ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

প্রকল্প বাস্তবায়নে চুক্তি স্বাক্ষর

ঘোড়াশাল-পলাশ সার কারখানার উৎপাদন বাড়ছে ৩ গুণ

প্রকাশিত: ০৪:০৯, ২৬ অক্টোবর ২০১৮

ঘোড়াশাল-পলাশ সার কারখানার উৎপাদন বাড়ছে ৩ গুণ

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ তিনগুণ উৎপাদন ক্ষমতা সম্পূর্ণ আধুনিক প্রযুক্তিতে নির্মাণ হবে ঘোড়াশাল-পলাশ ইউরিয়া সার কারখানা। বুধবার রাজধানীর সোনারগাঁও হোটেলে দেশের নতুন এ সার কারখানা ঘোড়াশাল-পলাশ ইউরিয়া ফার্টিলাইজার প্রজেক্ট (জিপিইউএফপি) বাস্তবায়নের জন্য চুক্তি সই হয়। এ সময় শিল্পমন্ত্রী আমির হোসেন আমু এবং বাংলাদেশে নিযুক্ত জাপানের রাষ্ট্রদূত হিরোয়াসু ইজুমির উপস্থিত ছিলেন। চুক্তিতে বিসিআইসি’র পক্ষে সংস্থার চেয়ারম্যান শাহ্ মোঃ আমিনুল হক এবং নির্মাতা প্রতিষ্ঠান মিত্সুবিশি হেভি ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেডের পক্ষে প্রতিষ্ঠানের সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট হাজিমী নাগানো ও চায়না ন্যাশনাল কেমিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং নং-৭ কন্সট্রাকশন কোম্পানির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ওয়ান দ লিন স্বাক্ষর করেন। অনুষ্ঠানে জানানো হয়, নরসিংদী জেলার পলাশে ‘ঘোড়াশাল-পলাশ ইউরিয়া ফার্টিলাইজার প্রজেক্ট (জিপিইউএফপি)’ বাস্তবায়ন করা হবে। বর্তমানে বিদ্যমান ইউরিয়া ফার্টিলাইজার ফ্যাক্টরি লিমিটেড (ইউএফএফএল) এবং পলাশ ইউরিয়া ফার্টিলাইজার ফ্যাক্টরি লিমিটেড (পিইউএফএফএল) এর স্থলে অত্যাধুনিক প্রযুক্তির এ কারখানা গড়ে তোলা হবে। এটি নির্মাণে জাপানের উন্নত ও পরিবেশবান্ধব প্রযুক্তি ব্যবহার করা হবে। এটি হবে একটি জ্বালানি সাশ্রয়ী, উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন এবং পরিবেশবান্ধব সার কারখানা। এতে প্রতিদিন ২৮০০ মেট্রিক টন গ্রানুলার ইউরিয়া উৎপাদিত হবে। বছরে এ কারখানা ৯ লাখ ২৪ হাজার মেট্রিক টন ইউরিয়া সার পাওয়া যাবে। উৎপাদন ক্ষমতার বিচারে এ কারখানায় উৎপাদন ক্ষমতা হবে বিদ্যমান সার কারখানা দু’টির মোট উৎপাদনের প্রায় তিনগুণ। দেশের সর্ব বৃহৎ এ কারখানা নির্মাণ প্রকল্প বাস্তবায়নে মোট প্রাক্কলিত ব্যয় ধরা হয়েছে ১০ হাজার ৪৬০ কোটি ৯১ লাখ টাকা। এর মধ্যে বাংলাদেশ সরকার ১ হাজার ৮৪৪ কোটি ১৯ লাখ টাকা অর্থায়ন করবে। বাকি ৮ হাজার ৬১৬ কোটি ৭২ লাখ টাকা কমার্শিয়াল লোনের মাধ্যমে সংস্থান করা হবে। বিডার ফাইন্যান্সিং প্রক্রিয়ায় এ প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হবে। জাপানের ঐতিহ্যবাহী মিতসুবিশি হেভি ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড (এমএইচআই) এবং গণচীনের চায়না ন্যাশনাল কেমিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং নং-৭ কন্সট্রাকশন কোম্পানি লিমিটেড (সিসি-৭) কনসোর্টিয়াম এ কারখানা নির্মাণ করবে। কারখানাটির নির্মাণকাজ শেষ করতে সময় লাগবে ৩৯ মাস অর্থাৎ আগামী ২০২২ সালে কাজ সম্পূর্ণ হবে। অনুষ্ঠানে শিল্পমন্ত্রী বলেন, বিশ্বের অনেক দেশ বাংলাদেশে বিনিয়োগে আগ্রহী। দেশী-বিদেশী বিনিয়োগকারীদের জন্য বর্তমান সরকার ১০০টি অর্থনৈতিক অঞ্চল গড়ে তুলছে। এসব অর্থনৈতিক অঞ্চলে বিশ্বখ্যাত উদ্যোক্তারা বিনিয়োগে এগিয়ে আসছে। এর ফলে বাংলাদেশে জ্ঞানভিত্তিক ও পরিবেশবান্ধব শিল্পায়নের নতুন ধারা জোরদার হয়েছে বলে তিনি উল্লেখ করেন। আমির হোসেন আমু বলেন, জাপান বাংলাদেশের দীর্ঘদিনের পরীক্ষিত বন্ধু ও উন্নয়ন অংশীদার। এ প্রকল্প বাস্তবায়নের মাধ্যমে বাংলাদেশে আরও বড় বড় প্রকল্পে জাপানের বিনিয়োগ আসবে। তিনি গুণগত মান বজায় রেখে দ্রুততার সঙ্গে এ প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য নির্মাতা প্রতিষ্ঠানের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন। ১৯৪৭ সালের আগে এ অঞ্চলে কোন সার কারখানা ছিল না উল্লেখ করে শিল্পমন্ত্রী বলেন, ১৯৪৯ সালে আওয়ামী লীগের জনসভায় প্রথম সার কারখানা স্থাপনের দাবি ওঠেছিল। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান পূর্ব পাকিস্তানের বাণিজ্য, শ্রম ও শিল্পমন্ত্রী থাকাকালে ১৯৫৭ সালে সিলেটের ফেঞ্চুগঞ্জে ন্যাচারাল গ্যাস সার কারখানা স্থাপন করেন। প্রধানমন্ত্রীর শেখ হাসিনা সে কারখানার স্থলে অত্যাধুনিক প্রযুক্তির শাহ্জালাল সার কারখানা স্থাপন করেছেন। ঘোড়াশাল-পলাশ ইউরিয়া সার কারখানা বাংলাদেশের জন্য একটি জ্বালানি সাশ্রয়ী এবং পরিবেশবান্ধব সার কারখানার মডেল হবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন। অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের মুখ্যসচিব নজিবুর রহমান, এসডিজি বিষয়ক মুখ্য সমন্বয়ক মোঃ আবুল কালাম আজাদ, বাংলদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের নির্বাহী চেয়ারম্যান কাজী আমিনুল ইসলাম, সংসদ সদস্য কামরুল আশরাফ খান, ভারপ্রাপ্ত শিল্পসচিব আবদুল হালিম, বাংলাদেশে নিযুক্ত জাপানের রাষ্ট্রদূত হিরোয়াসু ইজুমি, বিসিআইসি’র চেয়ারম্যান শহ্ মোঃ আমিনুল হক প্রমুখ।
×