ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

বড় বিনিয়োগকারীর কাছে বিক্রি হবে

আইসিবির দুই হাজার কোটি টাকার বন্ড আসছে

প্রকাশিত: ০৬:১৬, ২৫ অক্টোবর ২০১৮

আইসিবির দুই হাজার কোটি টাকার বন্ড আসছে

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ নতুন তারল্য প্রবাহ বাড়াতে আসছে ইনভেস্টমেন্ট কর্পোরেশন অব বাংলাদেশের (আইসিবি) দুই হাজার কোটি টাকার বন্ড। ব্যাংক, আর্থিক প্রতিষ্ঠান ও বীমার মতো প্রতিষ্ঠান এবং ব্যক্তি শ্রেণীর বড় বিনিয়োগকারীর কাছে এই বন্ড বিক্রি করা হবে। বাজারে নতুন টাকার যোগান বাড়াতে এই বন্ড ছাড়ার উদ্যোগকে বিশেষ প্রণোদনা হিসেবে দেখছেন সংশ্লিষ্টরা। একইসঙ্গে চীনা কনসোর্টিয়ামের কাছে ঢাকা স্টক একচেঞ্জের এক হাজার কোটি টাকার বিনিয়োগের পরিপত্রও আগামী সপ্তাহে জারি করা হবে বলে নির্ভরশীল সূত্র জানিয়েছে। এর আগে সার্বিক বাজার পরিস্থিতির কথা বিবেচনা করে দুই হাজার কোটি টাকার বিশেষ বন্ডের আবেদন পরিকল্পনায় কিছু পরিবর্তন প্রস্তাব করেছিল ইনভেস্টমেন্ট কর্পোরেশন অব বাংলাদেশ (আইসিবি)। সম্প্রতি ৬৬০তম কমিশন সভায় তা অনুমোদন করে পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ এ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)। একই সঙ্গে বন্ডের ৭৫ শতাংশ অর্থ শুধু তালিকাভুক্ত সিকিউরিটিজে বিনিয়োগের শর্ত বেঁধে দেয়া হয়েছিল। আইসিবির নন কনভার্টিবল ফিক্সড রেট সাবঅর্ডিনেটেড বন্ড অনুমোদন করেছিল বিএসইসি, যা বর্তমান শেয়ারহোল্ডারদের বাইরে অন্য প্রতিষ্ঠানের কাছে ইস্যু করা হবে মর্মে অনুমোদন হয়েছিল। আইসিবির আবেদনক্রমে বিদ্যমান কর্পোরেট শেয়ারহোল্ডারদের কাছেও এ বন্ড বিক্রির অনুমোদন দেয়া হলো। এ ছাড়া এ বন্ডের ৭৫ শতাংশ অর্থ শুধু পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত সিকিউরিটিজে বিনিয়োগ করার শর্ত দিয়েছে কমিশন। বাজার পরিস্থিতি নিয়ে সম্প্রতি রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠান আইসিবিতে স্টেকহোল্ডারদের বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। এতে বিএসইসির নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র মোঃ সাইফুর রহমান, আইসিবির ব্যবস্থাপনা পরিচালক কাজী সানাউল হক, ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) ব্যবস্থাপনা পরিচালক কেএএম মাজেদুর রহমান, বাংলাদেশ মার্চেন্ট ব্যাংকার্স এ্যাসোসিয়েশনের (বিএমবিএ) সভাপতি নাসির উদ্দিন চৌধুরী ও ডিএসই ব্রোকার্স এ্যাসোসিয়েশনের (ডিবিএ) সভাপতি মোস্তাক আহমেদ সাদেকসহ অন্যরা উপস্থিত ছিলেন। সেখানে সাইফুর রহমান বলেন, এই মুহূর্তে এমন কোন রাজনৈতিক অস্থিরতা নেই, যার কারণে শেয়ারবাজার পতন হতে পারে। ৫ বছর পরপর নির্বাচন হবে এটাই স্বাভাবিক। এতে আতঙ্কিত হওয়ার মতো কিছু নেই। তিনি বলেন, বাজারকে তারল্য সঙ্কট থেকে উত্তোলনে আইসিবিকে দুই হাজার কোটি টাকার ফান্ড দেয়া হয়েছে। এই ফান্ডের টাকা আগামী সপ্তাহে শেয়ারবাজারে বিনিয়োগ হবে। পাশাপাশি চীনা কনসোর্টিয়ামের সাড়ে ৯শ’ কোটি টাকার ১০ শতাংশ গেইন ট্যাক্স ছাড়ের প্রজ্ঞাপন আগামী সপ্তাহে হবে। ফলে এই টাকাও আগামী সপ্তাহের পর থেকে বাজারে আসবে বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি। আইসিবি সূত্রে জানা গেছে, এই বন্ডের নাম হবে আইসিবি সাবঅর্ডিনেটেড বন্ড। কুপন বিয়ারিং, নন-কনভার্টেবল ও ফুললি রিমেডেবল এবং সাবঅর্ডিনেটেডের আকার দুই হাজার কোটি টাকা। অ-তালিকাভুক্ত বন্ডটি প্রাইভেট প্লেসমেন্টের অংশ হিসেবে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের কাছে বিক্রি করা হবে। প্রতিটি ইউনিটের দর এক কোটি টাকা। এক প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারী সর্বোচ্চ ৫টি ইউনিটের জন্য আবেদন করতে পারবে। সাত বছর মেয়াদী ফান্ডটির মুনাফা ৬ মাস পরপর বণ্টন করা হবে। ৯ শতাংশ হারে এই মুনাফা বণ্টিত হবে। এ প্রসঙ্গে আইসিবির ব্যবস্থাপনা পরিচালক কাজী সানাউল হক বলেন, শেয়ারবাজারের একটি সাপোর্ট প্রয়োজন। এ সাপোর্ট দিতে আইসিবির প্রয়োজন ছিল তারল্য। আশা করছি, এক-দুই সপ্তাহের মধ্যেই আমরা বাজারকে এ সাপোর্টটুকু দিতে পারব। পাশাপাশি ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের সদস্যরা কৌশলগত বিনিয়োগকারীর কাছ থেকে পাওয়া প্রায় হাজার কোটি টাকার তহবিলটি সেকেন্ডারি বাজারে বিনিয়োগ করলে বাজার একটি স্থিতিশীল অবস্থায় চলে আসবে। অন্যদিকে ডিমিউচুয়ালাইজেশনের অংশ হিসেবে চীনের সাংহাই ও সেনজেন স্টক এক্সচেঞ্জের কাছে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের ২৫ শতাংশ শেয়ার বিক্রির ৯৪৭ কোটি টাকার বিনিয়োগের পরিপত্রও আগামী সপ্তাহে প্রকাশিত হবে। অর্থ মন্ত্রণালয়, আইন মন্ত্রণালয়ের অনুমোদনের পর এই পরিপত্রটি এখন জাতীয় রাজস্ব বোর্ডে রয়েছে। আগামী সপ্তাহেই এটির প্রজ্ঞাপন জারি করা হবে। পুঁজিবাজারে বিনিয়োগের শর্তে ১? শতাংশ কর ছাড়ের বিষয়টি পরিপত্রে উল্লেখ থাকবে। আর শেয়ারবাজারে বিনিয়োগ না করলে বেশি কর দিতে হবে। এর আগে ডিএসই কোন কোন ব্রোকারেজ হাউস শেয়ারবাজারে বিনিয়োগ করবে এবং কারা করবে না তা আবেদন করেন। এই কারণেই সরকারের পরিপত্র জারি করতে কিছুটা দেরি হয়ে যায়। তবে এখন শুধু পরিপত্র জারির আনুষ্ঠানিকতা বাকি রয়েছে। এই বিষয়ে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের এক সাবেক পরিচালক বলেন, পুঁজিবাজারে দর পতনের কোন কারণ নেই। রাজনৈতিক পরিস্থিতি স্থিতিশীল রয়েছে। আগামী সপ্তাহেই ডিএসইর কৌশলগত বিনিয়োগকারীদের টাকা বিনিয়োগের কর ছাড়ের পরিপত্র জারি হবে, এতে বিনিয়োগকারীদের আস্থা বাড়বে।
×