ১৪ হাজার ৩৭৫ টাকা। এ সময় ৭৪ হাজার ২২৪ চালকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হয়। আটক করা হয়েছে ৫ হাজার ৪১৮টি যানবাহন। মামলাগুলোর অধিকাংশ হয়েছে রাজধানীতে। জরিমানার তিন-চতুর্থাংশ আদায় হয়েছে রাজধানীতে। মামলা ও জরিমানার পাশাপাশি যানবাহনের চালক ও পথচারীদের উদ্দেশে প্রচার করা হয় সচেতনতামূলক বার্তা। চেকপোস্টে পুলিশের আচরণ প্রসঙ্গে আছাদুজ্জামান মিয়া বলেন, চেকপোস্টে পুলিশের আচরণের অনেক পরিবর্তন হয়েছে। আগে আমরা রোজ অভিযোগ পেতাম। এখন মাস গেলেও পাই না। বেশ কিছুদিন আগে ট্রাফিক সিগন্যালে প্রাইভেটকারে থাকা এক নারীর ভিডিও ভাইরাল হয়। আপনারা দেখেছেন কীভাবে পুলিশ সদস্যরা বিনীতভাবে তাকে ট্রাফিক আইন মানতে অনুরোধ করছেন। এ সময় সাংবাদিকরা ২২ অক্টোবর অপর একটি ঘটনায় ঢাকার রাস্তায় গভীর রাতে পুলিশের চৌকিতে তল্লাশির নামে এক নারী হেনস্তার বিষয়ে জানতে চান। ওই নারীর সঙ্গে দুর্ব্যবহারের সেই ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকেও ছড়িয়ে দেয়া হয়। ভিডিওটি যিনি ছড়িয়ে দিয়েছেন, তিনি নিজেকে বাংলাদেশ পুলিশের একজন কনিষ্ঠ কর্মকর্তা বলেও পরিচয় দেন। এই ঘটনার বিষয়ে ডিএমপি কমিশনার বলেন, কেউ অপেশাদার আচরণ করলে ব্যবস্থা নেয়া হয়। পুলিশের মতিঝিল ডিভিশনকে তদন্ত করে প্রতিবেদন জমা দিতে ৪৮ ঘণ্টা সময় দেয়া হয়েছে।। তারা কাজ শুরু করেছে। তিনি বলেন, পুলিশ সদস্যরা জানেন তাদের কেমন আচরণ করতে হবে। তারা সচেতন। তাদের প্রশিক্ষণই দেয়া হয়। শাস্তির ব্যবস্থাও নেয়া হয়। যে পুলিশ সদস্য ভিডিও ভাইরাল করেছেন, তিনি ভেবেছিলেন তার সুনাম হবে। এতে যে সুনাম হবে না। তা বোঝার ক্ষমতাও তার নেই।
×