ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

গীতাঞ্জলির চতুর্দশ বর্ষপূর্তিতে সম্মাননা পাচ্ছেন তিন গুণী

প্রকাশিত: ০৩:৫৭, ২৫ অক্টোবর ২০১৮

গীতাঞ্জলির চতুর্দশ বর্ষপূর্তিতে সম্মাননা পাচ্ছেন তিন গুণী

স্টাফ রিপোর্টার ॥ উত্তরার ঐতিহ্যবাহী সাংস্কৃতিক চর্চাকেন্দ্র গীতাঞ্জলি ললিতকলা একাডেমির চতুর্দশ বর্ষপূর্তি উপলক্ষে স্থানীয় ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প ইন্সটিটিউট অডিটরিয়ামে তিনদিনব্যাপী সাংস্কৃতিক উৎসবের আয়োজন করা হয়েছে। এর ধারাবাহিকতায় ২৬-২৭ অক্টোবর আলোচনা, সম্মাননা প্রদান, সনদপত্র বিতরণ, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান এবং ২ নবেম্বর উৎসবের সমাপনী হবে। গীতাঞ্জলি সূত্রে জানা যায় আগামীকাল ২৬ অক্টোবর উৎসবের উদ্বোধনী দিনে আয়োজিত অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করবেন জাতীয় অধ্যাপক ড. রফিকুল ইসলাম। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন হুয়ারেন লিনেন গ্রুপ, ইয়াল গার্মেন্টস লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মীর সাহেদ চৌধুরী। এনন টেক্স গ্রুপের চেয়ারম্যান এবং এমডি মোহাম্মদ ইউনুস। এদিন দেশের শিল্প সাহিত্য ও সংস্কৃতিতে বিশেষ অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ শিল্পী মর্তুজা বশীর, কবি নির্মলেন্দু গুণ এবং সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব মফিদুল হককে ‘গীতাঞ্জলি সম্মাননা পদক-২০১৮’ প্রদান করা হবে। সম্মাননা প্রদানের পর গীতাঞ্জলির শিল্পীদের পরিবেশনায় মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান পরিবেশিত হবে। উৎসবের দ্বিতীয়দিন আগামী ২৭ অক্টোবর শনিবার উৎসবের দ্বিতীয়দিনের আয়োজনে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন জাতীয় অধ্যাপক আনিসুজ্জামান। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব রামেন্দু মজুমদার, বাংলাদেশ পাবলিক সার্ভিস কমিশন সচিবালয়ের সচিব আকতারী মমতাজ, গোল্ডেন ড্রিম এ্যাসোসিয়েশনের চেয়ারম্যান সাইফুল ইসলাম। এদিন বিকেল ৫টায় শিশু-কিশোদের চিত্র প্রদর্শনীর পুরস্কার বিতরণ করা হবে। পাশাপাশি রয়েছে সকাল বেলার পাখি সংগঠনের শিল্পীদের পরিবেশনায় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। উৎসবের সমাপনী দিন ২ নবেম্বর আলোচনা অনুষ্ঠানের পর রয়েছে নাটক মঞ্চায়ন। এদিন গীতাঞ্জলির অন্যতম শাখা সংগঠন থিয়েটার অঙ্গনের ‘মুনির চৌধুরী‘ নাটকের মঞ্চায়ন হবে। প্রবীর দত্ত রচিত ও নির্দেশিত ‘মুনির চৌধুরী’ নাটকটি বাংলা নাটকের পথিকৃত শহীদ বুদ্ধিজীবী মুনীর চৌধুরীর জীবন ও কর্ম নিয়ে নির্মিত হয়েছে। নাট্যদল থিয়েটার অঙ্গনের দশম প্রযোজনা ‘মুনীর চৌধুরী’ নাটকের প্রধান চরিত্র মুনীর চৌধুরীর নাম ভূমিকায় অভিনয় করেন মাহবুব আমিন মিঠু। আরও অভিনয় করেন সাবিনা আক্তার, মোঃ রাজীব আহমেদ, মোঃ জয় আক্তার সজিব, সম্বিতা রায়, জান্নাতুল ফেরদৌস রশনি, মির্জা সাইফুল ইসলাম সুমন, অক্ষয় কুমার সরকার, মোঃ আলম, সিরাজুল ইসলাম, আজিম আহমেদ সালমান ও মোঃ আবু উবায়দা। ‘মুনীর চৌধুরী’ নাটকের মঞ্চ পরিকল্পনায় আলি আহমেদ মুকুল, পোশাক পরিকল্পনায় ড. আইরিন পারভীন লোপা, আবহসঙ্গীত শিশির রহমান, আলো শামীমুর রহমান, ভিডিও অরণ্য আলমগীর, কোরিওগ্রাফি সম্বিতা রায়, রূপসজ্জা শুভাশীষ দত্ত তন্ময়, সেট নির্মাণ মনির, প্রচ্ছদ নকশা শিল্পী রফিকুন নবী, প্রযোজনা অধিকর্তা মাহবুব আমিন মিঠু। ‘মুনীর চৌধুরী’ নাটকে শহীদ বুদ্ধিজীবী মুনীর চৌধুরীর জীবন এবং কর্মের নানা দিক তুলে ধরা হয়েছে। তার বহুমাত্রিক নাট্যভাবনার নির্মাণ প্রতিফলিত হয়েছে মৌলিক নাট্য রচনায় ও বিদেশী নাটকের অনুবাদ-রূপান্তরে যেখানে বেদনার সঙ্গে মিশ্রিত হয়েছে কৌতুক বোধ ও এর সঙ্গে সূক্ষ্ম শৈল্পিক প্রতিবাদ। দৃষ্টি উন্মোচনকারী এই নাট্যকার, প্রাবন্ধিক এবং সাহিত্য সমালোচক ১৯৭১ সালে বিজয়ের মাত্র দুইদিন আগে স্বাধীনতাবিরোধী আলবদর, আলশামসদের হাতে অন্য বুদ্ধিজীবীদের সঙ্গে নির্মমভাবে শহীদ হন। কোথাও তার মরদেহ খুঁজে পাওয়া যায়নি। একুশের প্রথম নাটক ‘কবর’ যাকে অমর করে রেখেছে, তারই কোন কবর নেই। তবে কি ‘কবর’ মুনীর চৌধুরীর জীবনের প্রতিচ্ছবি? মূলত নাটকীয় মুহূর্ত তৈরির মাধ্যমে মুনীর চৌধুরীর জীবনালেখ্যই প্রতিফলিত হয়েছে এ নাটকে। এদেশের নব-নাট্যান্দোলনের পথিকৃৎ মুনীর চৌধুরীর বুদ্ধিদীপ্ত প্রচেষ্টায় বিংশ শতাব্দীর মাঝামাঝি সময় এদেশের আত্মসচেতন ও সমাজ সচেতন নাট্যভাবনার সূত্রপাত ঘটে। অল্পকাল ব্যবধানে দুটি বিশ্বযুদ্ধ সংঘটিত হওয়ার পর দুনিয়াব্যাপী শিল্প-সাহিত্যের উদার উঠানে, যখন চিন্তার বিলোড়ন তৈরি হয়েছে তখন বাংলাদেশেও সে প্রবণতার প্রভাব ছায়া বিস্তার করেছে অনিবার্যভাবে। শিক্ষিত-সচেতন মানুষ হিসেবে নাট্যকার মুনীর চৌধুরী বিশ্বমননে স্নাত হয়েছিলেন। বিশ্ববিদ্যালয়ে লেখাপড়া করার সময় থেকেই তিনি ঝুঁকে পড়েন নাটকের শিল্প কৌশলের দিকে। তার প্রথম নাটক নওজোয়ান কবিতা মজলিস রচিত হয় ১৯৪৩ সালে। তার নাটকে প্রাদেশিক রাজধানী ঢাকার নগরকেন্দ্রিক জীবনপ্রবাহ এক কর্মচাঞ্চল্যের অভিজ্ঞতা প্রাধান্য পেয়েছে। আর পেশাগতভাবে শিক্ষকতার সঙ্গে সম্পৃক্ত থাকায় শিক্ষার্থী-অধ্যাপক-প্রক্টর-হাউস টিউটর, সাংবাদিক-উকিল-পুলিশ-ডাক্তার নেতা, রিকশাওয়ালা দোকানদার-অভিভাবক প্রেমিক-প্রেমিকা প্রভৃতি চরিত্র তার নাটকের ক্যানভাসে অতি সাবলীলতায় জায়গা করে নিয়েছে।
×