ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

নির্বাচনের তফসিল ও তারিখ নিয়ে বিভ্রান্তি না ছড়ানোর আহ্বান

প্রকাশিত: ০৫:৪৭, ২৬ অক্টোবর ২০১৮

নির্বাচনের তফসিল ও তারিখ নিয়ে বিভ্রান্তি না ছড়ানোর আহ্বান

স্টাফ রিপোর্টার ॥ একাদশ জতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল ও তারিখ নিয়ে গণমাধ্যমকে বিভ্রান্তি না ছড়ানোর অনুরোধ জানিয়েছেন ইসি সচিব হেলালুদ্দিন আহমদ। তিনি বলেন, নির্বাচনের তারিখ নিয়ে এখনও ইসিতে আলোচনা হয়নি। নির্বাচনের তফসিল ও তারিখ নিয়ে কে বা কারা বিভ্রান্তি ছাড়াচ্ছে, তাদের অনুরোধ করব তারা যেন এ বিষয়ে বিভ্রান্তি না ছড়ায়। বৃহস্পতিবার আগারগাঁও নির্বাচন ভবনের নিজ কার্যালয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি এই অনুরোধ জানান। বলেন, তফসিল কবে হবে, নির্বাচন কবে হবে তা নিয়ে আলোচনায় হয়নি। নবেম্বরের ১ তারিখ বিকেলে রাষ্ট্রপতির সঙ্গে সাক্ষাত করবে কমিশন। সাক্ষাতের পরেই নির্বাচনের তফসিল ও তারিখ এবং অন্যান্য বিষয় নিয়ে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেবে কমিশন। নির্বাচনের সম্ভাব্য তারিখ এখনই বলা যাচ্ছে না। কারণ, একজন নির্বাচন কমিশনার দেশের বাইরে রয়েছেন। উনি এলে পরে সবাই মিলে এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে। তবে তিনি উল্লেখ করেন ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচন সম্পন্ন করা হবে। তবে নির্বাচনের তারিখ নিয়ে বিভ্রান্তি না ছড়ানোর কথা ইসি সচিব সাংবাদিকদের অনুরোধ জানালেও তিনি এর আগে ইউরোপীয় ইউনিয়নের সঙ্গে বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের বলেন, নবেম্বরের প্রথম সপ্তাহেই তফসিল হচ্ছে। জানা গেছে, নবেম্বরের প্রথম সপ্তাহেই তফসিল ঘোষণার জন্য সব আয়োজন সম্পন্ন করা হয়েছে। এখন রাষ্ট্রপতির সঙ্গে সাক্ষাত শেষে এই বিষয়ে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেবেন। সে অনুযায়ী ইসিতে প্রস্তুতি চলছে। ইসি সূত্রে জানা গেছে, সাধারণত নির্বাচনের জন্য ৪০ থেকে ৪৫ দিন হাতে রেখেই তফসিল ঘোষণা করা হয়ে থাকে। এ হিসেবে প্রথম সপ্তাহে তফসিল ঘোষণা করা হলে এবং ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচন অনুষ্ঠানের পরিকল্পনা নিয়ে থাকলে ডিসেম্বরের তৃতীয় অথবা শেষ সপ্তাহের প্রথমদিকে ভোট গ্রহণ করা হতে পারে। মনোনয়ন দাখিল, বাছাই, প্রত্যাহারের শেষ সময় এবং প্রতীক বরাদ্দ শেষে প্রচারের পর্যাপ্ত সময় দিয়ে তফসিল ঘোষণা থেকে ভোটের দিন পর্যন্ত ৪০-৪৫ দিন সময় রাখা হয়। সর্বশেষ দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, ওই নির্বাচন অনুষ্ঠানের মাত্র ৪২ দিন আগে তফসিল ঘোষণা করা হয়। ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি তখনকার বিরোধী দলের বর্জনের মধ্য তা দিয়ে অনুষ্ঠিত হয়। নবম সংসদ নির্বাচন পরিচালনা করেন শামসুল হুদার নির্বাচন কমিশন। তারাও নির্বাচনের আগে মাত্র ৪৭ দিন সময় দিয়ে তফসিল ঘোষণা করেছিলেন। ২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বর নবম সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। অষ্টম সংসদ নির্বাচনের সময়ও মাত্র ৪২ দিন সময় হাতে রেখে তফসিল ঘোষণা করে ইসি। ২০০১ সালের ১ অক্টোবর ওই নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। এর আগের ১৯৯৬ সালের ১২ জুন দেশে সপ্তম সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। সেই নির্বাচনেও দেখা গেছে নির্বাচনের মাত্র ৪৭ দিন আগে তফসিল ঘোষণা করা হয়েছিল। ওই বছরের ১৫ ফেব্রুয়ারি দেশে একতরফা নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। সেই নির্বাচন গ্রহণযোগ্যতা পেলেও ষষ্ঠ ওই সংসদ নির্বাচনের সময় ৪৭ দিন হাতে সময় রেখে তফসিল ঘোষণা করা হয়েছিল। ১৯৯১ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারি দেশে অনুষ্ঠিত হয় পঞ্চম সংসদ নির্বাচন; যা নির্বাচনের ৭৮ দিন আগে তফসিল ঘোষণা করা হয়। চতুর্থ সংসদ নির্বাচনের ৬৯ দিন আগে, তৃতীয় সংসদ নির্বাচনের ৪৭ দিন, দ্বিতীয় সংসদ নির্বাচনের ৫৪ দিন এবং ১৯৭৩ সালের ৭ মার্চ প্রথম সংসদ নির্বাচনের ৬০ দিন আগে তফসিল ঘোষণা করা হয়। এ হিসেবে দেখা গেছে, পঞ্চম সংসদ নির্বাচনের পরে যত নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে বেশিরভাগ ৪২ থেকে ৪৭ দিন সময় দিয়ে তফসিল ঘোষণা করা হয়েছে। প্রধান নির্বাচন কমিশনার থেকে শুরু করে ইসি সচিব একাধিকবার গণমাধ্যমকে জানিয়েছেনÑডিসেম্বরের মধ্যে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের প্রস্তুতি তারা নিয়েছেন। ইউরোপীয় ইউনিয়নের সঙ্গে বৈঠকের সময় সিইসি তাদের জানিয়েছেন, নবেম্বরের প্রথম সপ্তাহেই তফসিল ঘোষণা করা হতে পারে। এই হিসেবে ৪০ থেকে ৪৭ দিন সময় হাতে রেখেও যদি তফসিল ঘোষণা করা হয় তবে ডিসেম্বরের তৃতীয় সপ্তাহেই নির্বাচন অনুষ্ঠানের সমুহ সম্ভাবনা রয়েছে। এদিকে ইসি সচিব সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে বলেন, রেওয়াজ অনুযায়ী প্রধান নির্বাচন কমিশনার জাতির উদ্দেশে ভাষণের মাধ্যমে সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করে থাকেন। ৪ তারিখেও কমিশন সভার বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়া হয়নি। ১ তারিখের আগে এ বিষয়ে কোন আগাম তথ্য বলা সম্ভব হচ্ছে না। তিনি বলেন, কবে নির্বাচন হবে এটা এখনই বলা যাচ্ছে না। কারণ, এতে বিভ্রান্তি ছড়ায়। যতক্ষণ না কমিশন সভায় সিদ্ধান্ত হয় ততক্ষণ আমরা বলতে পারছি না।
×