ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

অগ্নিসন্ত্রাসীদের ঐক্য

প্রকাশিত: ০৩:৪২, ২৫ অক্টোবর ২০১৮

অগ্নিসন্ত্রাসীদের ঐক্য

দেশজুড়ে বইছে নির্বাচনী হাওয়া। হেমন্তের হিমেল হাওয়ায় ভেসে আসে সরগরম সব কথাবার্তা। প্রার্থী হতে চাওয়াদের পায়ের ধ্বনি গ্রামে-গঞ্জে, নগরে বেশ প্রতিধ্বনিত হচ্ছে। ভোটের বাদ্যি বাজার সময় সমাগত। ভোট মানেই বাঙালী জীবনে উৎসবের আমেজ। তাতে মশগুল হয়ে ভোটারমাত্র নেমে পড়ে মাঠে-ময়দানে প্রান্তরে, হাটবাজারে। সবখানে শুধু ভোট নিয়ে বাহাস। কেহ কারও নাহি ছাড়ে, সমানে সমান। বাগযুদ্ধ বেশ চলে সমানতালে। ছোট ছোট দলগুলো বড় দলের সঙ্গে জোট বেঁধে চলার প্রেরণা খোঁজে। সুবিধে তাতে কম নয়। আসন পাবার সম্ভাবনার সঙ্গে সঙ্গে ভোট প্রাপ্তির নিশ্চয়তা জাগে। কপালে থাকলে জিতে যাওয়াও অসম্ভব নয়। নির্বাচনী উত্তাপে ভাসছে এখন দেশ। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সংবাদ সম্মেলনে বলেছেন, সময়মতো নির্বাচন হবে। নির্বাচন নিয়ে যারা সংশয় সৃষ্টি করতে চাইছে তাদের উদ্দেশ্য হচ্ছে বাংলাদেশে যেন গণতন্ত্রের ধারাবাহিকতা না থাকে। আর ধারাবাহিকতা না থাকলে কিছু লোকের সুবিধা হবে। তাই তারা নির্বাচন নিয়ে সংশয় সৃষ্টি করতে চায়। প্রধানমন্ত্রীর আশঙ্কা উড়িয়ে দেয়া যায় না। অতীতে নির্বাচন নিয়ে ষড়যন্ত্র কম হয়নি। এমনকি নির্বাচনের দাবিতে ক্ষমতা দখলকারী সামরিক জান্তা শাসনকালে আন্দোলন সংগ্রাম করতে হয়েছে। অনেক মানুষ হতাহত হয়েছে শাসকের নিপীড়নে। নির্বাচন বর্জন করে স্বৈরাচারের শাসন প্রতিষ্ঠিত করার ঘটনাও ঘটেছে। বিএনপি নির্বাচন বর্জন করে সামরিক শাসক এরশাদের শাসনকে বহাল রাখতে সহায়তা করেছিল। পঁচাত্তর পরবর্তী সামরিক শাসকরা দেশের নির্বাচনী ব্যবস্থাকে ধ্বংস করার সব আয়োজনই করেছিল। গণতান্ত্রিক বিধি ব্যবস্থাকে এমনভাবে ধ্বংস করেছিল যে, সংসদ ছিল ‘ঠুঁটো জগন্নাথ’। স্বৈরাচারী জান্তা শাসকরা সবকিছুকে মুষ্টির ভেতর রেখেছিল। সেই অবস্থা থেকে উত্তরণ ঘটাতে অনেক আন্দোলন সংগ্রাম করতে হয়েছে। ২০১৪ সালে নির্বাচন বানচাল করার জন্য বিএনপি-জামায়াত জোট শুধু নির্বাচন বর্জন করেনি, প্রিসাইডিং অফিসার হত্যা, দেশজুড়ে অগ্নিসংযোগ, প্রাণহানির ঘটনাও ঘটেছে। জ্বালাও পোড়াও কোন গণতান্ত্রিক অধিকার না হলেও, তারা তাই প্রয়োগ করেছে। জীবন্ত মানুষকে পুড়িয়ে হত্যা করা হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা অবশ্য বলেছেন, জনগণের ওপর আস্থা ও বিশ্বাস থাকার কারণে সব ষড়যন্ত্র মোকাবেলা করে সুষ্ঠু নির্বাচন করতে তার দল সক্ষম হবে। আমরাও মনে করি, জনগণের ভোটাধিকার হরণ করার মতো বিশ্বাসঘাতকতা জাতি মেনে নেবে না। তথাপি আসন্ন একাদশ সংসদ নির্বাচন বানচাল নিয়ে ষড়যন্ত্র থেমে নেই। প্রথিতযশা আইনজীবীর নেতৃত্বে গঠিত বিএনপি-জামায়াতসহ ২০ দলীয় জোটকে সঙ্গে নিয়ে গঠিত ঐক্যফ্রন্ট যে দাবি ও লক্ষ্য তুলে ধরেছে। তা স্বাভাবিক নির্বাচনের ঘোর বিরোধী এবং সংবিধানকে অবমাননার শামিল। স্বাধীনতাবিরোধী, খুনী, সন্ত্রাসী, জঙ্গীবাদ, দুর্নীতিতে চ্যাম্পিয়ন, এতিমের টাকা আত্মসাত করে কারাদ-ের, গ্রেনেড হামলা করে বঙ্গবন্ধুর খুনীদের লালন পালন ও পুরস্কৃতকারীরা এক হয়েছে আজ। এই ঐক্যফ্রন্টকে প্রধানমন্ত্রী চিহ্নিত করেছেন এই বলে যে, এ গাছের ছাল, ও গাছের বাকল যোগ দিয়েছে এই ফ্রন্টে। এই ছাল-বাকল কোন কাজে লাগে না। তথাপি তারা এক হয়ে নির্বাচন নিয়ে আস্ফালন করছে, যাতে তা বানচাল করা যায়। অপরাধের দায়ে দ-িতদের ‘রাজবন্দী’ অভিধা দিয়ে মুক্তি চাওয়ার অর্থই আইনের শাসনকে ভূলুণ্ঠিত করার পাঁয়তারা। যত ষড়যন্ত্রই হোক নির্বাচন নিয়ে, জনগণ তা প্রতিরোধ করবে বলে শেখ হাসিনার মতো আমাদের বিশ্বাস। কোন ষড়যন্ত্রই কাজে দেবে না।
×