ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

২৯ বেসরকারী ব্যাংকের সুদ এখনও দুই অঙ্কের ঘরে

প্রকাশিত: ০৪:০৮, ২৬ অক্টোবর ২০১৮

২৯ বেসরকারী ব্যাংকের সুদ এখনও দুই অঙ্কের ঘরে

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ দেশে কার্যত ব্যাংকগুলোর মধ্যে ২৯টি বেসরকারী বাণিজ্যিক ব্যাংক এখনও দুই অঙ্কের (১০ শতাংশের বেশি) সুদে ঋণ বিতরণ করছে। বিশেষ করে নতুন ব্যাংকগুলো অন্যান্য ব্যাংকের তুলনায় উচ্চ সুদে ঋণ বিতরণ করছে। ব্যাংকিং খাতে অতিরিক্ত তারল্য বিদ্যমান থাকার পরও সর্বশেষ লাইসেন্স পাওয়া ব্যাংকগুলো উচ্চ সুদে ঋণ বিতরণ করছে বলে বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদনে উঠে এসেছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের এ প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, চলতি বছরের জুন শেষে অতিরিক্ত তারল্যের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৯৭ হাজার ৫০০ কোটি টাকা। চলতি বছরের মার্চ শেষে ব্যাংকিং খাতে তারল্যের পরিমাণ ছিল ৭৬ হাজার ৯০০ কোটি টাকা। ব্যাংকগুলোর কাছে বিপুল পরিমাণ নগদ টাকা থাকার পরও কমানো হয়নি ঋণের সুদহার। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০১৩ সালে সর্বশেষ লাইসেন্স পাওয়া এনআরবি গ্লোবাল ব্যাংক গড়ে ১৩ দশমিক ৭৭ শতাংশ সুদে ঋণ বিতরণ করেছে। যা চলতি বছরের আগস্ট থেকে। অন্যান্য ব্যাংকের তুলনায় এই সুদহার অনেক বেশি বলে উল্লেখ করা হয়েছে ওই প্রতিবেদনে। ২০১৭ সালের মাঝামাঝি থেকে গুরুতর নগদ সঙ্কটের অবসান ঘটানোর পর ব্যাংকিং খাতের অতিরিক্ত তারল্য আরও বাড়ে। সাধারণত ব্যাংকগুলোর প্রয়োজনের চেয়ে যে পরিমাণ ত্য অতিরিক্ত থাকে ওইটাকেই অতিরিক্ত তারল্য বলা হয়। নগদ জমা সংরক্ষণ (সিআরআর) ১ শতাংশ কমানোর ফলে এক বছরের তুলনায় ব্যাংকিং খাতে অতিরিক্ত তারল্য বেড়েছে ২৭ শতাংশ। চলতি বছরের জুন শেষে অতিরিক্ত তারল্যের পরিমাণ দাঁড়িয়েছিল ৯৭ হাজার ৫০০ কোটি টাকা। চলতি বছরের মার্চ শেষে ব্যাংকিং খাতে তারল্যের পরিমাণ ছিল ৭৬ হাজার ৯০০ কোটি টাকা। চলতি বছরের এপ্রিলে ব্যাংক মালিকদের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে সিআরআর ১ শতাংশ কমানোর পর ব্যাংকিং খাতে এই তারল্য বেড়েছে। আগে সিআরআর ৬ দশমিক ৫ শতাংশ ছিল। প্রতিবেদনটি বলছে, চলতি বছরের জানুয়ারি-মার্চ প্রান্তিকে তারল্য সঙ্কটের কারণে বাংলাদেশ ব্যাংক সিআরআর কমানোর সিদ্ধান্ত গ্রহণ এবং তা বাস্তবায়ন করেছে। ফলে এই পরিমাণ তারল্য বেড়েছে ব্যাংকিং খাতে। এদিকে অতিরিক্ত তারল্য প্রবাহের ফলে ব্যাংকগুলো ঋণ বিতরণে সুদের হার গড়ে এক থেকে দুই শতাংশ কমিয়েছে। বর্তমানে ব্যাংকগুলো ১০ থেকে ১১ শতাংশ সুদে ঋণ বিতরণ করছে। কিছুদিন আগেও ব্যাংকগুলোতে ঋণের সুদের হার ছিল গড়ে ১৩ শতাংশেরও বেশি। ঋণের সুদের হার এক অঙ্কের ঘরে নামিয়ে আনার প্রতিশ্রুতি দিয়ে ব্যাংকের পরিচালকরনগদ জমা সংরক্ষণ হার এক শতাংশ কমিয়ে এখন ১০ শতাংশের বেশি সুদে ঋণ বিতরণ করছেন। রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন সোনালী ব্যাংক এক অঙ্কের ঘরে শিল্প ঋণ বিতরণ করলেও ১৩ শতাংশ সুদে কনজ্যুমার ঋণ বিতরণ করছে। সোনালী ব্যাংকের একজন কর্মকর্তা বলেন, আমরা শিল্প ঋণের সুদ এক অঙ্কের গড়ে নামিয়ে এনেছি। অন্যান্য ঋণের সুদহার সমন্বয় করার জন্য সরকারের নির্দেশনার অপেক্ষায় আছি। এ বিষয়ে যোগাযোগ করা হলে ডেল্টা ব্র্যাক হাউসিং এ্যান্ড ফাইন্যান্সের ব্যবস্থাপনা পরিচালক কিউএম শরীফুল আলা বলেন, আমরা বাড়ি ক্রয়, নির্মাণ ঋণ ৯ থেকে ১০ শতাংশ সুদে বিতরণ করছি। চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি মাসেও এসব ঋণের সুদহার ১৩ শতাংশ ছিল। ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোতে তারল্য সংকট কেটে যাওয়ার পর ঋণের সুদের হার ১ থেকে ২ শতাংশ কমিয়ে এনেছে বলে জানান শরীফুল আলা। বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, চলতি বছরের জুন শেষে মোট তারল্যের ৫৫ শতাংশ অর্থাৎ ৫৩ হাজার ৫০০ কোটি রয়েছে রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন ব্যাংকগুলোর কাছে। চলতি বছরের মার্চ শেষে এসব ব্যাংকের কাছে তারল্য ছিল ৪২ হাজার ১০০ কোটি টাকা। তারল্য বেড়েছে ২৭ শতাংশ। আর বেসরকারী বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর কাছে রয়েছে ৩১ হাজার ২০০ কোটি টাকা, অর্থাৎ মোট তারল্যের ৩২ শতাংশ। চলতি বছরের মার্চ শেষে বেসরকারী ব্যাংকগুলোর কাছে তারল্য ছিল ২১ হাজার ১০০ কোটি টাকা। বেসরকারী ব্যাংকে তারল্য বেড়েছে ৪৭ দশমিক ৫৮ শতাংশ। বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র ও নির্বাহী পরিচালক সিরাজুল ইসলাম বলেন, ব্যাংক মালিকদের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে সিআরআর হার ১ শতাংশ কমানো হয়েছে ঋণের সুদহার কমানোর জন্য। আর এটা কমানোর বিষয়টি কেন্দ্রীয় ব্যাংক মনিটরিং করছে। যারা এখনও কমায়নি, তাদের কমাতে চিঠি দেয়া হয়েছে।
×