ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

রেজা নওফল হায়দার

দেবী সিনেমায় ‘দেবী’ উত্তীর্ণ হয়নি!

প্রকাশিত: ০৭:০৬, ২৫ অক্টোবর ২০১৮

দেবী সিনেমায় ‘দেবী’ উত্তীর্ণ হয়নি!

দেবী নামটার সঙ্গে যে উপন্যাস এবং যে মানুষটির নাম বারবার ফিরে আসে তিনি হলেন জনপ্রিয় কথাসাহিত্যিক হুমায়ূন আহমেদ। দেবী উপন্যাসটি একদিকে মিসির আলী চরিত্রের সঙ্গে থাকা যুক্তি উপস্থাপন অন্যদিকে অন্য ভুবনের অলৌকিকতা প্রকাশ করেছে। জ্ঞানী-গুণী বিশেষজ্ঞর দেবী উপন্যাসটি যতই ময়নাতদন্ত করুক না কেন, দেবী উপন্যাসটি পেয়েছিল আকাশচুম্বি জনপ্রিয়তা। আমাদের উপমহাদেশ তথা সমগ্র বিশ্বের সিনেমা নির্মাণ জগতে এখনও বেশিরভাগ সময়ে কোন বিখ্যাত গল্প উপন্যাস আশ্রয় করে সেলুলয়েডে বিভিন্ন কল্পনার মিশ্রন ঘটিয়ে প্রকাশ করা হয়। অনেক পরিচালক এটা ভেবে থাকেন যে, এটা জনপ্রিয়তার শীর্ষে থাকবে। বর্তমানে ঠিক তেমনি একটি জনপ্রিয় উপন্যাস ‘দেবী’ অবলম্বনে দেবী সিনেমা নির্মাণ করা হয়েছে। যেখানে জনপ্রিয় অভিনয় শিল্পী জয়া এবং চঞ্চল চৌধুরি অভিনয় করেছেন। দেবী ছবি নির্মাণে এককথায় জয়ার অভিনয় ছিল অসাধারণ, কিন্তু আমরা যারা এই বিষয়ে লেখালেখি করি তারা জানি যে অভিনয় (মঞ্চ, সিনেমা, নাটক) একক অভিনয় দিয়ে হয়ত একটু ঠেলা দেয়া যায় কিন্তু শেষ অবধি পূর্ণ সুনামের সঙ্গে ইতি টানা যায় না। তেমনটি ঘটেছে দেবী সিনেমায়। চঞ্চল চৌধুরির নিঃসন্দেহে খুব ভাল অভিনেতা ইতোমধ্যে তার একাধিক কাজে বেশ সুনাম কুড়িয়েছেন। কিন্তু তিনি যখন মিসির আলী চরিত্রে অভিনয় করেছেন তখন তাকে কিছুটা বিচলিত মনে হয়েছেন। যেটা হুমায়ূন পাঠকদের জন্য হতাশাজনক বলে আমার মনে হয়েছে। বিষয়টা এমন উপলব্ধি হয়েছে যে, মিসির আলী চরিত্র চরিত্রায়নে চঞ্চল চৌধুরি নিজেকে তিনি উজার করে দিতে পারেননি। অথবা মিসির আলী চরিত্রটি বিশ্লেষণ করতে যথাযথ প্রয়াস করেননি। শুধু তাই নয়, মিসির আলীকে অনেকটা কমেডি ধাঁচে উপস্থাপন করার যথেষ্ঠ চেষ্টা করা হয়েছে। কিন্তু আমরা যারা এই উপন্যাসটি পড়েছি অথবা এই চরিত্র সম্পর্কে জানি সেখানে মিসির আলী একটা সিরিয়াস যুক্তিবাদী চরিত্র। কিন্তু এখানে অভিনেতা নিজেকে ভাঁড় হিসেবে উপস্থাপনের চেষ্টা করেছেন। যদিও পরিচালক চরিত্রটিকে কিভাবে মূল্যায়ন করেছে তার ওপর নির্ভর মিসির আলী পর্দায় এসেছে। এখন আসা যাক দেবী সিনেমার আলো প্রেক্ষাপণ নিয়ে। পাশে বসা বহু দর্শক বলেছেন, সিনেমাটাকে অতিমাত্রায় ভৌতিক করার জন্য এক ধরনের ফ্লাট লাইট ব্যবহার করা হয়েছে। যেটা দর্শকরা বিরক্ত নিয়ে দেখেছেন। মূল চরিত্রে দেবী নাম ভূমিকায় অভিনয় করেছেন জয়া। তিনি একজন মানসিক রোগী। কিন্তু মানসিক রোগী আবার বাজার করেন, রাস্তা পার হন, ভূতের ভয় পান, ভূতের সঙ্গে কথাও বলেন। এই চরিত্রের চরিত্রায়ন সেটা মূল দেবী উপন্যাসে খুঁজে পাওয়া যায় না। অথবা যেভাবে জয়া মিসির আলীর সঙ্গে কথা বলে সেখানে আসলে অতিমাত্রায় বাহুল্য প্রদর্শন করা হয়েছে। সেই সঙ্গে দেবী সিনেমায় কোনভাবেই ‘দেবী’ উপন্যাসটির যথার্থতা চিত্রায়ন হয়েছে বলে আমার মন সায় দেয়নি।
×