ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

সব্যসাচী দাশ

‘এবি’র শোকে বিষণ্ন ভক্তকুল

প্রকাশিত: ০৭:০৬, ২৫ অক্টোবর ২০১৮

‘এবি’র শোকে বিষণ্ন ভক্তকুল

সবার প্রিয় আইয়ুব বাচ্চু গত হয়েছেন এক সপ্তাহ। আজ অবধি দেশের কোন না কোন সংবাদপত্র, টেলিভিশন কিংবা কোন অনলাইন পোর্টাল তাকে নিয়ে অন্তহীন খবর পরিবেশন করে যাচ্ছে। বর্তমান সঙ্গীতের দুরবস্থায় আইয়ুব বাচ্চুর মতো নিজ নামে ধন্য প্রচ- জনপ্রিয় একজন সঙ্গীতাজ্ঞের অকাল প্রয়াণ অগণিত ভক্তকুলকে হতাশার সাগরে নিরুদ্দেশ ভাসিয়েছে তাতে কোন সন্দেহ নেই! গত বৃহস্পতিবার তার মৃত্যুখবর ঢাকা থেকে বেরিয়ে মুহূর্তেই দেশের দূরবর্তী প্রত্যন্ত অঞ্চলে বিষাদের নীলরং ছড়িয়েছে। আহা! আইয়ুব বাচ্চু এই স্বল্প সময়ে কি মৃত্যুহীন জীবন আপনি পেলেন। দেশের মহামান্য রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রীসহ রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিত্ব আপনার অকাল বিদায়ে শোকাবহ। এমনকি জাতীয় সংসদ অধিবেশনে বিশেষ শোক প্রস্তাব। দেশে-বিদেশে সাধারণ থেকে অসাধারণেরা আপনার অকাল প্রয়াণে দুঃখ প্রকাশ করেছেন। আর কি চাই এই ছোট্ট জীবনে। প্রসঙ্গে একটা কথা মনে পড়ে গেল ‘জীবন লম্বা নয় বড় হওয়া চাই’ ঠিক তাই অসার শতায়ু জীবনের থেকে আলোকময় স্বল্প জীবন অতিশয় শ্রেয়। যা তার ক্ষেত্রে সমীচীন। আইয়ুব বাচ্চু (১৯৬২-২০১৮) মাত্র ৫৬ বছর বয়সে তার প্রিয় গিটার রেখে অন্তলোকে চলে গেছেন। তার জন্ম, বড় হওয়া, পারিবারিক পরিচিতি, জীবন সংগ্রাম, সঙ্গীত জীবনের প্রাককাল এবং অগণিত দর্শক মাতানো জনপ্রিয় গান এসব এখন আর কোনটাই কারও অজানা নয়। তার মৃত্যুর সাত দিন অর্থাৎ ১৬৮ ঘণ্টায় এসব তার ভক্তকুলের মুখস্থ। তবুও তাকে নিয়ে লেখা। লিখতে তো হবেই কারণ নিজেও যে তার গিটার আর গান শুনে বহু দিন বহু সময় মুগ্ধ হয়েছি। অনেক সুখস্মৃতি তার সৃষ্ট সুরের ভাঁজে ভাঁজে আজও বর্তমান হয়ে আছে। ২০০৫ সাল বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র। দেশে তখন আইয়ুব বাচ্চু ব্যান্ড শিল্পের পরিণত পুরোধা। প্রথম সুযোগ হলো সামনে দাঁড়িয়ে তার গিটার এবং গান শোনার-ভীষণভাবে উত্তেজিত ছিলাম। সন্ধ্যানাগাদ যখন, কালো গেঞ্জি, কালো হ্যাট পরে ধানম-ির রবীন্দ্রসরোবরে গিটারের স্ট্রিংয়ে অভিজ্ঞ আঙ্গুল বুলিয়ে হৃদয় উত্তাল করা সুরের মুর্ছনা ছড়াতে শুরু করলেন। প্রথমে স্বপ্ন মনে হয়ে ছিল। কিছুক্ষণ পরে বাস্তটা উপলব্ধি করলাম যখন তিনি গেয়ে উঠলেন ‘হাসতে দেখ, গাইতে দেখ’ তখন বুঝলাম আইয়ুব বাচ্চুর রক্তগরম করা লাইভ কনসার্টে আছি। দীর্ঘ দিন যার গান টিভি, ক্যাসেট কিংবা রেডিওতে শুনেছি আজ সে দু’নয়নের সামনে! সঙ্গে হাজারও উত্তাল দর্শক। সেদিন বুঝতে আর বাকি ছিল না। রকব্যান্ডে ‘এবি’ কি জিনিস! এরপর একাধিক এলআরবির কনসার্টে গিয়েছি এবং একই রকমভাবে উদ্বেলিত হয়েছি। মাঝে মাঝে তার অসুস্থতার খরব পেয়েছি পাশাপাশি টেলিভিশনে তার রাতজাগা লাইভ কনসার্ট দেখেছি। এসবের মধ্যে এই প্রিয় মানুষটি হঠাৎ চলে যাবেন এই ধারণা বোধকরি কেউই করতে পারেনি। আজ এক সপ্তাহ হলো তার গিটার নির্বাক। নির্বাক অসংখ্য ভক্তকুল। আইয়ুব বাচ্চু নামের মানুষটি আর কখনই আমাদের মাঝে এসে উপস্থিত হবে না। কিন্তু তার রেখে যাওয়া কাজ আশাকরি এই বাংলার মানুষ অনেক দিন মনে রাখবে। সমসাময়িক গত হওয়া ‘ববডিলন’, লিওনার্দো ডি কোহেনসহ অন্যান্য বিশ্বখ্যাত সঙ্গীতাজ্ঞদের মৃত্যুর মতো ছোট ঘটনার মধ্য দিয়ে অন্তহীন অমরত্ব লাভ আমাদের ‘এবি’র কথা মনে করিয়ে দেবে। বাংলার অগণিত সাধারণ ভক্তকুলের মতো আমারও এই সাধারণ অনুনয়। আইয়ুব বাচ্চু তুমি আবার, বার বার এসো ফিরে এই বাংলার একচালা টিনের ঘরে তোমার সৃষ্ট ভক্তের হৃদয়ে।
×