ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

দুটি বইয়ের প্রকাশনা অনুষ্ঠানে বক্তাদের অভিমত

দারিদ্র্য প্রশংসনীয় হারে কমলেও আয় বৈষম্য রয়ে গেছে

প্রকাশিত: ০৫:২৪, ২৫ অক্টোবর ২০১৮

দারিদ্র্য প্রশংসনীয় হারে কমলেও আয় বৈষম্য রয়ে গেছে

স্টাফ রিপোর্টার ॥ দেশে যে হারে দারিদ্র্য কমেছে তা প্রশংসনীয়। তবে আয় বৈষম্য রয়ে গেছে। দেশ থেকে দরিদ্রসহ অতিদরিদ্র দূর করতে হলে বৈষম্য কমানো উচিত। সেই সঙ্গে দরিদ্র হিসাব করতে দারিদ্র্যসীমার বিষয়টিও যুগোপযোগী করার তাগিদ দিয়েছেন বক্তারা। বুধবার ‘ইডিং রেজিলিয়েন্স এ্যামং দ্য এক্সট্রিম পুওর ইন বাংলাদেশ’ এবং ‘এক্সট্রিম প্রভার্টি, গ্রোথ এ্যান্ড ইনইক্যুয়ালিটি ইন বাংলাদেশ’ শীর্ষক দুটি বইয়ের প্রকাশনা অনুষ্ঠানে বক্তারা এ তাগিদ দেন। রাজধানীর শেরেবাংলা নগরের এনইসি সম্মেলন কক্ষে এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। পরিকল্পনা কমিশনের সাধারণ অর্থনীতি বিভাগের (জিইডি) উদ্যোগ বই দুটি প্রকাশ করা হয়েছে। জিইডির সদস্য (সিনিয়র সচিব) ড. শামসুল আলমের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন অর্থ ও পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী এম এ মান্নান। বিশেষ অতিথি ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক প্রফেসর ড. ওয়াহিদ উদ্দিন মাহমুদ। বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (বিআইডিএস) গবেষণা পরিচালক বিনায়েক সেন এবং জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ভিসি প্রফেসর আবদুল বায়েস। মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ইউকের বাথ ইউনিভার্সিটির ইমেরিটাস প্রফেসর গুফ উড। মূল প্রবন্ধে প্রফেসর গুফ বলেন, অতিদরিদ্র নিরসনে পোভার্টি সোসাল ওয়ার্কার্স তৈরি করতে হবে। কেননা দরিদ্রদের সবার চাহিদা বা সমস্যা সমান নয়। একেক জনের ক্ষেত্রে একেক রকম সমস্যা বিরাজ করছে। তাই ঢালাও সহায়তা না দিয়ে অতিদরিদ্রদের ঘরে ঘরে গিয়ে সমস্যা চিহ্নিত করতে হবে। এ কাজটি করতে পারে এই পোভার্টি সোসাল ওয়ার্কাররা। এজন্য স্বেচ্ছাসেবামূলক কার্যক্রম জোরদার করতে হবে। অর্থ ও পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী এম এ মান্নান বলেন, দারিদ্র্য নিরসনের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ আজ উদাহরণ। এখন আমাদের বিশ্বের অন্যান্য দেশ অনুসরণ করছে। তবে এ কথা ঠিক যে দারিদ্র্য কমলেও বৈষম্য বাড়ছে। এই বৈষম্য কমাতে কাজ করছে সরকার। দারিদ্র্যসীমা সময়োপযোগী করা হতে পারে নির্বাচনের পর। প্রফেসর ওয়াহিদ উদ্দিন মাহমুদ বলেন, পোভার্টি লাইন যুগোপযোগী করা উচিত। এতে হয়তো দারিদ্র্যের হিসেবে কিছুটা পরিবর্তন আসতে পারে। কিন্তু তারপরও এটা করা প্রয়োজন। তিনি বলেন, দেশে আয় বৈষম্য রয়েছে ব্যাপক। তাছাড়া বাংলাদেশ সামাজিক নিরাপত্তায় ভাল করলেও এখনও কর্মসূচীর দ্বৈততা রয়েছে। সেই সঙ্গে সামাজিক নিরাপত্তার সুযোগ প্রকৃত সুবিধাভোগীদের কাছে পৌঁছানোর ক্ষেত্রে ত্রুটি রয়েছে। দারিদ্র্য নিরসনে বাংলাদেশ বিশ্বের বিস্ময় সৃষ্টি করেছে। জিডিপি প্রবৃদ্ধি ধারাবাহিকভাবে বাড়ছে। কিন্তু প্রকৃত মজুরি না বাড়ায় মানুষ এখনও অতিদরিদ্র থেকে বেরুতে পারছে না। সেই সঙ্গে সম্পদেরও সীমাবদ্ধতা রয়েছে। শিক্ষা ও স্বাস্থ্য খাতসহ বিভিন্ন উন্নয়ন কর্মকা-ে যে পরিমাণ সম্পদের চাহিদা রয়েছে, সেই তুলনায় যোগান কম। তাই রাজস্ব আয় বাড়ানোর দিকে নজর দিতে হবে। ড. শামসুল আলম বলেন, আগামীতে তৈরি হতে যাওয়া অষ্টম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনায় বিশেষ গুরুত্ব পাবে বৈষম্য। তিনি জানান, দেশের দারিদ্র্য নিরসনে সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচী ব্যাপক ভূমিকা রেখেছে। সরকার সামাজিক নিরাপত্তা কৌশলপত্র বাস্তবায়ন করছে। সেখানে সামাজিক নিরাপত্তার লাইফ সাইকেল সিস্টেম রয়েছে। ড. বিনায়েক সেন বলেন, দেশে বর্তমানে দরিদ্র কমলেও ছিন্নমূল গরিবের সংখ্যা বেড়েছে। এদের ন্যূনতম চাহিদা পূরণের সক্ষমতাও কমেছে। সরকারী সেবা দেয়ার ক্ষেত্রে সিস্টেম পরিবর্তন নিয়ে আসা প্রয়োজন। স্বাস্থ্য, শিক্ষা ও অন্যান্য সেবার ক্ষেত্রে অতিদরিদ্রের জন্য আলাদা গুরুত্ব দেয়া উচিত। তিনি বলেন, দেশে প্রবৃদ্ধি বাড়ছে, দরিদ্র ও অতিদরিদ্র কমছে, শিক্ষায় অংশগ্রহণ বাড়ছে, কিন্তু একই সঙ্গে বৈষম্যও বাড়ছে। দেশের মধ্যবিত্ত শ্রেণী বাড়ছে কিন্তু অনেক ক্ষেত্রেই সামাজিক সুযোগ-সুবিধা কম পাচ্ছে। ফলে তারা জাতীয় উন্নয়নে বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারছে না। ড. আবদুল বায়েস বলেন, দেশে যেভাবে বৈষম্য বাড়ছে তা এখন প্রশ্নের মুখে। দেশে দারিদ্র্য কমেছে, কিন্তু বৈষম্য প্রশ্নের সৃষ্টি করছে। আয় বৈষম্য এখন অনেক বড় চ্যালেঞ্জ। তিনি বলেন, কৃষি খাত অতিদরিদ্র নিরসনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে।
×