ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

‘বেগম জিয়ার মুক্তির দাবি ৭ দফায় আছে’

প্রকাশিত: ০৬:১৭, ২৫ অক্টোবর ২০১৮

‘বেগম জিয়ার মুক্তির দাবি ৭ দফায় আছে’

স্টাফ রিপোর্টার, সিলেট অফিস ॥ সিলেটে ঐক্যফ্রন্টের সমাবেশ উত্তাপ ছড়াতে পারেনি। মানুষ সমাগম হয়নি আশানুরূপ। এখান থেকেই দাবি আদায়ের অন্দোলনের সূচনা হলো বলে উল্লেখ করে অনেক নেতা বলেছেন, ফ্রন্টের প্রধান কর্ণধার কামাল হোসেন সহিংস অন্দোলন চান না। জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট গঠনের পর বুধবার সিলেটের রেজিস্ট্র্রারি মাঠে ফ্রন্টের প্রথম জনসভার আয়োজন করা হয়। এদিকে বর্তমান সরকারের উন্নয়নের বিবরণ তুলে ধরে বুধবার নগরীতে মিছিল ও লিফলেট বিতরণ কর্মসূচী পালন করতে রাজপথে নামে আওয়ামী লীগের নেতা কর্মীরা। সকালে নগরীতে আওয়ামী লীগের এই কর্মসূচী শুরু হলে জনমনে উত্তেজনার আশঙ্কা দেখা দেয়। সকাল ১০টা থেকে বেলা ১টা পর্যন্ত আওয়ামী লীগের কর্মসূচী শান্তিপূর্ণভাবে পালিত হয়। পূর্ব নির্ধারিত সময় অনুযায়ী বেলা ২টা থেকে মাঠে জনসভার কাজ শুরু হয়। প্রায় দুই ডজনের অধিক ফ্রন্টের শীর্ষ পর্যায়ের নেতা আসেন সিলেটে। রেজিস্ট্র্রারি মাঠের ভেতরে ও বাইরে উপস্থিত সকলেই ছিলেন বিএনপির নেতাকর্মী। কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ ছাড়াও ঢাকা থেকে সড়ক পথে দলের অনেকেই এসেছেন। ঐক্যফ্রন্টের এই সভায় খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবি ছিল সমস্বরে। ড. কামাল হোসেনের নেতৃত্বে ঐক্যফ্রন্টের এগিয়ে যাবার কথা বললেও বেগম জিয়া তারেক জিয়ার মুক্তি ও মামলা প্রত্যাহারের বিষয়টি ছিল মুুখ্য। বিপুল সংখ্যক নেতার উপস্থিতি থাকলেও জনসভায় লোক সমাগম ছিল হতাশাজনক। কেন্দ্রীয় নেতাদের মধ্যে ড. কামাল হোসেনসহ অনেকেই সিলেটে এসে পৌঁছেছেন মঙ্গলবার সন্ধ্যায়। বাকিরা আসেন বুধবার সকালে। সিলেটে পৌঁছে নেতৃবৃন্দ হযরত শাহজালাল (র) ও হযরত শাহপরানের (র) মাজার জিয়ারত করেন। সিলেট সিটির মেয়র অরিফুল হক চৌধুরীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে গণফোরামের সভাপতি ও জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের অন্যতম প্রধান নেতা ড. কামাল হোসেন বলেছেন, ‘আমরা ৭ দফা কর্মসূচী দিয়েছি। সংবিধানের ৭ নং অনুচ্ছেদে রয়েছে জনগণ দেশের মালিক। কিন্তু বর্তমানে জনগণের সেই মালিকানা নেই। এটা আদায় করে নিতে হবে। আমাদের ১ নম্বর দাবি অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন। এর সঙ্গে আরও ৬টি দাবি রয়েছে। আপনারা আজ যারা এখানে কষ্ট স্বীকার করে এসেছেন শুনেছি অনেক বাধা অতিক্রম করে আসতে হয়েছে। সবাই ঐক্যফ্রন্টের ৭ দফা দাবির কথা গ্রামে গ্রামে ইউনিয়নে ইউনিয়নে সবার মাঝে ছড়িয়ে দিতে হবে। ড. কামাল বলেন, ‘৭ দফাকে হালকাভাবে নেবেন না। এটা অনেক মূল্যবান। এটা জনগণের হারিয়ে ফেলা অধিকার, দেশের মালিকানা ফিরিয়ে আনার দাবি। বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন ছিল, জনগণ ক্ষমতার মালিক। সেটি বাস্তবায়ন করতে হবে।’ তিনি বলেন, সরকার বলছে দেশে উন্নয়ন হচ্ছে। এটা কিসের উন্নয়ন। দেশের মুষ্টিমেয় মানুষের উন্নয়নে উন্নয়ন হয় না। আমরা চাই, ১৬ কোটি মানুষের উন্নয়ন। জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের সঙ্গে ঐক্যবদ্ধ হয়ে সবাইকে সংঘটিত হতে হবে। আমাদের বিজয় অনিবার্য। ড. কামাল হোসেনের ৭ মিনিটের বক্তৃতায় বেগম জিয়ার মুক্তির বিষয়টি না আশায় তিনি বক্তৃতা শেষ করে ফেলার পরে মঞ্চ থেকে বলা হয় বেগম জিয়ার মুক্তির কথা বলেননি, তখন ড. কামাল বলেন, সেটা তো দফার মধ্যে উল্লেখ রয়েছে। বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, সিলেটবাসী অনেক ইতিহাসের জন্ম দিয়েছেন। আজ আরেকটি ইতিহাসের জন্ম দিচ্ছেন। এই ইতিহাস হচ্ছে গণতন্ত্র মুক্তির ইতিহাস। ‘আজ থেকে নতুন লড়াইয়ের শুরু হলো। খালেদা জিয়াকে মুক্ত করতে হবে। ফিরিয়ে আনতে হবে আমাদের অধিকার। গণতন্ত্রকে মুক্ত করতে হবে। সরকারকে পরিষ্কার করে বলতে চাই, তফসিল ঘোষণার আগে পদত্যাগ করুন। নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন দিন। ইভিএম দেয়া চলবে না। ডিজিটাল চুরি করতে দেয়া হবে না। নির্বাচনে সেনাবাহিনী মোতায়েন করতে হবে। তিনি বলেন, ‘সিলেটের মানুষ সকল বাধা বিপত্তি উপেক্ষা করে সমাবেশে ছুটে এসেছে। তার আহ্বানে হাত তুলে সবাই আন্দোলনে শরিক হওয়ার কথা জানান। জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের সভাপতি ও জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট নেতা আ স ম আব্দুর রব বলেন, ‘আমাদের যে লড়াই, এই লড়াই বাঁচার লড়াই, ভোটের লড়াই, গণতন্ত্রের লড়াই। এ লড়াইয়ে জিততে হবে।’ বুধবার সিলেট রেজিস্ট্র্রারি মাঠে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের সমাবেশে বক্তব্যে এসব কথা বলেন তিনি। আব্দুর রব বলেন, দেশ ডাকাতের হাতে পড়েছে। বাঁচাতে চান? খালেদার মুক্তি চান? তাহলে সবাই হ্যাঁ বলেন। সিলেটে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের সমাবেশে বক্তব্য প্রদানের শুরুতেই মুক্তিযুদ্ধের প্রধান সেনাপতি সিলেটে কর্নেল এম এ জি ওসমানীকে স্মরণ ও শ্রদ্ধা জানিয়েছেন গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা ডাঃ জাফরুল্লাহ চৌধুরী বলেন, ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর ওসমানীকে বহনকারী বিমানের ওপর হামলা চালানো হয়েছিল। সেদিন আমিও ছিলাম তার সঙ্গে। হামলাকারী বিমানের কোন খোঁজ শেষ পর্যন্ত আর পাওয়া যায়নি। ডাঃ জাফরুল্লাহ বলেন, ‘এই (ওসমানী) মহান নেতার মূল্যায়ন এখন কেউ করে না। আমি এই সমাবেশ থেকে তাঁকে শ্রদ্ধা জানাচ্ছি।’ তিনি বলেন, ‘উন্নয়নের জোয়ারে নৌকা টালমাটাল, ভারসাম্য হারিয়ে ফেলেছে। বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়াকে ‘অন্যায়ভাবে’ কারাগারে আটকে রাখা হয়েছে মন্তব্য করে জাফরুল্লাহ বলেন, ‘দেশে আইনের সংস্কার প্রয়োজন।’ ‘আমরা যদি বিজয়ী হই, আপনারা যদি সমর্থন করেন, তবে তিন মাসের মধ্যে দেখবেন দেশে ওষুধের দাম অর্ধেক হয়ে গেছে, চিকিৎসা খরচ অর্ধেক হয়ে যাবে।’ সিলেট সিটি কর্পোরেশনের মেয়র আরিফুল হক চৌধুরীকে ‘খুলনার গণমানুষের মেয়র’ বলে সম্বোধন করেছেন বিএনপির জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায়। জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের সমাবেশে বিশেষ অতিথির বক্তব্য প্রদানের শুরুতে তিনি এই সম্বোধন করেন। নিজের বক্তব্যে গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেন, ‘কাঁঠাল দিয়ে আমসত্ত্ব হয় না। শেখ হাসিনার আমলে সুষ্ঠু নির্বাচন হয় না। শেখ হাসিনার আমলে ভোট ডাকাতি হয়।’ তিনি বলেন, ‘দেশের মানুষ মুক্তি চায়। ইলিয়াস আলীসহ সকল নেতাকর্মীকে ফিরে পেতে চায়। দেশের জনগণ কখনও পরাজিত হয় না।’ বিএনপির জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ বলেছেন, সরকারকে সংলাপে বসতে বাধ্য করা হবে। তাদেরকে সমঝোতায় আসতে হবে। যদি সমঝোতায় না আসেন, তবে বুঝতে হবে দেশে গণতন্ত্র চান না। মানুষ এর উপযুক্ত জবাব দেবে। মওদুদ বলেন, ‘ঘুষ ও দুর্নীতি ছাড়া কোন কাজ হয় না। বড় বড় দুর্নীতি হয়েছে। এগুলোর বিচার করতে হবে। আমরা ক্ষমতায় গেলে প্রতিটি পয়সার হিসাব নেব। তারা ক্ষমতায় এসে বিদেশে সম্পত্তি করেছে।’ তিনি খালেদা জিয়ার মুক্তি দাবি করেন। বিএনপির জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেছেন, ‘ইলিয়াস আলীসহ শত শত ব্যক্তিকে গুম করা হয়েছে। তার জবাব দিতে হবে। সব লুটপাটের জবাব দিতে হবে। এজন্য তারা ভয় পায়। খালেদা জিয়াকে অন্যায়ভাবে কারাগারে আটকে রাখা হয়েছে। আগামী নির্বাচনের আগে তাকে মুক্তি দিতে হবে। নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার আগে এই সরকারকে বিদায় নিতে হবে, সংসদ ভেঙ্গে দিতে হবে। নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন দিতে হবে। এই পুণ্যভূমি সিলেট থেকে আন্দোলন শুরু হলো।’ সমাবেশে জয়বাংলা ॥ সরকারবিরোধী রাজনৈতিক জোট জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের সমাবেশে ‘জয় বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধু’ উচ্চারণে বক্তৃতা শেষ করেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের (ডাকসু) সাবেক ভিপি, আওয়ামী লীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক ও ঐক্যফ্রন্টের নেতা সুলতান মনসুর। বুধবার বিকেলে সিলেট রেজিস্ট্রারি মাঠে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট আয়োজিত সমাবেশে তার বক্তব্য এভাবেই শেষ করেন সুলতান মনসুর। সুলতান মনসুর বলেন, সিলেটে এমন কোন দিন নেই যেদিন আমি স্বৈরাচারের বিরুদ্ধে কথা বলিনি। এমন কোন দিন নেই যেদিন আমি বঙ্গবন্ধুর নাম উচ্চারণ করিনি। তিনি বলেন, রাজনীতিতে মতবিরোধ থাকলেও প্রতিপক্ষকে আক্রমণ করার নীতি থেকে সরে আসতে হবে। সুলতান মনসুর বলেন, সিলেটের মানুষ কখনই মাথা নিচু করে হাঁটে নাই। সবসময় মাথা উঁচু করে হাঁটে। সিলেটের মানুষের টাকাসহ দেশের মানুষের কোটি কোটি টাকা দেশ থেকে বিদেশে পাচার হয়ে যাচ্ছে। বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবি জানিয়ে তিনি বলেন, যেটি কারাগার নয় সেটিকে কারাগার বানিয়ে বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়াকে আটক রাখা হয়েছে। সরকার ও সরকার প্রধানকে খালেদা জিয়াকে মুক্তিসহ দেশে সকল প্রকার জুলুম অত্যাচার বন্ধ করে দ্রুত নির্বাচন দেয়ার আহ্বান জানান তিনি। সমাবেশে বক্তব্য রাখেন বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান ইনাম আহমেদ চৌধুরী, মোঃ শাহজাহান, বিএনপি চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা জয়নুল আবদিন ফারুক, আমান উল্লাহ আমান, বরকতউল্লাহ বুলু, ইসলামী ঐক্যজোটের চেয়ারম্যান মাওলানা এ্যাডভোকেট আব্দুর রকিব, খেলাফত মজলিশের মহাসচিব ড. আহমেদ আব্দুল কাদের, এলডিপির মহাসচিব ড. রেদোয়ান আহমদ, ড. মঈন খান, শামসুজ্জামান দুদু, মাহমুদুর রহমান মান্না, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, এ্যাডভোকেট বেলায়েত হোসেন, শহীদুল্লাহ কায়সার, মোস্তফা জামাল হায়দার, আ ব ম মোস্তফা আমীন, তানিয়া ও আব্দুল মালেক রতন, এ্যাডভোকেট সুব্রত চৌধুরী, মোস্তফা মহসিন মন্টু প্রমুখ। আওয়ামী লীগের প্রচারপত্র বিলি ॥ বিগত পাঁচ বছরে শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগ সরকারের উন্নয়ন কর্মকা-ের প্রচারপত্র নিয়ে সিলেট জেলা ও মহানগর আওয়ামী লীগ রাজপথে নামে। বুধবার বেলা পৌনে বারোটার দিকে সিলেটের ঐতিহাসিক কোর্ট পয়েন্ট থেকে প্রচারপত্র বিলি শুরু হয়। এ সময় নেতৃবৃন্দ গত পাঁচ বছরে আওয়ামী লীগ সরকারের উল্লেখযোগ্য কর্মকা-গুলো জনগণের কাছে তুলে ধরেন এবং আসন্ন একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ মনোনীত নৌকা মার্কার প্রার্থীর পক্ষে ভোট চান। এ সময় উপস্থিত ছিলেন- আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক এ্যাডভোকেট মিসবাহ উদ্দিন সিরাজ, কেন্দ্রীয় সদস্য ও মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি বদর উদ্দিন আহমদ কামরান, জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শফিকুর রহমান চৌধুরী, মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আসাদ উদ্দিন আহমদ, স্বেচ্ছাসেবক লীগের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক সুব্রত পুরকায়স্থসহ সিলেট আওয়ামী লীগ এবং অঙ্গসহযোগী সংগঠনের জেলা, মহানগর, উপজেলা, ওয়ার্ড ও ইউনিয়নসহ বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাকর্মীরা।
×