ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

নয়া ট্রানজিট

প্রকাশিত: ০৩:৪২, ২৫ অক্টোবর ২০১৮

নয়া ট্রানজিট

প্রতিবেশীর জন্য বেশি বেশি করতে হয় বলে প্রবাদ রয়েছে। কিন্তু বেশি করার আগে সম্পর্ক ও সংযোগে সামঞ্জস্য আনা সঙ্গত। বাংলাদেশের প্রতিবেশী দেশ ভুটান, একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধের সময় পূর্ণ সমর্থন দান করেছিল। শুধু তাই নয়, স্বাধীন দেশ হিসেবে বাংলাদেশকেও স্বীকৃতি দিয়েছিল প্রথমেই। সেই দেশের সঙ্গে সম্পর্ক অত্যন্ত সৌহার্দ্যপূর্ণ। কিন্তু দীর্ঘদিনেও সড়ক সংযোগ গড়ে ওঠেনি। দুটি দেশ পারস্পরিক সুবিধার্থে ট্রানজিট ব্যবস্থা কার্যকর করার জন্য আগ্রহী হলেও বিষয়টি দীর্ঘদিন ধরে ঝুলে আছে। দীর্ঘ দশ বছর ধরে এই অচলাবস্থা বিরাজ করছিল। অবশেষে উভয় পক্ষ একটি চুক্তিতে উপনীত হতে আগ্রহী হয়েছে এবং কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণের জন্য উদ্যোগও নেয়া হয়েছে। আজ বৃহস্পতিবার ভুটানের রাজধানী থিম্পুতে দু’দেশের যৌথ ওয়ার্কিং গ্রুপ বৈঠকে বসছে। এই বৈঠকে ট্রানজিট চুক্তির খসড়া চূড়ান্ত হবে। চুক্তি হলে দু’দেশের দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য ও বিনিয়োগ বাড়বে। তবে বাংলাদেশ, ভুটান, ভারত ও নেপালকে নিয়ে চার দেশীয় মোটরযান চলাচল চুক্তি থেকে এর আগে ভুটান সরে দাঁড়ায়। দেশটি তাদের পরিবেশগত বিষয়টি প্রাধান্য দিয়ে এই উদ্যোগে শামিল হয়নি। পরিবর্তে দ্বিপক্ষীয় ট্রানজিট চুক্তিতে আগ্রহী হয়ে ওঠে। বাংলাদেশ তাতে সম্মতি প্রদান করেছে। চুক্তি হলে বাংলাদেশের জল, স্থল ও আকাশ পথ ব্যবহার করে নির্ধারিত ফির বিনিময়ে পণ্য পরিবহন করতে পারবে দেশটি। আর ভবিষ্যতে চীনের সঙ্গে ভুটানের সরাসরি সড়ক যোগাযোগ হলে তখন এই ট্রানজিট সুবিধায় ভুটানের ভেতর দিয়ে চীনে পণ্য পরিবহন করবে বাংলাদেশ। ২০১৩ সালে ভুটানকে ট্রানজিট সুবিধা প্রদানের সার-সংক্ষেপে সই করেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সে সময় এ নিয়ে দ্বিপক্ষীয় আলোচনার লক্ষ্যে যৌথ ওয়ার্কিং গ্রুপ গঠন করা হয়। কিন্তু চার দেশীয় মোটরযান চলাচল চুক্তি নিয়ে আলোচনার কারণে বিষয়টির অগ্রগতি হয়নি। অবশ্য এর আগে ১৯৮০ সালে দশ বছর মেয়াদী ট্রানজিট চুক্তি হয়েছিল দু’দেশের মধ্যে। চুক্তির শর্তানুযায়ী এটি আরও ১৮ বছর বহাল থাকার পর ২০০৮ সালে মেয়াদ শেষ হয়। ওই চুক্তির মেয়াদ শেষ হয়ে যাওয়ায় এখন নতুন করে চুক্তি করা হচ্ছে। প্রস্তাবিত রূপরেখা অনুযায়ী বাংলাদেশের ভূখ- ব্যবহার করে সব ধরনের অবকাঠামো ব্যবহারের সুবিধা পাবে দেশটি। এটি হবে ট্রানজিট সংক্রান্ত বহুমুখী সমন্বিত চুক্তি। যাতে রেল, সড়ক, নৌ, বিমান পথ ও বন্দর ব্যবহারের বিনিময়ে বাংলাদেশ পাবে রাজস্ব। ২০১৪ সালে ভুটান চুক্তির একটি খসড়া বাংলাদেশের বাণিজ্য মন্ত্রণালয়কে দিয়েছে। এর আগের বছর বাংলাদেশও চুক্তির একটি খসড়া দিয়েছিল ভুটানকে। তাতে বলা হয়েছিল, যানবাহন ব্যবহারের ফিসহ বিভিন্ন সেবার বিপরীতে অন্যান্য খরচ আদায় করতে পারবে বাংলাদেশ। এ পর্যন্ত বাংলাদেশের ৯০ পণ্যে ভুটান শুল্কমুক্ত সুবিধা দিয়েছে। বিপরীতে বাংলাদেশ দিয়েছে ভুটানের মাত্র ১৮ পণ্যে। এমনিতেই গত পাঁচ বছরে উভয় দেশের মধ্যে বাণিজ্য বেড়েছে ১০৮ শতাংশ। ২০১২-১৩ অর্থবছরে মোট বাণিজ্য হয়েছে দুই কোটি ৬৫ লাখ মার্কিন ডলারের। এর মধ্যে বাংলাদেশ দুই কোটি ৪৬ লাখ ডলারের পণ্য আমদানি করেছে আর রফতানি করেছে ১৮ লাখ মার্কিন ডলারের পণ্য। রফতানি বাণিজ্য ভুূটানের অনুকূলে রয়েছে। বাংলাদেশ পণ্য রফতানি বাড়াতে পারেনি। ট্রানজিট চুক্তি হলে পণ্য আমদানি ও রফতানি ক্ষেত্রে উভয় দেশ লাভবান হবে। বাংলাদেশও ট্রানজিটের মাধ্যমে আয় করবে রাজস্ব। আশা করি, কোন প্রতিবন্ধকতা ছাড়াই উভয় দেশ চুক্তিতে উপনীত হবে এবং বাণিজ্যের গতি বাড়াতে সক্ষম হবে।
×