ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

বিশ্ব শান্তি রক্ষায় রোহিঙ্গা সঙ্কট এসিড টেস্ট

প্রকাশিত: ০৫:৪৭, ২৬ অক্টোবর ২০১৮

বিশ্ব শান্তি রক্ষায় রোহিঙ্গা সঙ্কট এসিড টেস্ট

বিডিনিউজ ॥ ভবিষ্যতে শান্তি রক্ষায় আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের একসঙ্গে কাজ করার ক্ষেত্রে রোহিঙ্গা সঙ্কটকে একটি বড় পরীক্ষা হিসেবে দেখছেন বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি মোঃ আবদুল হামিদ। বৃহস্পতিবার সুইজারল্যান্ডের জেনেভায় আন্তর্জাতিক নিরাপত্তা বিষয়ক এক সম্মেলনে তিনি বলেন, ‘রোহিঙ্গা সমস্যার সমাধান বিশ্ব সম্প্রদায়ের কাছে একটি এসিড টেস্ট।’ জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদসহ বিশ্ব সম্প্রদায়কে রোহিঙ্গা সমস্যার টেকসই সমাধান খুঁজতে আরও উদ্যোগী হওয়ার আহ্বান জানিয়ে রাষ্ট্রপতি বলেন, ‘এ সমস্যার সুষ্ঠু সমাধান ভবিষ্যতে শান্তি ও নিরাপত্তা নিশ্চিতের ক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক সহযোগিতার একটি দৃষ্টান্ত হতে পারে।’ ক্রানস মনটানা ফোরামের ‘হোমল্যান্ড এ্যান্ড গ্লোবাল সিকিউরিটি ফোরামের’ ২০তম এই সম্মেলনে রাষ্ট্রপতি রোহিঙ্গা সঙ্কটের প্রেক্ষাপট এবং সমস্যার সমাধানে বাংলাদেশ সরকারের নেয়া বিভিন্ন পদক্ষেপের কথা তুলে ধরেন। রাখাইনে মিয়ানমারের সেনাবাহিনীর দমন-পীড়নের মুখে গত আগস্ট থেকে এ পর্যন্ত সাত লাখের বেশি রোহিঙ্গা পালিয়ে বাংলাদেশে এসেছে। আন্তর্জাতিক পর্যায়ে রোহিঙ্গা সঙ্কটকে এশিয়ার এ অঞ্চলে সম্প্রতি সবচেয়ে বড় শরণার্থী সমস্যা হিসেবে দেখা হচ্ছে। জাতিসংঘের ফ্যাক্ট ফাইন্ডিং মিশন রাখাইনে গণহত্যা ও যুদ্ধাপরাধের জন্য মিয়ানমারের সেনা নেতৃত্বকে বিচারের মুখোমুখি করার সুপারিশ করেছে। তবে মিয়ানমার সরকার অভিযোগ অস্বীকার করে বলে আসছে, ওই অভিযান চালানো হয়েছে ‘সন্ত্রাসীদের বিরদ্ধে’। বিশ্বজুড়ে সমালোচনার মুখে মিয়ানমার সরকার রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নিতে গত বছরের শেষ দিকে বাংলাদেশের সঙ্গে চুক্তি করে। কিন্তু এরপর প্রায় এক বছর হতে চললেও প্রত্যাবাসন শুরু করা যায়নি। বাংলাদেশের কক্সবাজারে আশ্রয় নেয়া রোহিঙ্গাদের জন্য জরুরী ত্রাণ সহায়তার প্রয়োজনে বিভিন্ন দেশ ও আন্তর্জাতিক সংস্থা যেভাবে দ্রুত সাড়া দিয়েছে, সেজন্য তাদের ধন্যবাদ জানান রাষ্ট্রপতি। তিনি বলেন, ‘বিশ্বের সমস্যার জন্য প্রয়োজন বৈশ্বিক সমাধান।... রোহিঙ্গাদের শান্তিপূর্ণ প্রত্যাবাসনে যেসব দেশ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে, তাদের রাজনৈতিক সদিচ্ছা এক্ষেত্রে একান্ত প্রয়োজন।’ ১৯৮৬ সালে প্রতিষ্ঠিত জেনেভাভিত্তিক ক্রানস মনটানা ফোরাম জাতিসংঘ, ন্যাটোসহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থার সঙ্গে নিরাপত্তা সংশ্লিষ্ট বিষয়ে কাজ করে। বিশ্ব নিরাপত্তায় প্রথাগত ধারণা পাল্টে গেছে মন্তব্য করে রাষ্ট্রপতি বলেন, যুদ্ধ না থাকাকেই আমরা শান্তি হিসেবে ধরে নিচ্ছি। প্রথাগত নিরাপত্তার ধারণা পাল্টে গেছে। বিভিন্ন জাতির সম্পর্কের মধ্যে এই ধারণার পরিবর্তন স্পষ্ট। অনেক ‘নন-স্টেট ফ্যাক্টর’ এখন আন্তর্জাতিক রাজনীতিতে প্রভাব খাটাচ্ছে। সন্ত্রাস, উগ্রবাদ এবং গণবিধ্বংসী অস্ত্রের বিস্তার বহুজাতিক অপরাধ মানবতাকে ধ্বংস করে দিচ্ছে। স্থানীয় অথবা আঞ্চলিক সংঘর্ষ বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে গেছে। দুঃখজনক হলেও সত্য যে অনেক দেশই বিরোধিতা না করে এর পক্ষে কাজ করছে। সাইবার আক্রমণের মতো নতুন নিরাপত্তার হুমকি মোকাবেলায় সব দেশের যৌথ প্রচেষ্টা প্রয়োজন বলেও মন্তব্য করেন আবদুল হামিদ। এছাড়া জীববৈচিত্র্য রক্ষা, পরিবেশ সুরক্ষা এবং সামাজিক সংঘর্ষ মোকাবেলায় বিশ্ব সম্প্রদায়ের সমন্বিত পদক্ষেপ নেয়ার আহ্বান জানান তিনি। ‘দ্য হার্ডেনিং অব ইন্টারন্যাশনাল রিলেশনস : এ রিস্ক টু পিস এ্যান্ড সিকিউরিটি’ শীর্ষক এই আলোচনায় অন্যদের মধ্যে আর্মেনিয়ার প্রেসিডেন্ট আর্মেন সারকিজিয়ান, লেসেথোর প্রধানমন্ত্রী টমাস থাবেন, ক্রানস মনটানা ফোরামের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান জ্যাঁ-পল কাতেরঁ বক্তৃতা দেন। জাতিসংঘের বিশ্ব বিনিয়োগ সম্মেলন এবং ক্রানস মনটানা ফোরামের সম্মেলনে যোগ দিতে সোমবার জেনেভা পৌঁছান রাষ্ট্রপতি। সফর শেষে শনিবার তার দেশে ফেরার কথা রয়েছে। সুইজারল্যান্ডে রাষ্ট্রপতির নৌভ্রমণ ॥ রাষ্ট্রপতি মোঃ আবদুল হামিদ সুইজারল্যান্ডের বার্নেসি ওবারল্যান্ড অঞ্চলের কেন্দ্রস্থলে আলপসের উত্তরাঞ্চলীয় থান নগরীর কাছের ‘লেক থানে’ বুধবার নৌভ্রমণ করেন। তিনি জেনেভায় বিনিয়োগ সম্মেলনে অংশ নিতে পাঁচদিনের সরকারী সফরে সুইজারল্যান্ডে রয়েছেন। জেনেভা সফরের তৃতীয় দিনে এ নৌবিহারে রাষ্ট্রপতির সঙ্গে তাঁর পতœী রাশিদা খানম ও পুত্র ইঞ্জিনিয়ার রেজওয়ান আহম্মদ তৌফিক এমপিসহ সফরসঙ্গীরা অংশ নেন। খবর বাসসর। নয়নাভিরাম পাহাড়, ¯িœগ্ধ অসংখ্য গ্রাম এবং মনোমুগ্ধকর থান ও ইন্টারলাকেন নগরী বেষ্টিত লেক থানে এ নৌভ্রমণ উপভোগ করেন রাষ্ট্রপতি। তিনি বিকেল থেকে সন্ধ্যার আগ পর্যন্ত সেখানে ঘুরে বেড়ান। সুইজারল্যান্ডে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত ও জাতিসংঘ দফতরে নিযুক্ত স্থায়ী প্রতিনিধি শামীম আহসান, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের প্রটোকল প্রধান একেএম শহিদুল করিম, রাষ্ট্রপতির সচিব সম্পদ বড়ুয়া, সামরিক সচিব মেজর জেনারেল মোঃ সারোয়ার হোসেন, প্রেস সচিব মোঃ জয়নাল আবেদিন, রাষ্ট্রপতির ব্যক্তিগত চিকিৎসক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল নিয়ামুল গনি চৌধুরী, সহকারী সামরিক সচিব ব্রিগেডিয়ার জেনারেল কাজী ইফতেখার উল আলম ও অন্যান্য সিনিয়র কর্মকর্তা রাষ্ট্রপতির সঙ্গে রয়েছেন। থান নগরীর নামে লেকটির নামকরণ করা হয় লেক থান।
×