ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

ঐতিহ্যের পুনরুদ্ধার বরদেশ্বরী নাট্যোৎসবের লক্ষ্য ॥ চিত্তরঞ্জন দাস

প্রকাশিত: ০৩:৫৮, ২৫ অক্টোবর ২০১৮

ঐতিহ্যের পুনরুদ্ধার বরদেশ্বরী নাট্যোৎসবের লক্ষ্য ॥ চিত্তরঞ্জন দাস

‘ত্রিনয়নী বরদেশ্বরী নাট্যোৎসব’ শুরু হচ্ছে আগামী ৬ নবেম্বর। ঢাকায় সম্রাট আকবরের প্রধান সেনাপতি মানসিংহের স্মৃতি বিজরিত রাজারবাগের গঙ্গাসাগর দীঘিতটে বরদেশ্বরী কালীমাতা মন্দির প্রাঙ্গণে কালীপূজা উপলক্ষে এ উৎসবের আয়োজন করা হয়েছে। উৎসব সম্পর্কে অভিনেতা, নির্দেশক, আয়োজনের প্রবক্তা লায়ন চিত্তরঞ্জন দাসের সঙ্গে কথা হয়। ত্রিনয়নী নাট্যোৎসব সম্পর্কে বলুন। চিত্তরঞ্জন দাস : সম্প্রতি অনুষ্ঠিত শারদীয় নাট্যোৎসবের স্লোগান ছিল ‘নারী শক্তির বিকাশ সভ্যতার প্রকাশ’। যার ফলে নারী বিষয় আশ্রিত নাটকই মঞ্চায়ন হয় সে উৎসবে। ত্রিনয়নী বরদেশ্বরী নাট্যোৎসবের স্লোগান ‘মর্মমূলে অন্বেষণ ভবিষ্যতের শিহরণ’। যে কারণে তিন দিনের এ উৎসবে মোট ৫টি নাটক ও একটি যাত্রা থাকছে। প্রতিদিন সন্ধ্যা ৭টায় শুরু হবে নাটক। উদ্বোধনী দিন থাকছে নারায়ণ চন্দ্র দাসের রচনা আমার সম্পাদনা ও নির্দেশনায় নাটক ‘ঢাকার অসুখ ডাক্তার চাই’। এ নাটকে একটি বিশেষ চরিত্রে আমিও অভিনয় করব। একই দিনে মঞ্চায়ন হবে শব্দ নাট্যচর্চার ‘চম্পাবতী’। স্বামীর জন্য স্ত্রী কিভাবে নিজেকে আত্মাহুতি দিতে পারে তা নিয়েই চম্পাবতী। পদাতিক নাট্য সংসদ মঞ্চায়ন করবে ‘গুনাই বিবির পালা’। নারীর কল্যাণে যে রাজ্যের কল্যাণ তা নিয়েই গুনাই বিবির পালা। থিয়েটার আর্ট ইউনিট মঞ্চায়ন করবে ‘আমিনা সুন্দরী’। জলে ভাসা পদ্মের ন্যায় নারী জীবনের ভাসমান জীবন কাহিনী নিয়ে নাটক ‘আমিনা সুন্দরী’। উৎসব সমাপনী দিন মঞ্চায়িত হবে জোৎস্না বিশ্বাস অভিনীত এবং নির্দেশিত যাত্রাপালা ‘মহিয়সী কৈকেয়ী’। ঐতিহ্যের পুনরুদ্ধার এই নাট্যোৎসবের অন্যতম লক্ষ্য। এবারের শারদীয় নাট্যোৎসব কেমন হলো? চিত্তরঞ্জন দাস : এ বছরের একটা বিশেষ দিক আছে। আমেরিকার শিকাগোতে আয়োজিত বিশ্বধর্ম সম্মেলনে স্বামী বিবেকানন্দ যে কালজয়ী বক্তৃতা দিয়ে বিশ্ববাসীকে চমকে দিয়েছিলেন এবং মানব সেবার যে উদাত্ত আহ্বান তিনি করেছিলেন, সেই বক্তৃতার ১২৫ বছর পূর্তি এ বছর। শিকাগো, ক্যালিফোর্নিয়া প্রভৃতি প্রদেশে ধারাবাহিক বক্তৃতা প্রদানে তার একটা বিশেষ কথা ছিল আর তা হলো নারীর যতরূপ তার মধ্যে মাতৃত্ব রূপটিই প্রাচ্যবাসীর কাছে সর্বাধিক প্রিয়। ফলে নারীর বহুমাত্রিক রূপের চিত্রায়ন এবং তার মধ্যে শ্রেষ্ঠতম রূপটিকে চিনে নেয়ার কথা বিবেচনা করে এবার আমরা পাঁচ দিনব্যাপী নাট্যোৎসবে ছয়টি নাটক মঞ্চায়নের সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম। আর এখন কালীপূজায় আয়োজিত নাট্যোৎসবে নাটক বিবেচনার ক্ষেত্রে ঐতিহ্যের অন্বেষণকে প্রাধান্য দিয়েছি। উৎসবের মেলার আয়োজন নিয়ে বলুন। চিত্তরঞ্জন দাস : খুব ভাল। বিশাল দীঘি লাইটিং করা হচ্ছে। দীঘির প্রান্ত ছুঁয়ে লোকজ মেলা বসবে। নাগরদোলা, সার্কাসসহ বিভিন্ন শিশুদের বিনোদনমূলক আয়োজন থাকবে। মিষ্টি-মণ্টা তৈরি থেকে বিক্রি পুরো প্রক্রিয়া ক্রেতা-দর্শকদের সামনে হবে। বেত-বাঁশের কারুমেলা থাকবে অর্থাৎ ম-প প্রদক্ষিণের পাশাপাশি অনুরাগী ভক্ত-দর্শক মেলা-দীঘি ঘুরে নির্মল আনন্দ পাবে। সঠিক নিরাপত্তা, শৃঙ্খলভাবে চলাচল উপযোগী রাস্তা, সর্বক্ষণিক স্বেচ্ছাসেবীদের সহযোগিতায় আগত দর্শকরা আনন্দ পাবেন বলেই বিশ্বাস করি। উৎসব দর্শকদের উদ্দেশে আপনার বক্তব্য কী? চিত্তরঞ্জন দাস : শারদীয় দুর্গাৎসবের কিংবা কালীপূজায় উৎসবে কুমোর থেকে ভাস্কর, মুচি থেকে মন্ত্রপুরোহিত, পাচক থেকে পথচলতি পথিক তথা সকল শ্রেণীর মানুষের কিছু না কিছু কর্ম সংস্থান হয়। ফলে নাট্যকর্মীদেরও হবে সেটাই স্বাভাবিক। উপরন্তু জ্ঞানও বিনোদনের সমস্ত নিয়ে যে নাটকের যাত্রা সে তো সকলের কাছে আদৃত ফলে এই শারদীয় নাট্যোৎসবের আয়োজন। কৃতজ্ঞতা লিজেন্ড অভিনেত্রী ফেরদৌসী মজুমদারের প্রতি যার উপস্থিতি আমাদের অনুপ্রেরণা। এবার উৎসবে আমরা একটি ঘোষণাও দিয়েছি। আমাদের এলাকায় অবস্থিত অভয় বিনোদনী উচ্চ বিদ্যালয়ে কৃতী শিক্ষার্থীদের জন্য এই মহীয়সী অভিনেত্রীর নামে একটি এ্যাওয়ার্ড প্রদানের ঘোষণা দিয়েছি। স্কুলের শিক্ষকদের বিবেচনায় যেসব ছাত্র-ছাত্রী কৃতিত্বের সঙ্গে ক্লাসে উত্তীর্ণ হবে তাদের ‘ফেরদৌসী মজুমদার এ্যাওয়ার্ড’ প্রদান করা হবে। এ্যাওয়ার্ড প্রাপ্তরা সারাবছর পড়া-লেখা, বই-খাতাসহ সব খরচবাবদ নগদ অর্থ মূল্য পাবে। এটা আগামী বছর থেকে কার্যকর হবে। -গৌতম পাণ্ডে
×